ভালই চালাচ্ছে শালারা, দাঁতের ফাঁকে বলল ফ্লিন্ট, কিন্তু গরুগুলো বেচছে কোথায়? এ এলাকায় নয় নিশ্চয়। এখানকার কোন র্যাঞ্চারই ওদের সঙ্গে কারবার করবে না। গরু তাড়িয়ে নিচ্ছে অথচ তার কোন চিহ্ন নেই কেন?
নিশ্চয়ই আছে, শহরের ট্রেইল ধরে এগোতে এগোতে বলল সলটার। গাফিলতি তো করছ তোমরা। আমি জর্জকেও বলেছি সব র্যাঞ্চার মিলে এর সমাধানের জন্যে কাজ করতে। আমার কথা কানেই তোলেনি। আসলে তোমরা প্রত্যেকেই আলাদাভাবে লড়াই করতে চাও, এভাবে হবে না, সবাই মিলে বসে একটা কিছু বুদ্ধি বার কর। দেখবে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই চোর ধরা পড়ে গেছে।
হয়ত তোমার কথাই ঠিক, বলল ফ্লিন্ট। তবে আমার বিশেষ কিছু করার নেই, আমি ছোট র্যাঞ্চার। জর্জ ওয়াগনার আর অসকার ব্যবস্থা নিক। আমরা তো আছিই।
জর্জ বদলে গেছে, দ্রুত বলল সলটার। জোহানের সঙ্গে তার গোলমাল লেগেই আছে। আসলে ছেলেকে মাথায় তুলেছে সে। অকর্মার ধাড়ি একটা। র্যাঞ্চের কোন কাজেই আসে না।
আসল সমস্যা অন্যখানে, ডানদিকে খানিকটা ঝুঁকে বসে বলল ফ্লিন্ট। বাজে লোকের পাল্লায় পড়ে গেছে ছোঁকরা। অসকারের ফোরম্যান ম্যাকগ্র আর অন্যান্যদের সঙ্গে মিশে গোল্লায় যাচ্ছে। মদ-জুয়া ধরে ফেলেছে।
জানি, ঠাণ্ডা গলায় বলল সলটার। আবেগ ঝেড়ে ফেলতে চাইল গলা থেকে। পারল না।
ম্যাকগ্র আগে জর্জ ওয়াগনারের র্যাঞ্চে ছিল। সলটারের বাবা মারা যাওয়ার পর সবার ধারণা ছিল সে-ই এবার ফোরম্যান হবে। ম্যাকগ্র সব সময়ই গোমড়ামুখো কঠোর চরিত্রের লোক। দুর্ব্যবহারে অভ্যস্ত। রয় সলটার ফোরম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর লোকের সঙ্গে ওর দুর্ব্যবহারের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তবে বক্স ডব্লিউ তখনও ছাড়েনি ও, তারপর অসকার এখানে র্যাঞ্চ কেনার পর কিভাবে যেন ওর ফোরম্যানের চাকরিটা বাগিয়ে নেয় সে, বক্স ডব্লিউ ছেড়ে চলে যায়। এরপর সাটারের সঙ্গে আর কখনও কথা বলেনি ও।
তোমার বাবা মারা যাওয়ার সময় থেকেই গণ্ডগোলের শুরু, ফ্লিন্ট বলল।
বাবা মারা যায়নি, দৃঢ়তার সঙ্গে বলল সলটার। তাকে মারা হয়েছে।
কিন্তু এতদিনেও তো জানা গেল না কিছু। তোমার কি মনে হয়? কেউ শিকার করতে গিয়ে ভুল করে
অসম্ভব, বলল সলটার। শিকারি হলে গুলি করার পর অবশ্যই ভুল বুঝতে পারত। লাশ নিয়ে আসত।
তা ঠিক। তাকে সম্ভবত খুন করা হয়েছিল, সোজা হয়ে বসল ফ্লিন্ট। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল সে। কিন্তু বাবা তো কখনও কারও ক্ষতি করেনি, ফ্লিন্টের দিকে চেয়ে বলল সলটার।
ক্ষতি না করলেও শত্রু জন্মায়। কে যে কখন কি ভাবে শত্রু হয়ে যাবে। বোঝার উপায় নেই।
বেশ অনেকদূর চলার পর ঘোড়া থামাল ফ্লিন্ট। স্যাডল থেকে ইচ্ছে করে পিছলে পড়ল ঘাসে। হাত পা ছড়িয়ে, চোখ বুজে শুয়ে রইল। সলটার ঘোড়া থেকে নেমে ওর ওপর ঝুঁকতেই খানিকক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার কথা বলল ফ্লিন্ট। ওর দুর্দশা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সলটার। তাই বলল, তুমি বরং এখানেই শুয়ে থাক। আমি ডাক্তার আর ওয়াগন নিয়ে ফিরে আসছি।
দরকার নেই। আমাকে স্যাডলে তুলে দাও, কোনক্রমে উঠে দাঁড়াল ফ্লিন্ট।
আবার এগিয়ে চলল ওরা। খানিক বাদেই দেখা গেল শহর। বাফেলো ফ্ল্যাট। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সলটার। ওরা মেইন রোড ধরে চলেছে এখন। একপাশে কাত হয়ে রয়েছে ফ্লিন্ট। ওর পাশে ঘোড়া নিয়ে এল সলটার। ফ্লিন্টকে পড়ে যেতে দেখলেই ধরে ফেলবে।
সবে বিকেল হয়েছে। প্রচুর লোকজন এখন রাস্তায়। এসময় স্যালুনের সামনের দিক থেকে ডাকল কে যেন। সলটার চেয়ে দেখল পরিচিত এক লোক। হাত তুলল সে। তবে থামল না। ফ্লিন্টকে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। জেলখানা পেরোল ওরা। ল অফিসের দরজায় শেরিফ রজার হার্পার দাঁড়িয়ে ছিল। মাঝবয়সী লোকটি কঠোর হলেও ন্যায়পরায়ণ। ফ্লিন্টের এ অবস্থা দেখে এগিয়ে এল সে।
কি খবর, হার্পার? আমরা ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি। যাবে নাকি? আবার রাসলারদের উপদ্রব, বলল সলটার।
দীর্ঘ পদক্ষেপে ওদের কাছে পৌঁছে গেল শেরিফ। ওরা গুলি করেছে?
ওরাই তো করবে। আমি নিজেকে গুলি করব নাকি? প্রায় চিৎকার করে উঠল ফ্লিন্ট।
চুপ করে রইল শেরিফ।
সলটার পৌঁছে গেল ডাক্তারের বাড়ির সামনে। দ্রুত নেমে পড়ল স্যাডল থেকে। ধীরে ধীরে ঘোড়া থেকে নামার চেষ্টা করল ফ্লিন্ট। ওর সব শক্তি আর সহ্যক্ষমতা যেন শেষ হয়ে গেছে। দ্রুত ওর দুপাশে পৌঁছে গেল সলটার আর শেরিফ। দু’পাশ থেকে ধরে ওকে নামাল। নিয়ে চলল ডাক্তারের বাড়ির দিকে।
মারাত্মক জখম? প্রশ্ন করল শেরিফ।
কাঁধে লেগেছে, খুব মারাত্মক কিছু নয়। তবে রক্ত পড়েছে প্রচুর, সলটার বলল।
ডাক্তারের সার্জারিতে নিয়ে যাওয়া হল ফ্লিন্টকে। বসানো হল গদিওয়ালা কাউচে। শেরিফ গেল ডাক্তার ডাকতে। এই ফাঁকে ফ্লিন্টকে শুইয়ে দিল সলটার। গায়ে কম্বল চাপা দিল। শেরিফ ডাক্তার নিয়ে ফিরে এল। ডাক্তার তার সরঞ্জাম ধোয়ার কাজ শুরু করতেই হার্পার বলল, পুরো ঘটনাটা খুলে বল তো, সলটার, তুমি এতে জড়ালে কিভাবে?
সলটার নিজের দেখা আর ফ্লিন্টের মুখে শোনা সব ঘটনা খুলে বলল। মন দিয়ে শুনল শেরিফ। সব শোনা হলে পর বলল, ওদের কাউকে চিনতে পেরেছ?
একশ গজ দূর থেকে দেখেছি। চেনার প্রশ্নই ওঠে না। ঘোড়াগুলোও অপরিচিত, জবাব দিল সলটার।