— তাই নাকি?
— বলেছে, জন্মনিয়ন্ত্রণ কেন করেন? বার্থ কন্ট্রোল কেন করেন? বার্থ কন্ট্রোল হলো পুরুষদের মরদা থাইকা খাসি কইরা ফেলা। মহিলাদের জন্মদানী সেলাই কইরা দেয়া। এরই নাম বার্থ কন্ট্রোল। বার্থ কন্ট্রোল করলেও ডেথ তো কন্ট্রোল করতে পারবা না। রিজিকের মালিক হচ্ছে আল্লাহ। খাওয়াইব তো উনি। তুমি কেন বাহা কন্ট্রোল করবা? বড় গুনাহের কাজ এইটা। পারলে চাইরটা পর্যন্ত বিবাহ করবা। খাওয়াইব তো আল্লাহ। বার্থ কন্ট্রোল করবা না। এইটা বড় গুনাহের কাজ।
— আল্লাহ তো খাওয়ায় না সবাইকে। আল্লাহ শুধু ধনীদের খাওয়ায়। পুষ্টিকর খাবার, সুস্বাদু খাবার সব তো আল্লাহ একটা শ্রেণীকেই খাওয়াচ্ছে। আল্লাহ আবার কবে গরিবদের খাওয়ালো? গরিবরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তবেই সামান্য খাবার যোগাড় করে, তাও আবার আধপেট খেয়ে বেশির ভাগ বেঁচে থাকে। আর কাজ যদি না জোটে, বা পরিশ্রম করার শরীর যদি না থাকে, তবে না খেয়ে মরে। আল্লাহর কথা বাদ দাও, আল্লামা কী বলেছে বলো? তেঁতুল টেতুল কী যেন তখন বলছিলে!
–বলেছে, মেয়েরা হচ্ছে তেঁতুলের মতো। ছোট্ট একটা ছেলে তেঁতুল খাইতেছে, তা দেখলে আপনার মুখ দিয়া লালা ঝরবে। তেঁতুল গাছের নিচ দিয়া আপনি হাঁটা যান তাইলেও আপনার লালা ঝরবে। দোকানে তেঁতুল বিক্রি হইতে দেখলেও আপনার লালা ঝরবে। ঠিক তেমনি মহিলাদের দেখলে দিলের মাঝে লালা ঝরে। বিবাহ করতে মন চায়। লাভ ম্যারেজ কোর্ট ম্যারেজ করতে মন চায়। দিনরাত মেয়েদের সঙ্গে পড়ালেখা করতেছেন, আপনারা দিল ঠিক রাখতে পারবেন না। রাস্তাঘাটে মেয়েদের সঙ্গে চলাফেরা করতেছেন, আপনার দিল ঠিক রাখতে পারবেন না। যতই বুজুর্গ হন আপনার মনের মাঝে কু খেয়াল আইসা যাবে। এইটা মনের জেনা, দিলের জেনা। এইটা এক সময় আসল জেনায় পরিণত হবে। আপনার রিয়েকশান?
— তেঁতুল আমি খুব পছন্দ করতাম ছোটবেলায়। এখনও জিভে জল চলে আসে তেঁতুল দেখলেই। এত ফুল থাকতে আল্লামা লোকটা তেঁতুল বেছে নিয়েছে কেন? ছেলেরা তো অত তেঁতুল পছন্দ করে না। মেয়েরা পছন্দ করে। সে ক্ষেত্রে বরং কোনও ছেলেকে দেখলে মেয়েদের মনে হতে পারে ছেলেটা তেঁতুলের মতো। স্মার্ট হ্যাঁণ্ডসাম ছেলে দেখলে বরং মেয়েদের লালা আসাটা স্বাভাবিক। ছেলেদের, ধরা যাক, কোনও কারণে লালা ঝরলো। তা ঝরলে ক্ষতিটা কী, শুনি! বিয়ে করতে মন চাইলে করবে। এতে অসুবিধেটা কোথায়? সেক্স, বিয়ে, এসব তো অন্যায় কোনও কাজ নয়। অন্যায় কাজ হল, অন্যের আপত্তি সত্ত্বেও গায়ের জোরে সেক্স করা বা গায়ের জোরে বিয়ে করা।
–উফ। আল্লামা শফীর কথার প্রতিবাদ করুন, সিরিয়াসলি করুন।
–একটা অশিক্ষিত মিসোজিনিস্ট কী বললো না বললো, তা নিয়ে অত ভাবছো। কেন? ওই ব্যাটাকে এত মূল্য দেওয়ার কী আছে?
– কী বলছেন, এত সব বাজে কথা বলে পার পেয়ে যাবে? আপনি প্লিজ প্রতিবাদ করুন।
– পার তো পেয়েই যাবে। প্রতিবাদ করলেও পাবে, না করলেও পাবে। লোকটা শুধু কিছু কথা বলেছে। যা বলেছে, সেই মতো কাজ করে লক্ষ লক্ষ লোক প্রতিদিন পার পেয়ে যাচ্ছে। কাউকে তো দোষ দিচ্ছ না। বেচারা আল্লামাকে দোষ দিচ্ছ কেন খামোকা? প্রতিদিন মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মেয়েদের ঘরের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না, যদি যেতেই হয় বোরখা পরে যেতে হচ্ছে, মেয়েদের চাকরি করতে দেওয়া হচ্ছে না, বার্থ কন্ট্রোল করতে দেওয়া হচ্ছে না, মেয়েদের দিয়ে পুরুষের ঘর সংসার সন্তান সামলোনার কাজ করানো হচ্ছে। প্রতিদিন ঘরে বাইরে মেয়েরা যৌনবস্তু হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আল্লামা এসব কথা না বললেও এভাবেই চলছিল সমাজ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারণেই তো চলছিল। একেই তো তোমরা ট্রাডিশান বা কালচার বলো। আল্লামা লোকটা, আমার মনে হচ্ছে, খুব। সৎ লোক। পলিটিক্যালি কারেক্ট হওয়ার কায়দাটা এখনও শেখেনি। ধুরন্ধররা ওসব শিখে নেয় আগেভাগে। তারপর তলে তলে সমাজটাকে নষ্ট করে। আল্লামা কিন্তু নতুন কোনও কথা বলেনি। সবার জানা কথাগুলোই বলেছে।
–একটা মৌলবাদীকে সৎ লোক বলছেন?
–বলছি কারণ লোকটা যা বিশ্বাস করে, তা অকপটে বলে দিয়েছে। সমাজের ভদ্রলোকেরা মনের কথাটা বলে না। লুকিয়ে রাখে। লুকিয়ে রেখে ওপরে আধুনিক হওয়ার ভাব দেখায়। ভাব দেখায় তারা মেয়েদের স্বাধীনতায় আর অধিকারে বিশ্বাস করে। টোকা মেরে দেখ কিছুই আসলে বিশ্বাস করে না। আসলে সবাই প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে ওই আল্লামা শফীর আদর্শে বিশ্বাস করে। আল্লামার আদর্শ তো আসলে আল্লাহ পাকের আদর্শ, হযরতের আদর্শ। কোরানে আছে, শত শত হাদিসেও লেখা আছে এসব কথা চারটে বিয়ের কথা কি আল্লামা প্রথম বললো? ও তো স্বয়ং আল্লাহ পাকই বলে দিয়েছেন। তার পর ধরো, মেয়েদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার কথা, পর পুরুষের সামনে না যাওয়ার কথা। এসব তো হাদিসের কথা। ঘরের বার না হলে, পর পুরুষের সামনে না গেলে তুমি ইস্কুল কলেজে যাবে কী করে শুনি, চাকরি বাকরি করবে কী করে। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করবে, আবার নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করবে, তা তো হয় না! দুটো পরস্পরবিরোধী জিনিস।
–দেশের মানুষ তো আল্লামার মতো এত ছোটলোক নয়।