আমি বুঝি না গরু চোরের দল আসে কোত্থেকে, আবার চুরি করে পালায়ই বা কোথায়। চেষ্টার ত্রুটি তো করছি না আমি। ফল পাচ্ছি কই? অসহিষ্ণু গলায় বলল শেরিফ।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সলটার। ওদের সাহস দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। গুলি করতেও দ্বিধা করছে না ওরা। দেখি, র্যাঞ্চে ফিরে জর্জের সঙ্গে কথা বলব।
অবশ্য ইদানীং কোন ব্যাপারেই মন নেই তার। হয়ত বয়স একটা কারণ, বলল। সলটার।
কত আর বয়স! আমার মতই হবে, দ্রুত বলল শেরিফ। মুচকি হাসল। সলটার। শেরিফের আঁতে ঘা লেগেছে।
জর্জের ব্যাপারটা আলাদা, ও তো আর তোমার মত একা নয়। দু’দুটো উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে সামলাতে হয় তাকে। তানিয়াকে নিয়ে অবশ্য চিন্তা নেই তার। ওকে আসলে ভোগাচ্ছে জোহান।
ছোকরাটাকে প্রায়ই শহরে দেখি, বলল শেরিফ। জর্জ আমার পুরানো বন্ধু, ওকে ভালমতই চিনি আমি। মনে হয় ছেলেকে লাইনে আনতে পারবে সে।
পারলেই ভাল, বলল সলটার। চোখ জোড়া সরু হল এক মুহূর্তের জন্যে। ওর দৃষ্টি গেল ফ্লিন্টের কাঁধে। ক্ষতস্থান থেকে সরু লম্বা একটা যন্ত্র বার করছে ডাক্তার। দলা পাকানো একটা সীসের টুকরো চিমটের মত যন্ত্রটায় আটকে রয়েছে। শিউরে উঠল সলটার। কিন্তু ফ্লিন্টের কোন ভাবান্তর নেই। আবার শেরিফের দিকে দৃষ্টি দিল সে।
জোহানের সঙ্গে স্যালুনের মেয়েটার কি সম্পর্ক? জান কিছু?
হেলগার কথা বলছ? বলল শেরিফ। মেয়েটা ম্যাকগ্র-র বান্ধবী। ওর সঙ্গে মাখামাখি করছে জোহান। আশ্চর্য ব্যাপার, ম্যাকগ্র কিছুই বলছে না, অথচ গত বছর একজনকে খুন করতে বসেছিল সে। হেলগার প্রতি নাকি অতিরিক্ত আগ্রহ দেখাচ্ছিল লোকটি।
হুঁ, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল সলটার। ম্যাকগ্রর মতলবটা জানা দরকার আমার।
আমি জানতে চাই রাসলারদের রহস্য, দৃঢ় কণ্ঠে বলল শেরিফ।
ওই তিন রাসলারের ট্র্যাক পরীক্ষা করে দেখতে পার, সলটার বলল। আমার সঙ্গে আজই চল, আমি জায়গামত নিয়ে যাব। অসকারের রেঞ্জের ওপর দিয়ে পালিয়েছে ওরা। কাজেই খুঁজে বার করতে অসুবিধে হবে না।
আমিও তাই ভাবছিলাম, বলল শেরিফ। কিন্তু এখন গিয়ে কি আর লাভ হবে? ট্রাক মুছে দেয়া ওদের জন্যে অসম্ভব কিছুই নয়। এর আগে কয়েকবার রেড রিজ পর্যন্ত রাসলারদের ধাওয়া করে গিয়েছিলাম। তারপর আর খুঁজে পাইনি।
ওপথেই গরু পাচার হচ্ছে, বলল সলটার, তারমানে প্রতিবারই অসকারের র্যাঞ্চ পেরোচ্ছে ওরা।
অসকারের লোকজন এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে মনে করছ তুমি? তা না-ও হতে পারে। কারও না কারও র্যাঞ্চের ওপর দিয়ে তো গরু তাড়িয়ে নিতে হবেই। অসকারের র্যাঞ্চের ওপর দিয়ে নিচ্ছে। এতে কিছু প্রমাণিত হয় না, শেরিফ বলল।
তা হয়ত হয় না। তবে নজর রাখতে তো আর ক্ষতি নেই। আমি জর্জকে বলব পাহারা বসাতে। আমাদের লোকেরা পাহারা দিলে কিছু না কিছু জানা। যাবেই।
ওদের সঙ্গে আমি থাকতে পারলে ভাল হত, বলল শেরিফ। কিন্তু জানই তো একজন মাত্র ডেপুটি আমার। তা-ও আবার ভরসা করার মত নয়। তাই সব কিছুতেই হাজারবার ভাবতে হয়।
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল সলটার।
শেরিফের ডেপুটি ডিক উইলসনকে দুচোখে দেখতে পারে না সে। তানিয়ার সঙ্গে দেখা হলেই ব্যাটা ঘেঁসাঘেঁসি করতে চায়। তানিয়ার আশপাশে কাউকেই সহ্য করতে পারে না ও।
দেখি জোহানের খোঁজ করি গিয়ে, দরজার দিকে এগোতে এগোতে বলল সলটার। তুমি স্পটে যেতে চাইলে তোমাকে নিয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যে রওনা দেব আমি। জোহানকে তো স্যালুনেই পাওয়া যাবে। কি বল? শেরিফকে প্রশ্ন করল সলটার।
হ্যাঁ। কাল সারারাত ওখানেই ছিল সে। আজ সকালেও যেতে দেখেছি।
একটা ব্যাপার বুঝি না, দরজার কাছে পৌঁছে বলল সলটার, ম্যাকগ্র আর আমি একই কাজ করি, দুজনেই ফোরম্যান। ও এত অবসর পায়, কিভাবে? আমার তো কাজের চাপে ঘুম প্রায় হারাম।
মানুষে মানুষে তফাৎ আছে। সবাই তো আর তোমার মত নয় যে কাজ নিয়ে পাগল। তাছাড়া ম্যাকগ্রর বস্ র্যাঞ্চে থাকে না। জানই তো কেন, বলল শেরিফ।
চুপ করে রইল সলটার, জবাব দিল না।
তুমি একা ফিরতে পারবে, ফ্লিন্ট? নাকি আমি পৌঁছে দেব? প্রশ্ন করল সলটার।
পারব, সলটার, বলল ফ্লিন্ট। ছেলেরা আমার খোঁজে শহরে আসবেই।
০২. স্যালুন খোলা থাকে সারাদিনই
স্যালুন খোলা থাকে সারাদিনই। মাঝে মধ্যে অবশ্য পোকার জমে উঠলে রাতেও খোলা রাখা হয়। ব্যাট উইং ডোর ঠেলে স্যালুনের চৌকাঠে দাঁড়াল এসে সলটার। ভেতরটা অস্পষ্ট। খানিকক্ষণ ওখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল সে। চোখ সইয়ে নিল। বারটেন্ডার দাঁড়িয়ে রয়েছে বারের পেছনে। জনা দুয়েক লোককে গেলাস হাতে দেখা গেল সেখানে। কোণের দিকে একটা চারকোনা টেবিলে বসে রয়েছে। কয়েকজন। জোহানকে চিনতে পারল সলটার। ম্যাকগ্র আর অসকারের র্যাঞ্চের আরও কয়েকজনকেও টেবিলে দেখতে পেল সে।
বেশ শোরগোল চলছে টেবিলটাতে। সেদিকে এগোল সলটার। জোহান হারছে বুঝতে বাকি রইল না তার। ও বাপের কাছ থেকে হাতখরচের জন্যে যে টাকা পায় তার বেশিরভাগটাই যায় ম্যাকগ্রর পকেটে। জুয়া খেলে আদায় করে নেয় সে। বাকিটা মদ খেয়ে ওড়ায় জোহান। সঙ্গে ম্যাকগ্র তো থাকেই। ম্যাকগ্রর সঙ্গে মিশে নিজের ভবিষ্যৎ ঝরঝরে করছে জর্জ ওয়াগনারের বোকা ছেলেটা, ভাবল সে।
টেবিলটার কাছে পৌঁছল সলটার, দাঁড়াল জোহানের ঠিক উল্টোদিকে। উত্তেজনায় টানটান অবস্থা ছেলেটার। মাত্র বিশ বছর বয়স ওর। অথচ ভাব ভঙ্গিতে যেন বিরাট বীরপুরুষ। কাউকে পরোয়া করে না। এর জন্যে সবচেয়ে বেশি দায়ী ওর বারা। অতিরিক্ত লাই দিয়ে মাথা খেয়েছে ছেলেটার। এখন আর সামলাতে পারছে না।