আগে আমাকে প্রমাণ পেতে দাও। তারপর তোমরা তো সব জানবেই। এক সঙ্গেই যা করার করব আমরা।
এ কথায় অনেকখানি শান্ত হল ওরা। ফিরে চলল বাঙ্ক হাউসে। জর্জের ঘোড়াটা নিয়ে চলল একজন। বেঞ্চে আবার আরাম করে বসল সলটার।
সলটার, একটা বালিশ দেব? পিঠে আরাম পাবে, তানিয়ার কণ্ঠ। চকিতে ঘাড় ফেরাল সলটার। সুন্দর মুখটা অসম্ভব টানে তাকে। চুম্বকের মত। এ মুহূর্তে প্রচণ্ড ভালবাসা অনুভব করল সে মেয়েটির প্রতি।
দরকার নেই, তানিয়া, সহজ গলায় বলল সে। এগিয়ে এল তানিয়া। বেঞ্চিতে ওর পাশে বসে পড়ল। আমাকে একেবারে রোগী বানিয়ে ফেলেছ তোমরা, বলল সলটার। কালই আবার স্যাডলে চাপব আমি।
পাগল নাকি! রেগে উঠল তানিয়া। কাল ডাক্তার আসবেন। তুমি উল্টো পাল্টা কিছু করলে সব দোষ পড়বে আমার ঘাড়ে; সেটা হচ্ছে না। কোনরকম ঘাড় তেরামি চলবে না তোমার।
ঘাড় তেরামি? হেসে প্রশ্ন করল সলটার। আমি আবার ঘাড় তেরামি করি নাকি?
করই তো, তানিয়ার কণ্ঠে কপট রাগ।
আমার তো ধারণা ছিল আমি ঠাণ্ডা স্বভাবের লোক, বলল সলটার।
সবাই নিজেকে তাই মনে করে, হেসে ফেলল তানিয়া। ইদানীং তোমাকে আমার কেমন যেন ভয় করে। যেমন গোমড়ামুখো হয়ে গেছ তুমি, ভয় করবে না? কি হয়েছে, সলটার? তুমি তো এমন ছিলে না।
কিছু হয়নি, তানিয়ার দিক থেকে চোখ না সরিয়েই বলল ও। বুকটা ফেটে যাচ্ছে ওর। মেজাজের কারণ, তানিয়ার প্রতি তার বুক ভরা ভালবাসার কথা বলে ফেলতে পারলে হালকা হতে পারত সে। মুখ খুলতে গিয়েও অসকারের কথা–ভেবে চুপ করে গেল ও। ওকে লক্ষ করল তানিয়া। বুঝল প্রসঙ্গটা অস্বস্তিতে ফেলেছে সলটারকে।
নিজের প্রতি তোমার খেয়াল নেই, সলটার, বলল তানিয়া। উঠে পড়ল বেঞ্চি থেকে। থাকলে বুঝতে কতখানি বদলে গেছ তুমি। কেন বদলেছ সে তুমিই জান।
জবাব দিতে পারল না সলটার, চলে গেল তানিয়া। সেদিকে চেয়ে রইল সে, দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল। ছোট হল চোখ। মেয়েটিকে বড় বেশি ভালবেসে ফেলেছে সে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারেনি। রয়ে গেছে পর্দার আড়ালে।
ওদিকে ধীরে ধীরে তানিয়ার হৃদয়ে স্থান করে নিচ্ছে অসকার। লোক যেমনই, হোক সে, টাকা তো আছে।
তিক্ততায় ছেয়ে গেল সলটারের মন। যে কোন কিছু মোকাবেলা করতে পিছপা নয় সে। কিন্তু অসকারের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তানিয়ার পছন্দের লোকের কোন ক্ষতি করতে পারবে না ও।
র্যাঞ্চের চারদিকে চাইল সে। এটাই ওর বাড়ি। বাবা ওর তিন বছর বয়সে এখানে নিয়ে এসেছিলেন ওকে। তারপর থেকে এখানেই রয়েছে ও, ওয়াগনারদেরকে পরম আত্মীয় বলে জেনেছে। ও জানে তানিয়া ওকে পছন্দ করে। তবে সেটা নিছকই বন্ধুত্ব। তবে, তানিয়ার কাছে ভালবাসার কথা প্রকাশ করবে সে। সেজন্যে সময় চাই তার। আগে যোগ্যতা অর্জন, তারপর অন্য ভাবনা। নিজের জন্যে একটা র্যাঞ্চ গড়ে তুলতে হবে। র্যাঞ্চ ‘এস’ নাম হবে ওটার। তারপর প্রস্তাব দেবে তানিয়াকে। অবশ্য ততদিনে যদি আসকারের সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে বা যদি বিয়েই হয়ে যাবে তবে এতসব ভাবনা সবই বৃথা। তাতে আপত্তি নেই সলটারের। তানিয়া সুখী হলেই খুশি ও।
সেদিন বিকেলে আবার বারান্দার বেঞ্চিতে গিয়ে বসল সলটার। গনগনে রোদ এখন বাইরে। চোখ বুজে ভাবতে লাগল সলটার। কল্পনায় দেখতে পেল গুলি খাওয়ার দৃশ্যটা। আবার কি সিক্সগানটা ব্যবহার করতে পারবে সে? নাকি সেদিনের সেই গুলিটা মনের জোর কেড়ে নিয়েছে ওর?
হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দ হল। গুলি। চমকে উঠল সলটার। ঠিক মাথার পেছনের কাঠে লেগেছে গুলিটা, বাঙ্ক হাউসের পাশ দিয়ে তাকাল ও। প্রায় শ’তিনেক গজ দূরে আবছা ধোঁয়া মিলিয়ে যেতে দেখল সে। পরমুহূর্তেই মেঝেতে শুয়ে পড়ল সলটার, ঝাঁকি খেল কাঁধ। ফলে ককিয়ে উঠল সে। খানিক বাদেই ঝনঝন শব্দে ভেঙে পড়ল জানালার কাঁচ।
জোহানকে এসময় দেখা গেল দরজায়। চেঁচিয়ে ওকে ভেতরে যেতে বলল সলটার। রাইফেল আনার জন্যে। জোহান যেন ওর কথা বুঝতে পারেনি। ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করল সে। সলটার দেখল দরজার কাঠের খানিকটা অংশ ছিটকে পড়ল। এবার আর কিছু বলতে হল না জোহানকে। অদৃশ্য, হয়ে গেল সে।
আরও কয়েকটা গুলি এল। দু’বার অল্পের জন্যে বেঁচে গেল সলটার। গানম্যান পজিশন বদলেছে, বুঝতে পারল। তবে নড়ল না ও। বাঙ্কহাউসের সামনে থেকে সম্মিলিত কণ্ঠের চিৎকার শুনতে পেল। মুহূর্ত পরেই কমপক্ষে ছটা রাইফেল থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হল। গুলির শব্দে পুরো র্যাঞ্চটা প্রকম্পিত হয়ে উঠল।
দৌড়ে বেরিয়ে এল জর্জ। হাতে রাইফেল। সলটারের পাশে চলে এল সে। সলটার ততক্ষণে উঠে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
গুলি লাগেনি তো? প্রশ্ন করল জর্জ
না, দৃঢ় স্বরে বলল সলটার। ভেতরটা কেমন যেন করছে তার। ওকে টার্গেট করেছে কেউ। কে?
এতবড় সাহস! ওরা শেষ পর্যন্ত র্যাঞ্চে হামলা করল? ক্রুদ্ধ জর্জ বলল।
জবাব দিল না সলটার। বসে পড়ল বেঞ্চিতে। আহত স্থানে চাপ দিল ডান হাত দিয়ে। দপদপ করছে ব্যথাটা। বুকের ভেতর জ্বলছে আগুন। তুমি ভাবছ লোকটা রাসলার। তাই না, জর্জ?
তাই তো। তোমার কোন সন্দেহ আছে? উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল জর্জ। র্যাঞ্চের কজন লোক ঘোড়ায় স্যাডল চাপিয়ে ধাওয়া করল গানম্যানকে। আরও কজন বেড়ার কাছে দাড়িয়ে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে লাগল।