প্ৰ– তাই নাকি? কেন ডেকেছিল ওরা?
ত– মানবাধিকার নিয়ে বা নারীর অধিকার নিয়ে কিছু বলার জন্য, অথবা নিজের লেখা থেকে পড়ার জন্য, এরকম আমন্ত্রণ তো জানানোই হয়।
প্র– কারা শোনে?
ত–মানুষ।
প্ৰ– ও।
ত– (দীর্ঘশ্বাস)
প্র– কী বলেছিলেন আপনি হায়দরাবাদে? কেন আপনাকে অ্যাটাক করলো?
ত– শোধ বইটার অনুবাদ হয়েছে ওখানে, একটা মেয়ের জীবনকাহিনী। আমার বক্তব্যে আমি শুধু মেয়েদের নিজের ডিগনিটি নিয়ে, সম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকারের কথা বলেছি।
প্র– ধর্ম নিয়ে কিছু বলেছিলেন?
ত– ধর্মের ধু-ও উচ্চারণ করিনি। ইসলামের ই-ও উচ্চারণ করিনি।
প্র– তাহলে ওরা ক্ষেপলো কেন?
ত– আমার সম্পর্কে একটা প্রচার হয়েছে চারদিকে, আমি নাকি অ্যান্টি-ইসলাম, সে কারণেই অ্যাটাক। অবশ্য পরে নানা লেখালেখি থেকে যা জানলাম তা হল, মুসলমানদের ভোট পাওয়ার জন্য আমাকে আক্রমণ করে বোঝাতে চেয়েছে ওরা। ইসলামকে আমার হাত থেকে বাঁচাচ্ছে।
প্র– আপনার বিরুদ্ধে কলকাতায় ফতোয়া জারি হয়েছে।
ত– ফতোয়া তো অনেক জারি হয়েছে। এখন তো ফতোয়া নিয়ে তেমন কিছু আর হচ্ছে না। আর আপনি তো টিপু সুলতান মসজিদের ইমামকে ডেকে এনে একবার বোঝাতে পারেন। আগের বার ফতোয়া দেওয়ার পর আপনি তাকে ঘরে ডেকে নিয়ে কথা বলার পর সে বলেছিল, ফতোয়াই নাকি দেয়নি। ওরকম করে এবার তো তাঁকে ডাকতে পারেন।
প্ৰ– ওই ইমামের কথা বাদ দিন। ইমাম কোনও ভয়ংকর লোক নয়। যারা সামনে আসছে, ফতোয়া দিচ্ছে, ওরা ভালো। খারাপ লোক নয়। খারাপ লোক সব দল পাকাচ্ছে। তারা ডেনজারাস। গোপনে গোপনে সব তৈরি হয়ে আছে। আমাদের কাছে খবর আছে, ওদের প্ল্যান প্রোগ্রাম হয়ে গেছে আপনাকে মারার।
ত- আপনি জানেন কারা ওরা?
প্র– জানি।
ত– সব খবর যদি জানেন কারা এসব করছে, তাহলে তো অ্যারেস্ট করতে পারেন।
প্র– না, সেটা সম্ভব না।
ত– আমার মনে হয়না কিছু হবে। আমার সঙ্গে তো সিকিউরিটির লোক আছে। মনে হয়না ও এই কলকাতায় একজনকে প্রাণে মেরে ফেলার সাহস পাবে।
প্র– কী করে জানেন আপনি? আমি কি খবর না জেনে বলছি?
ত– কিছু তো ঘটছে না। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীরা বলেছিলো মহাকরণ ঘেরাও করবে। সেই প্রোগ্রামও তো বাদ দিয়েছে।
প্র– (ধমক মেরে, জোরে) আপনি আমাকে ইনফরমেশন দেবেন নাকি আমি আপনাকে ইনফরমেশন দেব?
ত– কাগজে পড়লাম বলে বলছি।
প্ৰ– খবরের কাগজ কিচ্ছু জানে না। আমরা সব জানি। গোপনে কী হচ্ছে শহরে, তা জার্নালিস্টরা কী করে জানবে। (ধমক)
ত–তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু, যারা মেরে ফেলার প্ল্যান করছে, তাদেরকে অ্যারেস্ট করা যায় না? কারণ মেরে ফেলার প্ল্যান করা তো আইনের চোখে অপরাধ, তাই না?
প্ৰ– না, অ্যারেস্ট করা যায় না। বিশেষ করে যখন মাইনরিটির ব্যাপার, তখন যায় না।
ত– এটা কোনও কথা হল? আইন তো সবার জন্য এক হওয়া উচিত।
প্ৰ– রিলিজিয়াস সেন্টিমেন্ট আলাদা জিনিস।
ত– তা ঠিক। কিন্তু এই টেরোরিস্ট, যাদের কথা আপনি বলছেন, তারা কি আমার বই পড়েছে? মনে তো হয় না।
প্ৰ– তা জানি না। তবে ওরা তৈরি আপনাকে মারার জন্য। সব আয়োজন কমপ্লিট। এখন শুধু টাইমের অপেক্ষা। আর নভেম্বরের মাঝামাঝি তো বিরাট করে বন্ধ ডাকা হচ্ছে আপনার বিরুদ্ধে। খুব বিচ্ছিরি কান্ড হতে যাচ্ছে।
ত– কী রকম?
প্র–মব চলে আসতে পারে আপনার বাড়িতে
ত– তাই নাকি? বাড়ি অবদি চলে আসার আগে নিশ্চয়ই বাধা দেওয়া হবে।
প্ৰ– আমি তো আপনাকে প্রোটেকশান দিচ্ছি। নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন প্রোটে কশান বাড়িয়েছি অনেক। কিন্তু মব চলে এলে যদি আমার ছেলেরা ওদের একটাকে গুলি করে, তাহলেই তো রায়ট লেগে যাবে।
ত– বলছেন কী?
প্ৰ– ঠিকই বলছি।
ত– রায়ট লাগবে কেন?
প্ৰ– হ্যাঁ রায়ট লেগে যাবে। আপনি চান গুলি চলুক? আপনি চান আপনার কারণে কাউকে গুলি করা হোক?
ত–না আমি চাই না।
প্র– ওদের কারও গায়ে গুলি করলেই রায়ট বাধবেই। মুসলমানদের পাড়ায় খবর হয়ে যাবে। ব্যস।
ত– রায়ট কেন? এখানে কোনও তো হিন্দু মুসলমানের ব্যাপার নেই। এটা ক্রিমিনালিটির ব্যাপার। আইন কি হিন্দু মুসলমান বিচার করে?
প্র– করতে হয়। আইনের কথা বলছেন? আপনি দেখছেন না আপনার বেলায় কী হচ্ছে। কোনও সাপোর্ট পেয়েছেন কারওর? এই যে হায়দারাবাদে মার খেলেন, কেউ কি আপনাকে সাপোর্ট করেছে? কোনও পলিটিক্যাল পার্টি? সবারই মুসলিম ভোট দরকার। সুতরাং এগুলো আপনাকে বুঝতে হবে। আপনার কিন্তু সোসাইটিতে কোনও সাপোর্ট নেই।
ত– আমি তো সাধারণ মানুষের সাপোর্ট পাই।
প্র– কে বলেছে আপনাকে?
ত– আমি বলছি। মানুষ আমাকে ফোন করছে। চিঠি লিখছে। বলছে, আমার লেখা তাদের ভালো লাগে।
প্ৰ– ওসবে কি হবে না। কোনও পলিটিক্যাল পার্টি আপনাকে সাপোর্ট করছে। না, সেটা বড় কথা। খুব বাজে অবস্থা আপনার।
.
উস্রি মজুমদার বিস্কুট, সন্দেশ, চা দিয়ে গেল ট্রেতে। উর্সি আরও অনেকের মতো ভালোবেসেই আমার কাছে আসে। চা বিস্কুট খেতে খেতে প্রসূন মুখার্জি কথা বলতে থাকেন।
প্ৰ– মাইনরিটি লিডাররা দেখা করবে সিএম-এর সঙ্গে। ওরা তো আপনাকে ডিপোর্টেশনের দাবিতে পথে নামছে। ওরা প্ল্যান করছে সিএমএর কনভয় আটকাবে। আটকালে আমাদের তো লাঠিচার্জ করতে হবে। আর লাঠিচার্জ করার মানে জানেন? খবর হয়ে যাবে। বিরাট রায়ট লেগে যাবে। লাগবেই।