জোহান! হঠাৎ মনে পড়ল ওর। গুলির শব্দ লক্ষ্য করে ঘোড়া ছোটাল সে। জোহান জেনেছে ম্যাকগ্র তাকে খুন করার নির্দেশ দিয়েছে। ওকে ব্যাঙ্কে ফিরে যেতে বলেছে সলটার। কিন্তু সত্যি ফিরে গেছে কি সে? নাকি ম্যাকগ্রর ওপর প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেছে? গোলাগুলি হচ্ছে এখনও। দীর্ঘ বারো ঘণ্টা ধরে প্রচণ্ড টেনশনে রয়েছে সলটার। তার সঙ্গে পরিশ্রম। ফলে শরীর আর চলতে চাইছে না। এ মুহূর্তে নিরবচ্ছিন্ন বিশ্রাম বড় প্রয়োজন তার। কেবল মাত্র মনের জোরে এগিয়ে চলল সে।
শ্যুটিং স্পটের ধারে কাছে আসতেই নিস্তব্ধ হয়ে গেল জায়গাটা। এতক্ষণ যাই ঘটুক না কেন শেষ হয়ে গেছে ঘটনা। এদিক ওদিক চাইল সে। গুলির কারণ বুঝতে চাইল। আচমকা গুলি হল আবার। লালচে শিখা দেখে লাফিয়ে নামল সে স্যাডল থেকে। মাটিতে শুয়ে সামান্য মাথা জাগিয়ে দেখতে লাগল যুদ্ধ। দুটো পিস্তল থেকে গুলিবর্ষণ হচ্ছে। যোদ্ধাদের দূরত্ব কয়েক গজ মাত্র। শুয়ে থেকেই লোক দুটোর পরিচয় বোঝার চেষ্টা করল সে। বোঝা গেল না। ঠিক করল চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করবে। তবে তার আর প্রয়োজন হল না। কর্কশভাবে চেঁচিয়ে উঠল একজনঃ কে ওখানে?
জমে গেল যেন সলটার। কণ্ঠস্বরটা অতি পরিচিত। র্যাঞ্চ ও-র ফোরম্যান ম্যাকগ্র! পিস্তল ড্র করল বক্স ডব্লিউ-এর ফোরম্যান।
কিন্তু প্রশ্নটার জবাব না দিয়ে চুপ করে অপেক্ষা করতে লাগল। আশা করল উত্তর দেবে ম্যাকগ্রর প্রতিপক্ষ। জবাব আসতে আপন মনেই মাথা নাড়ল সে। শালা বদমাশ, আমি জোহান। ভোরের আগেই তোরা সব শালা মরবি নয় ধরা খাবি।
ও তুই? বেঁচে আছিস এখনও? আবার গুলি করতে শুরু করল ম্যাকগ্র। পাল্টা গুলি ছুঁড়ল জোহান। পরবর্তী কমুহূর্ত কেবল গুলির শব্দই শোনা গেল। খানিক বাদে
পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে ডাক ছাড়ল সলটার, থাম তোমরা, আমি রয় সলটার। জোহান, শিগগির দূর হও এখান থেকে। আর ম্যাক পিস্তল ড্র কর। আমি তোমাকেই খুঁজছি।
পিনপতন নিস্তব্ধতা। প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছে ম্যাকগ্র। মৃদু হাসল সলটার। ম্যাকগ্রর মাথায় খেলা করছে পরিকল্পনা, স্পষ্ট বুঝতে পারল সে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে গুলি ছুঁড়ে পাল্টা জবাব দিল র্যাঞ্চ ও-র ফোরম্যান। তার সঙ্গে তাল মেলাল সলটার। গুলির শব্দে কেঁপে উঠল জায়গাটা। সলটারের শরীরের আশপাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সীসা। তবে গা করল না সে। রোখ চেপে গেছে তার। পিতৃহত্যার। প্রতিশোধ নেয়ার বাসনা উন্মত্ত করে তুলেছে তাকে। ওদিকে ম্যাকগ্র এলোমেলো গুলি চালাচ্ছে। ওকে এক ঝলক দেখার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল সলটার। সুযোগটা পেতেই দুটো সীসে ঢুকিয়ে দিল শত্রুর শরীরে। মুহূর্তে থেমে গেল প্রতিপক্ষের আক্রমণ। ম্যাকগ্রর তীক্ষ্ণ আর্তনাদে ভেঙে পড়ল রাতের নীরবতা।
মরেছে, চেঁচিয়ে উঠল জোহান। খোড়াতে খোঁড়াতে বেরিয়ে এল সে। ছুটে গেল ম্যাকগ্রর কাছে। মাটিতে পড়ে রয়েছে ও। চিৎকার করে ওকে সাবধান করল সলটার। কিন্তু গায়ে মাখল না জোহান।
পরমুহূর্তে কোল্টের শব্দ শুনল সলটার। দেখতে পেল ঝাঁকি খেল জোহানের শরীর। যেন ধাক্কা খেয়েছে শক্ত পাথরের সঙ্গে। পড়ে গেল সে। ম্যাককে উঠতে দেখা গেল এ সময়। চাঁদের আলোয় চকচক করছে হাতের অস্ত্রটা। সলটারের দিকে ফিরল ও। তাক করল কোল্ট।
তোমাকে আর বাঁচতে হচ্ছে না, সলটার, হিংস্র শোনাল ম্যাকগ্রর গলা। আজই শেষ দিন তোমার।
পিস্তল ঝলসে উঠল সলটারের হাতে। প্রথম গুলিতে পেট ফুটো হয়ে গেল ম্যাকগ্রর। মাটিতে বসে পড়ল সে। পরবর্তী গুলিতে ওর কপাল থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোল। প্রাণ হারাল ম্যাকগ্র। দ্রুত জোহানের দিকে এগোল সলটার। মাটিতে পড়ে রয়েছে সে। সলটারের আশঙ্কা মারা গেছে জোহান। কিন্তু ওকে দেখে কথা বলে উঠল ছেলেটি।
সলটার, আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো, বন্ধু।
হোলস্টারে পিস্তল ঢুকিয়ে হাঁটুতে ভর দিয়ে ওর পাশে বসে পড়ল সলটার।
কোথায় লেগেছে?
হার্টে। আমি গেছি, কাশতে লাগল জোহান। কাশির দমকে নিশ্বাস আটকে আসছে তার। ওর মাথাটা সামান্য তুলে ধরল সলটার। বড় দেরি হয়ে গেল, ধীরে বলল জোহান। একটা অনুরোধ রাখবে, সলটার? বাবাকে রাসলিং-এর কথা কিছু জানিয়ো না, প্লীজ। বাবা কষ্ট পাবে।
কথা বল না, জোহান। চুপ করে শোও আমি দেখছি।
লাভ নেই, বিড়বিড় করে বলল জোহান। আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা চাই, সলটার। করবে?
নিশ্চয়ই। তোমার বাবাকে জানাব ম্যাকগ্রকে খুঁজে বার করতে আমাকে সাহায্য করেছ তুমি।
ধন্যবাদ, অতিকষ্টে বলল জোহান। সলটার, তানিয়া তোমাকে ভালবাসে, ওকে আর কষ্ট দিয়ো না।
বল কি তুমি! তবে অসকার?
অসকারের সঙ্গে মিশে তোমার মধ্যে ঈর্ষা জাগাতে চায় ও, কথা কটা বলতে যেন প্রাণ বায়ু বেরিয়ে গেল জোহানের।
বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেল সলটার। বিস্ময় কাটলে দেখল জোহানের মুখে কথা নেই। মারা গেছে সে। ওর শরীরটা ধরে বারকয়েক ঝাঁকি দিল সলটার। ফাঁকা লাগছে বুকের ভেতরটা। জোহান নেই! আর ভাবতে পারল না ও। ডুকরে কেঁদে উঠল। খানিক পরে নিজেকে অনেকটা সামলে নিল সলটার। চোখ মুছে জোহানের ঘোড়াটা খুঁজতে লেগে গেল। খানিক খুঁজতেই পাওয়া গেল ওটাকে। কোনমতে জোহানের মৃতদেহটা স্যাডলে চাপাল সলটার। হাঁপাতে লাগল সে। এবার নিজের ঘোড়ায় চাপল ও। ম্যাকগ্রর নিপ্রাণ দেহ পিছনে ফেলে বক্স ডব্লিউ-এর দিকে এগোল। জর্জের ওপর রাগ হচ্ছে ওর। জোহানের মৃত্যুর জন্যে সে-ই দায়ী। ছেলেকে কেন বশে রাখতে পারল না? তানিয়ার কথা ভাবল ও। একমাত্র। ভাইটাকে হারাল মেয়েটি। একথা ওকে কি করে জানাবে সলটার?