হঠাৎ কি মনে হতে হাঁটু গেড়ে বসল ও মাটিতে খানিক হাতড়াতেই হাতে লাগল শক্ত একটা জিনিস। ওর সিক্সগান। ওটা তুলে নিয়ে হোলস্টারে ভরল সে। আবার উঠে দাঁড়াল ও। ধীর পায়ে সামনে এগোল, এলাকাটা রাসলারদের কিনা সেটা বোঝা দরকার।
শেরিফ যেখানে পড়ে রয়েছে তার চারপাশ দিয়ে অনেকখানি জায়গা জুড়ে ঘুরে এল সে। রাসলারদের চিহ্ন দেখা গেল না। শেরিফের কাছে ফিরে এল। আবার। দেখল জ্ঞান ফেরেনি তার। বেচারা বাঁচে কিনা সন্দেহ, ভাবল সে। অসম্ভব দুর্বল লাগছে সলটারের। আস্তে আস্তে শুয়ে পড়ল সে শেরিফের পাশে। চোখ বুজল। কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না।
ঘুম ভাঙতে দেখে চারদিকে আবছা আলো। ডান দিকে গড়িয়ে হাঁটু গেড়ে বসল ও। খানিকবাদেই ভোর আসছে। শেরিফের কথা মনে হতেই ঝুঁকে পরীক্ষা করে দেখল তাকে। যা ভেবেছিল তাই। মারা গেছে শেরিফ রজার হাপার।
শেরিফের মৃতদেহের দিকে খানিকক্ষণ বিমূঢ় হয়ে চেয়ে রইল সলটার। তারপর সংবিৎ ফিরে পেয়ে টলতে টলতে এগোল ঘোড়া দুটোর কাছে।
নিজের ঘোড়াটার স্যাডলে চেপে বসল ও। লাগাম চেপে ধরে ঘোড়ার পেটে স্পার দাবাল। এ কাজটুকু করতে হাঁপিয়ে উঠল সলটার।
সূর্য উঠে গেছে ইতিমধ্যে। ছুটে চলেছে সলটারের ঘোড়া। স্যাডলে বসে থাকার জন্যে রীতিমত কসরৎ করতে হচ্ছে ওকে। প্রায় শুয়ে পড়েছে সে ঘোড়ার। পিঠে। ঘোড়ার কেশর আঁকড়ে ধরেছে ডান হাতে। প্রতি ঝাঁকুনিতেই ব্যথা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেহে।
এ সময় দূরে শোনা গেল গুলির শব্দ, থমকে দাঁড়াল ঘোড়া। বহুকষ্টে স্যাডলে বসে রইল সলটার। খিস্তি করল। খানিক বাদেই শুনতে পেল ঘোড়ার খুরের শব্দ।
হোলস্টারে হাত চলে গেল ওর। সরিয়ে নিল পরক্ষণেই। এদের সঙ্গে এদেরই এলাকায় পারা সম্ভব নয়। মাথা ঘুরে উঠল ওর। ছিটকে পড়ল ঘোড়া থেকে। জ্ঞান। হারাল সে।
ক্ষতস্থানে হাতের চাপ পড়তে জ্ঞান ফিরল ওর। চোখ মেলে দেখতে পেল একটি পরিচিত মুখ। তার বস্। জর্জ ওয়াগনার। মৃদু হাসল জর্জ। ওর চোখে উদ্বেগের ছায়া।
যাক, জ্ঞান ফিরেছে তাহলে, গম্ভীর গলায় বলল র্যাঞ্চার। কি ঘটনা বল তো। হার্পার কোথায়?
সলটার দেখতে পেল জর্জের কাঁধের ওপর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে আরও কয়েকজন। জোহান রয়েছে ওদের মাঝে। বাকিরা বক্স ডব্লিউ-এর কাউহ্যাণ্ড। অনেকখানি স্বস্তি পেল এবার ও। দুর্বল গলায় সব ঘটনা খুলে বলল। ওকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে এখন। একজন হুইস্কির ফ্লাস্ক ধরেছে মুখের কাছে। কঢোক গিলে কাশতে লাগল ও। চোখ পিটপিট করছে।
কয়েকজন লোক ঘোড়ায় চাপার জন্যে যাচ্ছিল। রাসলারদের খোঁজে যাবে। জর্জ ফেরাল তাদের।
বোকামি কোরো না, দ্রুত বলল সে। রাসলাররা সংঘবদ্ধ। ঠাণ্ডা মাথায় সবকিছু করছে তারা। কোনরকম ঝুঁকিতে যাব না আমরা। র্যাঞ্চের সবাইকে জড়ো করতে হবে এখানে। তারপর সবাই মিলে খুঁজতে শুরু করব। বেট, তুমি আর বিলি সলটারের ট্র্যাক অনুসরণ করে শেরিফের মৃতদেহ নিয়ে এস। টমলিন, তুমি শহরে গিয়ে ডেপুটি শেরিফকে সব জানাও আর পসি বাহিনী নিয়ে তাকে এখানে আসতে বল। আমি এখানে অপেক্ষা করব। মার্টিন, তুমি যাবে অসকারের কাছে। তাকে সব বলবে। আমার কথা বললেই সঙ্গে লোক দিয়ে দেবে সে। এবার সবাই মিলে কাজ করব আমরা। দেখি কি করা যায়।
গলায় হুইস্কি পড়ায় খানিকটা ভালবোধ করছে এখন সলটার। এক কাপ কফি দেয়া হল ওকে। সে সঙ্গে ঠাণ্ডা খাবার। গোগ্রাসে গিলল ও। বোঝা গেল ব্যথার চেয়ে খিদেই বেশি রকম কাহিল করেছে ওকে। গোটা কয়েক কম্বল জড়িয়ে দেয়া হল ওর গায়ে। শুয়ে পড়ল সে। শুনতে পেল মিলিয়ে যাচ্ছে খুরের শব্দ। যে যার হুকুম পালন করতে ঘোড়া ছুটিয়েছে। মাত্র কয়েকজন রইল এই অস্থায়ী ক্যাম্পে। এসময় জর্জ এল তার আহত ফোরম্যানের কাছে।
সলটার, ডাকল সে, খুব কষ্ট হচ্ছে? কেবল হাতটা তুলল সলটার। জোহান আমাকে সব বলেছে। আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। আমি যা করতে পারিনি তুমি তাই করেছ। এর দরকার ছিল। আমার গাধাটার কারণে মারাও যেতে পারতে তুমি। ম্যাকগ্রকে শুইয়ে দিয়েছিলে শুনলাম?
হাসার চেষ্টা করল সলটার। বিকৃত দেখাল হাসিটা।
ও সুবিধের লোক নয়, বলল জর্জ। কখন কি করে বসে বলা যায় না। আচ্ছা, এই গানম্যানকে ও-ই পাঠায়নি তো?
বসের কথাগুলো ভেবে দেখল সলটার। গতকালকের আগন্তুক বলেছিল ওকেই খুঁজছে সে। ফ্লিন্ট উডকক গুলি খাওয়ার আগে রাসলারদের বিরুদ্ধে, সরাসরি কোন অ্যাকশনে যায়নি সলটার। তবে কি
জর্জ, তোমার কথাগুলো ভেবে দেখার মত, শান্ত স্বরে বলল সলটার। কিন্তু ম্যাকগ্র শেরিফকে খুন করবে কেন?
শেরিফ পিস্তল ড্র না করলে তাকে হয়ত কিছুই বলত না। শুধু তোমাকে মেরে রেখেই চলে যেত।
হুঁ, বলল সলটার।
ওকে আমি ছাড়ছি না, যে করে থোক খুঁজে বার করবই, বলল জর্জ। তারপর যোগ করল, সলটার, তুমি র্যাঞ্চে ফিরে যাও। তোমার বিশ্রাম দরকার।
ঠিকই বলেছ, দুর্বল কণ্ঠে বলল সলটার। ওঠার চেষ্টা করল সে। আমাকে স্যাডলে তুলে দাও। কদিন বিশ্রাম নিয়ে ফিরে আসব আমি। আসতেই হবে।
জোহানকে সঙ্গে নাও, বলল জর্জ। নয় মাইল মুখের কথা নয়। অসুস্থ শরীরে তোমার একা যাওয়া ঠিক হবে না।
ঘাড় নেড়ে সায় জানাল সলটার।
জোহান কোন প্রতিবাদ করল না। খুশি মনে, সলটারের পাশাপাশি বক্স ডব্লিউ-এ ফিরে চলল। সলটারকে সাহায্য করার জন্যে এ মুহূর্তে ব্যাকুল হয়ে রয়েছে সে। পৌঁছে গেল র্যাঞ্চে।