নিশুতি রাতে একা চলেছে সে। পাশের ঘোড়ায় মৃত জোহান। সলটারের ওপর দিয়ে প্রচণ্ড ধকল গেছে। তার মনে হচ্ছে যে কোন মুহূর্তে জ্ঞান হারাতে পারে সে। অর্ধ সচেতন অবস্থায় পেরিয়ে এল কয়েক মাইল। শেষ পর্যন্ত উঁচু একটা টিলায় উঠে এল সে। এখান থেকে স্পষ্ট চোখে পড়ে বক্স ডব্লিউ। জানালা দিয়ে হলদে আলো এসে উঠনে পড়ছে। নিপ বসে থেকে সেদিকে চেয়ে রইল সে। মাঝরাত পেরিয়ে গেছে; নিশ্চিত ও মার্টিনের মৃত্যু সংবাদ র্যাঞ্চে নিয়ে আসার পর কি ঘটেছে কে জানে। সবাই নিশ্চয় ছুটে গেছে স্যাডল ব্ল্যাঙ্কেট ক্রীক এ। অপেক্ষা করেছে সলটারের জন্যে। কিন্তু দেরি দেখে রওনা দিয়েছে নিজেরাই। র্যাঞ্চ ও-র দিকে।
ঢাল বেয়ে ঘোড়া দুটো নিয়ে নেমে এল সলটার। শথ গতিতে এগোল র্যাঞ্চের দিকে। উঠনে ঢুকে স্যাডল থেকে নেমে পড়ল ও। হেলান দিল করাল ফেন্সে। ঝাঁপসা চোখে চাইল। মনে হল বারান্দায় বসে আছে দু’জন মানুষ। বারান্দার দিকে এগোল সে। জোহানের মরদেহবাহী ঘোড়াটা নিয়ে। প্রথম ধাপের কাছে এসে থামল। বারান্দার বেঞ্চিতে বসে রয়েছে তানিয়া আর উইলবার অসকার। এখানে বসে করছেটা কি লোকটা? ওর র্যাঞ্চে তো এখন গোলমাল চলার কথা। ওকে দেখে চিৎকার করে উঠল তানিয়া।
সলটার, কোথায় ছিলে? ব্যাকুল প্রশ্ন করল মেয়েটি। এক ঝলক চাইল অসকারের দিকে। সলটারের দিকে একদৃষ্টি চেয়ে বসে রয়েছে সে। নিশ্চুপ।
আর সবাই কোথায়? প্রশ্ন করল সলটার। জোহানের কথা কিভাবে বলবে ভেবে পাচ্ছে না সে।
ওরা ঘণ্টা কয়েক হল বেরিয়ে গেছে। অসকারের দিকে চাইল তানিয়া, এবার সত্যি কথাটা বলা যায় তোমাকে। বাবা কাউবয়দের নিয়ে শহরে যাননি। গেছেন স্যাড়ল ব্ল্যাঙ্কেট ক্রীক-এ। শেরিফ আর সলটারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্যে। সেখান থেকে তোমার র্যাঞ্চে যাবে সবাই। ম্যাকগ্র আর র্যাঞ্চ ও-র লোকেরা রাসলিং-এর সঙ্গে জড়িত এটা এখন আর কারও অজানা নয়।
অসকারের চেহারা দেখে হাসবে না কাদবে বুঝে উঠতে পারল না সলটার। প্রচণ্ড চমকে গেছে অসকার।
তোমার জন্যে আরও দুঃসংবাদ আছে, অসকার, শান্ত কণ্ঠে বলল সলটার। তোমার লোকের হাতে মারা গেছে আমার ভাই। আমি তোমাকে ছাড়ছি না।
কি বললে তুমি? চেঁচিয়ে উঠল তানিয়া। কে মারা গেছে বললে?
জোহান, মৃদু স্বরে বলল সলটার। ঘোড়ায় রয়েছে ওর লাশ। ম্যাকগ্রর হাতে মারা গেছে।
জোহান মারা গেছে! চিৎকার করে বারান্দা থেকে নেমে এল তানিয়া। দৌড়ে গেল জোহানের ঘোড়র কাছে। জাপটে ধরল ভাইয়ের মৃতদেহ। হাউমাউ করে কাঁদছে সে। ওর দিকে একবার চাইল লটার। কথা সরল না তার মুখে। চোখ ফেরাল অসকারের দিকে।
ওদিকে পাথরের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রইল অসকার। তার চোখ জোড়া সলটারের চোখে।
জানতাম তানিয়াকে কিছুতেই বিয়েতে রাজি করাতে পারব না, এই প্রথম মুখ খুলল সে। ও তোমাকে ভালবাসে। হাজার চেষ্টা করেও ওর মন পাইনি আমি। আজ রাতে শেষ সুযোগ দিয়েছিলাম মনস্থির করার জন্যে। কথা শুনল না। যাই হোক, ওকে পাচ্ছ না তুমি। শেষের দিকে গলার স্বর কঠিন হল তার। কভারডেল, কোথায় তুমি?
ঠিক ওর পেছনে, বস, জবাব এল দ্রুত। কভার করে রেখেছি।
জমে গেল সলটার। পরিচিত কণ্ঠ। এ গলা জীবনে কোনদিন ভুলতে পারবে সে। খুনী। এর হাতেই প্রাণ দিয়েছে শেরিফ রজার হার্পার। আর গুলি খেয়ে আহত হয়েছে ও নিজে।
গুড, বলল অসকার। কভারডেল এর আগেরবার ভুল করেছিল। তোমাকে খতম না করেই চলে গিয়েছিল। এবার ভুলটা শুধরে নেবে সে।
কিন্তু তুমি এসবে জড়ালে কেন? অসকারকে প্রশ্ন করল সলটার।
আমি চাই ক্ষমতা। সেজন্যে রাসলিং-এ নেমেছি। জর্জ ওয়াগনারকে ফতুর করার এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না, বলল অসকার। অবশ্য তানিয়া আমার কথায় রাজি হলে ক্ষতিটা গায়ে লাগত না ওর বাপের। হাজার হোক জামাই বলে কথা। কিন্তু তোমার জন্যে সে আর হল না। কাজেই মরার জন্যে প্রস্তুত হও। তুমি।
তানিয়ার কি হবে?
মরবে, প্রেমিকের জন্যে। ওর বাপটাও ছাড়া পাবে না। রাসলিং করে কম পয়সা তো আর কামাইনি। দুনিয়াতে মেয়েমানুষেরও অভাব নেই। কি বল?
সলটারের ইচ্ছে হল অসকারের টুটি চেপে ধরে। কিন্তু একেবারেই অবাস্তব কল্পনা সেটা। ওর পিঠে খোঁচা দিচ্ছে পিস্তলের নল।
ওকে নিয়ে যাও, কভারডেল, অসকার বলল। তুমি ফিরে আসা পর্যন্ত তানিয়াকে দেখে রাখব আমি। চোখের সামনে তার প্রেমিককে মারা ঠিক হবে না। এমনিতেই ভাইটা গেছে।
ওর পিঠে ধাক্কা দিল গানম্যান। আগে বাড়াল। এভাবে মরতে কিছুতেই রাজি নয় সলটার। শেষ চেষ্টা করতে হবে। গভীর শ্বাস নিল সে দৃঢ় করল মাংসপেশী। মরিয়া হয়ে ঘুরে দাঁড়াবে ও। হয় গুলি খেয়ে মরবে নয় খুনীকে পেড়ে ফেলবে। ঠিকমত মুখে একটা ঘুসি বসাতে পারলেই হল। উল্টে যাবে দাবার ছক। হঠাৎ তানিয়ার চিৎকারে থেমে দাঁড়াল ওরা। তানিয়ার দিকে চাইল সলটার।
ভাইয়ের মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে মেয়েটি। স্যাডলের পেছন দিকে। ব্ল্যাঙ্কেট রোল থেকে একটা হাত উঠতে দেখল সলটার। ঝকঝক করে উঠল সিক্সগানের নল। দাঁতে দাঁতে বাড়ি খেল সলটারের। ওর পেছনের লোকটা আর্তচিৎকার করে উঠল। ঝাঁকি খেয়ে সরে গেল খানিকদূর। আরও দুটো গুলি হল। এবার ভূমিশয্যা নিল সে, চিরদিনের মত। রাতের বাতাসে এখন বারুদের গন্ধ। জোহান গুলি করেছে। তারমানে মরেনি ও। এজন্যেই হঠাৎ চিৎকার করে উঠেছিল তানিয়া। সলটারের নিজেরও চিষ্কার করতে ইচ্ছে করছে। খুশিতে।