শিশু-পর্নো নিষিদ্ধ প্রায় সব সভ্য দেশে। শিশু-পর্নোর চাহিদা কিন্তু সব দেশেই প্রচণ্ড। শিশুদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, শিশুরা যন্ত্রণায় কাঁদবে, তা নয় হাসছে। একটা নকল হাসি ঝুলে আছে শিশুদের ঠোঁটে। এসব পর্নো-ছবি দেখে শিশু-ধর্ষণ করার শখ হয় পুরুষের। শিশু-ধর্ষণে ইওরোপ পিছিয়ে আছে, কিন্তু আমেরিকা আর এশিয়া অতটা পিছিয়ে নেই, দক্ষিণ-আফ্রিকায় এটি মহামারির আকার ধারণ করায় এখন সবার ওপরে আফ্রিকা।
চৌদ্দ বছরের কম বয়সী, ঋতুবতী হয়নি এমন মেয়েদের প্রতি যাদের যৌন আক স্বর্ণ, তারা মানসিক রোগী– এ কথা ভিয়েনার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রিচার্ড ক্রাফুএবিং বলেছিলেন ১৮৮৬ সালে। তারপর নানা দেশের নানা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নানা সময়ে ক্রাইএবিংএর মতকে সমর্থন করেছেন। দুরকম শিশু ধর্ষক দুনিয়ায়। প্রথম রকম হল, সত্যিকারের শিশু ধর্ষক, শিশু ছাড়া আর কারও জন্য তাদের কোনও যৌন আকর্ষণ নেই। আরেক রকম ধর্ষকরা শিশু আর প্রাপ্তবয়স্ক দুজনের প্রতিই যৌন আকর্ষণ বোধ করে, যখন যাকে হাতের কাছে পায়, তখন তাকে দিয়েই কাজ চালায়। এরা ধাক্কা খেলে বা থেরাপি পেলে সোজা হয়ে যায়। তবে সত্যিকারের শিশু-ধর্ষককে সুস্থ করা সহজ নয়, তার চেয়ে ওদের মাথার খুলি খুলে মস্তিষ্কের আনাচকানাচে লুকিয়ে থাকা দুশ কিড়ে বার করা সহজ। নাহ, বাড়িয়ে বললাম, আসলে প্রজেস্টারন হরমোন গিলিয়ে পিডোফাইলদের যৌন আকাঙ্ক্ষার বারোটা বাজানো এমন কোনও কঠিন কাজ নয়।
১২ বছর বয়সী এক মেয়েকে এক পাল পুরুষ বীভৎসভাবে ধর্ষণ করতে করতে মেরে ফেলেছে। –এই খবরটি ভারতীয় উপমহাদেশের নানা বয়সের, নানা শ্রেণীর অর্ধলক্ষ লোককে জানাবার পর শতকরা সত্তর ভাগ বলল, পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলো। বাইশ ভাগবলল, মৃত্যুদণ্ড দাও। আট ভাগ ইনিয়ে বিনিয়ে নানা কথা বললো, what about teh menz?, পুরুষদেরও তো মেয়েরা ধর্ষণ করে, তার বেলা?, মেয়েটা নিশ্চয়ই পুরুষদের প্রভোক করার জন্য গায়ে কিছু পরেছিল, বা কিছু মেখেছিল। এদের। কাছে ধর্ষণের সমাধান মূলত দুটো মেরে ফেলো, বা কেটে ফেলো। এ দুটো শাস্তি ধর্ষকদের দিলেই নাকি নাবালিকা ধর্ষণের ইতি ঘটে। ইতি তো ঘটেইনি, বরং আকাশ ছুঁয়েছে। ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হওয়ার পর পর ধর্ষণ বেড়ে গিয়েছিল, মনে নেই?
যে সব দেশে নাবালিকা বা শিশু-ধর্ষণ সবচেয়ে কম, সেসব দেশে পুরুষাঙ্গ কর্তন বা মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি নেই। তবে সেসব দেশে মেয়েদের মর্যাদা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। মেয়েদের স্বাধীনতা এবং অধিকার সেসব দেশে অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি, সেসব দেশে মেয়েরা শিক্ষিত, মেয়েরা স্বনির্ভর, সংরক্ষিত আসনের সুযোগ ছাড়াই সংসদ সদস্যের পঞ্চাশ ভাগই মেয়ে।
নাবালিকা-সাবালিকা সব ধর্ষণই বহাল তবিয়তে চলে সেসব দেশে, যেসব দেশের বেশির ভাগ পুরুষ মেয়েদের ভোগের বস্তু, দাসী-বাঁদি, সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র, বুদ্ধি শুদ্ধিহীন প্রাণী, নিচুজাতের জীব ইত্যাদি হিসেবে বিচার করে; যেসব দেশে পতিতালয় গিজগিজ করছে, শত শত বাচ্চা-মেয়েকে যৌনপাচারের শিকার করা হচ্ছে; যৌন হেনস্থা, ধর্ষণ, স্বামীর অত্যাচার, পণের অত্যাচার, পণ অনাদায়ে খুন– এই দুর্ঘটনাগু লো প্রতিদিন ঘটছে, ঘটেই চলছে।
ধর্ষণ আর যা কিছুই হোক, যৌন সঙ্গম নয়। ধর্ষণ কেউ যৌন-ক্ষুধা মেটানোর জন্য করে না। প্রায় সব ধর্ষকেরই স্থায়ী যৌনসঙ্গী আছে। ধর্ষণ নিতান্তই পেশির জোর, পুরুষের জোর, আর পুরুষাঙ্গের জোর। মোদ্দা কথা, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের পরম পূজনীয় পুরুষাঙ্গের ন্যাড়া মাথায় মুকুট পরানো বা বিজয় নিশান ওড়ানোর আরেক নাম ধর্ষণ।
ধষর্ণ বন্ধ হবে কবে অথবা কী করলে ধর্ষণ বন্ধ হবে? এই প্রশ্নটির সবচেয়ে ভালো উত্তর, যেদিন পুরুষ ধর্ষণ করা বন্ধ করবে, সেদিনই বন্ধ হবে ধর্ষণ। কবে কখন বন্ধ করবে, সে সম্পূর্ণই পুরুষের ব্যাপার। সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিক যে এই দিন থেকে বা এই সপ্তাহ থেকে বা এই মাস থেকে বা এই বছর থেকে নিজের প্রজাতির ওপর ভয়াবহ বীভৎস এইসব নির্যাতন তারা আর করবে না।
পিডোফাইল বা শিশু-ধর্ষক মানসিক রোগী। ওদের মানসিক হাসপাতালে চিকিৎ সার ব্যবস্থা করো। আর বাদবাকিদের আগাপস্তলা সংশোধন করার চেষ্টা করো। কী কারণে নাবালিকা ধর্ষণ করেছে, তার কারণ বার করো, সেই কারণকে নির্মূল করো। আর এদিকে সরকারবাবু তুমি যে মেয়েদের নিতান্তই যৌনবস্তু মনে করছো না, তার প্রমাণ দাও। প্রসটিটিউশান বন্ধ করো, জানোই তো যে প্রতিদিনই ওখানে অগুণতি শিশু ধর্ষিত হচ্ছে। শিশু-পর্নো বন্ধ করো, যেহেতু এসব পর্নো লোককে শিশু-ধর্ষণে উদ্বুদ্ধ করে। রাস্তাঘাটে অফিসে আদালতে দোকান পাটে মেয়েদের যৌন হয়রানি বন্ধ করো, বাল্যবিবাহ বন্ধ করো, পণপ্রথা বন্ধ করো, জাতপাত বন্ধ করো, মেয়েদের শিক্ষিত করো, স্বনির্ভর করো। ইস্কুলের শুরু থেকেইনারীপুরুষের সমানাধিকারের শিক্ষা সব শিশুকে দাও, দিতে থাকে। শিশুরা ভালো শিক্ষা আর ভালো পরিবেশ পেলে মানুষ ভালো হয়। ধর্ষকদের জীবন-কাহিনী ঘাঁটলে দেখা যায় বেশির ভাগেরই বিচ্ছিরি একটা শৈশব ছিল, ভালো শিক্ষা দীক্ষা বলতে কিছুই ছিল না, মারামারি দেখতে দেখতে, ঘৃণা দেখতে দেখতে, পৌরুষিক পাষণ্ডতা দেখতে দেখতে বড় হয়েছে। এগুলোই শিখেছে। শেখা সহজ, না-শেখা সহজ নয়। শিখে ফেলা তন্ত্র-মন্ত্ৰ-পুরুষতন্ত্র আর নারীবিরোধী। কুসংস্কারগুলো যে করেই হোক না-শেখা বা আনলার্ন এর ট্র্যাশনে ফেলতে হবে।