জোহানের ডানপাশে বসেছে ম্যাকগ্র। বছর চল্লিশেক বয়স। লম্বা। পেশীবহুল শরীর। গোল মুখটাতে অসংখ্য ভঁজ। চোখ দুটো থেকে যেন সবকিছুর প্রতি বিতৃষ্ণা ঝরে পড়ছে।
হঠাৎ চোখ তুলে চাইল সে। চোখাচোখি হল সলটারের সঙ্গে। ম্যাকগ্রর মুঠো শক্ত হল হাতের কার্ডগুলোতে। পরক্ষণেই চোখ নিচু করে আবার খেলায় মন দিল সে।
জোহান, তোমার সাথে কথা আছে, নরম গলায় ডাকল সলটার।
ওর দিকে চাইল জোহান। ক্ষণিকের জন্যে বিরক্তি দেখা দিল তার চোখে। তারপর মৃদু হাসল।
কি খবর, সলটার? বাবা পাঠিয়েছে?
কাজে এসেছিলাম। ভাবলাম খোঁজ নিয়ে যাই, বলল সলটার।
বাবা-ছেলের বিবাদ মেটাতে মেটাতে বিরক্ত হয়ে গেছে সে। সলটার নিজে নির্বিরোধী লোক। পারিবারিক অশান্তি মোটেও পছন্দ নয় তার। তবু জড়িয়ে পড়তে হয় এসবে। বাবা-ছেলের বিরাদকে কাজে লাগাচ্ছে ম্যাকগ্র। উৎসাহিত করছে ওর অর্ধেক বয়সী জোহানকে। মাঝখান থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বক্স ডব্লিউ এর প্রত্যেকে।
তুমি বারে গিয়ে ড্রিংক নাও। আমার কথা বললেই হবে। আমি আসছি, ওর দিকে না চেয়েই বলল জোহান।
থ্যাংকস, বারের দিকে হাঁটা দিল সলটার। এ সময় কানে এল ম্যাকগ্রর গলা। নিচু গলায় বলল কি যেন। ওকে উদ্দেশ্য করে বলেছে বুঝতে পারল সলটার। লাল হয়ে উঠল তার মুখ। শক্ত হল মুঠো। তবে ফিরল না সে। এগিয়ে গেল বারটেণ্ডারের দিকে। বিয়ারের অর্ডার দিল। বারের পেছনের আয়নাটায় চোখ গেল ওর। দেখল ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে ম্যাকগ্র। ওর স্যাঙাত্রা হাসছে। কেবল মাথা নিচু করে বসে রয়েছে জোহান। অস্বস্তি বোধ করছে সে।
রাগে গা জ্বলে গেল সলটারের। বহুকষ্টে নিজেকে সংযত করল সে। ফালতু ঝামেলায় জড়ানো ঠিক হবে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল ও। মৃদু চুমুক দিচ্ছে বিয়ারের ক্যানে। এসময় বারের কাছে এল জোহান।
বিশটা ডলার হবে, সলটার? প্রশ্ন করল সে।
অত টাকা নিয়ে ঘুরি না আমি।
মিথ্যে বল না, বক্স ডব্লিউতে তুমি আমার একমাত্র বন্ধু। অথচ বিশটা ডলার ধার দিতে পারছ না?
তোমাকে ধার দিলে টাকাটা যাবে ম্যাকগ্রর পকেটে। কাজেই দেব না।
ঠিক আছে। তোমাকে চিনলাম-বলল জোহান।
আমার কিছু করার নেই, জোহান। তোমাকে আমি ঘোড়া আর অস্ত্র চালাতে শিখিয়েছি। কিন্তু ভাল-মন্দের পার্থক্য এখনও শেখাতে পারিনি। আবার বলছি, জোহান এই লোকগুলো ভাল নয়। এদের সঙ্গে মিশে নিজেকে নষ্ট কর না। নিজেকে পুরুষ ভাবছ তুমি। অথচ সেটা প্রমাণ করতে পারছ না।
থাক আর শুনতে চাই না। এসব কথা অনেক শুনেছি। তোমরা সবাই এক, চিৎকার করে উঠল জোহান। স্যালুনের সবার চোখ এখন ওদের দিকে। একদৃষ্টে এ দিকেই চেয়ে রয়েছে ম্যাকগ্র আর তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা।
আবার শোনা গেল জোহানের চিৎকার। বাবার সঙ্গে জাহান্নামে যাও তুমি। দালাল কোথাকার। আমার পৌরুষ নিয়ে কথা বলে আবার আমার বোনের পিছে ঘুরঘুর করে। কাপুরুষ। সাহস থাকলে তানিয়ার মুখোমুখি দাঁড়াও গিয়ে যাও।
ঝলসে উঠল সলটারের ডানহাত। প্রচণ্ড ঘুসিটা লাগল জোহানের বাঁ গালে। ছিটকে পড়ল সে।
কয়েকটা চেয়ার সরানর আওয়াজ কানে এল সলটারের। এগিয়ে আসছে ম্যাকগ্র, ধীর পদক্ষেপে। পেছনে তার দলের লোকেরা। ওর উদ্দেশ্য স্পষ্ট বুঝতে পারছে সলটার। দীর্ঘদিন ধরে বোধহয় এমন একটা সুযোগের অপেক্ষাতে ছিল
কাজটা ভাল করলে না, সলটার, কর্কশ কণ্ঠে বলল ম্যাকগ্র। এগিয়ে এসেছে। সে বারের কাছে।
জোহান ওয়াগনার আমাদের বন্ধু। আমি থাকতে ওর গায়ে টোকা পড়তে পারে না।
পড়ল তো, বেয়াদবি করলে ভবিষ্যতেও পড়বে, নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল সলটার। স্যালুনে এখন পিন পতন নিস্তব্ধতা। কেবল জোহানের জোরে জোরে, শ্বাস নেয়ার শব্দ ছাড়া কিছু কানে আসছে না। হাঁটু গেড়ে বসে রয়েছে সে। ওর বাপ হলেও একই কাজ করত, বলল সলটার।
তুমি ওর বাপ নও। অথচ ভাবটা এমন যেন বক্স ডব্লিউ তোমার।
বক্স ডব্লিউ আমার হোক আর যারই হোক তোমার এত লাগে কেন? তুমি ওটার ফোরম্যান হতে পারনি, সেজন্যে?
বাজে কথা বলবে না, রেগে উঠল ম্যাকগ্র। সলটার বুঝল জায়গামত খোঁচা দিয়েছে সে। এক কদম এগিয়ে এল ম্যাকগ্র। হাত চলে গেছে কোমরে। পিস্তলের বটে। ওকে কভার দিচ্ছে স্যাঙাত্রা।
বিপদ আঁচ করল সলটার। ওর ডান হাত নেমে এল কোল্ট ৪৪ এর বাটে। ম্যাকগ্রর দিক থেকে চোখ সরাল না সে।
ঝামেলা করতে চাও? কঠিন গলায় প্রশ্ন করল সলটার। এক মুহূর্তের নীরবতা। এসময় উঠে দাঁড়াল জোহান।
না, বলল সে। চাইল ম্যাকগ্রর দিকে। তুমি কথা দিয়েছিলে। মনে নেই?
কিসের কথা দেওয়া-দেওয়ি? সলটারের কণ্ঠে উৎকণ্ঠা। এরা তোমাকে কি কথা দিয়েছে, জোহান?
কয়েকজন বয়স্ক লোক এসময় উঠে দাঁড়াল চেয়ার ছেড়ে। জুয়া খেলছিল। ওদের উঠে যেতে দেখে বুঝল সলটার, গোলমাল এড়ানো যাবে না। না যাক, যে কোন কিছুর জন্যই প্রস্তুত রয়েছে সে।
জোহান, দাঁড়িয়ে রয়েছ কেন? বার্নে যাও। আমি আসছি, বলল সলটার।
ওকে লক্ষ্য করে ঘুসি ছুঁড়ল জোহান। সৎ করে মুখ সরিয়ে নিল সলটার। লাগাতে না পেরে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলল জোহান। ওর বাঁ কাঁধে সজোরে ধাক্কা দিল সলটার। আবার মাটিতে পড়ে গেল সে।
গত কবছরে বড় বেশি বাড় বেড়েছে তোমার। তোমাকে সাইজে আনতে হবে, চেঁচিয়ে উঠল ম্যাকগ্র। চেষ্টা করে দেখ, পাল্টা বলল সলটার। মানা করেছে কে?