গ্রীনকে চিনতে পেরে থমকে দাঁড়াল ও। মৃদু গলায় বলল, বাহ! লম্বা একটা শ্বাস টানল ফ্লিন্ট! সাহস আছে মানতে হবে। ও কী চায়, ভার্জ?
বলেনি।
একটু আগে আস্ত অবস্থায় বেরিয়ে গেছিল এখান থেকে। এখনকার কথা বলতে পারি না। কী ব্যাপার, গ্রীন? কী চাই তোমার?
রীডকে বলেইছি-তৃপ্তি। কিংবা বলতে পার আমার চিহ্ন রেখে যেতে চাই, অনেক বাচ্চাছেলে যেমন গাছের গায়ে নিজের নাম খোদাই করে। এবার তোমার গানবেল্টটা ফেলে দিয়ে ওই দেয়ালের কাছে যাও।
নিশ্চয়ই, বলেই পিস্তলের দিকে হাত বাড়াল ফ্লিন্ট।
ফ্লিন্টের পিস্তল গর্জে ওঠার এক সেকেন্ড আগে গ্রীন ওর অস্ত্রের ট্রিগার টিপল। বুকে ভারি বুলেটের ধান্ধা লেগে লাটুর মত একপাক ঘুরে গেলু ফ্লিস্ট, হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে গেল কাঠের মেঝেতে। ওর গুলি নিশানার অনেক দূর দিয়ে চলে গেছে। তিক্ত সুরে খিস্তি করল রীড।
না, তুমি কেন এখানে খুন করতে ফিরে আসবে।
দেখেইছ তুমি, কে আগে ড্র করেছে।
অবশ্যই। কিন্তু তুমি ফিরে না এলে কিছুই ঘটত না।
ও আর হাচ আমার ওপর ঝাঁপিয়ে না পড়লেও ঘটত না, গ্রীন বলল কর্কশ সুরে। নাও, এবার তুমি এদিকে এসে কোণের ওই টেবিলটায় চুপ করে বস।
তোমার মতলবটা কী?
দেখতেই পাবে, বুড়ো খোকা। কই, এস!
হাচের ব্যবস্থাও মনে হয় করে ফেলেছ আগেই, বিড়বিড় করে বলল রীড, ছড়িতে ভর দিয়ে মুখ বিকৃত করে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে এল বারের পেছন থেকে। তবে পার পাবে না তুমি, মনে রেখ। চেয়ারে বসে হিংস্র দৃষ্টিতে গ্রীনের দিকে তাকাল ও আইনের লোক হলৈই যা খুশি তাই করা যায় না।
হালাম বুঝি তাই বলেছে তোমাকে? মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইল রীড, বলল না কিছু। আমি পুলিসের লোক না, খেই ধরল গ্রীন। একজন মুখচেনা আসামীর সঙ্গে বসে ড্রিংক করতে বাধরে না আমার। তোমার ব্যাপারটা কী, বুড়ো খোকা? দাঁগী চোর-বাটপারকে আশ্রয় দিয়ে পয়সা কামাও না তুমি? যদিও এখানে ওই টাকা-পয়সা তোমার কোন কাজেই আসবে না। উপহাসের ভঙ্গিতে মুখ বঁকিয়ে এগিয়ে গিয়ে ফ্লিন্টের পিস্তলটা তুলে নিল গ্রীন, আড়চোখে দেখল ভূলুষ্ঠিত লাশটাকে। অন্যখানেও না, বিদ্রুপের সুরে বলল।
প্রত্যেক মানুষেরই বাঁচার অধিকার আছে, মিনমিন করে বলল রীড। আইনের কবল থেকে লুকিয়ে থাকারও–যদি সেটাই চায় সে।
আরও অনেক কিছুরই অধিকার আছে। বিশেষ করে তার সাথে যদি অন্যায় করা হয়ে থাকে।
ঘুরে পিস্তলটা ছুঁড়ে মারল গ্রীন, সামনের জানালার কাঁচ ভেঙে বাইরে গিয়ে পড়ল সেটা। বারের পেছনে গিয়ে হাতের কাছে যতগুলো মদের বোতল পেল শটগানের ব্যারেল দিয়ে সব গুড়িয়ে দিল ও। তরল হুইস্কি সহস্র ধারায় ছড়িয়ে পড়ল চারপাশে, ওর কাপড়চোপড়ে ছিটা লাগল।
এবার বারের ওপর ওর ভারি শরীরটা চাপাল গ্রীন, দেবে যাচ্ছে অনুভব করে দোল খেতে শুরু করল। মেহনত করতে হলো একটু, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোটা জিনিসটাই হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল সামান্য ধুলোর মেঘ উড়িয়ে। নির্বিকার দৃষ্টিতে ওর কার্যকলাপ লক্ষ করতে লাগল রীড। আরও কিছু ক্ষতিসাধন করা যায় কিনা দেখতে চারপাশে নজর বোলাল গ্রীন। কিন্তু ইতিমধ্যে রাগ পড়ে এসেছে, ওর, ফলে অন্য এক অনুভূতি জাগল মনে, পুরো ব্যাপারটাই ছেলেমি হয়ে যাচ্ছে, অথচ তার বোঝা উচিত এখন সে আর ছোটটি নেই। বিরক্তির সঙ্গে কাঁধ ঝাঁকাল ও, রূঢ় স্বরে বলল, হালামের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ নিয়ে নিয়ো। ওর ইশারাতেই তো হয়েছে সব, তাই না?
রীডের মুখের মানচিত্র বদলে গেছে, ভেজা-ভেজা চোখ দুটো সংকুচিত; প্রখর, স্থির
আবার যখন হালাম আসবে তোমার কাছে, তাকে বলবে আমার সঙ্গে যেন লাগতে না আসে, বলে বেরিয়ে গেল গ্রীন। মাইনিং ক্যাম্পে তার যেজন্য আসা তা সফল হয়েছে।
০৬.
উৎফুল্ল মনে অকটিওতে ফিরে যাচ্ছে গ্রীন ভাবছে সেজের ঘটনাবলী যখন জানতে পাবে তখন কেমন হবে হালামের চেহারা। মাইলখানেক চলে এসেছে, চকিতে আরেকটা কথা খেয়াল হলো কার্ল গার্সিয়াদের শীপ র্যাঞ্চে লুকিয়ে থাকা বিচিত্র না। কার্লোস মৃত, ডিউক রিপ হাজতে-ফলে বাসাটা এখন ওর কাছে নিরাপদ মনে হওয়াই সঙ্গত।
হ্যাট ব্রিমের নীচ থেকে চোখ কুঁচকে সূর্যের দিকে তাকাল গ্রীন, অনুমান করল এখন বেলা দুটো হবে। ওর পেছনে, পশ্চিমে, অসংখ্য পাহাড়; হালামের অ্যাংকর র্যাঞ্চ এই পর্বতমালার গোড়ায় অবস্থিত। সামনে দিগন্তবিসারী উত্তপ্ত মরুভূমি, রোদে পুড়ছে। কমলা-হলুদ আলোয় উদাসী রূপ ধরে আছে বন্ধুর প্রান্তর। এখানে-সেখানে সেজ, কিওসোট আর ক্যাকটাসের ঝোঁপ। সূর্যের অবস্থান বিচার করে পথ নির্ণয় করল গ্রীন দক্ষিণপুবে বাঁক নিল, ভাবছে, এ পথে গন্তব্যের কতটা কাছে পৌঁছাতে পারবে ও, নাকি হারিয়ে যাবে মরুভূমিতে।
আরেকটু হলেই ভুল রাস্তায় চলে গিয়েছিল সে। দুই ঘণ্টা বাদে, ক্লান্ত দেহে দীর্ঘ একটা খাড়াই বেয়ে খা বরাবর ঘোড়া হটিয়ে উঠছে ও, হঠাৎ চোখের কোণে বা দিকে সবুজে ঘেরা ঝরনাটা দেখতে পেল। ঘোড়া ঘুরিয়ে ওদিকে এগোল গ্রীন; এক মিনিট পর বাসা আর নড়বড়ে কোরালটা চোখে পড়ল, কিন্তু এতদূর থেকে বোঝা সম্ভব হলো না কাছেপিঠে আর কেউ আছে কিনা।
তাড়াহুড়ো করল না ও, কোন প্রয়োজন নেই তার। জানোয়ারটা যখন পানির গন্ধ পেল তখন অপন:আপনি মাথা সামনে ঝুঁকিয়ে জোরকদমে ছুটতে শুরু করল। মিনিট কয়েক পর ঝোঁপঝাড় ভেঙে ঝরনায় পৌঁছে গেল সে, মুখ ডোবাল অগভীর পানিতে। গ্রীনেরও তেষ্টা পেয়েছিল, ছিলে নামল স্যাঙল থেকে।