- বইয়ের নামঃ সহিহ বুখারী ৩য় খন্ড
- লেখকের নামঃ ইমাম বুখারী
- প্রকাশনাঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন
- বিভাগসমূহঃ ইসলামিক বই, হাদীস শরীফ
সহিহ বুখারী ০৩য় খণ্ড (১৩১৩-১৯১৮)
যাকাত অধ্যায় (১৩১৩-১৪২৪)
হাদীস নং ১৩১৩
আবু আসিম যাহহাক ইবনে মাখলাদ রহ…….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআয রা.কে (শাসকরূপে) ইয়ামান অভিমুখে প্রেরণ কালে বলেন, সেখানের অধিবাসীদের কে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আমি (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল- এ কথার সাক্ষ্যদানের দাওয়াত দিবে। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দিবে, আল্লাহ তাদের উপর প্রতিদিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। তারা যদি এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দিবে, আল্লাহ তাদের সম্পদের উপর সাদকা (যাকাত) ফরয করেছেন। তাদের মধ্যকার (নেসাব পরিমাণ) সম্পদশালীদের নিকট থেকে (যাকাত) উসুল করে তাদের দরিদ্রদের বিতরণ করে দেওয়া হবে।
হাদীস নং ১৩১৪
হাফস ইবনে উমর রহ……….আবু আইয়্যূব রা. থেকে বর্ণিত যে, এক সাহাবী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলল, আমাকে এমন আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি বললেন, তার কি হয়েছে, তার কি হয়েছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তার প্রয়োজন রয়েছে তো। তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে। (ইমাম বুখারী রহ. বলেন) বাহয রহ. শুবা রহ.-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ ইবনে উসমান ও তাঁর পিতা উসমান ইবনে আবদুল্লাহ উভয়ে মূসা ইবনে তালহা রা. আবু আইয়্যূব রা. সুত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেন। আবু আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী রহ. বলেন, (শুবা রহ. রাবীর নাম বলতে ভুল করেছেন) আমার আশংকা হয় যে, মুহাম্মদ ইবনে উসমান -এর উল্লেখ সঠিক নয়, এবং এখানে রাবীর নাম হবে আমর ইবনে উসমান।
হাদীস নং ১৩১৫
মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহীম রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, এক মরুবাসী সাহাবী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এ দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, আমাকে এমন আমলের পথনির্দেশ করুন যা আমল করলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পরব। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, (পাঁচ ওয়াক্ত) ফরয সালাত আদায় করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে ও রমযানের সাওম পালন করবে। সাহাবী বললেন, আমার প্রাণ যার হাতে তাঁর কসম, আমি এর উপর বৃদ্ধি করব না। তিনি যখন ফিরে গেলেন তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : কেউ যদি জান্নাতী লোক দেখতে আগ্রহী হয় সে যেন তার দিকে তাকিয়ে দেখে।
হাদীস নং ১৩১৬
মুসাদ্দাদ রহ……….আবু যুরআ রহ.-এর মাধ্যমে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।
হাদীস নং ১৩১৭
হাজ্জাজ ইবনে মিনহার রহ……….ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ! আমরা রাবীআ গোত্রের লোক, আমাদের ও আপনার (মদীনার) মাঝে মুযার গোত্রের কাফিররা প্রতিবন্ধক হয়ে রয়েছে। আমরা আপনার নিকট কেবল নিষিদ্ধ মাস (যুদ্ধ বিরতির মাস) ব্যতীত নির্বিঘ্নে আসতে পানি না। কাজেই এমন কিছু আমলের নির্দেশ দিন যা আমরা আপনার নিকট থেকে শিখে (আমাদের গোত্রের) অনুপস্থিতদের কে সেদিকে দাওয়াত দিতে পারি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : তোমাদেরকে চারটি বিষয়ের আদেশ করছি ও চারটি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। (পালনীয় বিষয়গুলো হল: ) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা তথা সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। (রাবী বলেন) এ কথা বলার সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )একক নির্দেশক) তাঁর হাতের অঙ্গুলী বন্ধ করেন, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা ও তোমরা গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ আদায় কবে এবং আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি যে,( الدباء) শুস্ক কদু খোলস,( الحنتم) সবুজ রং প্রলেপযুক্ত পাত্র,( النقير) খেজুর কাণ্ড নির্মিত পাত্র,( المزفت) তৈলজ পদার্থ প্রলেপযুক্ত মাটির পাত্র ব্যবহার করতে। সুলাইমান ও আবু নুমান রহ. হাম্মাদ রহ. থেকে বর্ণিত হাদীসে الإيمان بالله شهادة أن لا إله إلا الله এরূপ বর্ণনা করেছেন واو ব্যতীত।
হাদীস নং ১৩১৮
আবুল ইয়ামান হাকাম ইবনে নাফি রহ………..আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিন বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর, আবু বকর রা. -এর খিলাফতকালে আরবের কিছু সংখ্যক লোক মুরতাদ হয়ে যায়। তখন উমর রা.(আবু বকর রা. -কে লক্ষ্য বললেন, আপনি (সে সব) লোকদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন (যারা সম্পূর্ণ ধর্ম ত্যাগ করেনি বরং যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন মাত্র) ? অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন বলার لا إله إلا الله বলার পূর্ব পর্যন্ত মানুষের বিরদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ আমাকে দেওয়া হয়েছে, যে কেউ তা বলল, সে তার সম্পদ ও জীবন আমার পক্ষ থেকে নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের বিধান লঙ্ঘন করলে (শাস্তি দেওয়া যাবে), আর তার অন্তরের গভীরে (হৃদয়াভ্যন্তরে কুফরী বা পা লুকানো থাকলে এর হিসাব-নিকাশ আল্লাহর জিম্মায়। আবু বকর রা. বললেন, আল্লাহর কসম! তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই আমি যুদ্ধ করব যারে সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, কেননা যাকাত হল সম্পদের উপর আরোপিত হক। আল্লাহর কসম ! যদি তার একটি মেষ শাবক যাকাত দিতেও অস্বীকার করে যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে তারা দিত, তাহলে যাকাত না দেওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই যুদ্ধ করব। উমর রা. বলেন, আল্লাহর কসম! আল্লাহ আবু বকর রা. -এর হৃদয় বিশেষ জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত করেছেন বিধায় তাঁর এ দৃঢ়তা, এতে আমি বুঝতে পারলাম তাঁর সিদ্ধান্তই যথার্থ।