- বইয়ের নামঃ এ টেল ট্যু সিটীজ
- লেখকের নামঃ চার্লস ডিকেন্স
- প্রকাশনাঃ বিজ্ঞান একাডেমী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস
এ টেল ট্যু সিটীজ
এ টেল ট্যু সিটীজ – চার্লস ডিকেন্স
প্রকাশ করেছেন : শ্রী রাজর্ষি মজুমদার দেব সাহিত্য কুটীর প্রাইভেট লিমিটেড ২১, ঝামাপুকুর লেন। কলকাতা-৭০০ ০০৯
.
লেখক পরিচিতি
এই বইয়ের লেখক ইংরেজি সাহিত্যের দিকপাল লেখকদের ভিতর চার্লস ডিকেন্স একজন। প্রায় দু’শো বছর আগে তাঁর জন্ম হয়।
ছেলেবেলায় বড় কষ্টে মানুষ হয়েছিলেন তিনি। পেটের জ্বালায় পথে পথে ঘুরতে হত। পরিচিতের কাছে পেতেন শুধু অবহেলা, অপরিচিতের কাছে অপমান। সেদিনকার সে দৈন্যের জ্বালা সারাজীবন তিনি ভুলতে পারেননি। তার নানা বিখ্যাত বইয়ের শিশু ও কিশোর চরিত্রের ভিতর দিয়ে সেই জ্বালাই ফুটে বেরিয়েছে নানা ভাবে।
লেখক হিসাবে তার প্রথম খ্যাতিলাভ হয় ‘ক্রিসমাস কেরল’ প্রকাশিত হবার পরে। বইখানি এখনও লোকের এত ভাল লাগে যে কিছুদিন আগে এক মার্কিন ধনকুবের দু’লক্ষ টাকারও বেশি দাম দিয়ে ওর পাণ্ডুলিপিখানি কিনে নিয়েছেন।
গত শতাব্দীর ইংরেজ লেখকদের ভিতর ডিকেন্স-এর আসন অতি উচ্চে। এ টেল অব টু সিটীজ, পিকউইক পেপার্স, অলিভার টুইস্ট, ডেভিড কপারফিল্ড–তার এ সব বই সারা পৃথিবীতে সমাদর লাভ করেছে। প্রশ্ন হতে পারে–কোন বিশেষ গুণে ডিকেন্স-এর লেখা লোকের এত ভাল লাগে? সে-প্রশ্নের উত্তর হবে এই দলিত নিপীড়িতের উপর গভীর সমবেদনার জন্যই তার লেখা হৃদয় স্পর্শ করে পাঠকের। যখন যে-বই তিনি লিখেছেন, তারই ভিতর ঐ একটা জিনিস সর্বদাই জোরালো হয়ে দেখা দিয়েছে–দুর্বলের উপর প্রবলের অত্যাচার–শিশুর উপর বয়স্কের বা গরিবের উপর ধনীর বা প্রজার উপর রাজার। এমনভাবে তিনি প্রাণের দরদ ঢেলে দিয়েছেন দলিত দুর্বলের উপরে যে তারই গুণে তাঁর রচনা হয়েছে কালজয়ী।
আর একটা কথা। ডিকেন্স-এর সাহিত্যিক প্রতিভা ছাড়াও আর একটি জিনিসকে আমাদের শ্রদ্ধা করা উচিত। সে তার পুরুষকার। পথের ভিখারী শিশু একদিন জগতের পুজো লাভে সক্ষম হল। কী করে হল? প্রতিভার সাথে পুরুষকারের মিলন না ঘটলে এমনটা হয় না। যে শ্রমশীলতা আর অধ্যবসায় ডিকেন্সকে সাফল্যের পথে নিয়ে গিয়েছিল, তা সকল দেশের সর্বকালের কিশোরগণের অনুকরণীয়।
.
এ টেল ট্যু সিটীজ – চার্লস ডিকেন্স
১. গোড়ার কথা
খৃস্ট জন্মের ১৭৭৫ বৎসর পরে।
নভেম্বর মাসের এক সন্ধ্যা। গড় গড় করে একখানা ঘোড়ার গাড়ি ছুটছিল ডোভারের রাস্তা ধরে। মস্ত লম্বা গাড়ি, অনেক লোক তাতে যেতে পারত, কেউ ভিতরে, কেউ ছাদে। তখন রেলগাড়ি ছিল না, ডাক চলাচল করত এই রকম সব ঘোড়ার গাড়িতে। এ গাড়িটাও সেই ডাকগাড়ি।
মাত্র সাতাশ মাইল চওড়া সমুদ্রের খড়ি। নাম তার ইংলিশ চ্যানেল। তার এপারে ইংলন্ড, ওপারে ফ্রান্স। দুই দেশের ভিতর অনবরত লোকের আনাগোনা। এই ডাকগাড়ি ছাড়া সে সব লোকের চলাচলের আর কোন উপায় ছিল না সেকালে। এপারে ওপারে সারা পথটাই চলতে হত ডাকগাড়িতে; মাঝখানে শুধু খাড়িটুকু পার হওয়ার জন্য ছিল জাহাজ।
সেই সন্ধ্যাবেলা।
.
গাড়িখানা একটা ছোট পাহাড়ের নিচে দিয়ে চলেছে। হঠাৎ একজন লোককে ঘোড়া ছুটিয়ে আসতে দেখা গেল সেই গাড়ির দিকে। সে গাড়ির কাছাকাছি এসেই চিৎকার করে উঠলল–”গাড়ি থামাও!”
ডাকগাড়ির চালক গাড়ি থামিয়ে দিলো। অশ্বারোহী তখন গাড়ির কাছে এসে পড়েছে। সে তাড়াতাড়ি দরজার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলো–টেলসন ব্যাঙ্কের মিঃ লরী এই গাড়িতে আছেন কি?
গাড়ির ভিতর থেকে মুখ বাড়িয়ে একটি ভদ্রলোক বললেন–আমিই মিঃ লরী। কি দরকার আপনার বলুন।
লোকটা তখন তার পকেট থেকে একখানা খাম বের করলো। খামের মুখ আঁটা। সেটা মিঃ লরীর দিকে এগিয়ে ধরে বললো–আপনার চিঠি।
–আমার চিঠি!
–হ্যাঁ, ব্যাঙ্ক থেকে দেওয়া হয়েছে, খুব জরুরি চিঠি।
মিঃ লরী লোকটার হাত থেকে চিঠিখানা নিয়ে তাড়াতাড়ি খুলে পড়লেন। চিঠিখানা খুবই ছোট। তাতে লেখা ছিল–
“মিঃ লরী,
ডোভারের রয়্যাল জর্জ হোটেলে দেরি করবেন একটু। সেখানে আসবেন সেই ভদ্রমহিলা। আপনার সঙ্গে তার দেখা হওয়া দরকার!”
এ টেস্ অব টু সিটীজ চিঠিখানা পড়া হয়ে গেলে মিঃ লরী সেখানাকে আবার খামে বন্ধ করলেন; পকেটে রাখতে রাখতে বললেন–আচ্ছা, তুমি এখন যেতে পারো।
অশ্বারোহী নমস্কার করে চলে গেল। তার ঘোড়ার খুরের আওয়াজ একটু একটু করে ঢিমিয়ে এল। দূর থেকে দূরে সরে যেতে যেতে একসময়ে তা একেবারে মিলিয়ে গেল।
ডাকগাড়িখানা আবার ছুটতে লাগলো হাওয়ার বেগে।
পরদিন সকালে ডাকগাড়িখানা এসে দাঁড়ালো রয়্যাল জর্জ হোটেলের দরজার সামনে।
গাড়ি থামতেই হোটেলের সর্দার খানসামা এগিয়ে এসে মিঃ লরীকে খাতির করে উপরে নিয়ে গেল।
টেলসন ব্যাঙ্ক খুব বড় ব্যাঙ্ক। লন্ডন আর প্যারী–এই দুই রাজধানীতেই তার বিশাল কারবার। বিখ্যাত ব্যাঙ্কের সমস্ত কাজ দেখাশোনার ভার মিঃ লরীর উপরে। কাজেই লোক তিনি সামান্য নন। তাঁকে খাতির করবার জন্য যে হোটেলের লোকেরা ছুটে আসবে, একথা না বললেও চলে।
মিঃ লরী হোটেলের ম্যানেজারকে তার জন্য দু’খানা ভাল ঘর ব্যবস্থা করে। দিতে বললেন। তিনি আরও বললেন যে, ঘর দু’খানির একখানিতে থাকবেন একজন তরুণী। তিনিও আজই আসবেন।