তানিয়া, উঠন পেরনর সময় চেঁচিয়ে ডাকল জোহান। স্যাডলে সোজা হয়ে বসল সলটার। চাইল এপাশ-ওপাশ। বারান্দায় বসে রয়েছে তানিয়া। পাশে অসকার। প্রথমে ঈর্ষা তারপর রাগে জ্বলে গেল ওর শরীর। বারান্দার কাছে স্যাডল থেকে নামল সলটার। এক মুহূর্ত চেপে ধরে রইল স্যাডল হর্ন।
কি হয়েছে? ছুটে এল তানিয়া। উৎকণ্ঠিত। লম্বা-পাতলা মেয়েটিকে ভারী সুন্দর দেখাচ্ছে। আরও একবার মুগ্ধ হল সলটার। কোঁকড়ানো চুল হলুদ ফিতে দিয়ে বেঁধেছে ও।
সলটার গুলি খেয়েছে, তরিৎ বলল জোহান। শেরিফ মারা গেছে।
সলটারের দৃষ্টি অসকারের দিকে। এই মারত্মক দুঃসংবাদ শুনেও কোনরকম ভাবান্তর হল না তার। অসকারের চোখ দেখে মনে হল সলটারের দুর্দশায় যথেষ্ট খুশি হয়েছে সে। তবে আরও খুশি হত ও শেরিফের দলে যোগ দিলে। একটি কথাও বলল না অসকার। সলটারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াল না। টলতে টলতে বারান্দার দিকে একাই এগোল ও।
দ্রুত নেমে এল তানিয়া। সলটারের ডান কনুই বাঁ হাতে পেঁচিয়ে ধরল সে।
অসকার, প্লীজ, ধর ওকে, অনুনয় করল তানিয়া। নড়ল না অসকার। বসে থেকে যেন মজা উপভোগ করছে সে।
খুব লেগেছে, সলটার? কষ্ট হচ্ছে? উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করল তানিয়া।
ভেব না, মুখ বিকৃত করে ব্যথা সহ্য করল সলটার। এত সহজে ভূত হচ্ছি না।
অসকার, ডাকল তানিয়া, দেখছ না ওর কষ্ট হচ্ছে? একটু ধর না।
ঝাড়া দিয়ে নিজেকে সরিয়ে নিল সলটার। দরকার নেই, বলল সে। বিছানা পর্যন্ত যেতে পারব।
আমি ধরছি তোমাকে, জোহান বলল। বোনের জায়গায় এসে গেছে সে। খুশি হল সলটার। ছেলেটা কোন ক্ষোভ পুষে রাখেনি। ওর গায়ে হাত তোলার পরও ওকে বিন্দুমাত্র দোষারোপ করেনি জোহান বা ওর বাবা। আসলে সলটার শুধুমাত্র এ র্যাঞ্চের ফোরম্যান নয়। এ পরিবারের সাথে তার সম্পর্ক তারচেয়ে অনেক বেশি গভীর। জোহান আর তানিয়ার সঙ্গে ওর সম্পর্ক খুবই আন্তরিক। জোহানকে ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করে সে, জোহানও কোনদিন বড় ভাইয়ের অভাব অনুভব করেনি, সমীহ করে ওকে। বাবার মৃত্যুর পর জর্জ ওয়াগনারকে বাবার আসনে বসিয়েছে সলটার।
সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে উঠতে লাগল ওরা। পেছনে তানিয়া। সর্বক্ষণ জোহানকে বকা-ঝকা করে গেল সে। আস্তে উঠতে পারিস না, গাধা কোথাকার! এহ হে, লাগিয়ে দিলি তো।
সলটারের বাঁ কাধ বার দুয়েক বাড়ি খেল দেয়ালে। পড়ে যেতে যেতে কোনমতে সামলে নিল ও। শেষ ধাপে পৌঁছর পর পা কাঁপতে লাগল ওর। শরীরের ভার পুরোপুরি ছেড়ে দিল জোহানের ওপর। ঘরে ঢুকল ওরা। সোজা বিছানায় গিয়ে পড়ল সলটার।
তুমি পানি আর পরিষ্কার কাপড় নিয়ে এস গে, বোনকে নির্দেশ দিল জোহান। জখমটা খুলে গেছে বোধহয়। আমরা যদূর যা পারি করব। তারপর ঘোড়া নিয়ে শহরে চলে যাব। ডাক্তার আনতে হবে।
চোখ বুজে শুয়ে রইল সলটার। ওর কাপড় খুলে দিল জোহান। যতখানি পারল তাকে সাহায্য করল সে। চাদর দিয়ে গলা পর্যন্ত ওকে ঢেকে দেয়ার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সলটার। ব্যথা আর অবসাদে আবার জ্ঞান হারাল ও।
দুদিন অচেতন অবস্থায় রইল সলটার। তৃতীয় দিন সকালে চোখ মেলল সে। কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা। কিন্তু কেন সেটা মনে করতে পারল না ও। ওর বিছানার পাশে বসে ছিল তানিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। চকিতে ওর দিকে চাইল সলটার। ক্লান্ত, চিন্তিত একটা মুখ। দেখে মনে হচ্ছে প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে নিঘুম কাটিয়েছে। কিছু একটা বলার জন্যে মুখ খুলল সলটার। কিন্তু শুকনো ঠেকল জিভ আর গলা। কথা বেরোল না। ওর দিকে এক মুহূর্ত চেয়ে থেকে মৃদু হাসল তানিয়া।
কটা দিন খুব চিন্তায় ছিলাম, সলটার। খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।
কথা বলতে চেয়ে আবারও ব্যর্থ হল সলটার। ওর অবস্থা দেখে উঠে গেল তানিয়া। এক গ্লাস পানি নিয়ে ফিরে এল। উঠে বসার চেষ্টা করল সলটার। পারল তো না-ই বরং টনটন করে উঠল ব্যথাটা। ওকে ধরে ধরে বসাল তানিয়া। ঠোঁটের কাছে গ্লাসটা ধরতেই তৃষ্ণার্ত সলটার এক চুমুকে শেষ করল পানি।
আহ, বলল সে। কতক্ষণ হল শুয়ে রয়েছি?
আজ বুধবার। সকাল, বলল তানিয়া। তুমি রবিবার বিকেলে র্যাঞ্চে ফিরেছিলে।
তারমানে তিন দিন, বিড়বিড় করে বলল সলটার। ডাক্তার ঘরে ঢুকলেন এসময়।
জ্ঞান ফিরেছে ওর, বলল তানিয়া।
গুড, বললেন ডাক্তার। সলটারের কাছে এসে বসলেন। ক্ষতস্থানটা পরীক্ষা করে দেখলেন।
তানিয়া, বললেন তিনি, একটু গরম পানি লাগবে যে।
যাচ্ছি, উঠে চলে গেল তানিয়া। রান্নাঘরে পানি গরম করার জন্যে।
তোমার কপাল ভাল হে, বললেন ডাক্তার। তার দিকে চাইল সলটার, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে।
মেয়েটি যেভাবে তোমার সেবা করেছে; বললেন ডাক্তার। তাতেই বেঁচে গেছ তুমি। আমি তো ভেবেছিলাম ইনফেকশন হয়ে যাবে। দিন নেই রাত নেই যখনই এসেছি, বিছানার পাশে বসে থাকতে দেখেছি ওকে।
তানিয়া খানিক বাদে পানি গরম করে নিয়ে এল। কাজে লেগে গেলেন ডাক্তার।
তানিয়ার দিকে চাইল সলটার। অনেকখানি নিশ্চিন্ত দেখাচ্ছে মেয়েটিকে। দারুণ আবেগ অনুভব করল সলটার, প্রকাশ করতে পারল না।
রাসলারদের ধরা গেল? প্রশ্ন করল ও।
না, দীর্ঘশ্বাস ফেলল তানিয়া। গত রবিবার থেকে বাইরে রয়েছেন বাবা, চিহ্ন খুঁজছেন। তবে পাননি কিছু। ওদিকে শেরিফের মৃত্যুতে গোটা শহরে তোলপাড় পড়ে গেছে। ডিক উইলসনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ম্যাকডারমট এখন নতুন শেরিফ। রাদারফোর্ড তার ডেপুটি। পসি বাহিনী নিয়ে চষে বেড়াচ্ছে ওরা। তবে কাউকে ধরতে পারেনি। রাসলাররা আপাতত গা ঢাকা দিয়েছে।