- বইয়ের নামঃ ডেজার্ট গড
- লেখকের নামঃ উইলবার স্মিথ
- প্রকাশনাঃ রোদেলা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস
ডেজার্ট গড
১. চর্বির ভাঁজে
ডেজার্ট গড – উইলবার স্মিথ
ভাষান্তর : কাজী আখতারউদ্দিন
চর্বির ভাঁজে থাকা ছোট ছোট চোখদুটো পিট পিট করে, এটন বাও খেলার ছক থেকে মাথা তুলে একপাশে তাকালো। একটু দূরে ত্যামোস রাজবংশের দুই রাজকুমারি উদোম গায়ে উপহ্রদের স্বচ্ছ পানিতে খেলা করছিল। নিরাসক্তভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে সে মন্তব্য করলো, ওরা আর ছোটটি নেই।
নীল নদের ভাটিতে একটি উপহ্রদের পাশে পামপাতার ছাউনির নিচে আমরা মুখোমুখি বসেছিলাম। আমাদের দুজনের মাঝে একটা বাও খেলার ছক পাতা ছিল। খুঁটির পরবর্তী চাল থেকে আমার মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে দেবার উদ্দেশেই সে মেয়েগুলো সম্পর্কে ওই মন্তব্য করেছে তা বুঝতে পারলাম। এটন হারতে পছন্দ করে না, কাজেই কীভাবে জিতবে সে বিষয়ে তার খুব একটা মাথা ব্যথা নেই।
এটন আমার সবচেয়ে পুরোনো এবং প্রিয় বন্ধু। আমার মতো সেও একজন খোঁজা, সেও এককালে ক্রীতদাস ছিল। তবে তার অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও মানসিক দৃঢ়তার কারণে, কৈশোরেই তার প্রভু তাকে অন্যান্য ক্রীতদাসের কাছ থেকে আলাদা করে নিয়েছিলেন। এটন সবসময় তার এই অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করতো, তবে সবধরনের কামনাবাসনা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতো। সে ছিল বহুমূল্য সম্পদের মতো। তাই তার প্রভু তাকে খোঁজা করার জন্য মিসরের সবচেয়ে বিখ্যাত চিকিৎসককে নিযুক্ত করেছিলেন। এখন সে থিবসে ফারাও রাজপ্রাসাদের ব্যবস্থাপনার প্রধান ব্যক্তি। একইসাথে গুপ্তচরদেরও প্রধান। সমস্ত সভ্য জগতজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সংবাদবাহক আর গুপ্তচরদের এক বিশাল চক্রকে সে পরিচালনা করছে। কেবল আরেকটি সংগঠন এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, আর সেটি হচ্ছে আমার সংগঠনটি। আর প্রায় সবকিছুর মতো এই ক্ষেত্রেও আমরা পরস্পরের সাথে বন্ধুত্বমূলকভাবে প্রতিযোগিতা করি আর একজন আরেকজনকে টপকাতে পারলে যে পরিমাণ আনন্দ লাভ করি, তা আর কোনো কিছুতে পাই না।
তার সঙ্গ আমি খুব পছন্দ করি। তার সুপরামর্শ আর উপলব্ধি ক্ষমতা অনেক সময় আমাকে বেশ অবাক করে। আবার মাঝে মাঝে বাও খেলার ছকে সেও আমার দক্ষতা পরীক্ষা করে। সাধারণত উদারভাবেই সে আমার প্রশংসা করে, তবে বেশিরভাগ সময় আমার বুদ্ধির কাছে হার মানে।
এই মুহূর্তে আমরা দুজনেই বেকাথাকে লক্ষ্য করছিলাম। দুই রাজকুমারির মাঝে সে বড় বোনের চেয়ে দুই বছরের ছোট। তবে বয়সের তুলনায় বেশ লম্বা আর ইতিমধ্যেই তার বুক দুটো সামান্য উঁচু হয়ে উঠেছে। মেয়েটি বেশ চটপটে আর সবসময় হাসিখুশি। বেশ উপস্থিতবুদ্ধিও আছে। কাটাকাটা চেহারায় সোজা আর খাড়া নাক, কঠিন চিবুক আর পাতলা ঠোঁট। তামাটে ঘন চুল রোদে ঝিলিক দিচ্ছে। ওর বাবার কাছ থেকে সে এসব পেয়েছে। এখনও তার রজোদর্শন হয়নি, তবে মনে হয় আর বেশি দিন নেই।
আমি তাকে খুব ভালোবাসি, তবে সত্যি বলতে কী তার বড় বোনটিকে একটু বেশি ভালোবাসি।
দুজনের মধ্যে বড়-বোন তেহুতি আরও সুন্দর। যখনই আমি তার দিকে তাকাই তখনই আমার মনে হয় যেন আমি আবার তার মাকে দেখছি। রানি লসট্রিস ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা। হ্যাঁ, একজন পুরুষ যেমন একজন নারীকে ভালোবাসে সেরকমই আমি তাকে ভালেবাসতাম। আমার বন্ধু এটনকে যেমন ছোট থাকতে খোঁজা করা হয়েছিল, আমার বেলায় তা হয়নি। আমাকে যখন খোঁজা করা হয় তখন আমি পুরোপুরি যৌবনে পৌঁছে নারী দেহের আনন্দ বুঝতে শিখেছি। তবে এটা সত্যি, রানি লসট্রিসের সাথে আমার ভালোবাসা কখনও সে পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি, কেননা তার জন্মের আগেই আমাকে খোঁজা করা হয়েছিল। তবে কখনও কামনা-বাসনা মেটাতে না পারলেও তার প্রতি আমার প্রবল ভালোবাসা ছিল। শৈশবে আমি তাকে লালন পালন করেছি, তারপর বড় হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘকাল তার চলার পথে উপদেশ দিয়েছি। কোনো ধরনের কার্পণ্য না করে নিজেকে উজাড় করে ঢেলে দিয়েছি। সবশেষে আমার হাতে মাথা রেখেই সে মারা যায়।
নিচের পৃথিবীতে যাওয়ার আগে লসট্রিস ফিসফিস করে আমাকে কিছু কথা বলেছিল, যা আমি কখনও ভুলতে পারবো নাঃ আমি জীবনে কেবল দুজন পুরুষকে ভালোবেসেছি। আর তার মাঝে তায়তা, তুমি হলে একজন।
এরকম মিষ্টি কথা আমি আর কখনও শুনিনি।
তার রাজকীয় সমাধির পরিকল্পনা আর নির্মাণের তত্ত্বাবধান আমিই করেছিলাম। তারপর সমাধির মাঝে সেই সুন্দর নিথর দেহটি রেখে আমার ইচ্ছা হচ্ছিল আমি নিজেও সেই নিচের পৃথিবীতে চলে যাই। তবে জানতাম তা হবার নয়; কেননা আমাকে তার সন্তানদের দেখাশুনা করতে হবে, যেরকম তারও করেছিলাম। সত্যি বলতে কী এই দায়িত্বটি গুরুভার ছিল না, কেননা এই পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার জীবন আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল।
ষোল বছর বয়সে তেহুতি একজন পুরোপুরি নারীতে পরিণত হয়েছে। তার গায়ের ত্বক চকচকে আর মসৃণ। সরু, নিটোল বাহু আর পাদুটো ছিল একজন নৃত্যশিল্পীর মতোই সুগঠিত। কিংবা বলা যায় তার বাবার সেই বিখ্যাত যুদ্ধের ধনুকের মতো, যা আমি নিজে বানিয়েছিলাম আর তার মৃত্যুর পর সেটা তার শবাধারের ঢাকনির উপর রেখে সমাধিটি সিলমোহর করে দিয়েছিলাম।