চুপ, ফিসফিসিয়ে বলল সলটার। হেলগার গলা কানে গেছে কার্টলির। জেলখানার দিকে তখুনি মাথা ফেরাল সে। সলটার আশা করল শেরিফের জানালার আলো গানম্যানকে ধোকা দেবে। জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভেজাল সে। আরও খানিকটা এগিয়ে এসেছে এখন কার্টলি। এ মুহূর্তে ওদের পাশ কাটাল সে।
এবারও তার চোখ এড়িয়ে গেল ওরা। হেলগার কাঁধে বাঁ হাত রাখল সলটার। ডান হাত শক্ত হল পিস্তলের বাটে।
ল অফিস ছাড়িয়ে প্রায় গজ বিশেক এগিয়ে গেছে কার্টলি। তীক্ষ্ণ চোখে ওকে নজর করছে সলটার। সামান্য উঁচু হল গানম্যানের ডান কাঁধ। অভিজ্ঞ সলটার বুঝতে ভুল করল না। কাঁধে চাপ দিয়ে হেলগাকে বসিয়ে দিল সে। কোল্ট চলে এল সলটারের হাতে। দেখতে পেল দ্রুত
ফিরে আসছে কার্টলি। তবে ভুল করে ফেলল সে। সম্পূর্ণ ঘোরার আগেই। পিস্তল বার করল। ইতোমধ্যে অনেকখানি কাছে চলে এসেছে সে। লণ্ঠনের আলোয় অস্পষ্ট ছায়ামূর্তির মত লাগছে তাকে।
সলটার? চেঁচিয়ে জানতে চাইল সে।
হ্যাঁ, আমি। পিস্তল কক করল ও। গানম্যানের ডান হাত এখন ওর দিকে তাক করা। ভয়ে আর্তচিৎকার করে উঠল হেলগা। ধপ করে এক হাঁটুর ওপর বসে পড়ল সলটার। লালচে আলো চোখে পড়ল তার। প্রচণ্ড শব্দে গুলি এল। লাগল ঠিক ওর পাশের দেয়ালে। পিস্তলটা ঝাঁকি খেল সলটারের ডান হাতে। আগের গুলির প্রতিধ্বনি মিলিয়ে গেল এবার। চোখ পিটপিট করে দেখার চেষ্টা করল সলটার। আবার গুলি করল কার্টলি। তবে সলটারের ধারে কাছে এল না সেটা। বাতাসে গানম্মোক, তারই মাঝ দিয়ে গানম্যানকে এক ঝলক দেখতে পেল সে। উপুড় হয়ে পড়ে যাচ্ছে লোকটা। পিস্তল কক করল সলটার।
খানিক অপেক্ষার পর উঠে দাঁড়াল। অবসাদগ্রস্ত। গুলির মিলিয়ে আসা প্রতিধ্বনি শুনল কান পেতে। হঠাই লাফিয়ে উঠে দৌড়াতে চেষ্টা করল হেলগা। ওর হাত চেপে ধরল সলটার।
বোকা কোথাকার, ধমকাল সে। তোমার জন্যে এখানটাই সবচেয়ে নিরাপদ।
ওকে দরজার দিকে ঠেলে দিয়ে কার্টলির দিকে এগোল সে। ফুটপাথে পড়ে রয়েছে গানম্যান। তার প্রাণহীন দেহটা পিস্তল দিয়ে কভার করল সলটার। নিশ্চিত হল, মারা গেছে কাটলি। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সলটার। ফিরে এল হেলগার কাছে। লোকজন জমতে সময় লাগবে না। আর তাদের মাঝে ম্যাকগ্র থাকলে তো কথাই নেই। ওর সঙ্গে হেলগাকে দেখলেই সব বুঝে ফেলবে সে। প্রাণে মরবে হেলগা, কেউ ঠেকাতে চাইলে তাকেও ছাড়বে না ম্যাকগ্র। জন সলটারের মত রয় সলটারকে হয়ত জীবন দিতে হবে ওর গুলিতে।
বুটের শব্দ কানে এল সলটারের। লম্বা একটা মূর্তি ছুটে আসছে এদিকে। জো। তার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছে ম্যাকডারমট। হাঁপ ছাড়ল সলটার।
কি হয়েছে? ব্যগ্র প্রশ্ন করল জো। থেমে দাড়াল মৃতদেহের কাছে।
বলছি, দ্রুত বলল সলটার। শেরিফ ওর কাছে পৌঁছলে বলল, অফিস খোল, ম্যাক। হেলগা তোমার সঙ্গে কথা বলবে। আমি চাই না কেউ দেখে ফেলুক ওকে।
দরজা খুলল ম্যাকডারমট। হেলগাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকল সলটার। তাদের পেছনে ঢুকল জো আর শেরিফ। হেলগাকে সেলের দিকে ঠেলে নিয়ে চলল সলটার।
একে আপাতত আটকে রাখ, পরামর্শ দিল সে। লোকে ভরে যাবে এ জায়গাটা। ম্যাকগ্র ওকে দেখে ফেললে অসুবিধে হবে। খুন করবে নির্ঘাত।
তুমি কথা দিয়েছিলে, আমাকে রক্ষা করবে, ভয়ে কেঁপে উঠল হেলগার গলা।
তাই-ই করছি, পাল্টা বলল সলটার। দেরি কোরো না, ম্যাক।
এসব কি হচ্ছে? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, অবাক হয়ে জানতে চাইল শেরিফ, ডেস্ক থেকে বড় একগোছা চাবি নিল সে।
সব বলব তোমাকে। আগে যা বলছি কর, সলটার বলল, ম্যাকগ্র আর তার দুই চামচাকে ধরতে চাও তুমি। খুন আর রাসলিং এর অভিযোগে। সে ব্যবস্থাই করছি আমি।
ম্যাকগ্র শহরে রয়েছে, দ্রুত বলল জো। বড় স্যালুনটায় দেখেছি।
মাথা নাড়ল ম্যাকডারমট। বুঝতে পারছে না কি ঘটছে। সেল খুলে হেলগাকে ভেতরে ঢোকাল। তালা মেরে দিল দরজায়। যখন ফিরে এল তখনও চোখ মুখ থেকে বিস্ময় কাটেনি তার। অসহিষ্ণু বোধ করছে সলটার। দরজার দিকে এগোল সে। কিন্তু থমকে দাঁড়াতে হল শেরিফের ডাকে।
এসব পছন্দ হচ্ছে না আমার, বলল শেরিফ। সব জানতে চাই আমি।
একটা লাশ পড়ে রয়েছে বাইরে, সলটার বলল। ম্যাকগ্রর লোক। আমাকে গুলি করেছিল। আমাকে খুন করতে চায় ম্যাকগ্র, আবার প্রমাণিত হল সেটা। তাছাড়া হেলগা জানিয়েছে ছ’বছর আগে বাবাকে খুন করেছে সে-ই, হেলগার সঙ্গে ওর আলোচনা, সংক্ষেপে শেরিফকে জানাল ও। তবে প্রতিটি মুহূর্ত উৎকর্ণ রইল বাইরের শব্দ শোনার আশায়। কানে এল লোকজনের চাপা গলার কথাবার্তা।
এতে হবে না, সব শুনে বলল শেরিফ। আমি নিজে জিজ্ঞাসাবাদ করব ম্যাককে। এবং এক্ষুণি। ওই মেয়ের কথায় কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয় না।
আমার ওপর ব্যাপারটা ছেড়ে দাও। আমি স্যালুনে গিয়ে ম্যাকগ্রর সঙ্গে কথা বলব। তুমিও থাকবে আমার সঙ্গে। কার্টলিকে মেরে ফেলেছি জানলেই ওর প্রতিক্রিয়া দেখতে পাবে তুমি। ও কি করে তখন নিজের চোখে দেখবে।
আইন ওভাবে কাজ করে না, প্রতিবাদ জানাল শেরিফ। তোমাকে নেব না আমি। একাই যাব। এখানে নিয়ে আসব ওকে। ওর বক্তব্য শুনব। তুমি আর জো এসবের বাইরে থাকবে।
তোমার যা ইচ্ছে, ঠাণ্ডা গলায় বলল সলটার। আমি তবে আমার কাজে যাব। খুব সম্ভব বিপদে পড়েছে জোহান। জো, তুমি র্যাঞ্চে ফিরে যাও। যত দ্রুত সম্ভব। ছেলেদের জড়ো কর। আমি প্রথমে যাব শ্যাকে। সেখান থেকে সোজা স্যাডল ব্ল্যাঙ্কেট ক্রীক-এ। জর্জকে বলবে ছেলেদের নিয়ে ওখানে চলে যেতে। আমার জন্যে অপেক্ষা করবে। তারপর সকলে মিলে অসকারের র্যাঞ্চে যাব। দেখব কি বলে সে।