পেছন ফিরল সলটার। জো, খুব সম্ভব খুনের জায়গায় রয়েছে শেরিফ। তুমি শিগগির খুঁজে আন তাকে। বলবে খুব জরুরি দরকার। আমি হেলগাকে নিয়ে রইলাম এখানে।
আমার ভয় করছে, জো সরে যেতেই উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল হেলগা। ম্যাকগ্রর লোকেরা নজর রাখছে তোমার ওপর। শুধু তোমাকে মেয়েই থামবে না ওরা। আমাকেও মারবে।
ভয় পেয়ো না, আমি তো আছি। আচ্ছা, প্রথমবার আমি তোমার কেবিন থেকে ফেরার পর কি ঘটল বল তো। খুব কৌতূহল হচ্ছে আমার।
খানিক বাদেই ম্যাকগ্র এল, ওকে বললাম জোহানকে খুঁজতে এসেছিলে তুমি। তারপর ওর দুজন লোক এসে তোমাদের সঙ্গে বার্নে দেখা হওয়ার কথা জানাল। ম্যাকগ্র বলে দিল বক্স ডব্লিউ-এর প্রত্যেকটা লোকের ওপর নজর রাখতে। আর সুযোগ পেলেই প্রাণে মারতে। লোক দুটো চলে গেল। তার কমুহূর্ত পরেই গোলাগুলির শব্দ শুনলাম।
লোক দুটো কারা?
জিওফ হাওয়ার্থ আর বব হ্যারিসন।
গুড, সব জানাবে শেরিফকে, তোমার আর চিন্তা নেই। ম্যাকগ্র ঝামেলা পাকাচ্ছে কেন জান কিছু?
ক্ষমতার জন্যে, বলল মেয়েটি। বক্স ডব্লিউ-এর ক্ষমতা পাওয়ার জন্যে তোমার বাবাকে খুন করেছে সে।
কি বললে? আবার বল, হেলগার কাঁধ ধরে ঝাঁকাল সে।
ছাড়। ব্যথা লাগে।
মাফ চাইল সলটার। হাত সরিয়ে নিল ওর কাঁধ থেকে। মেয়েটি রাস্তার দিকে চেয়ে সেঁটে এল সলটারের শরীরে। ওর কাঁধের ওপর দিয়ে চাইল সলটার। একটা ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসছে। আরও কাছে আসতে চিনতে পারল সে। কার্টলি। অবশ্য ওদের দেখতে পায়নি ও। পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল। হেলগা প্রচণ্ড ভয় পেয়েছে, বুঝল সলটার। পিস্তলের বাটে হাত চলে গেল তার। কপালে বিন্দু বিন্দু। ঘাম।
ঈশ্বর বাঁচিয়েছে, লোকটি চোখের আড়াল হতে বলল হেলগা। আমাকে মারতে চাও নাকি? চল আমার কেবিনে ফিরে যাই। শেরিফকে নিয়ে এস তুমি। ওখানেই কথা হবে। এখানে আর এক মুহূর্ত দাঁড়াচ্ছি না আমি।
একটু অপেক্ষা কর। এখন কেবিনে ফেরা আরও বিপজ্জনক। ম্যাকগ্র আমার বাবাকে মেরেছে বলছ, কিন্তু তুমি জানলে কিভাবে? ও নিশ্চয় বলেনি তোমাকে?
এক রাতে পাঁড় মাতাল হয়ে এসেছিল, বলল মেয়েটি। ঘুমের মধ্যে সব বলেছে। এও বলেছে তোমাকে চরম ঘৃণা করে ও।
কিন্তু কেন? প্রশ্ন করল সলটার। আমি ওর কি ক্ষতি করেছি?
তোমার বাবাকে মারল কেন? পাল্টা প্রশ্ন করল হেলগা। ফোরম্যান হওয়ার জন্যে। পারল কই? সে দায়িত্ব তো নিলে তুমি। ব্যাপারটা কিছুতেই মানতে পারেনি সে।
আমাকে তখন খুন করার চেষ্টা করল না কেন?
তক্কে তক্কে ছিল। এসময় এল উইলবার অসকার। ওর র্যাঞ্চের ফোরম্যান হল ম্যাকগ্র। কিন্তু তোমার প্রতি ঘৃণা দূর হয়নি তার। দায়িত্ব পেয়ে প্রতিশোধের নেশা আরও বাড়ল বরং। জর্জ ওয়াগনারকেও একই রকম ঘৃণা করে সে, ওকে ফোরম্যান করেনি বলে। তোমাদের দুজনের ওপরই প্রতিশোধ নিতে চায় সে। তোমাকে খুন করে, আর জর্জকে ধ্বংস করে।
গত সপ্তাহে ও-ই কি আমাকে খুন করার চেষ্টা করেছিল?
না। ঘটনাটা ঘটায় অন্যদের মত ও-ও অবাক হয়ে গিয়েছিল। যে কোন কিছু প্ল্যান করলেই আগে আমাকে জানায় সে। রাসলিং ঘটাচ্ছে সে-ই। জর্জ ওয়াগনারকে পথে বসানর দুটো রাস্তা বার করেছে ম্যাকগ্র। এক রাসলিং আর দুই জোহান ওয়াগনারকে নষ্ট করা।
জোহানকে কিভাবে নষ্ট করছে সে?
জোহানকে রাসলিং-এ ঢুকিয়ে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে: ম্যাকগ্র। জোহানকে দিয়ে তোমাকে খুন করাতে চেয়েছিল। পারেনি। আমার সঙ্গে জোহানের মেলামেশায় বাধা দেয়নি ও। যাতে ওকে পুরোপুরি মুঠোয় পেয়ে যায়।
জোহান রাসলিং-এ জড়াল কিভাবে? জানতে চাইল সলটার।
জুয়া, বলল হেলগা।
তারমানে?
জুয়া খেলে প্রচুর টাকা হেরেছে জোহান। আর ওকে দুহাতে ধার দিয়েছে ম্যাক। ছেলেটা এখন নাক পর্যন্ত ডুবে আছে দেনায়। সে সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে ম্যাকগ্র। ইদানীং ওকে টাকার জন্যে চাপ দিতে শুরু করেছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে জোহান। ওকে বুদ্ধি বাতলে দিয়েছে ম্যাকগ্র। রাসলিং। বাপের গরু চুরি করে জুয়ার ধার শোধ করছে ছেলে। তবে কিছুদিন যাবৎ ম্যাককে বিরক্ত করছে জোহান। ওর খপ্পর থেকে বেরোতে চাইছে। ম্যাকগ্র প্রচণ্ড রেগে রয়েছে ওর ওপর।
জোহান এখন কোথায়? প্রশ্ন করল সলটার। শহরে নেই। সবখানে খুঁজেছি। আমি।
মাইল দুয়েক দূরে একটা শ্যাক আছে, বলল হেলগা। রাসলাররা ওখানেই জড়ো হয়। ওদের অনেকে র্যাঞ্চ ও-র লোক। সেটা অবশ্য জানে না অসকার। জোহান বলছিল দিন দুয়েক ওখানেই কাটাবে।
রাস্তার দিকে চাইল সলটার, জো বা শেরিফ কারও দেখা নেই। এখনই রওনা দেয়া দরকার। কিন্তু হেলগাকে একা রেখে যেতে সাহস করল না সে। হেলগার মুখে সব কথা শোনা দরকার শেরিফের। ম্যাকগ্র শহরে রয়েছে, ভাবনাটা মাথায় আসতেই চোখ চকচক করে উঠল সলটারের। খুনীটার মুখোমুখি হওয়ার সময় হয়ে এসেছে প্রায়। আপন মনে হাসল সে।
বুটের শব্দে সচকিত হল সলটার। ঘাড় ফেরাতেই দেখল ফিরে আসছে কার্টলি। উত্তেজনায় টানটান হল ওর শরীর। হাত চলে গেল পিস্তলের বাঁটে।
প্রথম সুযোগেই তোমাকে খতম করবে ও, চাপা গলায় বলল মেয়েটি। ম্যাকগ্র তাই বলছিল। ওর ধারণা তোমাকে যে-ই খুন করুক না কেন দোষ পড়বে হার্পারের খুনীর! কারণ সেদিন তোমাকে গুলি করেছিল সে।