তালা খুতে খুলতে গ্রীনকে জিজ্ঞেস করল মার্শাল, তুমি খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছেছ। জানো, কীভাবে কী ঘটেছে?
মাতালের কাছে যা শুনেছে গ্রীন জানাল ওকে। একটা বাংকের ওপর লাশটা তুলল ওরা, মক কম্বল দিয়ে ঢেকে দিল।
হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়াল মার্শাল, দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
কার্লের বিরুদ্ধে তোমার একমাত্র সাক্ষী ছিল ও। এখন ছেলেটা একরকম বেঁচে গেল। প্রমাণ ছাড়া মামলা টিকবে না।
হিসেবি চাল, তাই না? গ্রীনের মুখ থমথমে। কার কাজ বলে মনে হয়? হালামের ফোরম্যান?
গম্ভীরভাবে এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়াল মার্শাল।
কে গুলি করেছে আমি জানি, হার্ভে স্টেজ না, ধীরে ধীরে বলল ও। তবে প্রমাণ করতে পারব না। চল, অফিসে যাওয়া যাক তোমার একটা কথা জানা দরকার।
করিডর ধরে ওরা রওনা হয়েছে, এই সময় চেঁচিয়ে উঠল মাতাল। অ্যাই, মক; তুমি আমাকে একটা লাশের সাথে রেখে যাচ্ছ নাকি?
তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না ও, মক বিরক্ত।
এখন সুস্থ হয়ে গেছি আমি। কসম, সুস্থ হয়ে গেছি। গুলির আওয়াজে কেটে গেছে নেশা।
ধেত্তেরি, বলে সেলের তালা খুলল মক। এবারের মত ছেড়ে দিলাম, টোবি। বাড়ি যাও। আবার স্যালুনে থেমে সবাইকে বল না যেন কী জানো তুমি, বোঝা গেছে? তা হলে কিন্তু এরপর এক মাসের ঘানি।
ধন্যবাদ জানিয়ে একরকম ছুটে পালাল মাতাল। গ্রীন আর মক অফিস ঘরে গেল। সেখানে ওকে স্যাম ট্যানার সম্পর্কে অবহিত করল মক।
হালাম তলব করছে ওকে, আমার বিশ্বাস। এবং এরপর তোমার পালা-যদি আগেই চলে না যাও। আর যাবে না-ই বা কেন তাও বুঝতে পারছি না আমি। কার্ল মোটামুটি বেকসুর খালাস পেয়ে গেছে এখন, কেবল সময়ের ব্যাপার।
মৃদু হাসল গ্রীন। মোটামুটি। না, মক, ওকে আমার ধরতে হবে। এটাই আমার কাজ।
অস্বস্তিভরে মক বলল, আর আমার স্যাম ট্যানারের সঙ্গে দেখা করা।
তুমি না বললে প্রমাণ করতে পারবে না। যাই হোক, ওটা তোমার ব্যাপার, তবে আমি ওর পরবর্তী চালের অপেক্ষায় থাকব।
ঘোৎ করে বিরক্তিসূচক একটা শব্দ করল মার্শাল। দেখা যাক কী হয়। স্যাম ট্যানারের চেহারার বিবরণ দিল ও। জানি না কীভাবে সারবে, তবে কোন অন্ধকার গলিতে ঢুকবে না, খোলা দরজার দিকে পেছন ফিরবে না। এর বেশি কিছু বলতে পারব না আমি। হালামের ছেলের ব্যাপারে কী করবে ভেবেছ কিছু? কোথায় খুঁজবে ওকে? এজরে অন্ধকারে হাতড়ে লাভ হবে না কোন। ও যদি ধরা দিতে না চায়, ওকে খুঁজে পাবে না তুমি।
দুটো বুদ্ধি এসেছে মাথায়, বলে উঠে দাঁড়াল গ্রীন। প্রথমটায় যদি কাজ না হয়, আঙুল বাকাতে হবে।
পিস্তলে তোমার হাত কেমন?
সেরা নই।
স্যাম ট্যানার তাই। অন্তত সেরাদের একজন।
এ ব্যাপারে মাথা ঘামাব না, এখন, এটুকু বলতে পারি। এসব কাজের সবচেয়ে খারাপ দিক এটাই-অযথা চিন্তা করা। দুর্বল করে ফেলে মানুষকে, নিজের ছায়া দেখলেও ভয় পায়। চলি, মক। শুভ রাত্রি। তুমিও খামোকা দুশ্চিন্তা কর না।
চেষ্টা করব, শুকনো গলায় বলল মার্শাল। ওকে স্বর্গীয় হাসি উপহার দিয়ে বেরিয়ে গেল গ্রীন।
১২.
অন্ধকার রাস্তায় বেরিয়ে এপাশ-ওপাশ তাকাল গ্রীন। খোলা দরজা-জানালা গলে ছেড়াখোঁড়া আলো এসে পড়েছে ফুটপাতে। এখন আর হাসছে না ও। জানে এখন থেকে সময় হুশিয়ার থাকতে হবে ওকে। খানিক ইতস্তত করল সে, তারপর ঘুরে মেক্সিক্যান পাড়ায় মারিয়ার ক্যান্টিনার উদ্দেশে রওনা হলো, আলোর বাইরে দিয়ে ফুটপাতের কিনার ঘেঁষে হাঁটছে।
মেক্সটাউনের প্রান্তে শেষ হয়ে গেল ফুটপাত। এখানকার চুন-সুরকির ঝুপড়িগুলোতে আলো কম, ম্লান। গির্জাটা পেরিয়ে গেল গ্রীন, দেখল ভেতরে মিটমিট করে মোম জ্বলছে, উপাসনা করছে জনাকয়েক লোক। জানালার কাছে লালচে আভা ছড়িয়েছে ক্যান্টিনার বাতি। ঢোকার আগে মুহূর্তের জন্য থামল গ্রীন, গতরাতে মারিয়ার বাসার ফটকের বাইরে এক লোক লুকিয়েছিল মনে পড়তে কানখাড়া করে বোঝার চেষ্টা করল আজও সেরকম কেউ আছে কিনা আশপাশে।
সন্দেহজনক কোনকিছু টের পেল না ও। ক্যান্টিনায় ঢুকল গ্রীল, বারে দাঁড়ানো। লোকটাকে দেখে ধক করে উঠল বুক।
লোকটাও তাকিয়েছিল ওর দিকে, বিদ্যুণ্ডমকের মত একটা পরিচয়ের আভাস বিনিময় হলো ওদের মাঝে। গ্রীন তার দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিল। বারের দিকে এগোল সে, ক্ষুদ্রকায় লোকটা থেকে তিন ফুট দূরে থামল।
টেকুইলা,কৃষ্ণকায় বারটেন্ডারকে বলল গ্রীন।
গ্লাসে মদ ঢেলে এগিয়ে দিল বারটেন্ডার, বারের ওপর একটা রৌপ্যমুদ্রা রাখল গ্রীন। একচুমুকে পানীয়টুকু শেষ করল ও, তারপর পাশে দাঁড়ানো লোকটার দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল, তুমি স্যাম ট্যানার। এইমাত্র তোমার ভাষায় একটা কাজ সেরে এসেছ।
নির্লিপ্ত, চোখ দুটো স্থিরদৃষ্টিতে চেয়ে রইল ওর পানে, কিন্তু স্যাম ট্যানার মুখ খুলল না।
নিশ্চয় হালাম তোমাকে বলেছে আমাকে পাওয়া যাবে এখানে, গ্রীন বলল।
আর তুমিও বোধহয় ভেবেছিলে তোমাকে খুঁজে পাব না আমি, মৃদু গলায় বলল, ট্যানার, এক মুহূর্ত পর।
আমি চলে গেলে পেতে না।
হয়তো এখনও খুব দেরি হয়ে যায়নি।
আমাদের একজনের জন্য তাই যাবে, জবাব দিল গ্রীন, লক্ষ করল ঈষৎ কেঁপে উঠল স্যাম ট্যানারের চোখের পাতা। জীবনে বহু বন্দুকবাজক, দেখেছে গ্রীন, অনেকের সঙ্গে লড়াইও করেছে। তার সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতায়, অন্যকিছু না হোক, একটি সত্য সে জেনেছে; অধিকাংশ বন্দুকবাজই হয় কাপুরুষ, প্রতিদ্বন্দ্বীকে মোকাবেলা করার চাইতে আড়াল থেকে গুলি করতেই পছন্দ করে বেশি।