আমি দুঃখিত, তানিয়া, বলে বসল সে। হঠাৎ কি যে হয়ে গেল।
ওকে কথা শেষ করতে দিল না তানিয়া। একটা ব্যাগে করে তোমার খাবার দিয়ে দিচ্ছি। ওর দিক থেকে চোখ সরাল না সে। প্রচণ্ড অনুতাপ হচ্ছে সলটারের। কিন্তু কাউহ্যাণ্ডকে বিয়ে করার ব্যাপারে বলা তানিয়ার কথাগুলো মনে পড়তেই শক্ত হল। সে তো ভদ্রলোক নয়! কাজেই অভদ্রের মত কাজ তো সে করতেই পারে। একজন কাউহ্যাণ্ডের পক্ষে এটাই স্বাভাবিক। চোয়াল শক্ত হল ওর।
তানিয়া খাবারের ব্যাগ আনা অবধি অপেক্ষা করল সলটার। তারপর ব্যাগটা নিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে দরজার দিকে এগোল। দরজার কাছে পৌঁছতেই পিছু ডাকল তানিয়া। থমকে দাঁড়াল সলটার।
সাবধানে থেক, বলল সে। পারলে বাবা আর জোহানের বিবাদটা মিটিয়ে দাও।
সব সময় তো তাই-ই করি, নিজের কানেই কর্কশ ঠেকল সলটারের গলা। কালো হয়ে গেছে তানিয়ার মুখ। জঘন্য! ভাবল ও। সামান্য একজন কাউহ্যাণ্ড ছাড়া কিছুই নয় সে। উইলবার অসকারের মত ভদ্রতা বা মার্জিত ব্যবহার ওর কাছ থেকে আশা করা যায় না। সারাটা জীবন র্যাথেই কাটিয়েছে সে। লেখাপড়ার। সুযোগ পায়নি অসকারের মত। সে অদ্ৰতা করবে না তো করবেটা কে? ক্রুদ্ধ সলটার ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। বারান্দায় বেরিয়ে এসে দেখল ওর। ঘোড়া নিয়ে আসছে জো। ওদিকে করালে স্যাডল পরাতে ব্যস্ত মার্টিন।
তুমি তৈরি? প্রশ্ন করল জো, কষ্ট হবে কিন্তু, সলটার।
হোক, বলল সলটার। খাবার নিয়েছ তো?
হ্যাঁ, বলল জো। তুমি এক কাজ কর, সলটার। বাইরে বেরুনর আগে স্যাডলে চেপে একটু প্র্যাকটিস করে নাও।
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল সলটার। উইনচেস্টারটা রাখল স্যাডলবুটে। রেকাবে বাঁ পা রাখল সে। স্যাডলহর্ন চেপে ধরে উঠে বসল স্যাডলে। দাঁত চেপে ব্যথাটা সহ্য করল ও। গত কদিন করালে আটকা ছিল ঘোড়াটা। ফলে মনের আনন্দে তিড়িং বিড়িং করে নাচতে লাগল ওটা। দ্রুত ঘোড়াটাকে নিয়ন্ত্রণে আনল সলটার। করালের দিকে ঘোড়া ছোটানর সময় কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমল তার।
বাঙ্কহাউসের কাছে লাগাম টেনে ঘোড়া থামাল সে। ওকে লক্ষ্য করছে কয়েকজন কাউহ্যাণ্ড, বাঙ্কহাউসের দরজায় দাঁড়িয়ে।
কেমন বুঝছ, সলটার? প্রশ্ন করল বিলি।
পারব, জবাব দিল সে। তোমরা তৈরি থেক। সাহায্যের দরকার পড়লে জোকে পাঠাব।
আমরা এখনই তোমার সঙ্গে গেলে অসুবিধে আছে? বলল টমলিন।
সময় হোক, নিশ্চয়ই যাবে, সকলের উদ্দেশ্যে বলল সলটার। তোমরা ধৈর্য হারাচ্ছ কেন বুঝছি না আমি। রাসলারদের সঙ্গে হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হলে আমরা অনেকেই মরব। তোমরা সবাই একসাথে মরতে চাও নাকি?
ওরা জবাব দিল না কেউ। ঘোড়ার মুখ ঘোরাল সলটার। মার্টিন আর জোকে ঘোড়ায় বসা অবস্থায় দেখতে পেল সে।
গেটের দিকে ঘোড়া ছোটাল সলটার। মরিয়া হয়ে চেপে ধরল লাগাম। তীরবেগে ছুটল ঘোড়া। মুখে বাতাসের ঝাঁপটা লাগছে সলটারের। কানে আসছে। খুরের শব্দ। রক্ত গরম হয়ে উঠল ওর। এ মুহূর্তে ব্যথাটা অনেক কম বোধ করছে সে। খোলা র্যাঞ্চ ধরে ছুটছে ঘোড়া। জোহানের পথ অনুসরণ করে। ওর পিছু নিল জো আর মাটিন।
খানিক বাদেই সলটারের মনে হল ভুল করেছে সে। র্যাঞ্চে বিশ্রাম নেয়াই উচিত ছিল তার। কিন্তু পরক্ষণেই ভেতর ভেতর প্রচণ্ড দৃঢ়তা অনুভব করল। জোহানের ট্রাক চলে গেছে শহরের দিকে। তারমানে বাফেলো ফ্ল্যাটে যাচ্ছে ওরা, ভাবল সলটার। গত শনিবার যেখানে শেষ করেছিল আজ আবার সেখান থেকে শুরু করতে হবে।
লাগাম টেনে ধরল সলটার। যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েছে সে। কাউবয় দুজন চলে এল তার কাছে। তাদের ধূলিমলিন চেহারায় উদ্বেগের ছাপ।
তুমি ফিরে যাও, সলটার, বলল জো। স্যাডলে সোজা হয়ে বসেছে সে। আমাদের ওপর ভরসা রাখতে পার। জোহানের সঙ্গে যথেষ্ট ভাল সম্পর্ক আমাদের। আমরাই ফিরিয়ে আনতে পারব তাকে।
আমাকে নিয়ে চিন্তা কোরো না। আমি পারব। যেতে আমাকে হবেই, দৃঢ় স্বরে বলল সলটার।
জানি তোমাকে বুঝিয়ে কাজ হবে না, ত্যাগ করল জো। আমরা সবাই। তোমার পাশে আছি, সলটার।
ধন্যবাদ, জো, সন্তুষ্ট হয়ে বলল সলটার। চল রওনা দিই। শহরে গিয়ে সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করব আমরা। তারপর ঢুকব স্যালুনে।
দ্রুতবেগে ছুটল তিন ঘঘাড়সওয়ার। পুরো যাত্রাটা সলটারের কাছে দুঃস্বপ্নের মত ঠেকল। শহরের কাছাকাছি পৌঁছে বাফেলো ফ্ল্যাট চোখে পড়তে আবার লাগাম টেনে ধরল সলটার।
সময় নষ্ট করে লাভ নেই, বলল সে। শেরিফের সঙ্গে দেখা করব আমি। জো, আমি চলে যাওয়ার পর পায়ে হেঁটে আশপাশটা ঘুরে দেখবে তুমি। জোহানকে দেখার চেষ্টা করবে। ও নিশ্চয়ই স্যালুনে কিংবা হেলগা ডিকসনের কেবিনে রয়েছে। খেয়াল রাখবে ও যেন তোমাকে দেখতে না পায়। ও কোথায় আছে, কি করছে জানতে হবে আমাদের।
ঠিক আছে, বস, বলল জো।
আমার কাজটা কি? জানতে চাইল মার্টিন। আমি বেকার বসে থাকব?
না, আমাকে অনুসরণ করবে তুমি। আমি বেঁচে থাকি এটা চায় না অনেকেই। সামনের দিকটা সামলাব আমি। কিন্তু পেছনটা তো আর দেখতে পাচ্ছি না সর্বক্ষণ। তুমি খেয়াল রাখবে। পারবে না?
অবশ্যই, হোলস্টারে হাত রেখে বলল মার্টিন। গুলি করছে কোন্ হারামজাদা? তোমার কোন ধারণা আছে?
মনে হয় আরেকবার দেখলে চিনে ফেলব, সলটার বলল ধীরে ধীরে। ওর মুখ দেখতে পাইনি আমি। কিন্তু শরীরের কাঠামোটা স্পষ্ট চোখের সামনে ভাসছে। কেবল আরেকবার দেখতে পেলেই হল।