মারুক। কোন আপত্তি নেই আমার, বলল জোহান। মদে চুর হয়ে রয়েছে সে, বুঝল সলটার। আমি ম্যাকার বন্ধু। আমাকে মারবে কেন তোমরা?
তোমার বাবাকে পঙ্গু করার জন্যে। ম্যাকগ্র একদিন না একদিন বক্স ডব্লিউ হাতাবেই। তোমাকে আর সলটারকে মেরে আপাতত পথের কাঁটা দূর করছে সে। পরে জর্জের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।
চুক্তি তো সেরকম ছিল না, বলল জোহান। মনের দুঃখে মাথা নাড়াল সে। ম্যাকগ্রকে সাহায্য করেছি নিজেদের র্যাঞ্চের স্টক চুরি করে। আমার সঙ্গে এমন করাটা ঠিক নয়। না না ম্যাকগ্র অমন করতেই পারে না।
দশ মিনিট হয়ে এল প্রায়, বলল হ্যারিসন। শ্রাগ করল সে। ঝামেলা চুকাবে কে? তুমি না আমি?
আমি, বলল হাওয়ার্থ। মার্টিন খুব সম্ভব তোমার গুলিতে মরেছে। কাজেই তোমার দায়িত্ব শেষ।
অর্ধেকটা শরীর ঘোরাল সলটার। পিস্তলের মাজল দিয়ে খোঁচা দিল শেরিফের কাঁধে। ইশারায় দরজা দেখাল। মাথা ঝাঁকাল শেরিফ। ঘুরল দ্রুত। আবার ঘরের ভেতর দৃষ্টি দিল সলটার। পিস্তল তুলছে হাওয়ার্থ। বদলে যাচ্ছে তার চেহারার ভজ। গুলি করতে প্রস্তুত সে।
না, জোহান বলল। মের না, তোমাদের দুজনকেই একশো ডলার করে দেব আমি।
হিংস্রভাবে হেসে উঠল ওরা। তখুনি পিস্তল তুলল সলটার। মাজলের আঘাতে ভেঙে ফেলল কাঁচ। চাপ দিল ট্রিগারে। প্রচণ্ড বিস্ফোরণ কাঁপিয়ে দিল পুরো বাড়িটাকে। গুলি খেয়ে কয়েক পা পিছিয়ে গেল হাওয়ার্থ। টালমাটাল অবস্থায় ট্রিগার চাপল। গুলি বিধল জোহানের ডান পায়ের কাছে। মেঝেতে।
হ্যারিসন লাফিয়ে চলে এল দরজা বরাবর। পিস্তল এসে গেছে তার হাতে। ওদিকে শেরিফ ঢুকে পড়েছে দরজা দিয়ে। একসঙ্গে গুলি করল ওরা। দড়াম করে পড়ে গেল হ্যারিসন। দুটো গুলি বুক ফুটো করে দিয়েছে তার। নিথর পড়ে রইল সে। শেষ।
বুক ভরে নিশ্বাস নিল সলটার। জানালা থেকে সরে এসে কেবিনে ঢুকল। শেরিফ তখন পরীক্ষা করছে তোক দুটোকে। ফায়ারপ্লেসের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে জোহান। মুখে লাজুক হাসি। মাতলামি ছুটে গেছে তার।
সলটার, তোমাকে দেখে যে কী খুশি লাগছে।
জোহানের কাছে গিয়ে কষে এক চড় কষাল সলটার। উফ বলে মাথা ঘুরে পড়ে গেল জোহান। সতর্ক চোখে সলটারকে পর্যবেক্ষণ করল শেরিফ। কুঁকল সলটার। টেনে দাড় করাল জোহানকে। ঠেলে নিয়ে চলল দরজার দিকে।
সোজা র্যাঞ্চে ফিরে যাও, কঠিন গলায় বলল সলটার। একটু এদিক ওদিক করলে হাড় গুড়ো করে দেব।
টলতে টলতে বেরিয়ে এল জোহান। অন্ধকারে মিশে গেল সে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল শেরিফ। এসে দাঁড়াল সলটারের পাশে।
ও দুটো মরেছে, মন্তব্য করল সে। মার্টিনের আত্মা শান্তি পাবে। জোহান রাসলিং-এর সঙ্গে জড়িত, একথা ভাবতেও অবাক লাগছে। ওর বাবাকে জানাবে না?
আমি জানাব না। যা বলার জোহানই বলবে, বলল সলটার। চল রওনা দিই। স্যাডল ব্ল্যাঙ্কেট ক্রীকে দ্রুত পৌঁছতে হবে। লোকজন নিয়ে র্যাঞ্চ ও অপারেশনে যাব।
অসকার অবাক হয়ে যাবে, যখন শুনবে ওর লোর্কেরা গরু চুরিতে জড়িত।
আজ রাতে অবাক হওয়ার মত আরও ঘটনা ঘটবে, দাঁতের ফাঁকে বলল সেলটার। বেরিয়ে এল বাইরে। প্রচণ্ড দুর্বল লাগছে কিন্তু সেটাকে প্রশ্রয় দিল না সে। অনেক কাজ বাকি রয়েছে এখনও।
ঢিবির ওপর উঠে এল ওরা। কাহিল হয়ে পড়ল সলটার। ঘেমে উঠল। অতি কষ্টে নিজেকে স্যাডলে টেনে তুলল সে। ওর অবস্থা দেখে ওকে সাইড দিল শেরিফ। ঢাল বেয়ে সমতল জমিতে নেমে এল ওরা। ঘোড়া দাবড়াল দ্রুত গতিতে। লক্ষ্য তাদের স্যাডল ব্ল্যাঙ্কেট ক্রীক। ওখানে অপেক্ষা করছে বক্স ডব্লিউ এর কাউবয়রা। জোর মুখে মাটিনের মৃত্যু সংবাদ শুনে নিশ্চয় রক্ত গরম হয়ে গেছে ওদের। র্যাঞ্চ ও-এর দিকে রওনা দেয়ার আগে সব কিছু ভাল করে বুঝিয়ে দিতে হবে সবাইকে। ব্রিফ করতে হবে। ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে গেছে। চাঁদ উঁকি দিচ্ছে আকাশে। আরও এক ঘণ্টা একটানা চলার পর থামল ওরা। ঘোড়া দুটোকে বিশ্রাম দেয়ার জন্যে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল জীব দুটো। ওদের নিশ্বাস ভারি করে তুলল রাতের বাতাস। স্যাডলে প্রায় শুয়ে পড়ল সলটার। কাছে এসে ওর কাঁধে হাত রাখল শেরিফ।
পারবে তো, সলটার? প্রশ্ন করল সে। না পারলে কোন অসুবিধে নেই। বক্স ডব্লিউতে ফিরে যাও। আউটফিটদের নিয়ে আমি একাই যেতে পারব। তুমি অনেক করেছ। এবার ফিরে গিয়ে বিশ্রাম নাও। ভোরের আগে র্যাঞ্চ ও-তে যাব না আমরা। তার এখনও ছঘন্টা বাকি। এতক্ষণ কষ্ট করতে পারবে না তুমি। চলে যাও, এখন আমরাই সব সামলাতে পারব।
ঠিকই বলেছ, মাথা তুলে বলল সলটার। ফিরেই যাব।
তবে চলি আমি, স্যাডলে চাপল গিয়ে শেরিফ। ঘোড়া ছোটাল। শেরিফকে যতক্ষণ দেখা গেল ততক্ষণ চেয়ে রইল সলটার।
তারপর সিধে হয়ে বসল সে। ঘোড়াটাকে মন্থর গতিতে এগিয়ে নিল। এভাবে চললে বক্স ডব্লিউতে পৌঁছতে ঘণ্টা দুয়েক মত লাগবে তার। লাগুক, কোন তাড়া নেই। পরিস্থিতিটা ভাবতে চেষ্টা করল সে। মনের গভীর থেকে ফোরম্যানের কাজটা ছেড়ে দেয়ার তাড়না অনুভব করছে সে। এই রেঞ্জ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবে সে। নতুন করে আবার সব শুরু করবে। এখানে অনেকগুলো ভূত জ্বালাতন করছে তাকে। বাপের ভূত তো রয়েছেই, তার ওপর আবার প্রেমের ভূত। অসহ্য কষ্ট!
হঠাৎ গুলির শব্দে বাস্তবে ফিরে এল সে। ওর ডান পাশ দিয়ে গিয়েছে গুলিটা। তবে বহুদূর দিয়ে। এর অর্থ কী? ঘোড়া থামিয়ে কান পাতল সলটার। অল্প খানিকক্ষণ বাদে আবার গুলি হল, তারপর আবার। চিবুক ঘষল সে। র্যাঞ্চ ও-তে ফিরে থাকলে ওপথেই গিয়েছে ম্যাকগ্র। কিন্তু গুলি করছে কাকে?