দেখলে আমাদেরও জানাবে, চারদিকে দৃষ্টি বুলিয়ে বলল জো, উচিত শিক্ষা দিয়ে দেব।
শহরে পৌঁছে গেল ওরা। কাউবয় দুজনকে রেখে একাই চলল সলটার। আস্তাবল পেরনর সময় মনে পড়ে গেল হার্পারের কথা, এখান থেকেই দুর্ঘটনার দিন বেরিয়েছিল সে, হার্পার আর জোহান। মাত্র এক সপ্তাহ আগের কথা। অথচ মনে হচ্ছে যেন কত যুগ পেরিয়ে গেছে। শৈরিফের অফিসের সামনে ঘোড়া থামাল সে।
নতুন শেরিফ অফিসেই ছিল। তাকে ভালমতই চেনে সলটার। ম্যাকডারমট বুড়ো হলেও আইনের মারপ্যাঁচ ভাল বোঝে। এক সময় এলসওয়ার্থ আর ডজ সিটির টাউন মার্শাল ছিল সে। দায়িত্ব পালন করেছে যোগ্যতার সঙ্গেই। ওকে দেখে শেরিফ উঠে দাঁড়াল চেয়ার ছেড়ে। লম্বা লোকটা সামান্য ঝুঁকে পড়েছে বয়সের ভারে। চোখা মুখটাতে বুদ্ধিমত্তার ছাপ। সরু চোখ। কগোছা সাদা চুল, টাক ঢাকার জন্যে আঁচড়েছে সামনের দিকে।
সলটার, তোমাকে দেখে খুব ভাল লাগছে। কিন্তু জখম না সারতেই আবার বেরিয়ে পড়লে?
কেমন আছ, ম্যাক, বলল সলটার। ব্যথা নিয়েই শহরে আসতে হল। তাই ভাবলাম তোমার সঙ্গে দেখা করে যাই। গত শনিবারের ঘটনার স্টেটমেন্ট লাগবে।
হ্যাঁ। আসলে ধাক্কা সামলে ওঠার জন্যে সময় দিচ্ছিলাম তোমাকে, নতুন শেরিফ বলল, আমি অবশ্য কাজে নেমে পড়েছি। জান তো, রাদারফোর্ড আমার ডেপুটি। ঘটনাস্থলে রয়েছে এখন সে, ট্র্যাক খুঁজছে, অনুসরণ করছে। আমি বলেছি যতদিন লাগে লাগুক, খুনী কোথায় গেছে খুঁজে বার করা চাই।
ওটাই একমাত্র উপায়, সম্মতি জানাল সলটার। আমি ব্যাটাকে স্পষ্ট দেখতে পাইনি। ঘটনাটা খুব দ্রুত ঘটে গিয়েছিল। আমাদের জন্যে যেন ওঁৎ পেতেই ছিল ও। দুটো গুলি করে আমাকে আর শেরিফকে শুইয়ে দিয়েছিল।
ঠাণ্ডা মাথার খুনী! ম্যাকডারমট রাগতস্বরে বলল। তবে ধরা ওকে পড়তেই হবে।
আজ বক্স ডব্লিউতে একদফা গোলাগুলি হয়ে গেছে। আমাকে লক্ষ্য করে গুলি করেছে। ভাগ্য ভাল লাগেনি কারও। জানালার কাঁচ ভেঙেছে কেবল, আর কটা ফুটো হয়েছে দরজায়।
তোমার পিছে লেগেছে কেউ, জ্বলে উঠল শেরিফের চোখজোড়া। কে, সলটার?
জানলে তো ভালই হত, চেয়ারে বসে পড়ে বলল সলটার। মুশকিল হচ্ছে ওরা আচমকা হামলা করছে, আমার মুখোমুখি হতে চাইছে না। আমি তো তৈরিই আছি।
গত শনিবার কি হয়েছিল? ঠাণ্ডা গলায় প্রশ্ন করল শেরিফ। তবে সলটার বুঝল কি বলতে চায় সে। ম্যাকগ্রর সঙ্গে তোমার লাগালাগির ব্যাপারটা জানি আমি। ওকে সন্দেহ হয়?
প্রমাণ ছাড়া কাউকে অভিযুক্ত করি কিভাবে বল?
তা তো অবশ্যই। প্রমাণ লাগবে। শুধু গত শনিবারের ঘটনাই না, তোমার বাবার হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারটাও ভুলিনি আমি। আমার দায়িত্ব নেয়ার একটা কারণ সেটাও। রহস্যটা উদ্ঘাটন আমি করবই।
আমিও ভুলিনি, বলল সলটার। বাবার খুনীকে যে করে হোক খুঁজে বার করবই। অবশ্য যদি সে এর মধ্যে মারা গিয়ে না থাকে।
আমিও আছি তোমার সঙ্গে। যাই হোক, তুমি শহরে কি জন্যে এসেছ?
জর্জ ওয়াগনার আর তার ছেলের ঝগড়ার কথা সলটার খুলে বলল শেরিফকে। তবে শহরে জোহানের আনাগোনা আর ম্যাকগ্রর সঙ্গে বন্ধুত্বের কারণ। সম্বন্ধে ওর নিজের সন্দেহগুলো প্রকাশ করল না। পুরো সন্দেহটাই অনুমান নির্ভর। এ ব্যাপারে খামোকা শেরিফকে প্রভাবিত করা উচিত নয়।
জোহান জমে গেছে এখানে, ম্যাকডারমট স্বীকার করল। ওকে জড়িয়ে অনেক গুজব কানে এসেছে আমার। তার মধ্যে নিশ্চয় কিছু সত্যতা আছে। তোমার জায়গায় আমি হলে ওকে বাফেলো ফ্ল্যাট থেকে হিচড়ে নিয়ে গিয়ে বক্স ডব্লিউতে বেঁধে রেখে দিতাম।
প্রয়োজন পড়লে তাই করব, সলটার বলল। স্টেটমেন্টের ব্যাপারটা?
এখন না, জবাব দিল নতুন শেরিফ। আগে আরও চেকিং হোক; তারপর। ঠিক আছে। আমি চলি তবে, বিদায় নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এল সলটার।
একপাশে দাঁড়িয়ে ইতিউতি চাইল। কাছেই কোথাও ঘাপটি মেরে রয়েছে হয়ত রজার হাপারের খুনী। ওর দিকে হয়ত রাইফেল তাক করে রেখেছে এ মুহূর্তে। কেবল ট্রিগার টেপার অপেক্ষা! ভাবনাটা মাথায় আসতেই হোলস্টারে হাত চলে গেল সলটারের।
০৬. আকাশের দিকে চাইল সলটার
আকাশের দিকে চাইল সলটার, আঁধার ঘনিয়ে আসছে। জোহানকে খুঁজে বার করে তার সঙ্গে কথা বলতে হবে। জর্জ ওয়াগনারের ওপর খেপে উঠল সে মনে মনে। জোহানের সঙ্গে এমন ব্যবহার না করলেও চলত। জোহানকে দিয়ে সত্যি কথা বলিয়ে নেয়ার সুযোগটা নষ্ট করে দিল জর্জ। তবে হাল ছাড়ার পাত্র নয় সলটার। সুযোগ সে বার করবেই।
স্যালুনের দিকে হাঁটা ধরল ও। ওর পেছনে দেখতে পেল মার্টিনকে। নিশ্চিন্ত হল সে। বিপদের সম্ভাবনা দেখলেই সতর্ক করে দেবে মাটিন।
স্যালুন খোলাই ছিল। গোটা দুয়েক প্রদীপ জ্বলছে ভেতরে। ব্যাটউইং ডোরের ওপর দিয়ে তাকাল সলটার। বারের কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে জো। তবে জোহানকে দেখা গেল না ভেতরে। সলটার ঢুকে পড়ল স্যালুনে। মুহূর্ত পরেই ওকে অনুসরণ করে ঢুকল মার্টিন। নিজেদের জন্যে বিয়ার কিনল সলটার। বারের কাছে দাড়িয়ে গল্প করতে লাগল ওরা।
জোহানের টিকিটিও দেখলাম না, জো বলল। আস্তাবলের বাইরে হিচিং রইলে রয়েছে ওর ঘোড়া। বোধহয় শহরে বেশিক্ষণ থাকার ইচ্ছে নেই। টেণ্ডার বলেছে গত শনিবার তুমি জোহানকে স্যালুন থেকে নিয়ে যাওয়ার পর আর দেখেনি ওকে।