হেলগা ডিকসন, বলল সলটার। ওখানেই রয়েছে সে। আমি চিনি ওকে। বাপের সঙ্গে ঝগড়া করে এসেছে। কাজেই এখন সহানুভূতি দরকার ওর।
কিন্তু ম্যাকগ্র দেখে ফেললে বিপদ আছে, জো বলল।
তুমি জান না, জো, বলল সলটার। ম্যাকগ্র জোহানকে উৎসাহিত করছে। মেয়েটির সঙ্গে সময় কাটানর জন্যে। কেন, সেটাই রহস্য।
জো-র রুক্ষ মুখে বিস্ময় লক্ষ করে হেসে ফেলল সলটার। প্রথমে শুনে আমিও বিশ্বাস করিনি। চল, হেলগার কেবিনে গিয়ে দেখি জোহান রয়েছে কিনা।
বিয়ার শেষ করে বেরিয়ে এল ওরা। ছায়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে। দূরের চূড়াগুলোর আড়ালে অদৃশ্য হয়েছে সূর্য।
তুমি পিছন থেকে আমাদের কভার দাও, মার্টিন, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পড়ে নির্দেশ দিল সলটার। মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল মার্টিন। ওদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্যে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। ওরা খানিকদূর এগোতেই পিছু নিল। চোখজোড়া সদাসতর্ক। প্রয়োজনের মুহূর্তে সিক্সগানটা টেনে বার করার জন্যে তৈরি রয়েছে হাত।
সলটার দাঁড়িয়ে পড়ল হঠাৎ, চাইল চারপাশে। বাফেলো ফ্ল্যাট নিস্তব্ধ। আজ শুক্রবার। এসময়ে প্রচুর লোক থাকার কথা স্যালুনে। আশপাশের বাড়িঘর গুলোতে আলো জ্বালানো হয়েছে। ডান দিকে মোড় নিল সলটার। হেঁটে চলল ফুটপাথ ধরে। এসে থামল এক সারি বাড়ির সামনে। শহরের এ এলাকায় স্বল্প আয়ের লোকজন বাস করে। গোটা ত্রিশেক বাড়ি রয়েছে এখানে।
ওইটাতে স্যালুনের মেয়েরা থাকে, একটা কেবিনের দিকে আঙুল তাক করল জো। অন্যান্য বাড়িগুলোর চেয়ে খানিকটা তফাতে রয়েছে ওটা।
তুমি জানলে কিভাবে? প্রশ্ন করল মার্টিন। তবে জবাব শোনার জন্যে অপেক্ষা করল না। হেসে উঠল দু’জনেই।
এগোল সলটার। লণ্ঠন জ্বলছে কেবিনে। সে আশা করল জোহানকে পারে ওখানেই। কেবিনের কাছে পৌঁছে থেমে দাঁড়াল সলটার। ফিরল দুই সহযাত্রীর দিকে।
আড়াল নাও তোমরা। চোখ-কান খোলা রাখবে, বলল সে। জোহানের সঙ্গে আমার একা কথা বলাই ভাল।
দেখো, ভালুকটার খপ্পরে পড়ো না যেন, বলল জো। ম্যাকগ্র সম্ভবত শহরেই আছে। এবং এ জায়গাটাই সবচেয়ে পছন্দ তার।
আমাকে চিনতে বাকি নেই ওর, ঘোষণা দিল সলটার। ঘুরল সে। পৌঁছে গেল কেবিনের দরজার কাছে। টোকা দিল বার কয়েক। কয়েক সেকেন্দ্রে বিলম্ব, তারপর ছিটকিনি খোলার শব্দ হল ভেতর থেকে। খুলে গেল দরজা। সামনে দাঁড়ানো মেয়েটিকে চেনে সলটার। হেলগা ডিকসনের বয়স বড় জোর বাইশ। লম্বা, সোনালি চুলগুলো ছড়িয়ে রয়েছে কাঁধের ওপর। নিঃসন্দেহে সুন্দরী। হেলগার তাকানর ভঙ্গি দেখে মনে হল যেন সলটারের জন্যেই অপেক্ষা করছিল। সে।
কি খবর তোমার? অভ্যস্ত কণ্ঠে বলল সে। কুকুর হারিয়েছ আবার?
মৃদু হাসল সলটার। জোহানকে বারবার বক্স ডব্লিউতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় সে। ফলে ব্যাপারটা সবার কাছেই তামাশা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন।
ও আছে এখানে? থাকলে একটু ডেকে দাও। পাঁচ মিনিটের বেশি সময় নেব, বলল সলটার।
এখানে নেই, ডিয়ার, জবাব দিল মেয়েটি। আমি ম্যাকগ্রর জন্যে অপেক্ষা করছি। তবে চাইলে ভেতরে আসতে পার। গত শনিবারের ঘটনা শুনেছি আমি।
তোমার পক্ষেই সম্ভব। সেদিনের পর ম্যাকগ্রর সব কিছুর ওপরে তোমার অধিকার এসে গেছে। এমনকি আমার ওপরেও।
ধন্যবাদ, সলটারের হাসি দু’কানে গিয়ে ঠেকল। জোহানকে খুব দরকার আমার। ওকে সত্যিই দেখনি? প্রসঙ্গ পাল্টাল সে।
এসেছিল। ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি। বলেছি ম্যাকগ্র আসছে।
ও, ঘুরে রওনা দেয়ার সময় আবার দাঁড়িয়ে পড়ল সলটার। জোহান কোথায় গেছে বলেছে কিছু?
উহুঁ। আমাকে কিছু বলে না ও।
তাই? আমি ভেবেছিলাম তোমরা খুব ঘনিষ্ঠ, কথা আদায়ের চেষ্টা করল সলটার। কিন্তু ওর ফাঁদে পা দেয়ার মেয়ে হেলগা নয়। চরে খায় সে। বিদ্রুপাত্মক হেসে সলটারের মুখের ওপর দড়াম করে দরজা বন্ধ করল ও। ছিটকিনি লাগিয়ে দিল।
ঠোঁট চাপল সলটার, ক্ষতস্থান ব্যথা করছে। কাউবয় দুজনের কাছে ফিরে এল সে। নেই, হতাশ কণ্ঠে বলল সে। এসে চলে গেছে। হেলগা বলল আজ রাতে ম্যাকগ্র আসবে। হয়ত ওর সঙ্গে দেখা করার জন্যে শহরের বাইরে গেছে জোহান।
আমার তা মনে হয় না, খুব সম্ভব ম্যাকগ্রর জন্যে কোথাও ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করছে সে, জো বলল।
হতে পারে, সলটার বলল। জো, তুমি এক কাজ কর। আস্তাবলে গিয়ে লুকিয়ে বসে থাক। ম্যাক নিশ্চয়ই একা আসবে না। সঙ্গে লোকজন থাকবে। ওদের সঙ্গে কথা বলবে সে, তুমি আড়ি পেতে শুনবে কি বলে। কিছুতেই ধরা পড়া চলবে না কিন্তু। বুঝেছ?
সজোরে মাথা ঝাঁকাল জো। ঘুরে রওনা দিল। মার্টিন রইল সলটারের সঙ্গে। নির্দেশের অপেক্ষা করতে লাগল সে। চুপ করে রয়েছে সলটার। ভাবছে। জোহানকে না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই করার নেই ওদের, সতর্ক থাকা ছাড়া। খুনীর টার্গেট হওয়ার কোন ইচ্ছে নেই ওর। তারচেয়ে সরাসরি সাক্ষাৎ হওয়াই ভাল। খুনী ম্যাকগ্র নিজে বা ওর র্যাঞ্চের আর কেউ হতে পারে। শহরে এসে সলটারকে ঘুরে বেড়াতে দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে ম্যাকগ্রর। হয়ত আবার খুন করার বা করার চেষ্টা করতে পারে। সলটারকে পেছন থেকে মার্টিন কভার দিলে খুনী আর তার চান্স সমানই বলতে হবে। মার্টিনকে পরিকল্পনার কথা জানাতেই প্রবল আপত্তি করল সে।