ম্যাকগ্রর মুখে কথা সরল না। সলটারের চেহারা রাগে থমথম করছে। ম্যাকগ্রর সঙ্গের লোকগুলো পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। কোনমতে উঠে দাঁড়াল জোহান। টলতে টলতে এগোল সলটারের দিকে।
সোজা গিয়ে ঘোড়ায় চাপ। আমার সঙ্গে র্যাঞ্চে ফিরবে তুমি, হুকুমের ভঙ্গিতে ওকে বলল সলটার। কিছু একটা বলার জন্যে মুখ খুলল জোহান। যা বলছি কর। তুমি কি চাও কেউ মারা যাক? প্রশ্ন করল সলটার।
কে মরবে? তুমি না আমি? তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল ম্যাকগ্র। চোখ দুটো তার ধকধক করে জ্বলছে। সলটার বুঝল যে-কোন মুহূর্তে আক্রমণ হতে পারে।
সেটা ভাল করেই জান, শান্ত কণ্ঠে বলল সে।
তোমাকে মজা দেখাতাম, ধীরে ধীরে বলল ম্যাকগ্র। কেবল আইন অমান্য করতে চাই না বলে ওকে কথা শেষ করতে দিল না সলটার।
আইনের কথা তোমার মুখে আগে কখনও শুনিনি, শান্তস্বরে বলল সে। সত্যি কথাটা স্বীকার করতে লজ্জা কিসের? আসলে আমাকে ভয় পাও তুমি।
মুঠো পাকিয়ে তেড়ে এল ম্যাকগ্র। সলটারের চেয়ে অনেকখানি লম্বা সে। ওজনেও বেশি। কিন্তু সেজন্যে মোটেও ভীত নয় সলটার। প্রস্তুত সে। ম্যাকগ্রর ডান হাতের ঘুসিটা আসতেই বাঁ হাত তুলল সলটার। হাতুড়ির বাড়ি পড়ল যেন হাতে। পরক্ষণেই পাল্টা আঘাত হানল সে। চোয়ালে প্রচণ্ড ঘুসি খেয়ে, টলতে টলতে কয়েক কদম পিছিয়ে গেল ম্যাকগ্র। সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগাল সলটার। সামান্য এগিয়ে এসে আরও গোটা কয়েক ঘুসি বসাল ওর নাকে মুখে। ফ্লোর আঁকড়ে ধরল ম্যাক, চোখে আঁধার দেখছে। মুহূর্ত পরেই ধেয়ে এল সে, গোয়ারের মত। বোধ বুদ্ধি প্রায় লোপ পেয়েছে তার। সামান্য সরে গেল সলটার। তার ডান হাতের প্রচণ্ড ঘুসিটা লাগল ম্যাকগ্রর চোয়ালে। আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হল না ম্যাকগ্রর পক্ষে। আর্তনাদ করে উঠল সে। দড়াম করে পড়ে গেল স্যালুনের মেঝেতে। ঠোঁট আর নাক ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে, ফুলে উঠেছে চোয়াল। হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে রইল ও। বিশাল বুকটা হাপরের মত ওঠা-নামা করছে।
আর কেউ আছে? দর্শকদের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল সে। শক্ত দেখাচ্ছে তার মুখ। কেউ টু শব্দটি করল না। র্যাফটার ও-র লোকগুলো হতবাক হয়ে গেছে বিশালদেহী ওস্তাদের দুরবস্থা দেখে। ঠিক আছে, বলল সলটার। খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে এল সে। জোহানের দিকে চেয়ে বলল, এখনও দাঁড়িয়ে আছ? তোমাকে ঘোড়া রেডি করতে বলেছিলাম না?
ওর কথায় মাথা নেড়ে সায় জানাল জোহান। মেঝেতে শুয়ে থাকা ম্যাকগ্রর দিকে একবার দেখে নিয়েই প্রায় ছুটে বেরোল স্যালুন থেকে।
বক্স ডব্লিউ-এর লোকজনের সঙ্গে লাগতে এস না। সবাইকে সাবধান করে দিচ্ছি, অসকারের র্যাঞ্চের লোকগুলোর উদ্দেশ্যে বলল সলটার।
ঘুরে দাড়াল কথা শেষ করেই। বুটের শব্দ তুলে বেরিয়ে গেল স্যালুন ছেড়ে। ঘোড়র কাছে পৌঁছে স্যাডলে চেপে বসল। স্যালুনের দরজার দিকে এক ঝলক চাইল সে। নাহ্ কোন সাড়াশব্দ নেই। পিস্তলের বাঁট থেকে হাত সরিয়ে নিল ও। ঘোড়া হোটাল আস্তাবলের দিকে। দ্রুতবেগে। আস্তাবলে ঢুকে জোহানকে ঘোড়ায় স্যাডল পরাতে দেখল সে। শেরিফও রয়েছে খানিকটা দূরে। ঘোড়া রেডি করছে। ওদের সঙ্গে যাবে।
মাফ করে দিয়ো সলটার, বলল জোহান। আমার ভুলের জন্যে সত্যিই কেউ মারা যেতে পারত। আমি ভাবতেও পারিনি ওরা আমার পক্ষ নেবে।
ওরা তোমার পক্ষ নেয়নি, জোহান, হালকা ভাবে বলল সলটার। ম্যাকগ্র বহুদিন ধরে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। আমাকে শায়েস্তা করতে চায়। তোমার অজুহাতে সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইছিল।
ভাল শিক্ষা পেয়েছে ম্যাকগ্র, বলল জোহান। জীবনেও ভুলবে না।
তাই? শ্রাগ করল সলটার। শেরিফ এগিয়ে এল এসময়। ওদের কথা কানে গেছে তার। আজকের ব্যাপারটা তোমাকে একটু ভেবে দেখতে অনুরোধ করছি, জোহানকে বলল সলটার।
কি হয়েছে, সলটার? প্রশ্ন করল শেরিফ। কোন গোলমাল?
সব দোষ আমার, মাথা নিচু করে বলল জোহান। শেরিফকে খুলে বলল পুরো ঘটনাটা। সলটার লক্ষ করল শক্ত হয়ে উঠল শেরিফের মুখের পেশীগুলো।
সলটার, ম্যাককে তো চেনই। ও তোমাকে ছেড়ে দেবে না। যেভাবেই হোক এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে চেষ্টা করবে, বলল শেরিফ।
আমি ওর প্রতি লক্ষ রাখব, দাঁতের ফাঁকে বলল সলটার। আমি ফোরম্যান। হওয়ার পর থেকেই আমার ওপর খেপে রয়েছে ও। জোহান, দেখলেই তো ওরা কেমন, দোহাই তোমার, ওদের কাছ থেকে দূরে থাক।
সে আর বলে দিতে হবে না, বোদ্ধার মত বলল জোহান। চল, রওনা দিই, বাবার সঙ্গে কথা আছে আমার।
শেরিফও যোগ দিল ওদের সঙ্গে। তিনজনে বেরিয়ে এল রাস্তায়। চলল শহর ছেড়ে। কেউ কথা বলছে না। তবে সলটারের মাথায় কেবল ঘুরপাক খাচ্ছে স্যালুনের ঘটনাটা। ম্যাকগ্রর চোখের দৃষ্টি ভাল লাগেনি ওর। কি ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছে। কে জানে। আচ্ছা, বাবাকে কি ম্যাকগ্রই মেরেছে? বাবার সঙ্গে সেদিন ম্যাকগ্রও বেরিয়েছিল। ভাবনাগুলো খোঁচা দিচ্ছে মনে। ব্যাপারটা তলিয়ে ভেবে দেখতে হবে।
আপনি কোথায় চলেছেন? জোহান জিজ্ঞেস করল শেরিফকে। রেঞ্জে কিছু হয়েছে?
হ্যাঁ, শেরিফ র্যাঞ্চের ঘটনা খুলে বলল জোহানকে।
আমি আপনাদের পাশে আছি, বলল জোহান। ওর বলার ভঙ্গিতে এমন একটা দৃঢ়তা আছে যার ফলে ওর দিকে চমকে তাকাল সলটার। কিন্তু ওর চেহারা দেখে কিছু আন্দাজ করতে পারল না সে।