কিন্তু ধর। যেভাবেই হোক… অসুস্থ সুরে ফিসফিস করছে ব্ৰেইলোভক্তি, শুধু ধর যে বোম্যান শেষবারের মতো ফিরে এসেছে শিপে…আর মারা পড়েছে এখানেই।
কার্নো আস্তে করে তার ফেসপ্লেটটা তুলে ফেলার আগে একটা বিরাট নৈঃশব্দভরা সময় বয়ে যায় ডিসকভারিতে। এ সময়টায় ব্ৰেইলোভস্কি ওর দিকে তাকায়নি। যদি আর কারো ছায়া দেখা যায়-এ মানসিক অবস্থায় সেটা বিশ্বাস করে হার্টফেল করে মরে যেতে ও বোধহয় একটুও দেরি করবে না।
জমে যেতে থাকা লাংসের ভিতরে বাতাস ঢোকায় চেহারা কোঁচকায় কার্নো। এরপর নাক কুঁচকে ফেলল ঘৃণায়, এবার বুঝলাম কী বলতে চাও। কিন্তু তোমার চিন্তাকে তোমার নিজের সাথে দৌড়ে পালাতে দিচ্ছ কেন? আমি দশ বনাম এক রেটে বাজি ধরতে রাজি। গন্ধটা গ্যালি থেকে আসছে। সম্ভবত শিপ জমে যাওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে গেছে কিছু মাংস। বোঝাই যায় বোম্যান কর্তা হিসেবে যথেষ্ট ব্যস্ত ছিল। গন্ধটা পরিচিত কেন জানেন? শুনলে হাসবে, অনেক ব্যাচেলরের অ্যাপার্টমেন্ট চিনি যেগুলো থেকে হুবহু এ গন্ধ আসে।
হয়ত তোমার কথাই ঠিক। আশা করি। তেমনি আশা করি…
অবশ্যই আমি ঠিক। আর যদি ঠিক না হই…আরে বাপ, পচা লাশ আর মাংসের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? আমাদের করার মতো কিছু কাজ আছে, ম্যাক্স। যদি ডেভ বোম্যান এখনো এখানে থেকেই থাকে, সেটা বিরাট সুবিধার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে পুরো মিশনের জন্য। আর এ নিয়ে মাথা ঘামানো আমাদের ডিপার্টমেন্টের কাজ না–ঠিক, ক্যাথেরিনা?
সার্জন কমান্ডারের কাছ থেকে কোনো উত্তরই এল না। ওরা শিপের এত ভিতরে চলে গেছে যে, রেডিও কাজ করার রেঞ্জ শেষ। আসলেই তারা শুধু তাদের কাজই করবে। জীববিদ্যা বিভাগের কাজের সাথে প্রকৌশলের তেমন কোনো মিল নেই। আস্তে আস্তে ব্রেইলোভস্কি সাহস ফিরে পায়।
ওয়াল্টারের সাথে কাজের সুযোগ পাওয়াটা ওর জন্যে বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার। আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার প্রায়ই নরম আর বন্ধুসুলভ আচরণ করে। ও পুরোপুরি যোগ্য-আবার দরকার পড়লে পেরেকের মতো কঠিন যা মোটের উপর প্রায় সবকিছু ভেদ করে যায়।
এ দলটা মন্দ না। হয়ত একত্রে ওরা ডিসকভারিকে জীবনে ফিরিয়ে নিতে পারবে, হয়ত পৃথিবীতেও।
১৯. অপারেশন উইন্ডমিল
ডিসকভারি চিরন্তন ক্রিসমাস ট্রির মতো জ্বলে উঠলে ভিতর-বাইরের লাইটগুলো এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ভাসিয়ে দিল আলোয়-লিওনভ থেকে আনন্দের ঢেউ যেন শূন্যের ভিতর দিয়ে এগিয়ে এসে ভরিয়ে দিল পুনর্জন্ম লাভ করা শিপটাকে। সেই আনন্দ ঢেউই হঠাৎ পরিণত হয় আফসোসে। আবার লাইট উধাও।
আধঘণ্টা সব চুপচাপ। ডিসকভারির অবজার্ভেশন উইন্ডোগুলোতে এলার্মের হালকা আলো খেলতে শুরু করে কয়েক মিনিট পর। কার্নো আর ব্রেইলোভস্কি ভিতরে ঘোরাঘুরি করছে-দেখল সবাই। সালফারের হালকা পরতের জন্য ওদের আবছা দেখায়।
হ্যালো…ম্যাক্স, ওয়াল্টার, আমাদের কথা শুনছ? তানিয়া অর্লোভা ডাকল ওদের।
সাথে সাথেই মূর্তি দুটো ঘুরে দাঁড়ায়। নাহ্, শুধু নিজেদের সাথে কথা বলার জন্যই। ডিসকভারির একেক কোণে একেক সময় নানা ধরনের আলো জ্বলে ওঠে। লিওনভ অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে। পোড বের একটা দরজা ধীরে খুলে গিয়ে বন্ধ হয়ে গেল দ্রুত। বড় অ্যান্টেনাটা আড়মোড়া ভেঙে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দশ ডিগ্রি।
হ্যালো, লিওনভ, অবশেষে কার্নোর কণ্ঠ, স্যরি। তোমাদের অপেক্ষায় রাখলাম অনেকক্ষণ। কী করি বল? খুব ব্যস্ত ছিলাম আমরা।
যা দেখেছি তার উপর হিসেব করতে হয়েছে খুব দ্রুত। ডিসকভারি নিয়ে আমাদের ভয়টা ভুল। আশঙ্কার চেয়ে অনেক অনেক ভাল আছে শিপটা। হালের ক্ষতি হিসাবে না ধরলেও চলে। বায়ুচাপ স্বাভাবিকের পঁচাশি ভাগ। ভালভাবেই দম নেয়া যায়-একটা সমস্যা ছাড়া। আমাদেরকে শিপে একটা বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে। চারদিকে স্বর্গীয় দুর্গন্ধ।
সবচে ভাল খবরটা হয়ত জান-পাওয়ার সিস্টেম একেবারে ঠিক। প্রধান রিয়্যাক্টর* মোটামুটি, ব্যাটারিগুলোর আকার আকৃতি খারাপ না। সব সার্কিট ব্রেকার খোলা-হয়ত ডেভ বোম্যান শিপ ছাড়ার আগে ওগুলোকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করেছিল-সুতরাং গুরুত্বপূর্ণ সব যন্ত্রপাতিই নিরাপদে আছে।
কিন্তু শিপকে আবার জীবন দেয়ার সময়ের মধ্যে এগুলোকে সম্পূর্ণ পরীক্ষা করাটা কঠিন হবে আমাদের জন্য।
কতক্ষণ লাগতে পারে? অন্তত লাইফ সাপোর্টগুলো আর ড্রাইভিং জিনিসপত্র ঠিকঠাক করতে? প্রশ্ন করল লিওনভ।
বলা কঠিন, ক্যাপ্টেন। ক্র্যাশ করার আগে হাতে আছে কদ্দিন?
কমপক্ষে এক হপ্তা নেবে চাঁদটার দিকে নেমে যেতে। তুমিতো জানই কীভাবে হিসাবটা ওঠানামা করে।
যাই হোক, যদি কোনো হঠাৎ টানে আমরা নেমে না যাই, আশা করি ডিসকভারিকে একটা নিরাপদ অর্বিটে টেনে নিতে পারব এই দোজখের দরজা থেকে।
কতদিন দরকার?
ও, বলিনি? সপ্তাখানেক।
কিছু দরকার?
না, ম্যাক্স আর আমি বেশ ভালভাবে কাজ করতে পারি। আবার একটা চক্কর মারব এখুনি। পুরো ব্যাপারটা আরেকবার খতিয়ে দেখে নিতে হয় যে…আমার এখন একটাই চাওয়া। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মহাকাশরথটাকে সচল করে তোলা।
ভুল হলে মাফ করো, ওয়াল্টার, কাজটা কি প্রয়োজনীয়? গ্র্যাভিটি মোটামুটি আরামদায়ক বলা যায়। কিন্তু আমরা কোনো অভিকর্ষ ছাড়াই সমাধান করেছি বহু সমস্যার।