ওই তিনজন কারা হতে পারে? প্রশ্ন করল জোহান।
জানি না, জবাব দিল সলটার। তবে আমরা ট্র্যাক অনুসরণ করব। তুমিও থাকতে পার আমাদের সাথে। হয়ত কিছু বেরিয়েও যেতে পারে। ডজন খানেক রাসলার আছে এ দলে, কোন সন্দেহ নেই। আর ওদের হেডকোয়ার্টারও রয়েছে এ রেঞ্জেই। আমি পাহারার ব্যবস্থা করতে চাই। অবশ্য সব র্যাঞ্চারের সঙ্গে আলাপ করেই যা করার করব। রাসলাররা ধরা না পড়া পর্যন্ত পাহারার ব্যবস্থা থাকবে।
আমিও থাকতে চাই, বলল জোহান।
যেখানটাতে ফ্লিন্টকে গুলি করা হয়েছিল সেখানে এসে পড়ল ওরা। শেরিফ নজর বোলাল চারপাশে। তারপর রাসলারদের ট্র্যাক অনুসরণ করে অসকারের র্যাঞ্চে চলে এল ওরা। এ পথ দিয়েই রেড রিজের দিকে পালিয়েছে গরু চোরের দল।
কাজটা কঠিন, বলল শেরিফ। আরও লোক লাগবে।
সে তোমার ব্যাপার, পাল্টা বলল সলটার। আমি কাজ চালিয়ে যাব। জোহান, তুমি র্যাঞ্চে ফিরে যাও। তোমার বাবাকে সব কথা বলবে। আর জো, মার্টিন আর বেটকে নিয়ে ফিরে আসবে।
ওরা আসতে চাইবে না, জোহান বলল। আজ রবিবার। ওরা হয়ত শহরে যেতে চাইবে। সবাই তো আর তোমার মত নয়।
তবে তুমি তাকে নিয়ে এস গে, শেরিফকে বলল সলটার। আমি আর জোহান থেকে যাই। কি বল? প্রশ্ন করল সে।
আগে জানা দরকার ট্রাকগুলো কোথায় গেছে, গম্ভীর স্বরে বলল শেরিফ। চিন্তিত। অসকারের বাড়ি এখান থেকে সাত মাইল দূরে। এপথ ধরে গেলে লয়েডের র্যাঞ্চের কাছাকাছি পৌঁছব আমরা। তাই না?
হ্যাঁ, বলল সলটার।
ঘোড়া দাবড়াল, ওরা। ঘণ্টাখানেক পরে রেঞ্জ পেরিয়ে গেল, তিনজনে। রিজ কান্ট্রির পাহাড়গুলোর কাছে পৌঁছল ওরা। রুক্ষ জমি। ভাঙা-চোরা। ঘাস প্রায় চোখেই পড়ে না এখানে। বিশাল সব পাথর পড়ে রয়েছে এখানে ওখানে।
আকাশের দিকে চাইল সলটার। রোদ মরে এসেছে। খুব বেশিদূর আজ আর এগোনো যাবে না। এখনও ট্র্যাক অনুসরণ করছে ওরা। চারদিক নিঃশব্দ। ঘোড়ার খুরের শব্দ ছাড়া আর কিছু কানে আসছে না।
এখানেই থামা যাক, আচমকা বলল শেরিফ। রুক্ষ জমিতে দীর্ঘায়িত হচ্ছে ওদের ছায়া। সারা রাত এভাবে চললেও বোধ হয় পথ ফুরোবে না। রাসলাররা বোকা নয়। ওরা সরাসরি, আস্তানায় ফেরেনি। পসি অনুসরণ করতে পাঞ্জে, সেই ভয়ে। খুব সম্ভব আশপাশের কোন শক্ত জমিতে ট্রাক নষ্ট করে নিয়েছে। তারপর ফিরে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ে।
হতে পারে, ঘোড়া থেকে লাফিয়ে নামল সলটার। সতর্ক দৃষ্টিতে চাইল মাটির দিকে। কলোরাডো সীমান্তের কাছাকাছি এসে গেছে তারা। যে কোন মুহূর্তে পাথুরে জমিতে ট্র্যাক হারিয়ে ফেলতে পারে। তবে আশা ছাড়ল না সে।
এখন কি করতে চাও? অসহিষ্ণু গলায় সলটারকে প্রশ্ন করল জোহান। সূর্য ডুবে যাচ্ছে। খানিকবাদে আর ট্র্যাক দেখা যাবে না। সঙ্গে লোকও নেই যে ক্যাম্প করব। আপনি কি বলেন, শেরিফ?
কি আর বলব। সব সময় যা করি এবারও তাই করতে হবে। ফিরে যাব, হতাশ গলায় বলল শেরিফ। এপর্যন্ত এসে বারবারই ব্যর্থ হয়েছি আগেও।
না, তীক্ষ্ণকণ্ঠে বলল সলটার। কিছুতেই না, ট্র্যাক ফুরানো না পর্যন্ত যাব আমরা। তিনজন আছি, তিনদিকে যাব।
খামোকা সময় নষ্ট করছি আমরা। তারচেয়ে বরং ফিরে গিয়ে পসি বাহিনী পাঠাই। পুরো এলাকা চষে চোরদের খুঁজে বার করবে। আমি বলছিলাম কি, সলটার, এখনকার মত ফিরে যাই চল, মিনমিন করে বলল শেরিফ।
তুমি চাইলে ফিরে যেতে পার, বলল সলটার। আবার রওনা দেয়ার প্রস্তুতি নিল সে। জোহান, তুমি র্যাঞ্চে গিয়ে লোক নিয়ে এস। যত দ্রুত সম্ভব। সাথে কদিন চলার মত খাবার আর পানিও আনবে। দেখ আবার শহরে চলে যেয়ো না।
কি যে বল না তুমি, অভিমান ঝরে পড়ল জোহানের কণ্ঠে। শহরে আর যাই কিনা সন্দেহ।
না গেলেই ভাল, দৃঢ়তার সঙ্গে বলল সলটার। এখন চটপট রওনা হয়ে যাও। আমি চিহ্ন রেখে এগোব। তুমি ওদের নিয়ে ঠিক এখানটাতে ফিরে আসবে। তোমরা আসার আগেই রাত হয়ে যাবে। কাজেই ক্যাম্প করে কাল ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পার। তারপর আমাকে অনুসরণ করবে।
আপনি কি করবেন? শেরিফের দিকে চেয়ে জানতে চাইল জোহান।
তুমি গিয়ে লোক নিয়ে এস। আমি সলটারের সঙ্গে যাব। কাল দেখা হবে আশা করি, বলল শেরিফ।
মাথা ঝাঁকাল জোহান, উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে সে। ঘোড়া ছোটাল। সেদিকে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে লাগাম ঝাঁকাল সলটার। চলতে শুরু করল ঘোড়া। শেরিফ সঙ্গ নিল ওর।
সন্ধে ঘনিয়ে এসেছে। পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে সূর্য। এখনও অবশ্য সলটারের চোখে পড়ছে ট্র্যাক। রিজ কান্ট্রির দিকে এগোল ওরা।
ঘন কালো ছায়া এখন ওদের চারপাশে। চুপ করে রয়েছে শেরিফ, ফলে কেমন যেন একটা একাকীত্ব ঘেঁকে ধরেছে সলটারকে।
দাগ চোখে পড়ছে, সলটার? প্রশ্ন করল শেরিফ। তোমার চোখ তো আমার চেয়ে ভাল।
দাগ-টাগ পরে। আগে একটা ভাল জায়গা চোখে পড়ে কিনা দেখি, জবাবে বলল সলটার। রাতটা কাটাতে হবে। কাল খুব ভোরে আবার খুঁজতে শুরু করব।
স্যাডল থেকে নামল ওরা। চারদিকে পাথরের স্তূপ। সলটার বুঝতে চেষ্টা করল কোথায় রাত কাটাবে।
আমার তৈরি হয়ে আনা উচিত ছিল, বলল শেরিফ। বোঝা উচিত ছিল বাইরে রাত কাটাতে হতে পারে। আসলে রাসলারদের দোষ নেই! সব দোষ আমার এই বুড়ো গর্দভের।
কথাগুলো মিথ্যে সেটা তুমি নিজেও জান, মৃদু হেসে বলল সলটার। তোমার যোগ্যতা সম্বন্ধে কারও কোন সন্দেহ নেই। দোষ আমাদের কপালের।