ত– অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
প্ৰ– অবিশ্বাস্য নয়। আপনার জন্য তো রায়ট লাগবে কলকাতায়। আপনি থাকলে রায়ট লাগবেই।
ত– কলকাতায় আমি থাকলে রায়ট লেগে যাবে! এত বছর কলকাতায় আছি আমি, কোনওদিন কিছু হয়নি। আর হঠাৎ করে রায়টের মতো কাণ্ড ঘটবে, এ আমার বিশ্বাস হয় না।
প্ৰ– বিশ্বাস না হলে সেটা আপনার প্রবলেম। তবে ঘটনাটা তাই ঘটতে যাচ্ছে। এখন আপনাকে ডিসিশান নিতে হবে।
ত– কী ডিসিশান?
প্র– আপনি কিছুদিনের জন্য কোথাও চলে যান।
ত–মানে?
প্র–মানে আপনাকে কিছুদিনের জন্য কলকাতার বাইরে কোথাও যেতে হবে।
ত– কোথায়?
প্র–ইওরোপে চলে যান না।
ত– ইওরোপে? কিন্তু ওখানে তো আমার বাড়িঘর নেই।
প্র- দেখুন, কোথাও থাকার বন্দোবস্ত করুন।
ত– ফিরবো কবে?
প্র– পরিস্থিতি শান্ত হলে ফিরবেন।
ত– (হেসে) মনে পড়ছে বাংলাদেশ থেকে যখন চুরানব্বই সালে আমাকে প্লেনে তুলে দেওয়া হয়, আমাকেও বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি শান্ত হলে ফিরবেন। আজ তেরো বছর হয়ে গেল, পরিস্থিতি এখনও শান্ত হয়নি।
প্ৰ– আপনি ফিরে আসতে চাইলে নিশ্চয়ই ফিরে আসবেন।
ত– কিন্তু আমি তো ইওরোপে যেতে পারবো না। ওখানে সব গুটিয়ে আমি এসেছি। গেলে ওখানে আমাকে হোটেলে থাকতে হবে। সে আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর আমার কাছে আমার বোন আসছে দুদিন পর। অনেকদিন থাকবে।
প্র বোনকে নিয়ে চলে যান।
ত– কোথায় যাবো?
প্র– আমেরিকায় চলে যান।
ত– আমেরিকা থেকেই তো আসছে আমার কাছে। ওকে নিয়ে আমি আমেরিকা যাবো কেন?
প্র– তবে অন্য কোথাও চলে যান।
ত– আমি তো বললাম আপনাকে, ইওরোপ বা আমেরিকায় যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। আমি অত খরচ কুলোতে পারবো না।
প্র– তাহলে ভারতের কোথাও যান।
ত– কোথায় যাবো?
প্র– সে আপনি খুঁজে দেখুন কোথায় যাবেন। কেউ নেই আপনার চেনা পরিচিত কোথাও ভারতের কোনও রাজ্যে?
ত– আমার চেনা আছে তো অনেকে। আমার পাবলিশার আছে কেরালায়, মহা রাষ্ট্রে, উড়িষ্যায়। কেরালার সরকার আমাকে বেশ ভালোবাসে। এডুকেশন মিনিস্টিার এমএ বেবি আমাকে তাঁর বাড়িতে নেমন্তন্ন করেছেন। ফরেস্ট মিনিস্টারের বাড়িতেও ব্রেকফাস্টের জন্য ডেকেছিলেন। ওঁরা বেশ চমৎকার মানুষ।
প্র– কেরালায় চলে যান। আপনার পাবলিশারকে বলুন আপনার থাকার ব্যবস্থা করতে।
ত– কিন্তু ওখানে তো মানুষ জেনে যাবে যে আমি গেছি। গতবার কেরালায় কিছু মুসলিম মৌলবাদী আবার আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল।
প্র– কেরালায় জানিয়ে দিন আপনি আসছেন। ওখানে প্রোটেকশনের ব্যবস্থা করবে, সে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আর কোথায় বললেন, মহারাষ্ট্র?
ত– ওখানে আমার মারাঠী পাবলিশার আছেন। অনিল মেহতা। উনিও খুব ভালো।
প্র–মধ্যপ্রদেশে চলে যান না, ওখানে তো বিশাল জঙ্গল আছে!
ত– আপনি আমাকে জঙ্গলে পাঠিয়ে দিতে চান?
প্ৰ– (অপ্রস্তুত হেসে) না, আসলে আমি তো জঙ্গল খুব ভালোবাসি, তাই বলছি।
ত– আমার জঙ্গল ভালো লাগে না।
প্র– তাহলে কী ভালো লাগে?
ত– সমুদ্র, পাহাড় এসব ভালো লাগে।
প্র– তাহলে কেরালায় চলে যান। ওখানে এনজয় করুন সমুদ্র।
ত– ফিরবো কবে?
প্ৰ– তিনচার মাস থাকুন। এদিকের আগুনটা কমলে ফিরবেন।
ত– আগুনের তো কিছু দেখছি না।
প্র– আপনি দেখছেন না, আমরা তো দেখছি।
ত– আপনি যে এভাবে বাইরে চলে যেতে বলছেন, কতদিনের জন্য বলছেন যেতে। ফিরবো কবে? ফেরার কথা ঠিক করে তো বলছেন না।
প্র– যান। দুতিন মাস পর ফিরে আসুন।
ত–দুতিন মাসে কি পরিস্থিতি শান্ত হবে বলে আপনার বিশ্বাস?
প্ৰ– হা হয়ে যাবে। কত আর নেবে? কয়েক মাস পরেই সব ঠিক হয়ে যাবে। বছর খানেকের মধ্যে তো হবেই মনে হচ্ছে।
ত– পরিস্থিতি তো আমি মোটেও অশান্ত দেখছি না। কিন্তু আমি কলকাতায় থাকলে, যা আপনি বলছেন, পরিস্থিতি অশান্ত হয়। তাহলে তো আমি ফিরে এলে আবার পরিস্থিতি অশান্ত হবে। আমি ফিরে এলে ওরা কি চুপ করে বসে থাকবে? মেনে নেবে?
প্র– এ নিয়ে ভাববেন না। তখনেরটা তখন দেখা যাবে।
ত– তাহলে এখনেরটা এখন দেখাই ভালো। পালিয়ে গিয়ে কোনও সমস্যার কি সত্যিকার সমাধান হয়? ওরা যদি জানে যে আমি ওদের ভয়ে চলে গেছি, তাহলে বিরাট ভিকটরি হবে ওদের।
প্র– আপনার এই ফ্ল্যাটটা কবে নিয়েছেন?
ত– এই তো বছর তিনেক আগে।
প্র– জায়গাটা ভালো না। মুসলিম এরিয়ার খুব কাছে। যে কোনও সময় অ্যাটাক হতে পারে। দেখি তো ফ্ল্যাটটা, কত স্কোয়ার ফুট?
ত– ঠিক জানি না, মনে হয় সতেরোশ। দুহাজারও হতে পারে। একেকজন একেকরকম বলে।
প্ৰ– ( উঠে ফ্ল্যাট দেখতে দেখতে) হা এরকমই একটা আমরা দেখে রাখবো। ওদিকে বাথরুম?
ত– হ্যাঁ ওদিকে বাথরুম।
প্ৰ– (স্টাড়িতে এসে) স্টাডি?
ত– হ্যাঁ। এখানেই বেশির ভাগ সময় থাকি।
প্র– এখানেই বেশির ভাগ সময়? কেন, এখানে কী করেন?
ত– লেখা পড়া করি।
প্র– (কমপিউটারের কাছে এসে) কমপিউটারে লেখেন?
ত– হ্যাঁ।
প্ৰ–বাংলায় লেখেন?
ত– হ্যাঁ।
প্ৰ– আশ্চর্য!
প্র– আর ফিরে এসে আপনি এই ফ্ল্যাটটা পাল্টে নেবেন। সাউথের দিকে কোথাও ফ্ল্যাট নিন। বালিগঞ্জের দিকে নিন। এটা মুসলিম এরিয়ার খুব কাছে।
ত– ফ্ল্যাট খুঁজে পাওয়া এত কষ্টের! প্রচুর ফ্ল্যাট দেখেছি। ভালো জায়গায় ভালো ফ্ল্যাট এখনও পাওয়া হয়নি। এই ফ্ল্যাটটা খুব তাড়াহুড়ো করে নিয়েছিলাম। কোনও উপায় ছিল না। ভাড়া খুব বেশি। একটু কম ভাড়ার ফ্ল্যাট পেলে ভালো হয়।