না, জবাব এল। সলটারের মনে হল এত শীঘ্রি প্রশ্নটা করে বসা উচিত হয়নি।
শোন সলটার। ম্যাকগ্র খারাপ লোক নয়। লোকে ওকে ভুল বোঝে, বলল জোহান।
কথা গোপন করছ কেন? প্রশ্ন করল জর্জ।
করছি না, বাবা। গোপন করার কি আছে?
আমাকে বল, নরম স্বরে বলল জর্জ। আমি তোর বাবা। মুখ দেখে আমি তোর মনের কথা বলে দিতে পারি। তুই কিছু একটা গোপন করতে চাইছিস। কি সেটা? ম্যাকগ্র কি এই রাসলিং-এর হোতা? ওদের কাউকে চুরির ব্যাপারে কিছু বলতে শুনেছিস?
না, বাবা। ভুল চিন্তা করছ তোমরা, ম্যাকগ্র এর সাথে জড়িত নয়।
বিশ্বাস করি না, কর্কশ কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠল জর্জ। মিথ্যে বলছিস তুই। মনে রাখিস শেরিফকে খুন করা হয়েছে। নতুন শেরিফ অপরাধীকে ছেড়ে দেবে না। খুঁজে বার করবেই। তোর কোমরে দড়ি পড়বে না তো?
না, চিৎকার করে উঠল জোহান। চেয়ার ঠেলে দরজার দিকে হাঁটা দিল সে। ওর বাবা প্রায় লাফিয়ে এসে চেপে ধরল ছেলের বাহু। ছেড়ে দাও আমাকে, প্রায় ধমকে উঠল জোহান। আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাচ্ছ তোমরা। আগেই বলেছি আমি এসবের কিছুই জানি না। ছাড়। ঝাড়া দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল জোহান। বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে।
ও এতে জড়িয়ে গেছে, কঠিন গলায় বলল জর্জ। তবে কিভাবে জড়াল আমাকে জানতে হবে।
০৫. মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে জর্জ আর সলটারের
এভাবে হবে না, বলল তানিয়া। মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে জর্জ আর সলটারের। আমার ওপর ছেড়ে দাও। আমি সত্যি কথাটা বার করে ফেলব। তারপর যোগ করল, অনেকদিন ধরেই আমার মনে হচ্ছে অসকারের র্যাঞ্চের লোকগুলো সুবিধের নয়।
কিভাবে বুঝলি? জানতে চাইল জর্জ। আর বুঝে থাকলে ওর সঙ্গে মেলামেশা করছিস কেন? ওকে মোটেও পছন্দ নয় আমার। ব্যাটা খালি টাকার গরম দেখায়।
ওটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার, তীব্র কণ্ঠে প্রতিবাদ জানাল তানিয়া। যাই হোক না কেন অসকার দ্রলোক। সে জানে কিভাবে মেয়েদের সম্মান করতে হয়। তুমি নিশ্চয়ই চাও না আমি কোন কাউহ্যাণ্ডকে বিয়ে করি?
কথাগুলো বলার সময় চোখ দুটো বড় বড় হয়ে উঠল তানিয়ার। ওর প্রতিটি কথা যেন ছুরির মত বিধল সলটারের হৃদয়ে। জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট চাটল সে। চোখ দুটো জ্বলে উঠল তার। তবে সে আগুন বড় স্লাম। ওর দিকে চকিত দৃষ্টি দিল জর্জ। তারপর ফাঁকা হেসে বলল, আমিও কাউহ্যাণ্ড ছিলাম। সেখান থেকেই আজকের অবস্থায় এসেছি। টাকা ছাড়া আর কি আছে অসকারের যা একজন কাউহ্যাণ্ডের নেই? ও তো মানুষই না। কুটোটা পর্যন্ত সরায় না সে। এতবড় একটা বিপদের মোকাবেলা করছি আমরা অথচ সেদিকে কোন খেয়ালই নেই তার। যা খুশি তাই করে বেড়াচ্ছে ওর ফোরম্যান ম্যাকগ্র।
তোমার কেন মনে হল বক্স ও-র লোকেরা ভাল নয়? সলটার প্রশ্ন করল তানিয়াকে। অসকার এ ব্যাপারে কিছু বলেছে কখনও?
না। ও এ ব্যাপারে কিছু জানে না। জানলে একটা ব্যবস্থা নিতই। তুমি ভাবছ ও এতে জড়িত, তাই না?
জবাব দিল না সলটার। তানিয়ার গলার স্বরে বুঝতে পারল যুক্তির পরিবর্তে আবেগ দিয়ে সবকিছু বিচার করছে সে।
রাসলিং-এর সঙ্গে অসকারের জড়ানর প্রয়োজন পড়ে না, চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল জর্জ। ওর টাকার অভাব নেই। সলটারের দিকে ফিরল সে। বসন্ত আসার আগেই যা করার করতে হবে আমাদের। তুমি রেডি হও।
আমি রেডিই আছি, দৃঢ়তার সঙ্গে বলল সলটার। চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়াল সে। জনা কয়েক লোক লাগবে আমার। আবার নতুন করে শুরু করব।
তোমাকে তো বলেইছি পুরো কাউন্টি চষে এসেছি আমরা। কোন লাভ হয়নি।
আমার লাভ হয়েছে, মৃদু হেসে বলল সলটার। রাসলাররা জানে তাদের সন্দেহ করছি না আমরা। ফলে সুবিধে হবে আমার। আমাকে অবিশ্বাস করবে না ওরা। বন্ধু ভাববে।
দেখ কি করতে পার, দরজার দিকে এগোতে এগোতে বলল জর্জ।
সে বেরিয়ে যেতেই তানিয়ার দিকে চাইল সলটার। ওর দিকে চেয়ে রয়েছে মেয়েটি। একটু আগে বলা ওর কথাগুলো মনে পড়তে ঠোঁট কামড়াল সলটার।
তানিয়া আজ সরাসরি বলে দিয়েছে যা বলার। বুঝিয়ে দিয়েছে সলটার ওর যোগ্য নয়। মেয়েটা বড় নিষ্ঠুর। কতখানি, সে নিজেও জানে না বোধহয়।
সলটার, সাবধানে থেক, বলল তানিয়া। এত তাড়াতাড়ি আবার ঘোড়ায় না চাপলেও পারতে। রাসলারদের কথা বলছি না আমি। ভয় সেই গানম্যানকে।
আমার জন্যে তোমার চিন্তা না করলেও চলবে, কর্কশ কণ্ঠে বলল সলটার।
তুমি আসলে অসকারকে সহ্য করতে পার না। কেন তা জানি না আমি। ও তো খারাপ লোক নয়।
আমি তো বলিনি খারাপ, বলল সলটার। তোমার বন্ধু-বান্ধবদের ব্যাপারে আমার নাক না গলানই ভাল। তুমি তো ছোট খুকী নও। আমার চেয়ে কম বোঝ না তুমি।
এত কড়াভাবে কথাগুলো বলতে চায়নি সলটার। কিন্তু তানিয়ার ব্যবহার উত্তেজিত করে রেখেছে তাকে। জর্জের সঙ্গে তানিয়ার কথোপকথন কিছুতেই ভুলতে পারছে না সে। সলটার পা বাড়াল দরজার দিকে।
বারান্দায় বেরিয়ে এসে দাঁড়াল সে। চাইল চারদিকে। জোহান রয়েছে করালে। স্যাডল পরাচ্ছে ঘোড়ায়। জর্জ ওয়াগনার উঠন পেরিয়ে করালের দিকে এগোল। দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়াল সলটার। সে নিশ্চিত, বিপদে পড়েছে জোহান। খুব সম্ভব ওকে ব্ল্যাকমেইল করছে ম্যাকগ্র।
ছেলের পাশে পৌঁছে গেল জর্জ। কি যেন কথা হল বাপ-বেটার মধ্যে। শুনতে পেল না সলটার। তার পরপরই বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেল সে। ছেলের গালে বিরাশি সিক্কা ওজনের প্রচণ্ড এক চড় বসিয়েছে বাপ। ছিটকে মাটিতে পড়ে গেছে ছেলে।