হ্যাটটা খানিক সামনে টেনে দিল সলটার। গোলাগুলি চলছে এখনও। প্রায়। ডজন দুয়েক গুলির শব্দ কানে এসেছে ইতোমধ্যেই। কেউ নিশ্চয় ভীষণ বিপদে পড়েছে।
কুরুক্ষেত্রের দিকে ঘোড়া দাবড়াল সলটার। অসকার আর ফ্লিন্ট উডককের র্যাঞ্চের মধ্যবর্তী সীমানায় রয়েছে এখন সে। গত পাঁচ সপ্তাহ ধরে ফ্লিন্টের গরু ক্রমাগত চুরি যাচ্ছে। হয়ত গণ্ডগোলটা সেজন্যেই, ভাবল সলটার। দুটো র্যাঞ্চের মাঝখানের ক্রীকটা পেরোল সে। তীরবেগে ঘোড়া ছোটাল পাহাড় চূড়ার দিকে। চূড়ায় পৌঁছে দেখতে পেল তিন ঘোড়সওয়ার ছুটে আসছে তার দিকে। সঙ্গে গরুর পাল। ওদের পিছু ধাওয়া করছে আরেকজন অশ্বারোহী। বেশিরভাগ গুলি সে-ই ছুঁড়ছে।
স্যাডল বুট থেকে নিজের উইনচেস্টারটা তুলে নিল সন্টার। উজ্জ্বল সূর্যালোক চোখ ধাধিয়ে দিচ্ছে তার। তিন ঘোড়সওয়ার এখন দু’শ গজ দূরে। সোজা ধেয়ে আসছে। তাদের শ’খানেক গজ পেছনে চতুর্থ অশ্বারোহী। তার লম্বা পাতলা শরীরটা দেখে চিনতে পারল সলটার। ফ্লিন্ট উডকক। রাইফেলে কার্তুজ রল সলটার। ফ্লিন্টের শক্র মানে তারও শত্রু। ফাঁকা গুলি করল সে। গুলির শব্দে লোক তিনটি চমকে তাকাল ওর দিকে। লাগাম টেনে ধরল। পরক্ষণেই ওর রেঞ্জের বাইরে ঘোড়া ছোটাল। ওকে লক্ষ্য করে দু’জন গুলি ছুঁড়ল। সলটারের কাছে-পিঠেও এল না ওগুলো। তৃতীয়জন ওদিকে গুলি চালাতে শুরু করেছে পেছন দিকে। ফ্লিন্টকে লক্ষ্য করে। হঠাৎই লাগাম থেকে হাত ছুটে গেল ফ্লিন্টের। ছিটকে পড়ল সে ঘোড়া থেকে। মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে রইল সে। নিথর। ওর ঘোড়া ওকে ফেলেই ছুটল ঢাল বেয়ে।
হতচকিত হয়ে গেল সলটার। পরমুহূর্তেই সংবিৎ ফিরে পেয়ে তিন অশ্বারোহীর উদ্দেশে গুলি চালাতে লাগল সে। বুঝতে পারল না ওদের কারও গায়ে। গুলি লেগেছে কিনা। তবে ও রিলোড় করার আগেই পানি ছিটিয়ে ক্রীক পেরোল ওরা। চলে গেল রেঞ্জের বাইরে।
তখুনি ঘোড়ায় চাপল সলটার। রাইফেলটা বুটে রেখে ধাওয়া করল লোকগুলোকে। এ মুহূর্তে অনেকখানি দূরে চলে গেছে ওরা। ঘোড়ার গতি দ্রুত হল সলটারের গোড়ালির খোঁচায়। স্যাডলবুট থেকে রাইফেলটা তুলে নিল ও। প্রায় আওতার বাইরে চলে যাওয়া আবছা শরীরগুলোকে লক্ষ্য করে পরপর কয়েকটা গুলি করল সে। তবে তার কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। এযাত্রা আসলে বেঁচে গেছে লোকগুলো। হাল ছেড়ে দিল সলটার, আরে! ওদিকে ফ্লিন্ট আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, হঠাৎ মনে পড়ল ওর। ঘোড়ার মুখ ফেরাল দ্রুত। তীব্রগতিতে ছুটছে এখন ওটা। ফ্লিন্টের কাছে শিগগিরই ফিরে এল ও। চাইল ওর অসাড় দেহের দিকে। বারুদের গন্ধ মিলিয়ে যায়নি এখনও।
ফ্লিন্টের ঘোড়াটা মালিকের কাছে ফিরে এসেছে তখন, নিজের ঘোড়া থেকে লাফিয়ে নামল সলটার। হাঁটু গেড়ে বসল ফ্লিন্টের পাশে। ধীরে ধীরে চিত করে শোয়াল ওকে। ফ্লিন্টের ফ্যাকাসে মুখের দিকে চাইল সে। র্যাঞ্চার চোখ মেলল এসময়।
হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সলটার। ওর দিকে শূন্যদৃষ্টিতে চাইল ফ্লিন্ট। যেন বুঝতে পারছে না কিছু।
কোথায় লেগেছে, ফ্লিন্ট? প্রশ্ন করল সলটার। জবাব দিল না ফ্লিন্ট। উঠে বসল বহুকষ্টে। ওর ডান কাঁধ ভেসে যাচ্ছে রক্তে। ভিজে লাল হয়ে গেছে শার্ট। ওকে আবার শুইয়ে দিল সলটার।
গরু চোরের দল, কঁপা গলায় বলল ফ্লিন্ট। চিনেছ কাউকে? প্রশ্ন করল সে।
নাহ, ফ্রিন্টের শার্ট খুলতে খুলতে বলল সলটার। ক্ষতস্থানটা বেরিয়ে পড়তে চমকে উঠল সে। জলদি ডাক্তার রবসনকে দেখানো দরকার। তুমি বাড়িতে শুয়ে অপেক্ষা করবে নাকি আমার সঙ্গে শহরে যাবে?
যাব, বলল ফ্লিন্ট। ওঠার চেষ্টা করছে। বছর পঞ্চাশেক বয়স ওর। রুক্ষ মুখটা সাদা হয়ে গেছে। রাগী দু’চোখে এখন বেদনা ফুটে উঠেছে। এলাকার কারও হাত আছে এর পেছনে, আমার বিশ্বাস, বলল ফ্লিন্ট।
র্যাঞ্চারের গলা থেকে রুমালটা খুলে নিল সলটার। ক্ষতস্থান বাঁধল ওটা দিয়ে।
ওদেরকে আগে কখনও দেখেছ এখানে? জিজ্ঞেস করল সে।
জানি না, আমি গুলি ছুঁড়তেই ব্যস্ত ছিলাম। চেহারা দেখিনি।
ওদের দেখলে কখন?
সকালে গিয়েছিলাম বাথানে। দেখি প্রায় খালি করে ফেলেছে। সঙ্গে সঙ্গে পায়ের চিহ্ন দেখে ধাওয়া করলাম।
তোমার লোকেরা জানে?
হুঁ, বলল ফ্লিন্ট। হাঁক দিয়ে এসেছি।
এসময় ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনতে পেল ওরা। ফ্রিন্টের কাউবয়রা আসছে। বড় দেরি করে ফেলেছে এরা।
ব্যাণ্ডেজ বাঁধা হয়ে গেলে স্যাডলে অতি কষ্টে চেপে বসল ফ্লিন্ট। যন্ত্রণায় বিকৃত হল মুখ। ঘোড়ায় চেপে ওর পাশাপাশি চলতে লাগল সলটার। চারদিকটা পর্যবেক্ষণ করল সে।
ফ্লিন্টের কাউবয়দের দু’জন এসময় চলে এল ওদের কাছে।
বসের কি হয়েছে? উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করল একজন। কোথায় যাচ্ছেন?
কাঁধে গুলি লেগেছে। বলল সলটার। শহরে যাচ্ছি, ডাক্তার দেখাব।
তোমরা গরুগুলো র্যাঞ্চে নিয়ে যাও। সবাইকে বলবে চিন্তার কিছু নেই, শিগগিরই ফিরছি আমি, কোনমতে বলল ফ্লিন্ট। কাউবয় দু’জন অন্যদের সঙ্গে যোগ দিতে চলে গেল। গরু ফিরিয়ে নেবে র্যাঞ্চে।
রাসলাররা নিশ্চয়ই চিহ্ন রেখে গেছে। শহর থেকে ফিরেই খুঁজতে বেরোব। এভাবে চলতে পারে না। গত পরশু রাতে আবারও চুরি হয়েছে আমাদের র্যাঞ্চে। এবার গেছে একশটা। অসকার কাল রাতে এসেছিল। ওর নাকি পঞ্চাশটা গেছে, কঠিন গলায় বলল সলটার।