বোকামি কোরো না, সলটার, প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মার্টিন। তুমি মারা পড়লে নিজেকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারব না আমি। যদি ওকে দেখতে না পাই তবে? যদি পিস্তল ড্র করতে দেরি হয়ে যায় আমার? না, এতবড় ঝুঁকি কিছুতেই নেব না আমি।
আমার জান গেলে যাক, বলল সলটার। ঝুঁকি আমি নেবই।
ব্যাপারটা আমার পছন্দ হচ্ছে না, সলটার, অসন্তোষভরে বলল মার্টিন। তুমি আমার বস, যা বলবে তাই করতে বাধ্য আমি। তবে একটা অনুরোধ করব, নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। নইলে কভার করতে পারব না।
হেসে সায় দিল সলটার। হাঁটা ধরল মেইন রোডের দিকে। রাস্তার আলোয় জোর শরীরটা চোখে পড়ল ওর। রাস্তার উল্টোদিকে চলে গেল সলটার। ছোট স্যালুনগুলো চেক করার জন্যে। পুরো রাস্তাটা হেঁটে এল সে। তার পিছে সর্বক্ষণ লেগে রইল মাটিন।
ছোট শহরটা সম্পূর্ণ খোঁজার পর বিরক্ত হয়ে পড়ল সলটার। জোহান নেই কোথাও। রাস্তার এক কোণে থামল সে। তার কাছে ঘেঁষে এল মাটিন। কয়েকটা নিচুপ মুহূর্ত কাটল। তারপর সলটার ঘুরে হাঁটা দিল আস্তাবলের দিকে। ম্যাকগ্রর
আসার সময় হয়ে এল বোধহয়, ভাবল সে।
উঠনে যখন প্রবেশ করল ওরা তখন আলো নেই আস্তাবলে। একটা ওয়াগনে। গাদা করা রয়েছে খড়, সেটার ছায়ায় এসে দাঁড়াল সলটার। জো ভেতরে রয়েছে। কাজেই ওদের ঢোকার কোন দরকার নেই। ওয়াগনের ছায়ায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা। করতে লাগল ওরা। দূরের স্যালুনগুলো থেকে ভেসে আসছে হৈ-হল্লার ক্ষীণ শব্দ। এভাবে কতক্ষণ কেটে গেছে জানা নেই সলটারের। হঠাৎ খুরের শব্দে সচকিত হল ওরা। দু’জনে খানিকটা চেপে এল ওয়াগনের গায়ে। চার অশ্বারোহী উঠন পেরিয়ে ঢুকল ভেতরে। তারপর এল আস্তাবলের দিকে।
ব্যথা ভুলে গেল সলটার। সতর্ক হয়ে গেছে। চারজনের প্রথমজন বক্স ওর ফোরম্যান ম্যাকগ্র। সলটারের ঠিক উল্টোদিকে, ওয়াগনের অন্যপাশে ঘোড়া থামাল সে।
শোন, সহযাত্রীদের উদ্দেশে বলল, আমি কোন গোলমাল চাই না, কথাটা আবার বলে রাখছি। নতুন শেরিফ হার্পারের চেয়েও বদমাশ। কাটলি, তুমি শহরের খবরাখবর জোগাড় করবে। জানা দরকার এখানকার কি অবস্থা। সলটার শহরে এসেছিল কিনা বা এখনও রয়েছে কিনা জানতে হবে।
আচ্ছা, দ্রুত ঘোড়া ছোটাল একজন। বাকি দুজন ম্যাকগ্রর কাছাকাছি হল।
জোহান ওয়াগনার, সম্ভবত শহরেই রয়েছে, ওদের উদ্দেশে বলল ম্যাক, ওকে খোঁজ। জরুরি কথা আছে। হেলগার কেবিনে যেতে বলবে ওকে। আমি ওখানেই থাকব।
লোক দু’জন নেমে ঘোড়া নিয়ে ঢুকল আস্তাবলে। সোজা হল সলটার। দেখল উঠন পেরিয়ে গেল ম্যাকগ্র। মার্টিনের দিকে চাইল সে। ঝলসে উঠতে দেখল কাউবয়-এর সাদা দাঁত।
হেলগার কেবিনে গেল ম্যাকগ্র। আমাদেরও যাওয়া দরকার, কঠোর গলায় বলল মাটিন। মনে হচ্ছে জোহানের সঙ্গে বোঝাপড়া করবে ম্যাকগ্র।
হ্যাঁ। কিন্তু জোহান কোথায়? শহর ছেড়ে চলে গেল নাকি?
নাহ। ম্যাকগ্র হাজির হয়েছে, কাজেই জোহানের দেখা মিলতে দেরি হবে, বলল মার্টিন। আমাদের তৈরি থাকতে হবে।
হঠাৎ হুড়োহুড়ির শব্দ শোনা গেল আস্তাবলে। কানখাড়া করল সলটার। একটা ঘোড়া খুর দাপাল। সঙ্গে সঙ্গে অন্যগুলোও তাল মেলাল। চাপা আওয়াজ করল কে যেন। আস্তাবলের দিকে পা বাড়াল মাটিন। ওর হাত চেপে ধরল। সলটার।
দাঁড়াও, বলল সে। জো না-ও হতে পারে লোকটা। সাবধানে চল, দেখি গিয়ে।
ওয়াগনের আড়াল ছেড়ে বেরিয়ে এল ওরা। আস্তাবলের এক পাশের ফাঁকা জায়গা পেরোল। সামনের দিকের এক কোণে এসে দাড়িয়ে পড়ল। লণ্ঠনের আলো বেরিয়ে আসছে কাঠের ফোকর দিয়ে। একটা কাঠের ফুটোয় চোখ রাখল সলটার। বার্নের দরজার চৌকাঠে দাড়িয়ে রয়েছে ম্যাকগ্রর সেই দুই স্যাঙাৎ। ঘরের অন্ধকার কোণের দিকে চেয়ে রয়েছে তারা। লণ্ঠনের আলো পৌঁছেনি এ অংশে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একই লক্ষ্যে তাকাল সলটারও। খিস্তি করল এক লোক। জো, তবে দেখা গেল না তাকে। এদিকে দরজায় দাঁড়ানো দু’জনের মধ্যে একজনের হাতে এখন সিক্সগান।
জলদি বেরিয়ে এস, অস্ত্রধারী গর্জাল। দেরি করলে ঝাঁঝরা করে দেব। কে তুমি? এখানে লুকিয়ে কি করছ?
অধীর হয়ে অপেক্ষা করতে লাগল সলটার আর মার্টিন। দু’জনেরই হাত চলে গেছে কোমরে। হোলস্টারে। ক’ মুহূর্ত বাদে আলোয় বেরিয়ে এল জো। পোশাক থেকে খড়কুটো ঝাড়তে ঝাড়তে। হচ্ছেটা কি এখানে? বিরক্ত কণ্ঠে জানতে চাইল সে।
বক্স ডব্লিউ-এর রাইডার, বলল একজন। লুকিয়ে বসে করছটা কি এখানে?
লুকিয়ে থাকব কেন? পাল্টা প্রশ্ন করল জো, চোখটা লেগে এসেছিল। বিয়ার পেটে পড়েছে কিনা।
শহরে কি করছ?
তোমার তাতে কি দরকার? কর্কশ কণ্ঠে কথাগুলো বলল জো। শঙ্কিত হল সলটার। এমুহূর্তে গোলমাল চায় না সে।
দরকার আছে, বলল সিক্সগানওয়ালা। পিস্তলটা ফেলে দাও। নইলে বাপের নাম ভুলিয়ে দেব।
এবার বার্নের সামনের দিকে এগোল সলটার। তার পিছনে মার্টিন। শুনতে পেল ভেতরে তর্ক করে চলেছে জো। দ্রুততর হল সলটারের চলার গতি। লোক দু’জনের ঠিক পেছনে এসে দাঁড়াল সে। ওরা ততক্ষণে প্রায় পৌঁছে গেছে জোর কাছে। একজনের হাতে অস্ত্র।
দাঁড়াও, তীক্ষ্ণকণ্ঠে আদেশ করল সলটার। পাঁই করে ঘুরল ওরা। কোল্টের বাঁটে সলটারের হাত, কিন্তু ড্র করার চেষ্টা করল না সে। লোক দুটোর পেছনে জো এর হাতে পিস্তল এসে গেছে তখন। ও, সলটার। তারমানে সুস্থ হয়ে উঠেছ। অস্ত্রধারীর কণ্ঠে রাজ্যের বিরক্তি ঝরে পড়ল।