নতুন শেরিফের গলা, চিনতে পারল সলটার। তবে ছোটা থামাল না সে। পেছনে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল, আমি সলটার। মার্টিনকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। মোড়ে পড়ে রয়েছে লাশ। খুনী বোধহয় বার্নে গেছে।
আর কিছু বলল না শেরিফ। ছুটে চলল সলটার। জোকে দেখতে পাচ্ছে না সে। ও এগিয়ে রয়েছে অনেকখানি। আস্তাবলের গেটে এসে থামল। হেলান দিল একটা পোস্টে। পিস্তল ড্র করল। প্রচণ্ড হাঁপিয়ে গেছে সে। জোর পাচ্ছে না। পায়ে। মনে হচ্ছে যেন হাঁটু মুড়ে পড়ে যাবে। বহুকষ্টে বার্নের দিকে চলল সলটার। এ সময় কানে এল গুলির শব্দ। বার্নের ছায়ায় আড়াল নিল সে।
আরও দুবার গুলি হল। বানের ভেতরে দরজার কাছে পৌঁছে গেল সলটার। দেখল দরজার পোস্ট ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে লম্বা একটা শরীর। জো। ওর কাঁধে হাত রাখল সে।
কি ব্যাপার, জো? অতিকষ্টে কথা কটা উচ্চারণ করল সলটার।
ওরা বার্নের ভেতরে রয়েছে, ক্রুদ্ধস্বরে বলল জো। আমি দরজার কাছে পৌঁছতেই গুলি শুরু করল। তারপর ঢুকে পড়েছে। পেছন দিক থেকে তাড়িয়ে আনতে হবে শালাদের।
এক মিনিট। এদের চ্যালেঞ্জ করে দেখি, সলটার বলল। আমি জানতে চাই ওরা কারা।
ওদের খুন করি আগে, তারপর জেনো, ভয়ঙ্কর শোনাল জোর কণ্ঠ। ওরা খুনী, কোন সন্দেহ নেই। একজন দরজায় পাহারা দিচ্ছিল, আরেকজন ছিল ভেতরে। ঘোড়ার ব্যবস্থা করছিল।
তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি, জো, সলটার বলল। মার্টিন তোমার প্রিয় বন্ধু ছিল। কিন্তু এ লোক দুটোকে জ্যান্ত ধরা উচিত। তাতে খোলাসা হবে অনেক রহস্য। প্লীজ।
ঠিক আছে। এখান থেকে কথা বলে দেখ ওদের সঙ্গে, হাঁটা দিল জো। আমি পেছন দিকে যাচ্ছি।
মাথা ঝাঁকাল সলটার। জো চলে গেলে পর খানিকটা সহজ হল সে। হাতে পিস্তল নিয়ে খানিকক্ষণ অপেক্ষা করল। জোকে পজিশন নেয়ার সুযোগ দেয়ার জন্যে। বার্নের ভেতরে এখন কোন সাড়াশব্দ নেই।
বার্ন ঘেরাও করা হয়েছে, চেঁচিয়ে বলে উঠল সলটার। তোমরা মাথার ওপর হাত তুলে বেরিয়ে এস।
পরপর কয়েকটা গুলি করে জবাব দিল ওরা। সলটারের মাথার কাছের কাঠে লাগল সেগুলো। কাঠের টুকরো ছিটকে পড়ল ওর মাথায়। মাটিতে শুয়ে পড়ল সলটার। পিস্তলের বাটে শক্ত হল হাত। ক্রল করে আস্তাবলের ভেতর দিকে এগোল সে। আবার এক ঝাঁক গুলি বেরিয়ে গেল দরজা দিয়ে। মুহূর্ত পরে তৃতীয় একজন গুলি ছুঁড়তে শুরু করল। প্রথম দুজন তার প্রত্যুত্তর দিল না। নিশ্চুপ রইল।
গুলি চালাচ্ছে জো। ব্যাপারটা পছন্দ হল না সলটারের লোক দুটোকে গোলাগুলি ছাড়া প্রতে পারলে প্রমাণ করা যেত অনেক কিছু। সদ্য ব্যবহৃত অস্ত্রসহ ওদের ধরতে পারলে আইনের চোখে সহজেই দোষী প্রমাণিত হত ওরা। কিন্তু সে আশা ভেস্তে গেছে। হতাশা ঘিরে ধরল ওকে।
গুলি বন্ধ কর, উঠনের দিক থেকে চিৎকার করে উঠল কর্কশ একটা কণ্ঠ।
নতুন শেরিফ, ম্যাকডারমট! দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে সে। হাতে পিস্তল।
জো, চেঁচাল সলটার। গুলি থামাও। বন্ধ হয়ে গেল গোলাগুলি। অস্বস্তিকর নীরবতা ফিরে এল আবার।
গণ্ডগোলের কারণটা কি? গুলি শুরু করেছে কে? চেঁচিয়ে জানতে চাইল শেরিফ।
মার্টিন মারা গেছে বলেছি তোমাকে, রাগতস্বরে বলল সলটার। ওর খুনীদের ধরার জন্যে এখানে এসেছি আমরা।
খুনীরা বার্নের ভেতরে রয়েছে?
হ্যাঁ, জবাব দিল সলটার। তার কানে এল খুরের শব্দ। খুব সম্ভব লোক দুটো পালানর চেষ্টা করবে। মনে মনে তাই চাইল সলটার। তাতে ওদের বিরুদ্ধে যুক্তি খাড়া করা যাবে।
বার্নের ভেতর কেউ থেকে থাকলে বেরিয়ে এস। আমি শেরিফ ম্যাকডারমট। জলদি।
গাধা দুটোকে গুলি করতে মানা কর। আমরা আসছি, জবাব এল। ঘোড়া নিতে এসে গুলির মুখে পড়লাম। মগের মুল্লুক নাকি?
সলটার, পিস্তল ঢোকাও, চিৎকার করে বলল শেরিফ। তোমরা বেরিয়ে এস।
উঠে দাঁড়িয়ে হোলস্টারে পিস্তল ভরল সলটার। পরমুহূর্তে বেরিয়ে এল লোক দুজন। আবছা আঁধারে অস্পষ্ট তাদের মুখ।
গুড, বলল শেরিফ। আমার অফিসে চল। তোমাদের নাম?
জিওফ হাওয়ার্থ, বলল একজন।
বব হ্যারিসন, জবাব দিল অন্যজন।
এরা র্যাঞ্চ ওর লোক, আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে বলল জো, খানিক আগে মার্টিনকে খুন করেছে।
ওর মাথার ঠিক নেই, হ্যারিসন বলল। আমি আর জিওফ শহরের বাইরে যাচ্ছিলাম। ঘোড়া নেয়ার জন্যে এসেছি এখানে। আর অমনি এ দুজন গুলি চুড়তে শুরু করেছে।
বাজে কথা বলবে না, রেগে উঠল জো। এরা মার্টিনের খুনী। আমি জানতে চাই কেন খুন করা হয়েছে তাকে।
প্রশ্ন করার দায়িত্ব আমার, ম্যাকডারমট বলল।
আমার লোকেরা নির্দোষ, কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠল এক লোক। চমকে তাকাল সবাই। ছায়ার আড়াল থেকে বেরিয়ে এল ম্যাকগ্র। জো, তোমার ধারণা এরা মার্টিনকে মেরেছে?
হ্যাঁ, জোরাল গলায় জবাব দিল জো।
বেশ, প্রমাণ কর, চাবুক কষাল যেন ম্যাকগ্র। এদের গুলি করতে দেখেছ?
না, আমি আর সলটার তখন গজ ত্রিশেক দূরে ছিলাম। গুলির শব্দে ছুটে গিয়ে দেখি পড়ে রয়েছে মার্টিনের মৃতদেহ। সঙ্গে সঙ্গে চলে এসেছি বার্নে। আমাকে দেখেই এদের একজন গুলি ছুঁড়ল। তারপরও বলতে চাও এরা নির্দোষ?
সবাই আমার অফিসে চল, ম্যাকডারমট বলল। তোমাদের কারও কথাতেই সন্তুষ্ট নই আমি। লটার, আমি ভেবেছিলাম তুমি এসবের বাইরে থাকবে।
উপায় ছিল না, সংক্ষিপ্ত জবাব দিল সলটার। এদের ঠেকিয়েছি আমরা। নইলে পালাত। গত সপ্তাহের খুনীকে ধরতে পারিনি। এবারের খুনীদের পেরেছি।