দ্রুত এগোতে গিয়ে কাঁধে ঝাঁকি খেল সলটার। বারান্দার পোস্ট-ধরে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। মাটিতে বার কয়েক গড়াগড়ি খেল জোহান। তারপর ওঠার চেষ্টা করতেই সামনে এগোল জর্জ। একটানে ছেলেকে দাঁড় করিয়ে ফেলল। রাগী। কণ্ঠস্বর কানে ভেসে এল সলটারের। সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল সে। এগোল করালের দিকে। এসময় ঝাড়া দিয়ে সরে গেল জোহান। লাফিয়ে ঘোড়ায় চাপল সে। বেরিয়ে গেল তীরবেগে। আরেকটু হলেই ধাক্কা খেত সলটার। জোহানের দুগাল বেয়ে অশ্রু গড়াচ্ছে।
বেড়ায় হেলান দিল সলটার। দেখল বসকে। রাগে লাল হয়ে রয়েছে জর্জের মুখ।
আবার গোলমাল বাধালে? ওকে শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করল সলটার।
ঠিকই আছে। গাধাটাকে বললাম ম্যাকগ্রদের সঙ্গে মিশিস না। আর আমাকে বলে কিনা নিজের চরকায় তেল দিতে। কত বড় স্পর্ধা।
আমি হলেও তাই বলতাম, সহজ গলায় বলল সলটার। এভাবে বাগে আনতে পারবে না ওকে।
বড় দেরি করে ফেলেছি, রাগত স্বরে বলল জর্জ।
তা তো অবশ্যই। এখন মেজাজ দেখিয়ে লাভ কি বল। আমি বরং ওকে ধরে আনিগে।
না। যাবে না তুমি, অন্যরকম শোনাল জর্জের গলা। যথেষ্ট বড় হয়েছে ও। আমার কাছ থেকে সরে থাকতে চাইলে থাকুক। ওকে আনতে যাওয়ার কোন দরকার নেই। এর আগে প্রতিবারই ওকে ফিরিয়ে আনার জন্যে পাঠিয়েছি তোমাকে। তাতেই মাথায় উঠে গেছে ও। ওর যা মন তাই করুক গে।
জর্জ, পরিস্থিতিটা একটু বোঝার চেষ্টা কর, নরম গলায় বলল সলটার। জোহানকে মুঠোয় পেয়েছে ম্যাকগ্র। এ ব্যাপারে আমি মোটামুটি নিশ্চিত। কিভাবে পেল সেটাই জানতে হবে আমাদের। এখন জোহানকে এভাবে ছেড়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে ওকে ম্যাকগ্রর দিকে আরও বেশি করে ঠেলে দেয়া। ম্যাকগ্র সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ছাড়বে না। পরে আপসোস করব আমরা সকলে। আমি দেখতে চাই ও কোথায় যায়, কি করে।
তুমি অসুস্থ, সলটার, প্রতিবাদ করল জর্জ। তোমার যেতে হবে না। যখন দেখবে তুমি যাওনি তখন ও নিজেই ফিরে আসবে।
তা হয় না, সলটার বলল। ঘুরল সে। বানের কাছে জোকে দেখতে পেল। ডাকল তাকে। জো, আমার শোবার ঘর থেকে গানবেল্টটা নিয়ে এস। রাইফেলও আনবে। আর কাউকে বল আমার ঘোড়ায় স্যাডল চাপিয়ে দেবে।
বাইরে যাবে? জোর কণ্ঠে উদ্বেগ।
হ্যাঁ।
তোমার যাওয়া ঠিক হবে না, সলটার, নিচু গলায় বলল জর্জ। আমার কথা শোন।
আমি তোমার ছেলে নই, জর্জ। ফোরম্যান, গম্ভীর স্বরে বলল সলটার। আমার কাজ আমাকে করতে দাও।
ছেলে বলেছে নিজের চরকায় তেল দিতে, আর এখন ফোরম্যান কথা শুনছে; তবে আমার আর এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি লাভ? হতাশ ভঙ্গিতে কথাগুলো উচ্চারণ করল জর্জ। বারান্দার দিকে হাঁটা ধরল সে। সিঁড়ি বেয়ে উঠে ঘরে ঢুকে পড়ল। তার পিছনে প্রচণ্ড জোরে বন্ধ হল সদর দরজা।
এরপরও যাবে তুমি? জিজ্ঞেস করল জো। তার কালো চোখ জোড়া জ্বলজ্বল করছে।
হ্যাঁ, জো। তুমিও যাচ্ছ আমার সঙ্গে। এবার উৎসাহিত হল জো। আরও কয়েকজনকে নিয়ে নিই? শুধু মার্টিন, আর কাউকে নয়। ওকে তৈরি হতে বল। তুমি আমার ঘোড়ায় স্যাডল পরাও, আমি রাইফেল নিয়ে আসছি।
ইয়েস, স্যার। বাঙ্কহাউসের দিকে লম্বা পা বাড়াল জো। সেদিকে খানিক চেয়ে থেকে ঘুরে ঘরের দিকে এগোল সলটার। স্যাডলে চাপার মত সুস্থ এখনও হয়নি সে, কিন্তু কিছু করার নেই। এ রহস্যের কিনারা করতে চাইলে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। কাজ করতে হবে এখন থেকেই।
সলটার বারান্দায় উঠতেই দেখা হয়ে গেল তানিয়ার সঙ্গে। দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে সে। ওকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকতে চাইল সলটার। কিন্ত দুপাশে হাত বাড়িয়ে ঢোকার পথ আটকে দিল তানিয়া।
সর, কর্কশভাবে নির্দেশ দিল সলটার। ভেতরে যেতে হবে। রাইফেল নেব।
কি শুরু করেছ তোমরা বল তো। তিনজন বয়স্ক লোক ছেলেমানুষের মত কাজ-কারবার করেই চলেছ। তুমি বাইরে যেতে চাইলে যাও, কিন্তু আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাকে পাবে না।
লম্বা শ্বাস টানল সলটার। এতখানি আশা করেনি সে। তানিয়া তখনও দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওর কাঁধে হাত রাখল সলটার। খানিকটা কুঁকড়ে গেল, তানিয়া। ওর চোখের দিকে চাইল সে। রাগ করেছে কিনা বোঝা গেল না। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সলটার। মেয়েটি বড় সুন্দর। ওকে সামান্য ঠেলা দিল সে। পিছে হেলে গেল তানিয়া। তবে ভারসাম্য হারানর আগেই ওকে ধরে ফেলল সলটার। ওর ডান কাঁধ আঁকড়ে ধরল তানিয়া। দুজনের মুখের ব্যবধান এখন মাত্র ইঞ্চি কয়েক। জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে তানিয়া। স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে সলটার। ওকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করল না মেয়েটি। অনেকটা আচ্ছন্নের মতই ঝুঁকল সলটার। চুমু খেল ওকে।
তানিয়া অবাক হলেও প্রতিবাদ করল না। সলটারের নিষ্ঠুর ঠোঁটজোড়া কেবলমাত্র একবার স্পর্শ করল তানিয়ার গাল। দ্রুত ঘুরে দাঁড়াল সলটার। নেমে গেল সিঁড়ি বেয়ে।
ঠোঁটজোড়া পুড়ে যাচ্ছে ওর, যেন আগুনের ছ্যাকা দিয়েছে কেউ। বুকে আবেগের বান।
তানিয়া সরে গেছে দরজা থেকে। খানিক বাদে নিজের ঘরে চলে এল সলটার। সরু কোমরে গানবেল্টটা পরে নিল। বাঁ হাত এখনও অকেজো প্রায়। ফলে ওটা ব্যবহৃত হল সামান্যই। সিক্সগানটার গুলি পরীক্ষা করে হোলস্টারে ভরল। এগোল কোণের দিকে। রাইফেলগুলো রয়েছে ওখানে। উইনচেস্টার আর কোল্ট দুটোর জন্যে বাড়তি কার্তুজ রয়েছে স্যাডলব্যাগে। বার্ন থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে নিলেই হল। দ্রুত পায়ে সে বেরিয়ে এল ঘর ছেড়ে। নেমে এল নিচে। রান্নাঘরে। কাজে ব্যস্ত ছিল তানিয়া। পায়ের শব্দ শুনে ঘুরে তাকাল। কেমন যেন অপরাধবোধ হচ্ছে সলটারের। মনে হচ্ছে মস্ত অন্যায় করে ফেলেছে।