হঠাৎ সচকিত হল সলটার। কি যেন নড়ে উঠেছে। চোখের কোণে দেখতে পেয়েছে সে। সোজা হল ও। ঘুরে দাঁড়াল।
কতগুলো পাথরের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল এক মুখোশধারী। হাতে উইনচেস্টার।
কে ওখানে? ভারী গলায় প্রশ্ন করল শেরিফ। সলটারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সে। ওদের দুজনের হাতই চলে গেছে পিস্তলের বটে।
কোন চালাকি চলবে না, হুমকি দিল আগন্তুক। হাত তুলে দাঁড়াও। শেরিফ, তুমিও।
অনিচ্ছাসত্ত্বেও আদেশ পালন করল ওরা। আঁধার ভেদ করে দেখার চেষ্টা করল লোকটিকে। কিন্তু মুখোশের কারণে কিছুই চোখে পড়ল না তার।
খিস্তি করল হার্পার। শেষ মুহূর্তে তার হাত ঝলসে উঠল কোল্টের বাঁটে। চিৎকার করে সতর্ক করল সলটার। কিন্তু শুনল না শেরিফ। পরমুহূর্তেই গুলি খেয়ে আর্তনাদ করে উঠল সে। ছিটকে পড়ল। গুলির প্রতিধ্বনি ঢেকে দিল তার আর্তচিৎকার। সলটার একবার কেঁপে উঠতে দেখল শেরিফের দেহ। তারপর স্থির হয়ে গেল শেরিফ।
০৩. আইনের লোকদের সেন্স বলে কিছু নেই
আইনের লোকদের সেন্স বলে কিছু নেই, কর্কশ কন্ঠে বলল আগন্তুক। তবে তোমার আছে। তুমি কে? ঐ বুড়োটার সাথে এখানে কি করছ?
আমি রয় সলটার। বক্স ডব্লিউ-এর ফোরম্যান। রাসলারদের ট্র্যাক অনুসরণ করে এসেছি আমরা। বোধহয় পেয়েও গেছি তাদের একজনকে।
ও, তুমিই সলটার? তোমাকেই তো খুঁজছি। রাসলারদের উৎপাতে বিরক্ত হয়ে উঠেছ, তাই না?
বিদ্রুপের হাসি হাসল, লোকটি, দাঁতে দাঁত পিষল সলটার। সে ভাল করে লক্ষ করতে চেষ্টা করল মুখখাশধারী লোকটিকে। পরে হয়ত কাজে আসতে পারে।
মাঝারি উচ্চতা লোকটির। কাউবয়দের মত পোশাক তার পরনে। আলোর অভাবে রঙটা দেখতে পেল না সলটার।
খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছ নিশ্চয়ই! আমি শিগগির তোমার বিশ্রামের ব্যবস্থা করছি, আবার বলল লোকটি।
বিপদ আঁচ করল সলটার। পেশীগুলো শক্ত হল তার। যে-কোন মুহূর্তে গুলি ছুঁড়তে পারে আগন্তুক। শরীরের ভেতর অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে ওর। অস্বস্তি। তবে সেটা বুঝতে দিল না লোকটিকে।
তোমার কথা বুঝতে পারলাম না, বলল সে। সময় নিচ্ছে আসলে। প্রস্তুত করছে নিজেকে। মরার আগে অন্তত একটা কামড় দিয়ে মরতে চায় ও। তবে। বিপক্ষও সম্পূর্ণ তৈরি রয়েছে বুঝতে পারল সে। দাঁড়িয়ে রয়েছে সলটার। এ অবস্থায় খুব একটা সুবিধে করতে পারবে না ও। তবে চেষ্টা করতে তো আর দোষ। নেই।
আমার কথা বোঝার দরকার নেই, হা হা করে হেসে উঠল লোকটি। রাইফেল তুলল। পরক্ষণেই বুকে প্রচণ্ড বাড়ি খেল সলটার। কয়েক পা পিছিয়ে গেল সে। দুহাত বাড়িয়ে বাতাস আঁকড়ে ধরতে চাইল। চেতনা লোপ পেতে। বসেছে ওর। নানা ধরনের আলোর খেলা দেখতে পাচ্ছে চোখের সামনে। তারপর সব অন্ধকার।
কিসের শব্দে যেন জ্ঞান ফিরল সলটারের। বুকে প্রচণ্ড ব্যথা। চোখ পিটপিট করে চাইল ওপর দিকে। তারাভরা আকাশ। এখন রাত। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। শীতে কাঁপতে লাগল সলটার। কিছুই মনে করতে পারছে না সে। উঠে বসার চেষ্টা করল। হঠাৎই সব মনে পড়ে গেল ওর। এদিক-ওদিক চেয়ে শেরিফ রজার। হার্পারকে খুঁজল ও। দেখতে পেল ঠিক পাশেই পড়ে রয়েছে শেরিফের দেহ। গুঙিয়ে উঠল হার্পার।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সলটার। ব্যথায় বিকৃত হল মুখ। অতিকষ্টে শেরিফের শরীরের ওপর ঝুঁকে পড়ল সে। এই সামান্য পরিশ্রমেই মাথা ঘুরতে লাগল ওর। মনে হল জ্ঞান হারাবে আবার।
বুকে হাত দিল সলটার, বাঁ দিকে কাঁধের ঠিক নিচে লেগেছে গুলিটা। রক্ত শুকিয়ে এসেছে প্রায়। শার্টের ভেতর ডান হাত ঢোকাল সে। মৃদু চাপ দিয়ে। পরীক্ষা করল ক্ষতস্থান। দাঁতে দাঁত পিষে সহ্য করল ব্যথাটা। শার্ট খুলতেই দেখল বাঁ কাঁধের মাংস ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে গুলিটা। গুলির সময় দ্রুত পাশ ফিরেছিল সে। তাতেই বেঁচে গেছে।
বাঁ হাত অকেজো হয়ে গেছে এ মুহূর্তে। শেরিফের শরীরের ওপর আবার ঝুকল সে। এখনও গোঙাচ্ছে বেচারা। ডান হাত দিয়ে ওর শার্টের বোতামগুলো খোলার চেষ্টা করতে লাগল সলটার। শার্ট খুলে আঙুল দিয়ে ক্ষতস্থান খুঁজতে লাগল ও। বুকের বাঁ দিকে পাওয়া গেল গর্তটা। পাঁজরের ওপর দিকে লেগেছে গুলিটা। বুঝল শেরিফ গুরুতর আহত। পুরো ঘটনাটাই ঘটানো হয়েছে ঠাণ্ডা মাথায়। লোকটির মুখ আর শরীর স্মরণ করার চেষ্টা করল ও। কিন্তু চেতনা অসাড় হয়ে আসায় ব্যর্থ হল সে।
শেরিফ, আমার কথা শুনতে পাচ্ছ? ফাসফেঁসে গলায় প্রশ্ন করল ও। গুঙিয়ে উঠল শেরিফ। ব্যথা সহ্য করে কোনমতে উঠে দাঁড়াল সলটার। ক্ষতস্থানে হাত চলে গেল আবার। বার করে এনে দেখল রক্তপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। খানিকটা স্বস্তি পেল সে। রক্ত শুকিয়ে জমে গেছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ফুটো, কিন্তু বেশি নড়াচড়া করলে যে-কোন মুহূর্তে আবার রক্তপাত শুরু হতে পারে।
ওদের ঘোড়া দুটো দাঁড়িয়ে রয়েছে তখনও, ব্ল্যাংকেট রোল দুটো শেরিফের কাছে নিয়ে আসতে কঠোর পরিশ্রম করতে হল ওকে। দীর্ঘ সময় ধরে ব্ল্যাংকেট রোল দুটো খুলল ও। তারপর চাপা দিল শেরিফের গায়ে।
পরে চারদিকটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল ও। বুঝে পেল না রাসলারদের গোপন আশ্রয়ে এসে পড়েছে কিনা। যদি তাই হয় তবে সেই গানম্যান নিশ্চয়ই ওদের গার্ড। এবং ওরা এখনও বাঘের ঘরে রয়েছে। এ মুহূর্তে এখান থেকে পালানো অসম্ভব। দুজনেই আহত ওরা।