এবারের কথোপকথন ফোনে।
প্র– হ্যালো।
ত– নমস্কার। ভালো আছেন?
প্র– ভালো থাকার কোনও উপায় আছে? কী হচ্ছে এদিকে টিভিতে, দেখছেন তো! যত্তসব। তা আপনি এখনও যাচ্ছেন না যে।
ত– কোথায় যাবো?
প্ৰ– যে কোনও কোথাও চলে যান। আপনাকে কত বার বলবো যে কলকাতায়। আপনি থাকলে গন্ডগোল হবে। রায়ট লাগবে। মুসলিম অরগাইজেশনগুলো খুব বড় প্ল্যান করছে। বুঝতে পাচ্ছেন না আপনি..
ত- আমার তো যাওয়ার কোনও জায়গা নেই।
প্র– কিন্তু কোথাও না কোথাও তো আপনাকে যেতে হবে।
ত– জায়গা যদি না থাকে, তবে যাবো কোথায়?
প্র– কেরালা যাচ্ছেন না কেন?
ত– কেরালাতেও ওই একই ব্যাপার ঘটবে। কেরালা-সরকার আমাকে রাখতে চাইবেন না কেরালায়। ওখানে কিছু যদি একটা ঘটে যায়, সেই ভয় আপনাদের মতো ওঁরাও তো পাবেন। আপনারা নিরাপত্তা দিতে পারছেন না। ওঁরা কী করে দেবেন? আমি পশ্চিমবঙ্গে থাকি, কেরালা সরকার জানেন। কেরালায় কেন ওঁরা আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবেন। মাঝে মাঝে অনুষ্ঠানে দুতিনদিনের জন্য যাই, সেটা আলাদা কথা।
প্র– হুম। আপনাকে গোপন রাখতে হবে ব্যাপারটা।
ত– কী করে গোপন রাখবো। আমাকে গোপন রাখতে দেবে কে? অন্যরা রাখবে না গোপন।
প্র– গোপন রাখা যাবে না কেন? কাউকে বলবেন না আপনি এসেছেন।
ত– আমি তো ঢোল পিটিয়ে কোথাও কিছু বলে বেড়াই না। কিছু কি আর সত্যি গোপন থাকে? জানাজানি হবেই। আমার মনে হয় না গোপনে গোপনে এত বড় একটা কাজ করা যাবে। গোপনে চলে যাওয়া কেরালায়। এসব তো কেরালা সরকার। মানবেন না। আমার পক্ষে সিকিউরিটি ছাড়া কোথাও থাকা সম্ভব হবে না। এত বড় ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না।
প্র– আচ্ছা, আপনি থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুরে কোথাও যেতে পারেন না?
ত– ওখানে কী করে যাবো? ওখানে কাউকে চিনি না আমি। আর কোথায় থাকবোই বা? আমার তো কাড়ি কাড়ি টাকা নেই হোটেলে গিয়ে থাকার।
প্র– আপনি বুঝতে পারছেন না, এখানে বিচ্ছিরি সব বন্দ ট ডাকছে।
ত– আমার মনে হয় না খুব বড় কোনও দল ওরা..
প্ৰ– আপনি না হয় শান্তিনিকেতনেই চলে যান।
ত– শান্তিনিকেতনে?
প্ৰ– ওখানে কেউ নেই আপনার?
ত–না। কেউ নেই।
প্র– আপনার এত বন্ধু বান্ধর, তাদের বাড়ি টাড়ি নেই ওখানে?
ত–আছে কারও কারও। কিন্তু..কী করে বলবো। আপনারা বলুন না, সুনীলদার বাড়ি আছে, ওখানে থাকার ব্যবস্থা হলে হয়তো থাকতে পারি।
প্ৰ– আপনার তো কলকাতা ছাড়তে হবে। কোথাও যান, বুঝলেন। আমাকে জানাবেন শিগরি। দেরি করাটা ঠিক হবে না।
ত– দেখি। আমি চেষ্টা করবো।
আমি সত্যি সত্যি ভাবতে বসি, কোথায় যাওয়া যায়! যদিও আমার মনে হচ্ছে। না খুব মন্দ কিছু ঘটবে। কত কত দিন কলকাতার রাস্তায় নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়াই ঘুরে বেরিয়েছি। শহরে অত শত্রু থাকলে কোনও না কোনও একদিন কিছু ঘটতোই। অন্তত আক্রমণের কোনও চেষ্টা হয়তো হতো। ঠিক বুঝে পাই না কী করবো। হাতের কাছে কোনও বন্ধু নেই যে কথা বলবো এ নিয়ে। দু একজন যাদের সঙ্গে কথা বলি, ওরা বোঝে না কী বলছি আমি। অথবা বুঝলেও এ নিয়ে কী মন্তব্য করবে, তা ঠিক জানে না।
কয়েকদিন পর আবার ফোন প্রসূনবাবুর। তিনি এবার প্রথম কথাটাই বললেন এভাবে
প্ৰ– শুনুন, সিএম বলেছেন আপনাকে কেরালা চলে যেতে। খুব শিগরি, পারলে আজই যান।
ত– কেরালা?
প্ৰ– হা কেরালা। ওখানে সরকারের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। আপনাকে চলে যেতে হবে।
ত– কেরালায় লোকে যখন জানবে আমি ওখানে? ওখানেও তো মুসলমান মৌলবাদী আছে। ওরা বসে থাকবে? কলকাতায় যারা আমাকে মেরে ফেলবে বলছি লেন। ওরা বসে থাকবে? ওরা তো কেরালায় গিয়ে আমাকে মেরে আসবে।
প্র– আপনাকে যেতে হবে যে করেই হোক, সিএম বলেছেন।
ত–হাঁ বুঝতে পারছি। কিন্তু আমাকে তো আমার জীবনটার কথা ভাবতে হবে। আমি তো, আপনি বলবেন, আর, দিব্যি কোথাও মরতে যেতে পারি না। আপনারা যে আমাকে নির্দেশ দিচ্ছেন কলকাতা ছাড়ার জন্য, তা তো আমাকে জানাতে হবে। তা না হলে আমি যদি কেরালায় গিয়ে মরে যাই, মানে কেউ আমাকে মেরে ফেললে দোষ আমার হবে। লোকে বলবে, হঠাৎ আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো, কলকাতা ছেড়ে কেরালায় চলে গেছি! কেন গেছি, কী কারণে গেছি তা না জেনে, লোকে আমাকেই দোষী করবে। গেলে আমাকে জানিয়ে যেতে হবে। লুকিয়ে পালিয়ে চুপিচুপি কোথাও যাবো না।
প্র– না না না এসব ব্যাপার খুব কনফিডেনশিয়ালি করতে হবে। কেউ যেন না জানতে পারে।
ত– গোপন রাখতে চাইলেই তো গোপন রাখা যায় না। আমার চেহারা তো মানুষ চিনে ফেলে, জানেন তো? চিনে ফেলবে। কোথাও গিয়ে নিজেকে লুকিয়ে রাখা যাবে না। আর, আমি কেন গোপন রাখবো, বলুন তো। আমি তো মিথ্যে বলি না। আর মুখ বুজে থাকলেও ওরা কারণ বের করে ফেলবে। গোপনে গোপনে রাজ্যের বাইরে যাবো। কেউ জানবে না কী করতে আমি কেরালা গিয়েছি? সবাই ভাববে শখে গিয়েছি, শখে মরতে গিয়েছি। তা কেন, বলুন! তার চেয়ে জানাই সবাইকে যে যাচ্ছি।
প্র– না না। গোপন রাখতে হবে।
ত– আমি তো গোপন রাখতে চাইছি না। আমি তো চাইছি জানাতে হয় আপনি জানাবেন, নয়তো আমি জানাবো। যে কোনও একজনকে তো জানাতে হবে। আপনাকে বলতে হবে, আপনারা আমাকে কলকাতা থেকে চলে যেতে বলছেন, কারণ। আমার নিরাপত্তা দিতে পারবেন না। অথবা আমাকে জানাতে হবে।