- বইয়ের নামঃ দ্য সেভেনথ স্ক্রৌল
- লেখকের নামঃ উইলবার স্মিথ
- প্রকাশনাঃ রোদেলা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস, রহস্য, রোমাঞ্চকর, ভূতের গল্প
দ্য সেভেনথ স্ক্রৌল
১. মরু থেকে চুপিসারে
দ্য সেভেন্থ স্ক্রৌল –উইলবার স্মিথ
অনুবাদ : মখদুম আহমেদ
উৎসর্গ
সিলেটের রিয়াদ আহমেদ এবং তাঁর প্রিয় বন্ধবী নীলাঞ্জনাকে
অঘ্রানের এক রাতে তোমার কক্ষে সমস্ত আয়োজন সেরে রেখেছিলে, আমি জানতাম–আমি জানতাম–তুমি চেয়েছিলে এমনই; অথচ দেখো, আমি নিজেই কেমন হয়ে গেলাম জড়সড়ো। বহু কথা বলছিলে তুমি; অনেক উপলক্ষ্য আমার সামনে দিয়ে অতি দীর্ঘ নদীর মতন বয়ে গেল। আমি ব্যর্থতাকে সঙ্গী করে তবু তাতে ভাসলাম না।
অক্লান্ত তুমি, অনেক বলে বলে শেষমেষ কী যেনো কী খুঁজে পেলে; জানতে চাইলে, সত্যি কী আমি মুটিয়ে গেছি? আমি তোমার অবয়বে এক মুহূর্তের সহস্রভাগের এক ভাগ সময় চোখ বুলিয়ে বলতে চাইলাম, বটে; ভুলে তা হয়ে গেল, না, যে! আমার সামনে অজস্র পাকা ধান; কী আশ্চর্য, ফসল তুলতে পারলাম না।
ভূমিকা
রিভার গড-এর বাংলা সংস্করণ প্রকাশের পর থেকে প্রচুর পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, যারা ই-মেইল, ফোন বা পত্রের মাধ্যমে নিজেদের উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ। যতোটা না লেখক বা অনুবাদক, তার চেয়ে বেশি পাঠক আমি। বিদেশি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার স্বাদ নেওয়ার সময় বারবারই মনে হতো, প্রাচীন মিশরের পটভূমিতে যে প্রচুর সংখ্যক ঐতিহাসিক উপন্যাস আছে, তার একটা ঝলক বাংলায় আসা উচিত। ভয়ও ছিল, বিশাল কলেবর এবং কাহিনীর ধীরগতি হয়তো পাঠকের জন্য সুস্বাদু মনে হবে না। কিন্তু রিভার গড সেই ভয় দূর করেছে। আমি ভাগ্যবান–বাংলাদেশের পাঠক আমার রূপান্তর গ্রহণ করেছেন। উইলবার স্মিথের মিশরীয় পটভূমির উপন্যাসগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়, বিশ্বের বড় বড় সব কয়টি ভাষায় তা অনুবাদিত হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জননী, আমার বাংলায় তা কেন হবে না–এ রকমই একটা জেদ থেকে উইলবারের সাহিত্য-দূত মার্টিন পিক সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কাকতালীয় ব্যাপার, মার্টিন সাহেব ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে ছিলেন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের পক্ষে কাজ করতেন এ ঢাকায়। তার উৎসাহ, উইলবারের সমর্থন আমার আগ্রহ আরো বাড়িয়েছে।
আগে যেমন বলেছি, অনুবাদ সময় সাপেক্ষ এবং অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য কাজ। পেশাগত ব্যস্ততা অনেক সময়েই বাধ সাধে এ কর্মে, তারই ফলে বই প্রকাশে অপ্রত্যাশিত বিলম্ব। আগের মতোই বানানরীতি রইলো এখানেও, যদিও কাহিনীটি অনেকটাই ভিন্নতর।
যারা রিভার গড পড়ে জানতে চেয়েছেন টাইটার তারপর কী হলো, তাদেরকে কেবল এতোটুকু বলি, টাইটা কিন্তু এখনো বেঁচে আমি শুনেছি, এ মুহূর্তে বিশ্বের বেশ কয়টি দেশে তার নাম তালিকার এক নম্বরে আছে, গত আগস্ট মাস থেকেই।
কেমন লাগলো দ্য সেভেন্থ স্ক্রোল, জানার আগ্রহ রইলো।
ডা. মখদুম আহমেদ
ধানমন্ডী, ঢাকা
১৪ জুলাই, ২০০৮
.
মরু থেকে চুপিসারে চলে এলো গোধূলি, সারি সারি বালিয়াড়ি ঢাকা পড়ে গেল রক্ত-বেগুনি ছায়ায়। যেনো মোটা একটা মখমলের চাদরে চাপা পড়লো সমস্ত শব্দ, আর তাই কোমল প্রশান্তি আর মৌন নিস্তব্ধতার ভেতর বিষণ্ণ সন্ধ্যে ঘনালো।
বালিয়াড়ির চূড়ায়, যেখানে ওরা দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে থেকে মরুদ্যান আর মরুদ্যানকে ঘিরে থাকা ছোট্ট গ্রামটা পরিষ্কার দেখা যায়। প্রতিটি বাড়ির সাদা ছাদগুলো সমতল। গায়ে গায়ে, প্রচুর খেজুর গাছ, মুসলমানদের মসজিদ আর কপটিক খ্রিস্টানদের গির্জাগুলো শুধু ওগুলোর চেয়ে বেশি উঁচু। ধর্মীয় বিশ্বাসের দুই স্তম্ভ লেকের দু ধারে পরস্পরের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে।
হ্রদের পানি গাঢ় হচ্ছে, দ্রুত ডানা ঝাঁপটানোর শব্দ, তুলে এক ঝাঁক হাঁস, নলখাগড়া ঢাকা পাড়ের কাছাকাছি নামতে ছলকে উঠে জল।
বড়ো বিপরীত একটা জোড়া ওরা। ভদ্রলোক লম্বা, একটু কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে; অস্তগামী সূর্যের শেষ আলো খেলা করছে রূপালি চুলে। তরুণী মেয়েটার বয়স কম, ত্রিশের কোঠায় হবে, ছিপছিপে, প্রাণচঞ্চল। ঘন, কোঁকড়া কালো চুলগুলো ঘাড়ের পেছনে এক করে বাঁধা।
চলো, ফিরে যাই, আলেয়া আমাদের অপেক্ষায় বসে আছে, তরুণীর দিকে তাকিয়ে সস্নেহে হাসলেন ভদ্রলোক। তাঁর প্রথম স্ত্রী বিগত হওয়ার পর একে বিয়ে করেছেন তিনি। জীবনের সমস্ত সুখ, আনন্দ যেনো ফিরিয়ে এনেছে ও। নিজের জীবন, কাজ সবকিছু নিয়ে দারুণ সন্তুষ্ট একজন মানুষ অধ্যাপক ডুরেঈদ।
তাঁর কাছ থেকে হঠাৎ করেই সরে গেল তরুণী। চুলের ফিতে খুলে দিয়ে বালিয়াড়ির ঢাল ধরে ছুটলো, খিলখিল শব্দে হাসছে।
খানিক দূর নামার পরই তাল হারিয়ে ফেললো সে, পড়ে গেল ঢালু পথের উপর। ওর পড়নের লম্বা পোশাক উপরে উঠে যেতে দৃশ্যমান হলো একজোড়া সুগঠিত বাদামি ঊরু।
বালিয়াড়ির মাথা থেকে হাসিমুখে তাকিয়ে রইলেন ডুরেঈদ। মাঝে-মধ্যে। একেবারে শিশুদের মতো আচরণ করে মেয়েটি। অন্যান্য সময়ে শান্ত, সৌম্য একজন তরুণী সে। ডুরেঈদ এখনো নিশ্চিত নন, ওর কোন ধরনের আচরণ তিনি
বেশি ভালোবাসেন। গড়িয়ে একবারে বালিয়াড়ির নিচে গিয়ে থামলো মেয়েটা; এখনো হাসছে, মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে লাগলো বালি।