তানিয়ার কথাগুলো ভাবতে লাগল সলটার। ডাক্তারের কাজ শেষ। তিনি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। পরে আসবেন আবার। তানিয়া সলটারের জন্যে খাবার আনতে গেল। ঘরে এখন একা ও গানম্যানের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনাটা মনে পড়ল ওর। ডান হাতের মুঠো শক্ত হয়ে উঠল। খুনীদেরকে খুঁজে বার করবে সে, করবেই। বাবার খুনী, শেরিফের খুনী কাউকে ছাড়বে না।
শেরিফের খুনী রাসলারদের লোক না-ও হতে পারে। কিন্তু তাহলে শেরিফকে গুলি করার পর ওকে গুলি করল কেন? পুরো ঘটনাটাই ইচ্ছাকৃতভাবে এবং ঠাণ্ডা মাথায় ঘটানো হয়েছে। ওরা রাসলারদের খুঁজছে সেটা জেনেই কি গানম্যান পাঠানো হয়েছে নাকি সবটাই ব্যক্তিগত আক্রোশের পরিণতি? লোকটা কেন বলল সলটারকে খুঁজছে সে? ব্যক্তিগত আক্রোশ যদি থেকেই থাকে তবে সেটা কার প্রতি? শেরিফ নাকি সলটার? যে করে তোক প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতেই হবে তাকে। সমাধান করতে হবে এই রহস্যের। গানম্যান ওকে খুন করতে চাইলে একবার গুলি করেই চলে যেত না। ও মারা গেছে, নিশ্চিত হতে চাইত। সেক্ষেত্রে আর বেঁচে থাকার কথা নয় ওর। যাই হোক, এখন থেকে সতর্ক থাকবে সলটার, প্রস্তুত থাকবে। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে বাবার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এ ঘটনার কোথাও কোন যোগসূত্র রয়েছে।
সলটারের চিন্তার জাল ছিন্ন হল তানিয়ার ডাকে। ওঠ, খেয়ে নাও।
ওকে ধরে ধরে বিছানায় বসাল তানিয়া। তারপর মুখে তুলে দিল খাবার। সেটুকু খেয়ে নিয়ে মুখ খুলল সলটার। আমার জন্যে অনেক করেছ তুমি। আমি কৃতজ্ঞ।
আরে, ছাড় ওসব কথা, খানিকটা বিরক্তির সঙ্গে বলল তানিয়া। জলদি সুস্থ হয়ে গরুর পালের সঙ্গে মিশে যাও। র্যাঞ্চ, কাউবয় আর গরু ছাড়া আর তো কিছু বোঝ না, ওদেরকেই কৃতজ্ঞতা জানিয়ো।
মৃদু হাসল সলটার।
০৪. আরও দুদিন কেটে গেল
আরও দুদিন কেটে গেল। অনেকখানি শক্তি ফিরে পেয়েছে এখন সলটার। তানিয়ার সেবা-শুশ্রষা পেয়ে মানসিক ভাবেও যথেষ্ট সুস্থ বোধ করছে।
নাস্তার টেবিলে প্রচুর খাবার-দাবার সাজানো রয়েছে তার জন্যে। এতদিন পর আজই টেবিলে খেতে এসেছে সে। অকারণেই ওর আশপাশে ঘুরঘুর করল তানিয়া। এগিয়ে দিল এটা ওটা। ব্যাপারটা উপভোগ করল সলটার।
সেদিন সকালটা বারান্দার বেঞ্চিতে বসে কাটাল সে। দুপুরের ঠিক আগে জর্জ ওয়াগনার আর র্যাঞ্চের অন্যেরা ফিরে এল। ক্লান্ত, অবসন্ন, মলিন দেখাচ্ছে তাদের।
কেমন আছ? প্রশ্ন করল জর্জ। স্যাডল থেকে লাফিয়ে নামল সে। আরও সপ্তাহখানেক বিশ্রাম দরকার তোমার। চেহারা তাই বলছে।
কোন কিনারা হল? প্রশ্ন করল সলটার।
ধুর! হতাশ শোনাল জর্জের কণ্ঠ। ঘাড় ফিরিয়ে সঙ্গের লোকগুলোর দিকে চাইল সে। ঘোড়া থেকে স্যাডল খুলছে ওরা। বিশ্রাম নিতে যাবে।
পুরো এলাকাটা তন্নতন্ন করে খুঁজেছি আমরা। রসলারদের টিকিটিও দেখলাম না। শহর থেকে পসি বাহিনী এসেছে। এছাড়া অন্যান্য র্যাঞ্চের লোকেরা তো ছিলই। সব মিলিয়ে জনা পঞ্চাশেক লোক ছিলাম আমরা। সব পরিশ্রমই পানিতে গেল।
ঠিক মত খোঁজনি তোমরা, সলটার দৃঢ়স্বরে বলল।
কি বললে? রেগে উঠল জর্জ। ক্লান্তি আর হতাশায় লাল হয়ে গেছে মুখ। বললাম না তন্নতন্ন করে খুঁজেছি।
তা তো বুঝলাম, কিন্তু তবু যে রাসলারদের খোঁজ পাওয়া গেল না এর কারণটা অন্যখানে।
বল শুনি কি কারণ, কর্কশ কন্ঠে বলল জর্জ।
রাসলাররা, তোমার সাথেই ছিল।
কি যা তা বলছ! গুলি খেয়ে মাথার ঠিক নেই তোমার।
জর্জ, তুমি খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নাও, বলল সলটার, পরে এ ব্যাপারে কথা আছে তোমার সঙ্গে।
জবাব দিল না জর্জ। ঘুরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে এক কাউবয়কে ডাকল। তার ঘোড়াটা নিয়ে যাওয়ার জন্যে। তারপর কোনদিকে না তাকিয়ে সোজা ঘরে চলে গেল।
জনা ছয়েক লোক এসময় এগিয়ে এল বারান্দার কাছে। এ র্যাঞ্চের কাউবয়।
কেমন আছ, সলটার? জানতে চাইল জো। বাকিরা জবাব শোনার জন্যে, অপেক্ষা করতে লাগল।
সেরে উঠছি, উত্তর দিল সলটার। এদের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক তার! বেশিরভাগই পুরানো লোক এরা। স্যাঞ্চের প্রতি বিশ্বস্ত, অনুগত। তাকেও জান দিয়ে ভালবাসে, সমীহ করে।
অসম্ভব খেটেছ তোমরা। আমি তোমাদের জন্যে গর্বিত। নেহাত কপাল খারাপ আমাদের। তাই এখনও খোঁজ পেলাম না রাসলারদের। তবে আমাকে একটা সপ্তাহ সময় দাও আমি কিছু একটা করবই, বলল সলটার।
এর পেছনে কারা আছে মনে হয় তোমার? প্রশ্ন করল মার্টিন।
এখনও জানি না তবে বার করে ফেলব। তোমরা বিশ্রাম নাওগে যাও।
ম্যাকগ্রর সাথে কি হয়েছিল, সলটার? আমাদের জানা থাকা দরকার, বলল। একজন। জোহান বলেছে যদিও, তবু তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।
তেমন কিছু না, মৃদু হেসে বলল সলটার। জোহানকে খুঁজতে স্যালুনে গিয়েছিলাম, ব্যাপারটা পছন্দ হয়নি ম্যাকগ্রর। সে আমাকে মারতে আসাতে শুইয়ে দিয়েছিলাম মাটিতে।
ব্যাপারটা এত সহজে ও ভুলবে না, সলটার, বলল মার্টিন। ওকে তো তুমি চেনই। ভাগ্যিস অসকার এই কাউন্টিতে এসেছিল। ম্যাকগ্র দূর হওয়াতে বেঁচেছি আমরা।
ও এখান থেকে দূর হলেও আমার ওপর থেকে রাগ দূর হয়নি ওর, ধীরে ধীরে বলল সলটার।
চুপ করে ওর কথাগুলো শুনল অনন্যরা। বেট ডান হাত দিয়ে ঘুসি মারল নিজের বাঁ হাতে।
খুনীটাকে কি ওই শালাই পাঠিয়েছিল? ক্রুদ্ধ শোনাল তার কণ্ঠস্বর।