Site icon BnBoi.Com

অদৃশ্য ঘাতক – কাজী মায়মুর হোসেন

অদৃশ্য ঘাতক

 

অদৃশ্য ঘাতক

 

০১.

গত এক সপ্তাহ ধরে স্যাণ্ড ক্ৰীকের কাছে ফেরিস পোস্ট অফিসের সামনে অসময়ে রাউণ্ডআপ করছে বিলি বেঞ্চলি। তার বড় ছেলে অ্যাডামের ইচ্ছে সবকটা লঙহর্ন বেচে হেফার কিনবে। প্রতিবেশী র‍্যাঞ্চারদের আপাতত গরু বেচার কোনও ইচ্ছে নেই, প্রত্যেকটা র‍্যাঞ্চ তাদের বেশির ভাগ কাউহ্যাণ্ড পাঠিয়ে দিয়েছে ওদের সাহায্য করার জন্য।

সব লঙহর্ন ঝেঁটিয়ে ওনায় পাঠাচ্ছি এবার, বিউয়েল স্টোরের সামনে ঘোড়া থামিয়ে স্টোরের দরজায় দাঁড়ানো অলিভা বিউয়েলের উদ্দেশে বলল অ্যাডাম। বড়জোর আঠারো হবে অলিভার বয়স। হালকা পাতলা। বাসায় বানানো একটা ছিটের, ম্যাক্সি পরেছে। পুরো দুই, হাজার ক্যাটল, হাসল অ্যাডাম। সিগারেট ধরাল সময় নিয়ে, তারপর জিজ্ঞেস করল, রলিন্স থেকে আমাদের বুক করা ট্রেনের খবর এসেছে?

হ্যাঁ, আজকের স্টেজে তুমিও গরুর সাথে ওমাহা পর্যন্ত যাবে, না?

চোখে ঈর্ষা নিয়ে অ্যাডামের দিকে তাকাল অলিভা। মনে মনে ভাবছে, ইস, শুধু ছেলেরাই কেন ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায়!

মাথা ঝাঁকাল অ্যাডাম বেঞ্চলি। বাবা ছাড়া আমাদের র‍্যাঞ্চের সবাই, যাবে। সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে দিল সে, ঘোড়ার মুখ ফিরিয়ে ছুটতে শুরু করার আগে বলল, তোমার বাবাকে তৈরি থাকতে বোলো। রাউণ্ডআপ শেষ, বাবা সবাইকে তোমাদের এখানে ড্রিঙ্ক করার প্রস্তাব দিয়েছে, আসছে ওরা, আর আধ ঘণ্টার মধ্যেই এখানে পৌঁছে যাবে।

অলিভা বিউয়েলদের দরজার ওপরে একটা মস্ত হলদে রঙা সাইনবোর্ড। বড় বড় লাল অক্ষরে তাতে লেখা: ফেরিস পোস্ট অফিস ওয়াইয়োমিঙ। ফেরিস কোনও শহর নয়, স্যাণ্ড ক্ৰীকের তীরের কয়েকজন র‍্যাঞ্চার বাঁচিয়ে রেখেছে ফেরিসকে। ক্রীকের ওপর দিকে দুমাইল দূরে ক্যান্টলিন র‍্যাঞ্চ, দুমাইল ভাটিতে গ্র্যাণ্ড র‍্যাঞ্চ। ওদুটো র‍্যাঞ্চেরও নির্দিষ্ট স্টোর আর গলা ভেজানোর জায়গা রয়েছে। তবু যেহেতু পোস্ট অফিস ফেরিসেধারে কাছের সবাই এখানে আসতে বাধ্য হয়।

ঘরে ঢুকে ওর ব্যস্ত বুড়ো বাপের সামনে দাঁড়াল অলিভা। ভদ্রলোক সর্বকাজের কাজী। স্যাও ক্রীকে অবশ্য সবাই প্রায় তাই। শহর থেকে অনেক দূরে বলে প্রত্যেককেই স্বাবলম্বী হতে হয়। হেনরিখ বিউয়েল। একই সাথে মার্চেন্ট, পোস্ট মাস্টার, স্টেজ এজেন্ট, হোটেলম্যান, র‍্যাঞ্চার আর ব্ল্যাকস্মিথ।

লম্বা একটা ঘরের মাঝখানে স্টোর। ডানদিকে পার্টিশন দিয়ে। আলাদা করা একটা ঘরে সে বার খুলেছে। বামদিকের পার্টিশনের ওধারে পাবলিক ডাইনিঙ রূম, মাঝ বরাবর একটা কাঠের মই বেয়ে। উঠে গেলে পৌঁছে যাওয়া যায় হোটেলে। হোটেল মানে ডাইনিঙ রূমের ওপরের ঘরটা। কয়েকটা চৌকি বিছানো আছে, ভাড়া দেয়া হয়। স্টোরের পেছনে দেয়ালে কাঠ দিয়ে কবুতরের খুপরির মত বানানো। আছে। সুইটওয়াটার থেকে শুরু করে ল্যারামি প্লেইনস পর্যন্ত ছড়ানো ছিটানো র‍্যাঞ্চলের সব চিঠিপত্র ওই গর্তগুলোর মধ্যে রাখা হয়। মিস্টার বেঞ্চলি তার নোকজনদের নিয়ে আসছে, বাবাকে মুখ তুলে তাকাতে দেখে বলল অলিভা। মাথা ঝাঁকাল হেনরিখ বিউয়েল, বার রূমে গিয়ে ঢুকল। ওই ঘরে অলিভার ঢোকার অনুমতি নেই, নিজের ঘরে গিয়ে আধঘণ্টা ধরে সাজল সে। আজ অনেক লোক আসবে ওদের এখানে।

*

বিলি বেঞ্চলির পেছনে, পনেরো, জন রাইডার, ঘোড়া থেকে নামল। স্টোরের সামনে হিচর‍্যাকে ঘোড়া বেঁধে শক্ত গড়নের র‍্যাঞ্চারের পিছু নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকল সবাই। বিলি বেঞ্চলির চেহারা চৌকো; বড় ছেলে অ্যাডামের চেয়ে ছোট ছেলে জোডির সাথেই বেশি মিল। তীরের একটা পুরানো ক্ষত আছে র‍্যাঞ্চারের পায়ে, একটু খুঁড়িয়ে হাঁটে।

ক্রুরা সবাই স্টোরের ভেতর দিয়ে বাররূমে চলে এল। দুএকজন, ছাড়া সবার কোমরেই সিক্সগান ঝুলছে। শক্ত লোক সবাই, তবে রসবোধের অভাব নেই। হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকা অলিভাকে লক্ষ্য করে চোখ টিপল অনেকে বারে ঢোকার আগে। কি আউটফিটের জ্যাক অলিভার থুতনি নেড়ে দিয়ে বলল, যত দেখি তত সুন্দর মনে হয় তোমাকে। শুধু যদি বার্ট আর্থারের কোমরে সিক্সগান না ঝুলত এখনই চুমোয় চুমোয় তোমাকে ভরিয়ে দিতাম আমি।

কথাটা শুনতে পেয়ে স্টোর আর বারের ভেতর সবাই হেসে উঠল। ওরা জানে আধুনিক রোমিও বার্ট আর্থার কখনোই সিক্সগান ঝোলায় না। আর্থার ওদের হাসিতে যোগ দেয়নি। ওকে নিয়ে আরও হাসি ঠাট্টা হতে পারে বুঝতে পেরে ওর কোনও চিঠিপত্র এসেছে কিনা জানতে চাইল সে অলিভার কাছে। ওর লাল চেহারা বলে দিচ্ছে মেয়েটার প্রতি ওর দুর্বলতা নিয়ে ঠাট্টা করা পছন্দ করে না সে।

এগিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট খুপরিটা হাতড়াল অলিভার একটা সীড ক্যাটালগ ছাড়া আর কিছু নেই, আর্থার। H মার্ক করা খুপরিটার ওপর চোখ পড়ল ওর। এখনও আছে চিঠিটা। সাত সপ্তাহ হলো কেউ ওটা নিতে আসেনি। আর্থারকে চিঠিটা দেখাল অলিভা। হিউ হুবার্টের নামে, মাইলস সিটি, মনটানা থেকে পাঠানো হয়েছে খামের ওপর লেখা আছে। আর্থার, এই লোককে চেনো তুমি?

জীবনে কোনদিন নামও শুনিনি, জবাব দিল আর্থার লজ্জিত চেহারায়, যেন না চেনাটা বিরাট ভুল হয়ে গেছে।

বার থেকে বেরিয়ে এসে জে বারের কোনও চিঠি এসেছে কিনা জানতে চাইল কিলরন হার্পার। একটা খুপরি থেকে বের করে তার হাতে তিনটে খাম ধরিয়ে দিল অলিভা, তারপর হিউ বার্টের চিঠিটা দেখাল। আমার পরিচিত কেউ না, বলল কিলরন।

বার ছেড়ে একে একে এঘরে এল সবাই নিজেদের চিঠিপত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। প্রত্যেককে পড়ে থাকা চিঠিটা দেখাল অলিভা, কেউ চিনল না প্রাপককে।

বোধহয় কোনও ভবঘুরে পাঞ্চারের কাছে লেখা, মত প্রকাশ করল স্পুকি র‍্যাঞ্চের এক রাইডার।

সবার শেষে মেইল সংগ্রহ করতে এল রিলি বেঞ্চলি, অলিভার কাছ থেকে চিঠিগুলো নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখল। হতাশার ছাপ দেখা গেল র‍্যাঞ্চারের চেহারায়, তার ছোট ছেলে জোডির কোনও চিঠি নেই, ওগুলোর মধ্যে।

আজ থেকে দুবছর আগে র‍্যাঞ্চের কাজ ভাল লাগে না বলে পুবে চলে গেছে জোডি বেঞ্চলি। জানিয়েছে পারতপক্ষে আর কখনও ফিরে আসবে না। বাবার সাথে কোনও যোগাযোগও রাখেনি সে।

র‍্যাঞ্চার সরে যাওয়ার পর মাডি গ্যাপের মার্কো গাজিনি অলিভাকে বলল, বুড়ো বেঞ্চলি জোডির ব্যাপারটা সহজভাবে নেয়নি।

মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল অলিভা। এক মাতাল রেকর্ডিং ক্লার্কের , মুখ থেকে র‍্যাঞ্চারের উইলের কথা প্রকাশ হয়ে গেছে। বিলি বেঞ্চলি অসুস্থ অবস্থায় উইলটা যখন করেছিল তখন ঋণে ডুবে ছিল তার র‍্যাঞ্চ।

জোডিকে নগদ অর্থ আর অ্যাডামকে ক্যাটল দিতে উইলে নির্দেশ দিয়েছে সে। সে সময়ের হিসেবে ভাগাভাগিটা সমানই ছিল, কিন্তু এখন অবস্থা পাল্টে গেছে। হাজার হাজার ডলার লাভ করেছে বুড়ো বেঞ্চলি গত দুবছরে, সমস্ত টাকা আরও ক্যাটল কেনার পেছনে ব্যয় করেছে। এক বাক্স .৪৫, লম্বা একজন আগন্তুক অলিভার চিন্তার জাল ছিড়ে দিল। লোকটা কিছুক্ষণ আগে এসেছে। ক্রুদের কেউ না। একটা কালো কোট পরেছে সে, প্যান্টটা হাফ বুটের মধ্যে গোঁজা। সিক্সগানটা উরুতে। নিচু করে বেঁধেছে। এখানে সবাই তাকে চেনে জোসেফ ওয়েন নামে। নিজের পরিচয় দেয় ক্যাটল বায়ার হিসেবে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ তাকে ক্যাটল কিনতে দেখেনি। সেটেলমেন্টগুলোর জুয়ার টেবিলেই। তাকে দেখা যায় বেশি।

স্টোরের দ্বিতীয় তাক থেকে গুলির বাক্স নিয়ে ওয়েনের দিকে বাড়িয়ে ধরল অলিভা, টাকা শুনে নিল। কারও সঙ্গে কোনও কথা হলো না ওয়েনের। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল বক্স বির ক্যাটল ড্রাইভ দেখার জন্য। একটু পরই ফাঁকা হয়ে গেল স্টোর, যার যার র‍্যাঞ্চের দিকে ঘোড়া ছোটাল সাহায্য করতে আসা কাউহ্যাণ্ডরা।

স্টোর গোছানোর সময় চিঠির খুপরিগুলোর দিকে তাকাল অলিভা। H লেখা গর্তে চিঠিটা নেই দেখে অবাক হলো সে। কে নিল? সবাইকে চিঠিটা দেখিয়েছে অলিভা, কেউ বলেনি সে চেনে প্রাপককে। সাতু। সপ্তাহ আগে মনট্যানার মাইলস সিটি থেকে আসা একটা চিঠি কেউ গোপনে সংগ্রহ করবে কেন? ভ্রূ কুঁচকে কিছুক্ষণ চিন্তা করল অলিভা, তারপর ব্যস্ত হয়ে পড়ল অন্য কাজে।

০২.

বিলি বেঞ্চলির ক্যাটল যেদিন ওমাহায় পৌঁছুল সেদিনই ওয়াইয়োমিঙের। মেডিসিন বোতে অনেকক্ষণের জন্য থামল একটা ইউনিয়ন প্যাসিফিক প্যাসেঞ্জার ট্রেন। ওটা আবার যখন রওয়ানা হলো দ্বিগুণ সতর্ক হয়ে উঠল। শেরিফ রস লেম্যান। গতমাসের ঘটনাটা ভুলতে পারেনি সে।

বগির সবাই লক্ষ করল বন্দীর হাত শেরিফ সীটের হাতলে হ্যাণ্ডকাফ দিয়ে আটকে দিয়েছে। গম্ভীর চেহারায় বসে আছে লেম্যান। কোলের ওপর রাখা হ্যাটের তলা দিয়ে সিক্সগানের নল দেখা যাচ্ছে। পরবর্তী স্টেশন কার্বন। গতবার ওখানে যা ঘটেছে এবারও ঘটতে পারে।

বগির পেছনদিকের সীটে বসা এক তরুণী পাশের লোকটার দিকে তাকাল কৌতূহলী দৃষ্টিতে। ওরা কারা?

আমার মনেও একই প্রশ্ন জেগেছে, এই প্রথমবারের মত মুখ খুলল, শহুরে পোশাক পরা লোকটা। একটু অপেক্ষা করো, আমি ব্রেকম্যানকে জিজ্ঞেস করে জেনে আসি।

ডেনভারের জুয়াড়ী প্যাট্রিক হল সীট ছেড়ে উঠে ব্রেকম্যানকে খুঁজতে গেল। কিছুক্ষণ পর সমস্ত তথ্য জেনে ফিরে এল সে।

বন্দীর নাম এডমণ্ড হুপার, রলিন্সে খুনের দায়ে কোর্টে দাঁড়াবে।

রলিন্স? আপনমনে বলল যুবতী। আমিও তো ওখানে যাচ্ছি! কি। করেছে লোকটা?

ব্রেকম্যানের কাছ থেকে শোনা তথ্যগুলো যুবতীকে জানাল প্যাট্রিক হল। দুবছর আগে এই লোক আর তার তিন সঙ্গী ট্রেন ডাকাতি করার জন্য রেল লাইন উপড়ে ফেলেছিল। সময় মত ব্যাপারটা একজন সেকশন ফোরম্যানের চোখে পড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটেনি। ট্রেন থামিয়ে শেরিফকে খবর দেয় লোকটা। দুবৃত্তদের তাড়া করে একটা উইলোর বনে পৌঁছায় পাসি।

সেখানে ওদের মধ্যে লড়াই হয়েছিল? নড়েচড়ে বসল মেয়েটা।

না। অ্যাম্বুশ করে আউট-লর দল, পাসির দুজন সদস্য মারা যায়। ঘোড়া কেড়ে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল দুবৃত্তরা। চারজনের মধ্যে দুজনকে চেনা যায়, একজন হচ্ছে এডমণ্ড হুপার অন্যজন বাড লরেন্স। কথা থামিয়ে মেয়েটা মনোযোগ দিয়ে শুনছে কিনা খেয়াল করল প্যাট্রিক হল, তারপর বলে যেতে থাকল। এই গ্রীষ্মে খবর এল মনট্যানার মাইলস সিটিতে হুপার আর লরেন্সকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গুজব রটল কার্বনে হুপারকে ছিনিয়ে নেয়া হবে। তাই গত মাসে শুধু লরেন্সকে নিয়ে শেরিফ এই ট্রেনে ফিরছিল।

লরেন্স তাহলে তখন রলিন্সের জেলে?

মাথা নাড়ল জুয়াড়ী। কার্বনে ওরা শেরিফের কাছ থেকে লরেন্সকে কেড়ে নিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়েছে।

.

দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে ট্রেন। জানালা দিয়ে বিস্তৃত প্রান্তর আর দূরের মেডিসিন বো মাউন্টিনের জঙ্গলের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল রোসা। সামনের স্টপেজ কার্বন, বগিতে ঢুকে অনুচ্চস্বরে জানিয়ে গেল একজন ব্রেকম্যান।

বন্দীর দিকে তাকিয়ে লোকটা কি ভাবছে বোঝার চেষ্টা করল রোসা। হুপার বোধহয় প্যান্ট নষ্ট করে ফেলেছে, বলল একজন যাত্রী।

তার পাশে বসা র‍্যাঞ্চার মাথা কঁকাল। কার্বন পেরনোর পরও লোকটা জীবিত থাকলে ওর ভাগ্য বলতে হবে। লরেন্সকে ওখানেই। ঝোলানো হয়েছে। পাসির মৃত সদস্য দুজন কার্বন শহরের লোক ছিল।

তোমার কি মনে হয় আবারও ওরা চেষ্টা করবে?

বোধহয় না, কুঁচকে বলল র‍্যাঞ্চার। ওরা জানে না শেরিফ এই ট্রেনে যাচ্ছে। খবর গোপন করার সবরকম চেষ্টা করেছে শেরিফ।

গম্ভীর চেহারায় রোসার দিকে তাকাল প্যাট্রিক হল। চলো তোমাকে অন্য কোচে বসিয়ে দিয়ে আসি। কার্বন পেরিয়ে যাওয়ার পর এখানে এসে বোসো আবার।

মাথা নেড়ে অসম্মতি জানাল রোসা। জানতে চাইল, কার্বনে না থেমেও তো চলে যেতে পারে ট্রেনটা?

না। কার্বন কোল টাউন, এঞ্জিনে কয়লা নিতে ওখানে থামতেই হবে।

লম্বা হুইসল দিয়ে চালক বুঝিয়ে দিল ট্রেন কার্বনে প্রবেশ করছে। গতি কমে আসায় ধীর লয়ে খটখট আওয়াজ করছে এখন ফিশপ্লেট। স্টেশনে থামার পর জানালা দিয়ে প্ল্যাটফর্ম আর রাস্তাটা দেখল রোসা। লোক চলাচল করছে রাস্তায়। পোশাক দেখে বোঝা যায় বেশিরভাগই মাইনার। কোমরে সিক্সগান ঝুলছে অল্প দুএকজনের।

মনে হচ্ছে এবার কিছুই ঘটবে না, কিছুক্ষণ বাইরে তাকিয়ে থেকে হতাশ কণ্ঠে বলল যাত্রীদের কে যেন।

র‍্যাঞ্চার আঙুল তুলে রোসার দিকের জানালা দেখাল। ডিপোর পাশে টেলিগ্রাফের খুঁটিটা দেখেছ? লরেন্সকে ওটাতেই ঝোলানো। হয়েছিল।

শেরিফ রস লেম্যানের চেহারা থেকে দুশ্চিন্তার ছাপ দূর হয়ে যেতে শুরু করেছে। হাতের উল্টোপিঠে তাকে কপালের ঘাম মুছতে দেখল রোসা। এঞ্জিনের দিক থেকে ধাতব শব্দ ভেসে আসছে। বোধহয় কয়লা তোলার কাজ শেষের পথে।

.

আক্রমণ হলো বগির দুদিক থেকেই। নিখুঁত সময়জ্ঞান। দুমাথার দরজা। দিয়ে যোলো জন সশস্ত্র লোক ঢুকে পড়ল হুড়মুড় করে। কাউকে চেনার উপায় নেই, মুখোশ পরে আছে। শেরিফকে ঘিরে দাঁড়াল তারা। ভয়ে। ককিয়ে উঠল এডমণ্ড হুপার, কর্ণপাত করল না লোকগুলো। একজন হাত বাড়িয়ে শেরিফের কোল থেকে সিক্সগানটা তুলে নিল। চাবিটা দাও, রস, বলে উঠল আরেকজন।

সবার কথা বলার ভঙ্গিই বন্ধুত্বপূর্ণ। বোঝা যায় শেরিফকে ওরা পছন্দ করে। চাবি নিয়ে বন্দীর হ্যাণ্ডকাফ খুলে ফেলা হলো। থামাও! ঈশ্বরের দোহাই, ওদের থামাও! হুপারের আর্তনাদ ফেঁপানিতে পরিণত হলো। বগি থেকে তাকে হেঁচড়ে নামিয়ে নিয়ে যেতে এক মিনিটও লাগল না লোকগুলোর।

নিরস্ত্র, অসহায় শেরিফ অনুসরণ করল ওদের। যোলোজন মুখোশ পরা সশস্ত্র লোক হুপারকে টেনে নিয়ে ডিপোর প্ল্যাটফর্মের দিকে যাচ্ছে জানালা দিয়ে দেখল রোসা। শেরিফ আপ্রাণ চেষ্টা করছে উন্মত্ত, লোকগুলোকে বোঝাতে। কয়েকজন তাকে ঠেলে সরিয়ে দিল। টেলিগ্রাফ পোস্টের ক্রসআর্মের ওপর দিয়ে রশি গলিয়ে দেয়া হলো। বাড লরেন্সও এই খুঁটিতে ঝুলে মরেছে।

হুপারের গলায় ফাঁস পরানো হতেই প্যাট্রিক হল হাত বাড়িয়ে জানালা বন্ধ করে দিল যাতে দৃশ্যটা রোসাকে দেখতে না হয়। দেখতে। না হলেও হুপারের কাকুতি মিনতি কানে এল ওর। কিছুক্ষণ পর লিঞ্চিঙ মবের নেতা কথা বলে উঠল। আমরা তোমাকে শেষ একটা সুযোগ দিচ্ছি, হুপার। আমাদের কথা শুনলে রলিন্সে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পাবে, তা না হলে এখানেই তোমাকে ঝুলিয়ে দেব। তোমরা চারজন ছিলে। তুমি আর লরেন্স ছাড়া বাকি দুজন কারা?

আতঙ্কিত হুপার বুঝতে না পারায় একই কথা আবারও পুনরাবৃত্তি করা হলো। আমি বলব! সব বলব…আগে গলা থেকে দড়ি সরাও, কেঁদে ফেলল হুপার।

তুমি সত্যি বলছ বোঝার আগ পর্যন্ত দড়ি দড়ির জায়গাতেই থাকবে! ধমকে উঠল একজন।

হুপারের বলা প্রত্যেকটা কথা বোসা মনোযোগ দিয়ে শুনল। কোর্টে দাড়ানোর সুযোগ পাওয়ার জন্য হড়বড় করে কথা বলে চলেছে আউট ল।

আমরা চারজন ছিলাম। আমি, লরেন্স, গ্যানন উইলিস আর…

কোন্ গ্যানন উইলিস? কথা কেড়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করল একজন মুখোশধারী। যে লোকটা শাইয়ানে গানফাইটে মারা গেছে?

হ্যাঁ,ফোপানোর ফাঁকে ফাঁকে বলল হুপার, সেই আমাকে খারাপ পথে টেনে এনেছে।

আগে তুমি খুব ভাল মানুষ ছিলে, না? প্রাণে বাঁচতে চাইলে ফালতু কথা বন্ধ করে চার নম্বর খুনীর নাম জানাও, সাবধান করল একজন। দুইবার হুইসল বাজিয়ে ড্রাইভার বুঝিয়ে দিল ট্রেন ছাড়তে দেরি নেই।

অন্যজন হিউ হুবার্ট। আমি সত্যি বলছি, হুবার্ট এখন ওয়াইয়োমিঙের ফেরিসে। ট্রেনে ওঠার জন্য মরিয়া হুপার কবুল করল।

অবিশ্বাসের গুঞ্জন উঠল ভীড়ের মধ্যে। ফেরিস? ফেরিস তো এই কাউন্টিতেই! উত্তরে ঘোড়া ছোটালে রলিন্স থেকে মাত্র একদিনের পথ

মিথ্যে বলে লাভ নেই, হুপার, ঠাণ্ডা স্বরে বলল লিঞ্চিঙ মবের নেতা। গত এক বছর ধরে তুমি মনটানায় ছিলে, হিউ হুবার্টের খবর। তুমি জানো কোত্থেকে?

বাড লরেন্স বলেছে, বিশ্বাস করো আমি সত্যি কথা বলছি। ধরা পড়ার আগে হুবার্টের কাছে টাকা চেয়ে ফেরিসে চিঠি লিখেছিল সে।

ব্যাটা মিথ্যে কথা বলছে।

ঝুলিয়ে দাও শালাকে!

ভীড়ের মধ্যে বিভিন্ন জনে বিভিন্ন মত প্রকাশ করল। কেউ নিশ্চিত লোকটা মিথ্যে কথা বলছে। সুযোগ নিল শেরিফ রস লেম্যান। উঁচু গলায় বলল, হুপার মিথ্যা বলছে কিনা সহজেই বোঝা যাবে। ফিরে। গিয়ে ফেরিসে খোঁজ নিলেই আমি জানতে পারব হিউ হুবার্টের নামে। ওখানে কোনও চিঠি গিয়েছিল কিনা। আমি কথা দিচ্ছি উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তোমরাও কিন্তু কথা দিয়েছিলে অচেনা খুনীদের নাম বললে হুপারকে তোমরা আমার হাতে ছেড়ে দেবে।

আবার দুইবার হুইসল বাজাল অধৈর্য ড্রাইভার। রোসা শুনতে পেল নিচু গলায় লোকগুলো আলোচনা করছে। কিছুক্ষণ পর ওদের নেতা উঁচু গলায় বলল, আমরা জানি বিচারে এমনিতেই ফাঁসি হবে হুপারের। বেশ, শেরিফ, ওকে রলিন্সে নিয়ে যাও তুমি।

এক মিনিট পর বন্দীকে নিয়ে বগিতে উঠল শেরিফ রস লেম্যান, সীটের হাতলে আবার আটকে দিল হুপারের হাত। ট্রেন চলতে শুরু করায় ধাতব শব্দ উঠল ফিশপ্লেটের।

আমি প্যাট্রিক হল, ম্যাম।

পাশে বসা লোকটার গলার আওয়াজ শুনে চোখ তুলে তাকাল বোসা। চওড়া কাঁধ লোকটার। পরনে শহরে তৈরি দামী কোট। ক্লিন। শেভড চেহারাটা সুদর্শন। কোঁকড়ানো কালো চুল। দেখতে সুন্দর, তবু কেন যেন সহজ হতে পারল না রোসা। রুক্ষ একটা ভাব আছে লোকটার মধ্যে। চোখ জোড়া মায়া দয়াহীন। আমি রোসা হিগিনস, মিস্টার হল, বলল সে। রলিন্সে যাচ্ছি। তুমি?

রলিন্স।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল রোসা, কিন্তু আর একটা কথাও বলল না প্যাট্রিক হল। জানালা খুলে দেয়ার জন্য ঝুঁকল লোকটা। তার ফাঁক হয়ে যাওয়া কোটের ভেতর হোলস্টারে রাখা অস্ত্রটা চোখে পড়ল রোসার। মুখ ফিরিয়ে খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকল সে।

০৩.

নর্থ প্ল্যাট রিভার পার হওয়ার পর কণ্ডাক্টর এল বগিতে। যাত্রীদের উদ্দেশে বলল, আমরা রলিন্সে থামার পর শেরিফ তার বন্দী সহ নেমে যাওয়ার আগে সীট ছেড়ে উঠবে না কেউ।

একজন যাত্রী জানতে চাইল, হুপারকে গুলি করতে গিয়ে কেউ আমাদের খুন করে বসবে সেই ভয় পাচ্ছ?

ফ্যাকাসে চেহারায় হাসল কণ্ডাক্টর। না। ডেপুটি জেরাল্ড স্ট্যানলি। থাকবে প্ল্যাটফর্মে।

তাহলে আমাদের চিন্তার কিছু নেই। মাথা ঝাঁকাল র‍্যাঞ্চার।

তারপরও আমরা ঝুঁকি নেব না। এবার স্ট্যানলিকে দুদিকে নজর রাখতে হবে, বলল কণ্ডাক্টর। ল্যারামি জেল থেকে পাঁচজন হাজতী পালিয়েছে। পশ্চিমে আসছে ওরা।

তো? জিজ্ঞেস করল র‍্যাঞ্চার।

একজনের চুরি করা ঘোড়াটা গতকাল পাওয়া গেছে স্যাডল গিয়ারসহ। সম্ভবত রলিন্সে লুকিয়ে আছে লোকটা, চেষ্টা করছে নতুন ঘোড়া যোগাড় করার। অথবা হয়তো ভাবছে এই ট্রেনে উঠে পড়বে। লোকটা সে চেষ্টা করলে ডেপুটি তাকে গুলি করবে।

কণ্ডাক্টর চলে যাওয়ার পর প্যাট্রিক হল তাকাল রোসার দিকে।–চিন্তিত চেহারায় হাসল রোসা, জানতে চাইল, এদিকে সবসময়েই এরকম গোলমাল চলে?

না। কখনও কখনও পুরো একসপ্তাহ পার হয়ে যায় একজন লোকও গুলি খায় না বা ফাঁসিতে ঝোলে না।

ব্রেকম্যানের চিৎকার শোনা গেল। সামনের স্টপেজ রলিন্স। আমরা। না বলা পর্যন্ত সীট ছেড়ে উঠবে না কেউ।

শহরের মধ্যে গতি কমিয়ে প্রবেশ করল ট্রেন, থামল লম্বা একটা প্ল্যাটফর্মের পাশে। বড় রাস্তা দেখা যায় এখান থেকে। এক সারিতে কয়েকটা সেলুন আর একটা হোটেল রয়েছে রাস্তার উল্টোপাশে। একজন মহিলাকেও দেখা গেল না কোথাও, অথচ অন্তত শখানেক লোক দাঁড়িয়ে আছে উঁচু বোর্ডওয়াকে।

বিশাল প্ল্যাটফর্মে লম্বা একটা লোক ছাড়া আর কেউ নেই। গ্রীক দেবতার মত চেহারা লোকটার। সোনালী চুল। বুকে ঝুলছে একটা স্টার। কোমরের হোলস্টার উরুর সাথে বাধা। ঋজু ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ নীল চোখের দৃষ্টিতে চারপাশ জরিপ করছে সে। অস্বাভাবিক। কোনকিছু দেখলেই মোকাবিলা করবে।

বোর্ডওয়াকে দাঁড়ানো একটা লোকও নড়ল না। বগির ভেতর শব্দ শুনে ঘাড় ফেরাল রোসা। শেরিফ লেম্যান তার বন্দীকে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে যাচ্ছে। প্ল্যাটফর্মে নেমে ডেপুটির সাথে কথা বলল শেরিফ। রোসা শুনতে পেল ডেপুটি স্ট্যানলি বলছে, তোমার সাথে জেল পর্যন্ত যেতে পারলে ভাল হত, কিন্তু ট্রেন ছাড়ার আগে এখান থেকে আমার নড়া উচিত হবে না।

শেরিফ সমঝদারের ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল। হ্যাঁ, কণ্ডাক্টরের কাছে শুনেছি। তুমি আসার আগ পর্যন্ত ডিপোতেই অপেক্ষা করব।

কার্বনে কোনও ঝামেলা হয়েছিল?

হ্যাঁ, প্রায় সেই আগের বারের মতই। তবে এবার কিছু নতুন তথ্য আদায় করেই হুপারকে ছেড়ে দিয়েছে ওরা। কাল তদন্ত করতে ফেরিসে যেতে হবে তোমাকে।

ফেরিস? ওখানে কেন? চারপাশে নজর রাখার ফাঁকে জানতে চাইল স্ট্যানলি। নিচু হয়ে ট্রেনের তলায় কেউ লুকিয়ে আছে কিনা দেখল।

ফাঁসির দড়ি গলায় এঁটে বসবে এই ভয়ে অচেনা খুনী দুটোর নাম বলে দিয়েছে হুপার। তাদের একজন হচ্ছে হিউ হুবার্ট। লোকটা বোধহয়, ফেরিসে লুকিয়ে আছে। ওই জায়গার পোস্ট অফিসে তার নামে চিঠি এসেছে। পোস্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে যদি দেখ সত্যি লোকটার চিঠি, এসেছে ওখানে, তাহলে তাকে ধরে আনতে হবে তোমার।

বন্দীকে নিয়ে ডিপোর ওয়েটিঙ রূমের দিকে চলে গেল শেরিফ। প্ল্যাটফর্মে আবার একা হয়ে গেল বিশালদেহী স্ট্যানলি। চুপ করে বোর্ডওয়াকে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে শখানেক লোক, কিছু একটা ঘটার অপেক্ষায়। ট্রেনের এঞ্জিনটা অলস দানবের মত নিথর পড়ে আছে। মাঝে মাঝে হিস হিস শব্দে চিমনি দিয়ে দম নিচ্ছে। দীর্ঘ একটা মিনিট গড়িয়ে গেল।

বগিগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ব্রেকম্যান চেঁচাল। এখন নামতে পারে সবাই। রোসার জানালার সামনে এসে থামল সে। তোমাকে নিতে কেউ আসছে, মিস?

মনে হয় না, তবে ম্যাক্সওয়েন হাউসে আমার জন্য রূম বুক করা থাকবে।

তাহলে ম্যাক্সওয়েলের পোর্টার আসবে। বগিতে উঠে এসে রোসার সুটকেস তুলে নিল ব্রেকম্যান। চলো, লোকটাকে চিনিয়ে দিই।

ব্রেকম্যানকে অনুসরণ করে প্ল্যাটফর্মে নামল রোসা। জানালা দিয়ে প্যাট্রিক হল দেখল একজন হোটেল পোর্টার মেয়েটার লাগেজ বুঝে নিয়েছে। প্ল্যাটফর্মে নামার পর লক্ষ করল রাস্তার বাঁকে হারিয়ে গেছে রোসা।

যাত্রীরা সবাই নামায় ডিপোর পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে এল মুহূর্তে। অফিস থেকে বেরিয়ে এসে ব্রেকম্যানের হাতে নির্দেশ লেখা একটা কাগজ ধরিয়ে দিল এজেন্ট। ব্যাগেজ কারের দরজা খুলে নেমে এল, ব্যাগেজম্যান, স্থূপীকৃত মালপত্র ট্রলিতে তুলে ঠেলতে শুরু করল। স্থানীয় লোক, প্রত্যেকদিনের মেইল পোস্ট অফিসে পৌঁছে দেয়াও এরই দায়িত্ব।

প্ল্যাটফর্মে শুধু নিজের জায়গা ছেড়ে নড়ল না ডেপুটি স্ট্যানলি। এখনও ট্রেনে উঠে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পলাতক খুনীর। ট্রেন ছাড়তে বেশি দেরি নেই। মালপত্রের ওঠানামা শেষ হলেই রওনা। দেবে।

কিছু জরুরী তথ্য জানতে ডিপোতে ঢুকল প্যাট্রিক হল। ওয়েটিঙ, রূমের স্টোভের পাশে বন্দীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শেরিফ। ডেপুটির জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের পাশ কাটিয়ে টিকেট কাউন্টারে এসে দাঁড়াল হল। চৌকো ফোকর দিয়ে একজন টেলিগ্রাফারকে দেখে। জিজ্ঞেস করল, বিলি বেঞ্চলির র‍্যাঞ্চটা কোথায় বলতে পারো?

তথ্যের অভাব নেই অপারেটরের, কথা শুরু করার পর থামতে আর চায় না। বিলি বেঞ্চলি তো? বক্স বির মালিক। এখান থেকে উত্তর দিকে , যেতে হবে। পঁয়তাল্লিশ মাইল গেলে তবেই স্যাণ্ড ক্রীকের তীরে তার র‍্যাঞ্চ। সপ্তাহে দুবার ওখানে স্টেজ যায় চিঠি নিয়ে। কিন্তু আগামী দুদিন যাবে না, যেতে চাইলে তোমাকে ঘোড়ায় করে যেতে হবে।

ধন্যবাদ, হাসল প্যাট্রিক হল। সকালে স্টেবল থেকে স্যাডল হর্স ভাড়া করে রওয়ানা হয়ে যাব।

ডেনভারের জুয়াড়ী ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছে এই সময় বুদ্ধিটা খেলে গেল অপারেটরের মাথায়। এক মিনিট শোনো, মিস্টার! কাল যদি তুমি বক্স বিতে যাও তাহলে ছোট্ট একটা কাজ করে দেবে?জবাবের অপেক্ষা করল না সে, ফোকর দিয়ে একটা খাম বের করে ধরে বলল, আজকে ওমাহা থেকে এই টেলিগ্রামটা এসেছে। তুমি পৌঁছে দিলে তাড়াতাড়ি পাবে র‍্যাঞ্চার।

বেশ, কাঁধ ঝাঁকিয়ে খামটা কোটের পকেটে পুরল জুয়াড়ী।

গোপন কথা না, গরু বেচে কত পাওয়া গেছে এই খবর সবাই জানে, গোপন তথ্য ফাঁস করে আমি দায়িত্বে অবহেলা করছি মনে কোরো না,কৈফিয়ত দিল টেলিগ্রাফার।

ডিপো থেকে বেরিয়ে এল প্যাট্রিক হল, হাঁটতে শুরু করল বোর্ডওয়াকে উঠে।

নতুন যাত্রীরা সবাই বগিতে ঢুকে বসে পড়েছে যে যার জায়গায়। ট্রেন নড়ে উঠল হুইসল দিয়ে। প্ল্যাটফর্মে একা দাঁড়িয়ে আছে ডেপুটি স্ট্যানলি, ব্যাগেজম্যান ট্রলি ঠেলে তার দিকে এগুলো। এই মুহূর্তে ওরা দুজন ছাড়া আশেপাশে কেউ নেই।

ট্রেনের ধাতব চাকাগুলো ধীরে ধীরে ঘুরতে শুরু করেছে। বলা যায়, পলাতক আসামী হয়তো এখনও ট্রেনে উঠে সরে পড়ার চেষ্টা করতে পারে। শেষ বগিটাও প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে গেল, গতি বেড়ে গেল। ট্রেনের, এখন আর কেউ উঠতে পারবে না।

ট্রলি ঠেলে ডেপুটির পাশে পৌঁছুল ব্যাগেজম্যান, পুবে ব্যাগেজ শেড়ের দিকে এগুলো। লোকটার উপর চোখ পড়তে দুটো ব্যাপার লক্ষ করল ডেপুটি। বুড়ো ব্যাগেজম্যানকে ভীত দেখাচ্ছে। লোকটার বাঁ গালে রক্ত জমে নীল হয়ে আছে। তাকে থামিয়ে ডেপুটি জিজ্ঞেস করল, কে মেরেছে, স্টিভ?

কেউ না। পড়ে গিয়ে লেগেছে।

লোকটার কাঁপা কাঁপা গলার স্বরে স্পষ্ট আতঙ্ক। সন্দেহ হলো স্ট্যানলির। তোমার ছেলে কোথায়, স্টিভ? আজ স্টেশনে আসেনি তোমাকে সাহায্য করতে, কোথায় সে?

অসুস্থ, চকিতে ব্যাগেজ শেডের দিকে তাকাল বুড়ো।

উঁহু, একটু আগেই ওকে রাস্তায় ডাক্তারের জুতো পালিশ করতে দেখেছি। মিথ্যে বলছ কেন? ব্যাগেজম্যানের হাত আঁকড়ে ধরল স্ট্যানলি।

আবার ভীত চোখে ব্যাগেজ শেডের দিকে তাকাল বুড়ো। ফিসফিস করে বলল, ওর ক্ষতি হয়ে যাবে!

হতে দেব না, তাড়াতাড়ি বলো কি হয়েছে।

ট্রেন আসার আগে লুকিয়ে শেডে ঢুকে পড়েছে এক লোক। ভেবেছিল ট্রেনে উঠে পালিয়ে যেতে পারবে।

চোখ সরু হয়ে গেল ডেপুটির। ওখানেই তার সঙ্গে তোমাদের দেখা হয়েছে?

হ্যাঁ, আমাকে ঘুসি মেরেছে লোকটা, গালে হাত বোলাল বুড়ো। তোমাকে এখানে দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টেছে সে। আমার ছেলের বুকে পিস্তল ধরে আছে। আমাকে বলেছে যাতে তার জন্য একটা ঘোড়া যোগাড় করে দিই।

সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করল না ডেপুটি, ব্যাগেজম্যানের ক্যাপটা মাথায় পরল বুড়োর কাছ থেকে নিয়ে। এখানেই দাঁড়াও, স্টিভ, তোমার বদলে ট্রলি নিয়ে আমি শেডে ঢুকব।

একটু কুঁজো হয়ে শেডের দিকে ট্রলি ঠেলতে শুরু করল স্ট্যানলি। স্তূপীকৃত ব্যাগেজের পেছন থেকে শুধু ক্যাপটা বেরিয়ে আছে। শেডের দরজা দিয়ে সে ট্রলি নিয়ে ঢুকলে খুনীর স্বাভাবিক ভাবেই মনে হবে ঘোড়ার খবর নিয়ে এসেছে বুড়ো ব্যাগেজম্যান। যখন সে বুঝবে, লাগেজের পেছনে কে, ততক্ষণে বেশি দেরি হয়ে যাবে সম্ভবত।

শেডের ভেতরে ঢুকে গেল ডেপুটি। আধমিনিট পর প্রায় একই সঙ্গে গর্জে উঠল দুটো সিক্সগান। বিশ সেকেণ্ড পর শেড থেকে বেরিয়ে এল। স্ট্যানলি। ডানহাতে সিক্সগান, বাঁ হাতে ধরে আছে আতঙ্কিত একটা বাচ্চা ছেলেকে।

লেফটি ইক, প্ল্যাটফর্মের মাঝ বরাবর এসে ডিপোর দরজায় দাঁড়ানো শেরিফের উদ্দেশে চেঁচাল স্ট্যানলি।

রলিন্সের সবাই লেফটি ইকলসের নাম শুনেছে। পলাতক আসামীদের মধ্যে এই লোক ছিল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর খুনী। ল্যারামির জেল ভেঙে বেরিয়ে আসার পর ওয়াইয়োমিঙের কোনায় কোনায় উচ্চারিত হয়েছে এই লোকের নাম।

স্টেশন মাস্টার কোত্থেকে যেন ছুটে এল হন্তদন্ত হয়ে। ডাক্তার ডাকব, স্ট্যানলি?

গম্ভীর চেহারায় মাথা নাড়ল ডেপুটি। দরকার নেই, করোনারকে খবর দাও।

০৪.

পরদিন সকালে প্যাট্রিক হল চমৎকার একটা মেয়ার ভাড়া করল স্টেবল থেকে। তৈরি হয়ে দ্রুত গতিতে ছুটল স্যাণ্ড ক্রীক লক্ষ্য করে। ফেরিস আর সেমিনো মাউন্টিনের মাঝখানের প্রেইরি তাকে পথ দেখাল। আরেকবার চলার পথেই টেলিগ্রামটা পড়ল সে। টেলিগ্রাফারকে গোপনীয়তা ভঙ্গের দোষ দেয়া যায় না। আজকের কাগজেই নিশ্চয়। খবরটা বেরিয়েছে।

ওমাহা। অগাস্ট ১০।

বিলি বেঞ্চলি

ফেরিস ভায়া রলিন্স ওয়াইয়োমিঙ

তোমার ক্যাটল ঠিকমত পৌঁছেছে স্টপ ছাপান্ন হাজার চারশো ডলারে বিক্রি হয়েছে স্টপ কথামত পুরো টাকার হেফার কেনা হবে স্টপ চারদিনের মধ্যে ডাকোটা থেকে ক্যাটল কিনে পাঠানো হবে।

হেফটন লাইভ স্টক কমিশন কোং।

আরেকবার মাথা ঝাঁকাল প্যাট্রিক হল খামটা পকেটে রেখে। এতগুলো ক্যাটল বিক্রির খবর গোপন থাকে না। মনে মনে ভাবল ডেনভারে সে মিথ্যে শোনেনি, টাকা আছে র‍্যাঞ্চারের।

তিনঘণ্টা একটানা ঘোড়া ছুটিয়ে বেল প্রিঙসে পৌঁছাল প্যাট্রিক হল। রাস্তা এখানে দুভাগ হয়ে গেছে। ডান দিকে বাঁক নিয়ে উত্তর-পুবে বাজার্ড গ্যাপ আর ফেরিসে গেছে একটা রাস্তা। অন্যটা বামে, উত্তর পশ্চিমে রঙ্গিস আর ল্যানডারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছে। বেল ঙিসের স্টেজ স্টেশনে ছোট্ট রেস্টুরেন্টে এক কাপ কফি খাওয়ার জন্য থামল সে।

কিছুক্ষণ পর আবার রওয়ানা দিল। রলিন্স থেকে আসা একজন রাইডারকে দেখতে পেল সে। কাছে আসতে চিনে ফেলল। ডেপুটি জেরাল্ড স্ট্যানলি!

মনিঙ, স্ট্রেঞ্জার, ঘোড়া দুটো পাশাপাশি চলে আসার পর বলল ডেপুটি।

হাঁটার গতিতে একসাথে এগুলো ওরা। প্যাট্রিক হল অস্ত্র ঝোলায়নি। কিন্তু আজ ডেপুটির কোমরে দুটো হোলস্টার, স্যাডলে একটা কারবাইন। একটা সিগারেট রোল করে ঠোঁটে ঝোলাল সে, তামাক আর কাগজ বাড়িয়ে ধরল হলের দিকে। জানতে চাইল, গতকাল ট্রেন থেকে তোমাকে নামতে দেখেছিলাম না?

হ্যাঁ, গতকালের গাড়িতেই দেখেছ। ডেনভার থেকে এসেছি, আমি প্যাট্রিক হল, হ্যাণ্ডশেক করল সে ডেপুটির সাথে। বিলি বেঞ্চলির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।

কেন সে র‍্যাঞ্চারের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে প্রশ্ন করতে পারে, ডেপুটি। জবাব তৈরি রাখল হল। কিন্তু পশ্চিমের নিয়ম মেনে ব্যক্তিগত ব্যাপারে আগ্রহ দেখাল না স্ট্যানলি।

বিকেলে ডেভিড মুরের র‍্যাঞ্চে পৌঁছাল ওরা। রলিন্সের সবচেয়ে বড় সেলুনটাও ডেভিড মুরের, র‍্যাঞ্চে থাকারই সময় পায় না সে। আজও মুর রলিন্সে, তবে তার নিঃসঙ্গ কুক দুই রাইডারের খাতির যত্নে ত্রুটি রাখল না।

বুড়ো কুক টেবিলে খাবার দেয়ার পর প্যাট্রিক হলকে ব্যক্তিগত প্রশ্নটা করেই ফেলল কিছুক্ষণ উসখুস করে। বিলি বেঞ্চলির ওখানে কেন যাচ্ছ, মিস্টার? মাইনের ব্যাপারে হলে গিয়ে লাভ নেই, মাইন বেচে দিয়েছে সে। কয়েক মুহূর্ত পর বলল, ব্যবসার জন্য গিয়েও লাভ, নেই, সব ক্যাটল বেচে দিয়েছে র‍্যাঞ্চার।

তৈরি জবাব দিল প্যাট্রিক হল। আমি জোডির ঠিকানা জানতে এসেছি। আসলে সে ভালমতই জানে জোডি কোথায় আছে, তবে না জানার ভান করলে র‍্যাঞ্চারের সাথে দেখা করার একটা যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়।

আমার মনে হয় না র‍্যাঞ্চার জানে তার ছোট ছেলে কোথায়, বলল কুক। দুবছর আগে জেদ করে চলে গেছে জোডি, কখনও শুনিনি বাবাকে কোনও চিঠি দিয়েছে সে।

ওর একটা ভাই আছে, তাই না?

হ্যাঁ, ওই দুই ছেলেকে নিয়েই বিলি বেঞ্চলির সংসার। জোডি চলে যাবার পর অ্যাডাম ছাড়া দুনিয়ায় আর কেউ নেই তার। অ্যাডাম হয়েছে। ঠিক ওর বাবার মত। দুজনে খেটে দাঁড় করিয়েছে বিশাল র‍্যাঞ্চটা। ওর বাবা মারা গেলে অ্যাডামই হবে সবকিছুর মালিক।

জোডিকে ত্যাজ্যপুত্র করা হয়েছে? অতি কৌতূহল প্রকাশ না করে অলস গলায় জিজ্ঞেস করল প্যাট্রিক হল।

ব্যাপারটা আসলে অন্য জায়গায়। ক্যাটল একটাও পাবে না জোডি, মারফতি হাসি হেসে ওদের দুজনের দিকে তাকাল বুড়ো কুক। র‍্যাঞ্চার–উইলে সব গরু অ্যাডামকে আর টাকাগুলো জোডিকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু মজার কথা হলো আজকাল সব টাকা বিলি বেঞ্চলি ক্যাটলে খাটায়।

পরচর্চায় বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল স্ট্যানলি। রওয়ানা হয়ে যাবো। আমার সাথে আসবে, প্যাট্রিক?

ফেরিস আর সেমিনো রেঞ্জের ফাঁক দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে এগুলো ওরা দুজন। মাঝের জমিতে ছোট একটা র‍্যাঞ্চ আছে। ওখানে পৌঁছে–কুয়ার পাড়ে নামল ডেপুটি, গাধাকে পানি দিতে ব্যস্ত র‍্যাঞ্চারের কাছে জানতে চাইল হিউ হুবার্ট নামের কাউকে সে চেনে কিনা।

চিন্তিত চেহারায় বাদামী গোঁফে তা দিল র‍্যাঞ্চার। চিনি না, কিন্তু মনে পড়ছে নামটা। ও, হ্যাঁ, এই লোকের নামে ফেরিস পোস্ট অফিসে একটা চিঠি এসেছিল। গত সপ্তাহের এই দিনে কে যেন চুরি করেছে চিঠিটা।

কে?

জানা যায়নি।

প্যাট্রিক হলের দিকে তাকাল ডেপুটি। তারমানে হুপার মিথ্যে বলেনি।

র‍্যাঞ্চারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে স্যাও ক্রীকের দিকে এগুলো ওরা। দুজন। ক্রীকের সাথে উত্তর-পুবে মাইল বারো এগিয়ে নর্থ প্ল্যাট নদীতে শেষ হয়েছে উপত্যকা। প্রতি দুই মাইল পর পর তিনটা র‍্যাঞ্চ চোখে পড়ল প্যাট্রিক হলের।

একটা ওয়াগন ট্রেইল বামে চলে গেছে। ওখানটায় ঘোড়া থামাল ডেপুটি। হাত উঠিয়ে রাস্তাটা দেখাল। এ-পথে গেলেই বক্স বিতে পৌঁছে যাবে।

ডেপুটি চলে যাওয়ার পর স্টেজ রোড ধরে বক্স বির দিকে এগুলো জুয়াড়ী। ক্রীক থেকে সরে এসেছে রাস্তাটা। কিছুক্ষণ পর একটা গেটের। সামনে থামল তার মেয়ারটা। গেট পোস্টের ওপর টাঙানো একটা বোর্ডে বড় করে লেখা আছে বক্স বি। মস্ত আঙিনার ওপাশে রুক্ষ চেহারার কাঠের র‍্যাঞ্চহাউস। বার্ন, করাল সবই আছে, তবে প্যাট্রিক হল খেয়াল করল কোনও বাগান নেই। র‍্যাঞ্চটায় মেয়েলি হাতের স্পর্শ পড়েনি বোঝা যায়।

গেট পেরিয়ে এগুনোর সময় র‍্যাঞ্চ সম্বন্ধে জোডি কি বলেছিল মনে পড়ল তার। হোমস্টেড ছাড়া আর কোনও জমি ওদের নিজস্ব না। ওয়াইয়োমিঙের অন্যান্য বড় র‍্যাঞ্চের মতই ফ্রী রেঞ্জ ব্যবহার করে বক্স বি। লক্ষ লক্ষ একর সরকারী জমির স্বঘোষিত মালিক ওরা। জমি কিনে এবং ট্যাক্স দিয়ে টাকা নষ্ট করতে রাজি নয় বুড়ো বেঞ্চলি।

তারমানে বক্স বি র‍্যাঞ্চের নিজস্ব জমি বলতে, প্রায় কিছুই নেই! ক্যাটল কেনার পেছনে বিশাল অঙ্কের টাকা ঢেলেছে র‍্যাঞ্চার। সে মারা গেলে সব ক্যাটল বড় ছেলে অ্যাডাম পাবে, ব্যাংকে সামান্য যা কিছু টাকা আছে সেটা পাবে জোডি।

গত এক ঘণ্টা ধরে একটা কথা ভাবছে প্যাট্রিক হল। টেলিগ্রামটা আরেকবার পড়ে পকেটে রেখে দিল সে। চোদ্দ তারিখে ক্যাটল কিনে পাঠানো হবে। র‍্যাঞ্চার চোদ্দ তারিখের আগে মারা গেলে গরু বেচার সমস্ত নগদ টাকা চলে যাবে জোডির হাতে!

হিচ র‍্যাকে ঘোড়া বেঁধে র‍্যাঞ্চহাউসের দরজায় নক করল প্যাট্রিক হল। কেউ জবাব দিল না। বাড়ির পেছনে কুড়াল দিয়ে কাঠ কাটার শব্দ শুনে সেখানে গিয়ে হাজির হলো সে। বয়স্ক, শক্ত-পোক্ত একজন লোক কুড়াল দিয়ে রান্নার কাঠ কাটছে। আগে না দেখলেও বুঝতে পারল এই লোকই বিলি বেঞ্চলি।

আগন্তুককে দেখে একটু খুঁড়িয়ে হেঁটে সামনে এসে দাঁড়াল র‍্যাঞ্চার। হাওডি?

আমি ডেনভার থেকে জোডি বেঞ্চলির ব্যাপারে এসেছি। প্যাট্রিক হল। হাত বাড়িয়ে দিল জুয়াড়ী।

উজ্জ্বল হয়ে উঠল র‍্যাঞ্চারের চেহারা, হাতটা জোরে কঁকিয়ে ছেড়ে দিল। তুমি জোডির বন্ধু? জোডি ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসছে, তাই না?

আমি ওর কাছে টাকা পাই সেজন্য ওকে খুঁজছি।

মুহূর্তে বিলি বেঞ্চলির চেহারায় হতাশা কালো ছায়া ফেলল। গেছে। দুবছর হলো, একটা চিঠিও দেয়নি জোডি। কত টাকা নিয়েছে ও তোমার কাছ থেকে?

ওয়ালেট থেকে একটা প্রমিসারি নোট বের করে র‍্যাঞ্চারের চোখের সামনে ধরল প্যাট্রিক হল। এক মাসের পুরানো নোট, টাকা পরিশোধ করতে হবে নব্বই দিনের মধ্যে। বাইশ হাজার ডলার ঋণ নিয়ে নব্বই দিনের মধ্যে শোধ করবে লিখে সই করেছে জোডি বেঞ্চলি।

জোডিরই সই, তিক্ত চেহারায় মাথা ঝাঁকাল র‍্যাঞ্চার। চোখ তুলে বলল, জানতাম জোডির খরচের হাত লম্বা, কিন্তু এতখানি ভাবতেও পারিনি। কি কিনেছে সে, এক স্টেবল ভরা রেসের ঘোড়া?

কার্ড গেম, বলল প্যাট্রিক হল। টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর অ্যাকাউন্টে টাকা নেই তবু চেক লিখে খেলা চালিয়ে গেছে সে জেতার আশায়।

তুমি ছিলে ওই খেলায়?

হ্যাঁ। চেক বইয়ের পাতা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সে স্বীকার করেছে ওই চেকগুলোর এক কানাকড়িও মূল্য নেই। এমনকি ওই ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্টও ছিল না কোনও কালে। সে আমাকে বাইশ হাজার ডলারের প্রমিসারি নোট লিখে দেয়, আমিও তাকে সমান অঙ্কের জাল চেক ফেরত দেই। চেকগুলো ছিড়ে ফেলে সে। এক সপ্তাহ পর গায়েব হয়ে

যায়। ভাবলাম বোধহয় বাড়িতে পালিয়ে আসবে, তাই খোঁজ নিতে এসেছি।

আসেনি।

নোটটা ওয়ালেটে রেখে দিল প্যাট্রিক হল। তোমার কথাই সত্যি _ বলে মেনে নিচ্ছি। দুঃখিত, তোমাকে বিরক্ত করলাম, ঘুরে দাঁড়াল সে।

দাঁড়াও! এক পা আগে বাড়ল বিলি বেঞ্চলি, এ-ব্যাপারে কি করবে তুমি?

ওকে খুঁজে বের করব, শীতল হেসে র‍্যাঞ্চারের মুখোমুখি দাঁড়াল, জুয়াড়ী। নব্বই দিনের সময় সীমা পেরিয়ে গেলে ওকে কোর্টে দাঁড় করাব।

জুয়ায় হারজিতের ব্যাপারে কোর্ট কেস নেয় না।

শ্রাগ করল প্যাট্রিক হল। প্রমিসারি নোটের কোথাও লেখা নেই জুয়ার কথা। তাছাড়া ওর লেখা একটা নকল চেকও আছে আমার কাছে। ওয়ালেট থেকে একটা ব্যাংক প্রত্যাখ্যাত চেক বের করে। র‍্যাঞ্চারকে দেখাল সে। জোডির কোনও অ্যাকাউন্ট নেই প্রমাণ হাতে। রাখতে ব্যাংকে দিয়েছিলাম এটা। এই ব্যাপারে কোর্ট কিন্তু কেস নেয়। হাসি হাসি হয়ে গেল জুয়াড়ীর চেহারা। অবশ্য তুমি চাইলে ব্যাপারটা আমরা এখনই মিটিয়ে ফেলতে পারি। বেশি না, প্রতি ডলারে মাত্র পঞ্চাশ সেন্ট করে দিলেই হবে।

না, এক কথায় উত্তর দিল র‍্যাঞ্চার। তোমার বক্তব্যকে ব্ল্যাকমেল।; বলা যায়। ব্ল্যাকমেলারকে ফুটো পয়সা দিয়েও বিশ্বাস করি না আমি।

প্রতি ডলারে চল্লিশ সেন্ট, মিস্টার বেঞ্চলি।

না।

তিরিশ।

না, দূর হও! প্রতিটা মুহূর্তে আরও বেশি রেগে উঠছে বুড়ো র‍্যাঞ্চার।

শ্রাগ করল প্যাট্রিক হল। বিশ?

চড়াৎ শব্দে প্রচণ্ড জোরে চড়টা পড়ল জুয়াড়ীর গালে। চার আঙুলের দাগ বসে গেল সাথে সাথে। মনের ভেতর আরও গভীর একটা ক্ষতে। রক্ত জমল। হোলস্টারের দিকে হাত বাড়িয়েও থেমে গেল সে। নিরস্ত্র র‍্যাঞ্চারকে খুন করলে আইনের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না, জেরাল্ড স্ট্যানলি জানে বক্স বিতে এসেছে সে।

দূর হও! রাগে কাঁপতে কাঁপতে চেঁচাল বিলি বেঞ্চলি।

মাথা ঠাণ্ডা রেখে নির্লিপ্ত চেহারায় ঘুরে দাঁড়াল প্যাট্রিক হল। হিচর‍্যাকে এসে ঘোড়ায় চড়ল। র‍্যাঞ্চটা একমাইল পেছনে ফেলে আসার পর পকেটে রাখা টেলিগ্রামটার কথা মনে পড়ল তার।

০৫.

সন্ধে নেমে আসছে, চল্লিশ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে রলিন্সে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই প্যাট্রিক হলের। বিউয়েলদের র‍্যাঞ্চের দিকে, উত্তর-পুবে রওয়ানা হলো সে। শুনেছে ওখানে টাকার বিনিময়ে কট ভাড়া দেয়া হয়। আর কোনও উপায় না দেখলে সে ওখানের পোস্ট অফিসে টেলিগ্রামটাও রেখে যাবে। পরে র‍্যাঙ্কার সংগ্রহ করে নিতে পারবে।

সাঁঝের শেষ আলোয় বিউয়েলদের স্টোরের সামনে ঘোড়া থেকে নামল সে। মাঝ বয়েসী চুলপাকা এক লোক স্টোর থেকে বেরিয়ে এসে ঘোড়াটা বার্নে নিয়ে গেল। ফিরে এসে বলল, ভেতরে গিয়ে তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে নাও, মিস্টার, এখনই সাপার খাওয়ার জন্য ডাক পড়বে।

স্যাডল রোল হাতে স্টোরে ঢোকার পর মিষ্টি করে হেসে প্যাট্রিককে স্বাগতম জানাল এক তরুণী। তুমিই বোধহয় ডেপুটির সাথে এসেছ? বলল সে, ডেপুটি ভেবেছিল আজ রাতটা তুমি বক্স বিতেই কাটাবে।

সে এখানেই থাকবে, নিজের নাম জানিয়ে বলল প্যাট্রিক হল।

মই বেয়ে উঠতে হবে ওপরে, স্টোর কাউন্টারে দাঁড়ানো একজন যুবককে দেখাল তরুণী। বার্ট দেখিয়ে দেবে কোথায় থাকবে তুমি। আজ রাতে তুমিই একমাত্র বোর্ডার।

ডাইনিঙ রূমে ঢুকে বার্ট আর্থারের পিছু পিছু মই বেয়ে ওপরের হল ঘরে পৌঁছুল প্যাট্রিক। ঘরে চারটা কট। এককোণে একটা ওয়াশস্ট্যাণ্ড। দিনের শেষ আলো আসছে ছোট একটা জানালা দিয়ে। ওখান থেকে নিচে তাকালে বার্নের পেছন দিকটা দেখা যায়।

সাপারের জন্য তাড়াতড়ি আসতে বলে নিঃশব্দে মই বেয়ে নেমে গেল বার্ট আর্থার।

ওয়াশস্ট্যান্ডে গিয়ে গা-হাত-পা পরিষ্কার করল প্যাট্রিক। জানালা দিয়ে দেখল স্যাডল খুলে করালে ঘোড়া রাখছে চুল পাকা লোকটা। জানালা গলে সহজেই নিচে নেমে যাওয়া যাবে, চার ফুট নিচেই লাগোয়া কিচেনের ছাদ। একটা পরিকল্পনা আকৃতি নিতে শুরু করল প্যাট্রিকের মাথায়।

মই বেয়ে নিচে নেমে যখন বারে এল তখনও সে চিন্তা করছে একই। ব্যাপারে। দুটো ড্রিঙ্ক নিল সে মাথা পরিষ্কার করার জন্যে। তারপর ডাইনিঙ রূম থেকে বেলের আওয়াজ পেয়ে সাপারের জন্য ওখানে গেল।

টেবিলে চারজনের জন্য প্লেট রাখা হয়েছে। খেতে বসার পর অলিভা জিজ্ঞেস করল, ডেপুটি তোমাকে নিশ্চয়ই হিউ হুবার্টের কথা বলেছে। বলেছে না?

হ্যাঁ, অন্যমনস্কভাবে উত্তর দিল প্যাট্রিক। প্লেট থেকে চোখ তুলে তাকাল অলিভার দিকে। এখান থেকে ডেপুটি কোথায় গেছে, তোমাদের এখানে রাত কাটাবে না?

চিঠিটা গায়েব হওয়ার আগে যারা এখানে ছিল তাদের সবার নামের লিস্ট নিয়েই চলে গেছে। কোথায় যাবে বনে যায়নি।

হিউ হুবার্টই নিশ্চয়ই চিঠিটা নিয়ে গেছে, বলল-পাকা চুলো। হেনরিখ বিউয়েল। কিন্তু লোকটা কে হতে পারে?

দুবছর আগে জুন মাসে লিস্টের পনেরো জন কে কোথায় ছিল খবর নেবে ডেপুটি স্ট্যানলি, বলল অলিভা, প্রথমে যাবে টম ওয়েস্টের ওখানে, তারপর কাল সকালে সুইটওয়াটারের জেফারসন আর অন্যান্যদের র‍্যাঞ্চে।

তাহলে ডেপুটি বক্স বিতেও খোঁজ নেবে, মন্তব্য করল প্যাট্রিক নিরাসক্ত গলায়।

ওমাহা থেকে ক্রুরা ফেরার আগে না, মাথা নাড়ল হেনরিখ বিউয়েল।

প্লেট ধধায়ার সময় ইচ্ছে করলে আমাকে সাহায্য করতে পারো, বার্ট, খাওয়া শেষ হওয়ার পর বিরাট সুযোগ দিচ্ছে এমন ভঙ্গিতে যুবকের দিকে তাকাল অলিভা।

টেবিল ছেড়ে উঠে বারে চলে এল প্যাট্রিক আরেক পেগ গেলার জন্য। সবকিছু গভীর ভাবে ভাবতে হবে। মেয়েটার পেছনে ঘুর ঘুর করা বার্ট আর্থার রাতে আবার থেকে যাবে না তো? অনেকক্ষণ পর বাইরে বেরিয়ে করাল আর বার্নের সামনে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করল সে। ঘোড়াটা আর স্যাডল কোথায় রাখা হয়েছে দেখে। আরেকবার নিশ্চিত হলো। লক্ষ করল বাড়ি থেকে একশো গজ দূরে। করালের পেছন দরজা।

ফিরে এসে দেখল স্টোরের দরজায় দাঁড়িয়ে বিষণ্ণ চেহারায় যুবতীর কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে বার্ট আর্থার। সে চলে যাওয়ার খানিক পরে দরজায় আঁচড়ানোর শব্দ হতে এগিয়ে এসে দরজা খুলে দিল হেনরিখ বিউয়েল। একটা মাদি কুকুর প্রবেশ করল ঘরে। বয়স হয়ে গেছে, সেজন্যে এখানেই থাকে, লজ্জিত হেসে ব্যাখ্যা করল অলিভা।

সকালে দেখা হবে, আড়মোড়া ভেঙে বলল প্যাট্রিক হল। ব্রেকফাস্টের সময় তোমাদের বোধহয় ঘুম থেকে টেনে তুলতে হবে আমাকে। অনভ্যস্ত শরীরে রলিন্স থেকে এতদূর ঘোড়ায় চড়ে এসে শেষ। হয়ে গেছি।

মই বেয়ে ওপরে উঠে গেল সে, গা এলিয়ে শুয়ে পড়ল কটে। কিছুক্ষণ পর উঠে বসে লণ্ঠন জ্বালল। স্যাডল রোল খুলে নতুন শার্ট প্যান্ট, মোজা, শেভিঙ কিট, স্নিকার আর একটা ৪৫ সিক্সগান বের। করল। .৩৮ সিক্সগানটা শোল্ডার হোলস্টার থেকে খুলে মেঝেতে নামিয়ে রাখল সে। .৪৫টা বালিশের তলায় রেখে আবার শুয়ে পড়ল।

নিচে শুতে যাওয়ার আগে টুকিটাকি কাজ সারছে বিউয়েলরা, ঠুকঠাক আওয়াজগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনল সে।–তারপর একসময়। চারদিকে পিন পতন নীরবতা নামল। আজ রাতে একটা প্রাণীও ডাকছে না কেন যেন। লণ্ঠনটা নিভিয়ে দিল প্যাট্রিক।

.

রাত একটার সময় বিছানা ছাড়ল। অন্ধকারে জামাকাপড় পরে বুট জোড়া হাতে নিয়ে নিঃশব্দে গিয়ে দাঁড়াল জানালার কাছে। বালিশের নিচ থেকে বের করে বেল্টে খুঁজে নিয়েছে ৪৫ সিক্সগান। জানালা পথে কিচেনের। ছাদে লাফিয়ে নামল সে। সেখান থেকে মাটিতে। বার্নে নিয়ে গিয়ে ঘোড়ায় স্যাডল চড়াল। আওয়াজ যাতে না হয় সেজন্যে জন্তুটাকে। হাঁটিয়ে নিয়ে গেল আধমাইল। তারপর স্যাডলে উঠে ঘোড়া ছোটাল। বিলি বেঞ্চলি মারা গেলে সব টাকা জোডি পাবে। ওর কাছ থেকে ব্ল্যাকমেল করে পুরো টাকা খসিয়ে নেয়া কঠিন হবে না।

বক্সবি র‍্যাঞ্চের গেটের খুঁটিতে ঘোড়া বেঁধে হেঁটে এগুলো অন্ধকার বাড়িটা লক্ষ করে। পোর্টে উঠে সদর দরজায় নক করল। ঘরের ভেতর থেকে খালি পায়ে কেউ হেঁটে আসছে শব্দ পেল সে।

কে? ভেতর থেকে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল র‍্যাঞ্চার।

টেলিগ্রাম, মিস্টার বেঞ্চলি, বামহাতে নাক টিপে ধরে বলল প্যাট্রিক। তার ডানহাতের ৪৫ কোল্ট দরজার দিকে তাক করা। শীতল হাসি খেলে গেল ঠোঁটে। সত্যিই একটা টেলিগ্রাম নিয়ে এসেছে সে। র‍্যাঞ্চারও জানে ওমাহা থেকে টেলিগ্রাম আসবে গরু বিক্রির খবর নিয়ে।

একমিনিট, ঘরের ভেতরে লণ্ঠন জ্বলে উঠল। বোল্ট খুলে খোলা দরজায় এসে দাঁড়াল নাইট শার্ট পরা বিলি বেঞ্চলি।

কোঁচকানো বিছানা, জুলন্ত লণ্ঠন এবং নাইট শার্ট এই তিনটেই প্রমাণ করবে খুনী রাতে এসেছিল। ট্রিগার টানতে শুরু করল প্যাট্রিক হল, চেম্বার খালি হওয়ার আগে থামল না। ঝাঁকি খেয়ে পিছিয়ে গেল র‍্যাঞ্চার, ঘরের মধ্যে চিত হয়ে আছড়ে পড়ল। প্যাট্রিক পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলো মারা গেছে বিলি বেঞ্চলি। ঘরে ঢুকে একটা টেবিলের ওপর টেলিগ্রামটা নামিয়ে রাখল। তদন্তের সময় স্বাভাবিকভাবেই সবাই মনে করবে বিকেলে ওটা দিয়ে গেছে সে। দশঘণ্টা পরের এই ঘটনার জন্য কেউ ওকে দায়ী ভাববে না।

সন্তুষ্ট মনে গেট পর্যন্ত হেঁটে এল সে, ট্রাক মোছার ঝামেলায় গেল, ট্র্যাক পেলেও কেউ বলতে পারবে না বিকেলের পর রাতেও সে এসেছিল। স্যাডলে উঠে ঘোড়াটাকে দ্রুতগতিতে ছোটাল সে বিউয়েল স্টোরের উদ্দেশে। অর্ধেক পথ এসে একটা গর্তে সিক্সগানটা ফেলে দিল।

স্টোরের সামনে দিয়ে ঘোড়া হাঁটিয়ে করালে রাখল সে। স্যাডলটাও খুলে একই জায়গাতে ঝোলাল। একটা রেন ব্যারেলের ওপরে দাঁড়িয়ে অনেক কষ্টে কিচেনের ছাদে উঠল। যেখান থেকে। জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকে কাপড় জামা ছাড়ল। কটে শুয়ে ভাবতে লাগল। কোনও ভুল করেছে কিনা।

কাউন্টির সবচেয়ে নামকরা ডেপুটি খুনীকে খুঁজতে এই অঞ্চলে এসেছে, এই হত্যাটাকে সে কি ওই হিউ হুবার্টের কাজ বলেই ধরে, নেবে? হুবার্টের কীর্তি মনে করলেই বা কি, না করলেই বা কি ওর নিজের জোরাল অ্যালিবাই আছে। আপনমনে হাসল প্যাট্রিক হল।

.

সকালে হেনরিখ বিউয়েল এসে ডাকার পরও কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকল সে। দ্বিতীয়বার ধাক্কা দেয়ার পর ঘুম ভাঙার অভিনয় করে উঠে বসে আড়মোড়া ভাঙল। জানালা দিয়ে উজ্জ্বল সূর্যরশ্মি ঢুকছে ঘরে। উঠে পড়ো, মিস্টার হল, বিশ মিনিটের মধ্যে ব্রেকফাস্ট, তাকে চোখ মেলতে দেখে বলল বিউয়েল।

এমন ঘুম জীবনে ঘুমাইনি, হাই তুলে মুখে হাত চাপা দিল প্যাট্রিক। আসলে সারারাতে এক ফোঁটা ঘুমও হয়নি তার।

বিশ মিনিট পর শেভ ও মুখ-হাত ধোয়া শেষে খোঁড়াতে খোঁড়াতে–নাস্তার টেবিলে এসে বসল সে। অলিভার উদ্দেশে নড় করে বলল, এত পথ ঘোড়ায় চড়ে একেবারে মারা পড়েছি। আগামী কালের আগে আর রলিন্স ফিরতে পারব না। বক্স বির ঘটনাটা জানাজানি হওয়ার আগে; এখান থেকে চলে যেতে সাহস পাচ্ছে না সে। কেউ যদি কিছু সন্দেহ করে বসে?

হেনরিখ বিউয়েল খাওয়া থামিয়ে বোদ্ধার মত মুচকি হেসে মাথা। ঝাঁকাল। চল্লিশ মাইল অভ্যেস না থাকলে অনেক দূরের পথ।

রলিন্স থেকে স্টেজ আসে কবে? জানতে চাইল প্যাট্রিক হল।

সপ্তাহে দুই দিন আসে। বারের ঠিক নেই, চিঠি আর রসদপত্রের প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে ব্যাপারটা।

ওদের ব্রেকফাস্ট শেষ হয়নি, একটা ঘোড়া ছুটে এসে থামল স্টোরের সামনে। দরজায় টোকার শব্দ হলো। ডেপুটি স্ট্যানলি আছে এখানে? বাইরে থেকে ব্যস্ত কণ্ঠে জানতে চাইল আগন্তুক।

ক্যান্টলিন র‍্যাঞ্চের কাউহ্যাণ্ডের গলা মনে হচ্ছে, অনুচ্চ স্বরে বলল হেনরিখ বিউয়েল, তারপর গলা চড়িয়ে ডাকল, কি ব্যাপার, ভেতরে এসো!

ঘরে যে লোকটা ঢুকল তার চেহারা দেখে বোঝা যায় খারাপ খবর। নিয়ে এসেছে। স্ট্যানলি কোথায়?

ক্রীকের তীরের কোনও র‍্যাঞ্চে রাত কাটিয়েছে সে। কেন?

বসের কাছ থেকে একটা খবর নিয়ে ভোর বেলায় বক্স বিতে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে দেখি ডোরওয়েতে বিলি বেঞ্চলি মরে পড়ে আছে। মাঝরাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে কে যেন তার বুক ঝাঁঝরা করে দিয়েছে।

০৬

খুনী জোসেফ ওয়েন ছাড়া আর কেউ না, জেমস ওয়াটের ফোরম্যান বলল ডেপুটিকে। অন্যান্য কয়েকটা র‍্যাঞ্চেও এই একই কথা শুনেছে স্ট্যানলি। ওরা সবাই হিউ হুবাটের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া চিঠির ব্যাপারে বলাবলি করছে, বিলি বেঞ্চলির হত্যার খবর ওরা কেউ এখনও জানে না।

লিস্টটা আরেকবার দেখল স্ট্যানলি। পনেরোটা নাম আছে কাগজটায়। জোসেফ ওয়েনের নামও রয়েছে। ফোরম্যানের দিকে তাকাল। ওই লোকের কথা কেন মনে হচ্ছে তোমার?

কথার সাথে তার কাজের কোনও মিল নেই। নিজের পরিচয় দেয়। ক্যাটল বায়ার বলে, অথচ কেউ তাকে ক্যাটলের খোঁজ নিতেও দেখেনি। কখনও। কেউ জানে না লোকটা কোথকে এসেছে। কেউ যদি হয় তো ওই জোসেফ ওয়েনই ছদ্মবেশী হিউ হুবার্ট।

লোক্টা থাকে কোথায়?

ঠিক নেই, তবে জুয়ার টেবিলের ধারে কাছে। প্রায় সিক্সগান চালানোর সমানই দক্ষতা আছে তার কার্ড খেলায়।

পরের র‍্যাঞ্চটায় খানিকটা নিশ্চিত তথ্য পেল স্ট্যানলি, ওয়েন? কয়েকদিন আগে টম বুচারের কেবিনে গেছে সে। পথের হদিসও বাতলে দিল র‍্যাঞ্চার।

দ্রুতগতিতে সুইটওয়াটারের দক্ষিণ পাড় ধরে ডেভিলস গেটের দিকে ঘোড়া ছোটাল স্ট্যানলি। বিকেলে কেবিনটা চোখে পড়ল ওর। দেখে মনে হয় না কেউ থাকে। কোনও ঘোড়া বা জন মানুষের চিহ্ন নেই ধারে কাছে। কেবিন থেকে কিছুটা দূরে ঝোঁপের মধ্যে ঘোড়া বেঁধে হেঁটে এগুলো সে।

উইলো কাঠের কেবিন। দরজাটা নদীর দিকে। নক করতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল, হোলস্টার থেকে সিক্সগান বের করে ডানহাতে নিল। ওয়েনই যদি হুবার্ট হয়, ওকে দেখার সাথে সাথেই গুলি করবে লোকটা।

ভেতর থেকে নকের জবাব দিল না কেউ। দরজা ঠেলা দিয়ে খুলে ঘর খালি দেখল সে। তবে মানুষ বাস করে এখানে। বাঙ্কে পড়ে আছে রোল করা একটা ব্লাংকেট। স্টোভের লোহা ঠাণ্ডা হয়নি এখনও। পাশে। মেঝেতে পড়ে আছে চ্যালা কাঠ আর খাবারের একটা ঝুলি।

পুরো ঘর সার্চ করল স্ট্যানলি। ওর জানা হয়ে গেল জোসেফ ওয়েন এখানেই বাস করে। দেয়ালে জুলসবার্গ, কলোরাডোর লেবেল লাগানো একটা কোট ঝুলতে দেখল সে। একটা পকেটে খুঁজে পেল জোসেফ ওয়েনের নাম লেখা ওয়ালেট।

ওই কোটেরই ভেতরের একটা পকেটে যা খুঁজছিল পেয়ে গেল স্ট্যানলি। মাইলস সিটি, মনট্যানা থেকে হিউ হুবার্টের নামে লেখা হয়েছিল চিঠিটা। নিশ্চিত হয়ে গেল ডেপুটি, হুবার্ট ছাড়া এই চিঠি আর কারও দরকার হতে পারে না।

এনভেলপ খুলে চিঠিটা পড়ল সে। বাড লরেন্স লিখেছে টাকা ধার চেয়ে। ফাঁসির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এডমণ্ড হুপার সত্যি কথাই বলেছে প্রাণের ভয়ে। ওয়েনই তাহলে হুবার্ট, আর কোনও সন্দেহ থাকল না স্ট্যানলির মনে। এখানেই অপেক্ষা করতে হবে ওকে, খুনীটাকে জীবিত ধরার চেষ্টা করতে হবে।

কাজটা সহজ হবে না। সিক্সগানে হুবার্টের হাত ভয়ঙ্কর চালু। মরার আগমুহূর্ত পর্যন্ত লড়বে লোকটা। সে জানে লিঞ্চিও মবের হাতে মারা না পড়লেও কোর্টে তার ফাঁসি হবে। কার্বনে লরেন্সের কপালে কি ঘটেছে এতদিনে নিশ্চয়ই জেনে গেছে সে।

কেবিন থেকে বেরিয়ে একশো গজ দূরে আরেকটা ঝোঁপের আড়ালে ঘোড়া বেঁধে ট্র্যাক মুছতে মুছতে কেবিনে ফিরে এল স্ট্যানলি। দরজা বন্ধ করে দিল, তারপর সিক্সগানটা হাতে নিয়ে দরজার দিকে মুখ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ল। অপেক্ষা করতে আপত্তি নেই ওর।

.

বাইরে সন্ধের ছায়া নেমে এল, তবু ফিরল না জোসেফ ওয়েন। লোকটা শেষ পর্যন্ত ফিরবে কিনা সন্দেহ দেখা দিল স্ট্যানলির মনে। এই এলাকায় খবর বাতাসের আগে ছোটে। ডেপুটি শেরিফ তাকে খুঁজছে জেনে যায়নি তো জোসেফ ওয়েন ওরফে হুবার্ট? সেক্ষেত্রে বাকি জীবন অপেক্ষা করলেও আসবে না আর লোকটা। কাউন্টি ছেড়ে পালিয়ে যাবে মালপত্র ফেলে রেখে।

রাত নামতেই বেশ ঠাণ্ডা পড়ল। স্টোভে আগুন জ্বেলে হুবার্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ঝুঁকি নিল না স্ট্যানলি, কট থেকে ব্ল্যাংকেট এনে চাদরের মত করে গায়ে জড়াল। সারারাত অপেক্ষা করবে সে। সবাই বলেছে। জুয়া খেলার বদঅভ্যেস আছে ওয়েনের। হয়তো মাঝরাত করে ফিরবে লোকটা।

জুয়ার ব্যাপারটা মনে আসতেই ডেপুটির চিন্তার মোড় ঘুরে গেল। রলিন্স থেকে আসার পথে প্যাট্রিক হল নামের এক লোকের সাথে আলাপ হয়েছিল গতকাল। চেহারা-পোশাক দেখেই বোঝা যায় জুয়াড়ী। কোটের নিচে লোকটার বাম বগলের কাছটা উঁচু হয়ে ছিল। সম্ভবত ছোট ক্যালিবারের কোনও হ্যাণ্ডগান।

চমৎকার চেহারার একটা মেয়ে বগি থেকে নামার কিছুক্ষণ পর ট্রেন থেকে এই লোককে নামতে দেখেছে সে। অন্যমনস্ক ডেপুটির চিন্তাসোত অন্যদিকে ঘুরে গেল অজান্তে। মেয়েটা কে? ওরকম কালো মায়াবী চোখ আর চুড়ো করে বাঁধা মেঘের মত কালো চুল আগে কখনও দেখেনি সে। রলিন্সে ফিরে আবার তাকে দেখতে পাবে কিনা আনমনে ভাবল স্ট্যানলি। মেয়েটা অপূর্ব-..। নদীর তীরে একটা অস্বাভাবিক শব্দ ওর চটকা ভেঙে দিল। হুবার্ট

কেবিনে ঢোকার আগে চারপাশ পরখ করে দেখছে? লোকটা স্ট্যানলির ঘোড়াটা খুঁজে পেলে তার সামনে দুটো পথ খোলা থাকবে। ঘোড়া নিয়ে সরে পড়তে পারে সে, অথবা ঘোড়ার মালিকের মুখ বন্ধ করে দেয়ার জন্য আসতে পারে সিক্সগান হাতে।

নদীর পানি বয়ে যাওয়ার মৃদু শব্দ ছাড়া আর কোনও আওয়াজ নেই। দশ মিনিট পেরিয়ে গেল। তারপর প্রায় নিঃশব্দে ঘুরতে শুরু করল দরজার নব। ফাঁক দিয়ে তারার আলো ঢোকায় স্ট্যানলি বুঝল খুলে গেছে দরজা। একজন লোক ঢুকল ঘরে। তার পেটে সিক্সগান তাক করে স্টানলি বলল, তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, জোসেফ, তোমাকে…

কথা শেষ হওয়ার আগেই গর্জে উঠল লোকটার সিক্সগান। না। দেখেই শুধু শব্দ শুনে গুলি করেছে ওয়েন। কেবিনের পেছন দেয়ালে ঠক শব্দে গাঁথল বুলেট। দেরি করার ঝুঁকি না নিয়ে ট্রিগার টানল স্ট্যানলি। হাঁটু ভাঁজ হয়ে গেল ওয়েনের।

আগে লোকটার সিক্সগান সংগ্রহ করল ডেপুটি অন্ধকার হাতড়ে। তারপর লণ্ঠন জ্বালল। আলো জ্বলে উঠতে লোকটার ব্যথায় বিকৃত চেহারা দেখতে পেল সে। বাম হাত রক্তাক্ত, কাঁধের মাংসপেশী খুঁড়ে বেরিয়ে গেছে বুলেট। তুমি তো হিউ হুবার্ট না বলে উঠল ওয়েন। লোকটার আচরণ অস্বাভাবিক লাগল ডেপুটির কাছে।

আমি না, তুমি হিউ হুবার্ট, শান্ত স্বরে বলল সে।

ভুল বললে, তিক্ত চেহারায় মাথা নাড়ল ওয়েন।

পরে কথা হবে। লোকটাকে ধরে কটে শুইয়ে দিল স্ট্যানলি। রক্তপড়া বন্ধ করতে হবে। ওয়েনের শার্টের হাতা ছিড়ে ওটা দিয়ে কাঁধে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিল। মন্তব্য করল, হাড়ে পিছলে অন্য দিক দিয়ে বেরিয়ে গেছে।

আমার হ্যাটটা দেখ, ওটাও এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে, হাসার চেষ্টা করল ওয়েন।

হ্যাট পরীক্ষা করল স্ট্যানলি। উঁচু ক্রাউন ফুটো করে বেরিয়ে গেছে। একটা বুলেট। কে? কৌতূহলী হয়ে উঠল ডেপুটি।

হিউ হুবার্ট।

একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল স্ট্যানলি। বোঝাতে চাইছ তুমি হিউ হুবার্ট না?

তিক্ত, বিরক্ত চেহারায় ডেপুটির শ্যেনদৃষ্টি ফিরিয়ে দিল ওয়েন। গতসপ্তাহে দুবার আমাকে খুন করার চেষ্টা করেছে হিউ হুবার্ট। সে জানে আমাদের দুজনের একজনকে মরতেই হবে। আজকে উইলোর বনে তোমার ঘোড়াটা দেখে মনে করেছিলাম সে-ই এসেছে।

সন্দেহের দোলায় দুলে উঠল স্ট্যানলির মন। ওরা দুজনই দুজনকে হিউ হুবার্ট মনে করে ভুল করে বসেনি তো! কিন্তু তাহলে হিউ হুবার্টের চিঠিটা? পকেট থেকে বের করে চিঠিটা দেখাল সে। ফেরিস পোস্ট অফিস থেকে চুরি না করলে এটা তোমার কাছে কোত্থেকে এল?

চিঠি সরিয়েছি, স্বীকার করল ওয়েন। সরিয়েছি ওর খোঁজ পাব। বলে। দুবছর ধরে ওকে খুঁজছি আমি। সামনাসামনি লোকটাকে দেখিনি কখনও, শুধু জানি সে ফেরিসে আছে।

হুঁ, গম্ভীর চেহারায় মাথা দোলাল ডেপুটি। প্রমাণ করতে পারবে জোসেফ ওয়েন তোমার আসল নাম?

পারব।

দুবছর আগে জুন মাসে কোথায় ছিলে?

জুলসবার্গ, কলোরাডোর জেসি র‍্যাঞ্চে।

লোকটার বলার ভঙ্গিতে দৃঢ়তা দেখে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে স্ট্যানলি বুঝল মিথ্যে বলছে না ওয়েন। কটের ধার থেকে উঠে স্টোভের সামনে এসে বসল সে। স্টোভ জ্বেলে কফি তৈরি করল।

আগুনের আঁচে ঘরটা গরম হয়ে উঠার পর কফি কাপ হাতে মুখোমুখি বসল ওরা দুজন। এবার বলো হিউ হুবার্টকে কেন খুঁজছ তুমি, জানতে চাইল স্ট্যানলি।

কয়েক বছর আগে, গম্ভীর চেহারায় কিছুক্ষণ মনে মনে কথা গুছিয়ে নিয়ে বলতে শুরু করল ওয়েন, জুলসবার্গ শহরের শেষ প্রান্তে একটা কটেজে নামকরা একজন ডাক্তার আর তার বউ থাকত। এক রাতে। নকের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেয় ডাক্তার। দেখে সামনে দাঁড়িয়ে আছে দুজন লোক। একজন আহত, অন্যজন ডাক্তারের পেটে সিক্সগান চেপে, ধরে সঙ্গীর চিকিৎসা করতে বলে। চিকিৎসা করে ডাক্তার। যাওয়ার আগে ডাক্তার আর তার বউকে খুন করে যায় ওরা মুখ বন্ধ রাখার জন্যে।

নড করল জেরাল্ড স্ট্যানলি। মনে হচ্ছে ডেনভারের কোনও পেপারে ঘটনাটা পড়েছি আমি। কিন্তু ওই খুনের সাথে ভোমার কি সম্পর্ক?

ডাক্তার আমার চাচা। বাবা। ছোট বেলায় মারা যাওয়ায় ওদের কাছেই বড় হয়েছি আমি, লেখাপড়া শিখিয়েছে ওরা আমাকে।

নিচু করে শিস দিল ডেপুটি। ব্যাপারটা আইনের হাতে ছেড়ে দাও।

আইন দুবছর সময় পেয়েছে, এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে সে, বন্য হিংস্রতা ফুটে উঠল ওয়েনের গলার স্বরে। হিউ হুবার্টকে খুন করার অধিকার আছে আমার। দুবছর ধরে আমি বেঁচে আছি প্রতিহিংসার আগুন নেভাব বলে।

দুটো সিগারেট বানিয়ে আগুন জ্বেলে একটা ওয়েনের দিকে বাড়িয়ে ধরল স্ট্যানলি। ওই লোক হিউ হুবার্ট ছিল তুমি বুঝলে কি করে?

প্রতিবেশীরা এসে দেখে চাচী মারা গেছে, কিন্তু চাচা তখনও বেঁচে ছিল। লোকগুলোর ব্যাপারে মরার আগে কথা বলতে পেরেছিল চাচা। একজনের বাঁ ঊরুতে এক সপ্তাহের পুরানো বুলেটের ক্ষত ছিল। সে হিউ নামে সঙ্গীকে ডেকেছিল।

তোমার চাচা আর কিছু বলে যেতে পারেনি, ওখান থেকে কোথায়। যাবে ওরা, বা আর কিছু?

না, আমি পেপার খুঁজে বের করি এক সপ্তাহ আগে কোথায় কোথায় গোলাগুলি হয়েছে। কার্বন কাউন্টি, ওয়াইয়োমিঙে পাসির ওপর হামলা আমার দৃষ্টি কাড়ে। লরেন্স আর হুপারকে চিনে ফেলে ওরা, বাকি দুজনকে চিনতে পারেনি। এর একসপ্তাহ পরে চাচার কটেজে আসে দুজন লোক। তাদের একজন আহত। এর বেশি সূত্র আমার হাতে ছিল না, কাজেই ওদের খুঁজতে শুরু করলাম আমি।

সিগারেটে শেষ টান দিয়ে মেঝেতে টিপে নেভাল জোসেফ ওয়েন। ফেরিসের চিঠিটা ছাড়াও আরেকটা চিঠি আছে আমার কাছে। শাইয়্যানে পোস্ট মাস্টারকে ঘুস দিয়ে বের করেছি। বুকপকেট থেকে চার ভাঁজ করা একটা কাগজ বের করে ডেপুটির দিকে বাড়িয়ে ধরল সে।

কাগজের ভাঁজ খুলল স্ট্যানলি। মেয়েলি হাতের লেখা। চিঠিটায় লেখা আছে:

গ্যানন,

রলিন্স।

হুবার্ট ফেরিসে। মধ্য সেপ্টেম্বরে কাজটা হবে, বলেছে মাসের প্রথমেই আসতে হবে তোমাকে। হেয়েস হোটেলে উঠবে। অনেক মজা হবে তখন।

লরা।

চিন্তিত চেহারায় থুতনি ডলল স্ট্যানলি। এ ধরনের মেয়েদের আপত্তিকর অবস্থায় পাকড়াও করে প্রায়ই কোর্টে চালান দিই আমরা। কিন্তু লরা নামটা আগে শুনেছি বলে মনে পড়ছে না।

আমিও মেয়েটাকে খুঁজে পাইনি, বলল জোসেফ ওয়েন। যাই হোক হুবার্টকে আমার দরকার, দুটো বুলেট পায় সে আমার কাছে। তুমি বলেছ দুইবার তোমাকে খুন করার চেষ্টা করেছে হুবার্ট। কিন্তু তুমি ওকে খুঁজছ সেটা সে কি করে জানবে?

বুদ্ধি খাটাও, ডেপুটি। সবাই বলাবলি করছে ফেরিস পোস্ট অফিস থেকে হুবার্টই চিঠিটা সরিয়েছে। কিন্তু হুবার্ট জানে কাজটা অন্য কারও। সেসময় স্টোরে যারা ছিল তাদের মধ্যে আমার নামও আছে। জুলসবার্গের সেই ঘটনার পর যদি সে পেপার পড়ে থাকে আমার নাম পরিচিত ঠেকবে তার কাছে, ডাক্তারের ভাতিজার নাম ফলাও করে ছাপা হয়েছিল। দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে না পারার মত বোকা না হিউ হবার্ট।

হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল স্ট্যানলি ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনে। তারপর মাথা নেড়ে বলল, হিউ হুবার্ট আওয়াজ করে জানান দিয়ে আসত না।

কেবিনের সামনে ঘোড়া থেকে নামল আগন্তুক, চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, ডেপুটি, ভেতরে আছ?

বাড স্যাণ্ডক্রীকের গলা চিনতে পারল স্ট্যানলি। এসো, বাড।

দরজা খুলে কেবিনের ভেতরে ঢুকল উত্তেজিত র‍্যাঞ্চহ্যাণ্ড। কে যেন গতকাল রাতে ঘুম থেকে ডেকে তুলে খুন করেছে বিলি বেঞ্চলিকে!

০৭.

সকালে রলিন্স জেলের একটা সেল থেকে বেরিয়ে এল শহরের সবচে নামকরা লইয়ার, জ্যাক হিগিনস। উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে, বন্দী হুপারের। স্বীকারোক্তি নিতে পারেনি সে।

ফিফথ স্ট্রীট পেরিয়ে মারফি বিল্ডিঙের দোতলায় নিজের অফিসে চলে এল সে। ছোট দুকামরার অফিস। জেলের উল্টোদিকে। রিসেপশনে ঢুকে থমকে দাঁড়াল। গত তিনদিনে আমূল বদলে গেছে ঘর দুটোর চেহারা।

গুড মর্ণিঙ, আঙ্কল জ্যাক, হাসিমুখে বলল রোসা হিগিনস। বাবা মারা যাওয়ায় তিন দিন আগে একমাত্র চাচার কাছে চলে এসেছে সে।

কেউ এসেছিল, রোসি?

মিস্টার ফ্রান্সিস। জানতে চেয়েছে তুমি তার ব্যাংকের বোর্ড অত ডিরেকটরে থাকতে রাজি আছ কিনা।

তাকে হ্যাঁ বলে দাও।

কার্বন কাউন্টি জার্নাল থেকে একটা টেলিগ্রাম এসেছে। ওরা,–জিজ্ঞেস করেছে তুমি হুপারের হয়ে কেস লড়বে কিনা।

ওদের না বলে দাও,ভেতরের অফিসে ঢুকে পড়ল জ্যাক হিগিনস। টেবিলের ওপর ফুলদানীতে একগুচ্ছ ফুল দেখে চওড়া হাসি ফুটল তার ঠোঁটে। চেয়ারে বসে পড়ে ভাবল অফিসটা আর চেনাই যায় না। মাত্র তিনদিন হলো এসেছে রোসা, এরইমধ্যে একশো একটা কাজ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। ভাতিজির বিয়ে হয়ে যাবে ভেবে মন খারাপ হয়ে যাওয়ায় টাক চুলকাল বুড়ো লইয়ার। ভাল পাত্র খুঁজতে হবে।

দ্রুতগামী ঘোড়ার শব্দ শুনে চেয়ার ছেড়ে উঠে জানালার পাশে গিয়ে বাইরে তাকাল সে। ডেপুটি স্ট্যানলিকে শহরে ঢুকতে দেখে চিন্তায় পড়ে চাদি চুলকাল দ্বিতীয়বার। মাঝরাতে রওনা না হয়ে থাকলে এত সকাল সকাল শহরে পৌঁছতে পারত না ডেপুটি। লইয়ার জানে হুবার্টকে গ্রেফতার করতে ডেপুটিকে ফেরিসে পাঠিয়েছে শেরিফ। হিউ হুবার্ট নামে সত্যিই কি কেউ আছে? জ কুঁচকে মাথায় হাত বোলাল জ্যাক হিগিনস।

হুপার তার জবানবন্দী প্রত্যাহার করার পর হবার্ট লোকটার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে অনেকের মনে। আজ সকালে হুপার জানিয়েছে চাপের মুখে প্রাণ বাঁচাতে মিথ্যে বলেছে সে। তারপরও হুপারের হয়ে কোর্টে দাড়াতে রাজি হয়নি জ্যাক হিগিনস।!

জানালার নিচে হিচর‍্যাকে ডেপুটিকে ঘোড়া বেঁধে নামতে দেখে আবার এসে চেয়ারে বসল সে।

.

সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত পায়ে কেউ উঠে আসছে, শুনতে পেয়ে টেবিলে স্থূপ। হয়ে থাকা কাগজপত্রের ওপর থেকে চোখ তুলল রোসা হিগিনস। সশব্দে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখল বিশালদেহী ডেপুটি স্ট্যানলিকে। চিনতে অসুবিধা হলো না, শহরের সবাই গত কয়েকদিন ধরে এই লোকের কথা বলাবলি করছে। রলিন্সে এলে জেরাল্ড স্ট্যানলিকে না চিনে উপায় নেই, মনে মনে বলল রোসা।

লইয়ারের অফিসে বহু আকাঙ্ক্ষিত মেয়েটাকে দেখতে পেয়ে মুহূর্তের জন্য কেন এসেছে ভুলে গেল স্ট্যানলি। বোকার মত তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর হাত দিয়ে গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ির স্পর্শ নিয়ে লাজুক হাসল।

নীরবতা ভাঙল রোসা, আঙ্কল জ্যাকের কাছে এসেছ?

হ্যাঁ, জরুরী কথা আছে।

বলে ফেলো, গলার আওয়াজ পেয়ে নিজের অফিস থেকে বেরিয়ে এসেছে লইয়ার।

তোমার ক্লায়েন্ট বিলি বেঞ্চলিকে খুন করা হয়েছে, ঘুরে দাঁড়িয়ে গভীর চেহারায় বলল স্ট্যানলি।

বাধা না দিয়ে ডেপুটির কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনল জ্যাক হিগিনস। তারপর ভাতিজির দিকে তাকাল। রোসি, দুটো টেলিগ্রাম লিখে এখনই পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

ধীরে ধীরে টেলিগ্রামের বক্তব্য বলে গেল লইয়ার, রোসা লিখল। প্রথম টেলিগ্রামটা অ্যাডাম বেঞ্চলির জন্য, দ্বিতীয়টা হেফটন লাইভ স্টক কোম্পানীতে ওমাহা, নেব্রাস্কায়।

.

অজানা আততায়ীর হাতে তোমার বাবা নিহত হওয়ায় আমরা আন্তরিক দুঃখিত স্টপ কবর দেয়ার ব্যবস্থা করব স্টপ জোডির ঠিকানা জানলে তাকেও জানাও।

জ্যাক হিগিনস।

.

দ্বিতীয় টেলিগ্রামে ক্যাটল কোম্পানীকে র‍্যাঞ্চারের মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে আরও বলা হলো:

অ্যাডাম পশ্চিমে ক্যাটল সহ রওয়ানা হয়ে গিয়ে থাকলে দয়া করে ট্রেনের কণ্ডাক্টরের মাধ্যমে খবরটা ফরোয়ার্ড করে দেয়ার ব্যবস্থা কোরো।

.

অ্যাডাম খবরটা পেলে মালগাড়ি ছেড়ে মেইল ট্রেনে চলে আসতে পারবে ফিউনারালের আগেই, ডেপুটিকে ব্যাখ্যা দিল লইয়ার।

টেলিগ্রাম দুটো পাঠাতে রোসা অফিস ছেড়ে চলে যাওয়ার পর স্ট্যানলি জিজ্ঞেস করল সে কোনও সাহায্য করতে পারে কিনা।

তুমি জানো জোডি বেঞ্চলি কোথায়?

মাথা নাড়ল ডেপুটি। ডেনভার থেকেও একজন এসেছে ওকে খুঁজতে। বক্স বিতেও গিয়েছিল। কিন্তু এমনকি বিলি বেঞ্চলিও জানত না। তার ছোট ছেলে কোথায়।

ডেনভারের লোকটার নাম কি?

প্যাট্রিক হল। লোকটা বোধহয় জোডির কাছে টাকা পায়। র‍্যাঞ্চার মারা যাওয়ার দশ ঘণ্টা আগে বক্স বিতে গিয়েছিল সে।

হুম, টাক চুলকাল লইয়ার। ওই লোকও র‍্যাঞ্চারকে খুন করে থাকতে পারে।

উঁহু, মাথা নাড়ল স্ট্যানলি। আমি বিউয়েলদের জিজ্ঞেস করে জেনেছি ওদের ওখানেই রাত কাটিয়েছে প্যাট্রিক হল। লোকটা .৩৮। ব্যবহার করে, কিন্তু র‍্যাঞ্চার খুন হয়েছে .৪৫-এর গুলিতে। তাছাড়া…

তাছাড়া কি?

হিউ হুবার্টকে ধরতে পারিনি। ধরন দেখে মনে হয় কাজটা তার। দুবছর আগে জুলসবার্গেও এক ডাক্তার আর তার বউকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছিল লোকটা। এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে এই কাউন্টিতে। সে যদি মনে করে থাকে র‍্যাঞ্চার তার পরিচয় জেনে ফেলেছে।

প্যাট্রিক হল লোকটা এখনও ফেরিসেই আছে? থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল জ্যাক হিগিনস।

না, রলিন্সে এসে হোটেল ম্যাক্সওয়েলে উঠেছে। পকেট থেকে, একটা কাগজ বের করে লইয়ারের দিকে বাড়িয়ে ধরল সে। প্যাট্রিক হল ট্রেন থেকে নামার পর টেলিগ্রাফার তাকে এটা দিয়েছিল বিলি বেঞ্চলিকে পৌঁছে দেয়ার জন্য। পৌঁছে দিয়েছে সে। তদন্তের জন্য আমি যখন যাই টেলিগ্রামটা ভোলা অবস্থায় হলঘরের টেবিলে পড়ে ছিল।

কাগজের লেখাগুলো পড়ার পর কালো হয়ে গেল জ্যাক হিগিনসের চেহারা। টাক চুলকে বলল, স্ট্যানলি, আরেকবার বলো ঠিক কখন কোন্‌দিন মারা গেছে বিলি বেঞ্চলি।

বারো তারিখ, আন্দাজ রাত তিনটার দিকে।

খারাপ ব্যাপার হয়ে গেল, স্ট্যানলি, খুব জঘন্য আইনের প্যাচে পড়ে। গেলাম, মাথা চুলকে বলল লইয়ার। জোডি চলে যাওয়ার পর অসুখে পড়ে আমাকে দিয়ে উইল লিখিয়েছিল র‍্যাঞ্চার। ক্যাটল আর র‍্যাঞ্চ বড়। ছেলে অ্যাডাম আর সমস্ত টাকা ছোট ছেলে জোডিকে দিয়ে গেছে সে। মরার সময় র‍্যাঞ্চারের ক্যাটল বেচা টাকা ছিল প্রচুর, কিন্তু ক্যাটল ছিল না একটাও।

লইয়ারের কাছ থেকে টেলিগ্রামটা নিয়ে আরেকবার পড়ল স্ট্যানলি। মনে তো হয় টাকাগুলো দিয়ে ক্যাটল কেনা হয়ে গেছে। ট্রেনে করে ওগুলোকে পাঠিয়েও দেয়া হয়েছে।

তাতে কিছু যায় আসে না, আইন দেখবে মরার সময় র‍্যাঞ্চারের সম্পত্তি কোন অবস্থায় ছিল। আমাকে আইনগত ঝামেলা মেটাতে উইলে দায়িত্ব দেয়া আছে। ঘটনা যা দাঁড়াচ্ছে তাতে তো বাবার সম্পত্তি থেকে অ্যাডাম বেঞ্চলি বঞ্চিত হবে, র‍্যাঞ্চের কয়েক একর জমি ছাড়া সবকিছুই পাবে জুয়াড়ী জোডি বেঞ্চলি।

ওদের দুজনকে সমান ভাগ দেয়ার কোনও রাস্তা নিশ্চয়ই আছে, বিড়বিড় করল স্ট্যানলি।

থাকলেও আমার জানা নেই। জোডি চাইলে সবকিছুই অ্যাডামের কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারে। বাবা মরায় তার তো লাভই হয়েছে!

তুমি বলতে চাইছ জোডির হাত ছিল?

আমি কিছুই বলতে চাইছি না, আর কারও তো কোনও স্বার্থ দেখছি না।

পাওনাদারের স্বার্থ আছে, চিন্তিত কণ্ঠে বলল স্ট্যানলি। প্যাট্রিক হল। শক্ত অ্যালিবাই আছে লোকটার, কিন্তু হিউ হুবার্টকে টাকা দিয়ে কাজটা করিয়ে নিয়ে থাকতে পারে।

প্যাট্রিক হলের ব্যাপারে আলাপ করছিলে তোমরা?খোলা দরজায় দাঁড়িয়ে কৌতূহল প্রকাশ করল রোসা। এইমাত্র টেলিগ্রাম দুটো পাঠিয়ে দিয়ে ফিরে এসেছে সে।

ভাতিজির প্রশ্নে ভ্রূ কুঁচকে গেল লইয়ারের। তুমি তাকে চেনো? হ্যাঁ, আমরা একই ট্রেনে এসেছি। এইমাত্র রাস্তায় তার সাথে আবার দেখা হলো। রলিন্সে কদিন থাকবে জিজ্ঞেস করাতে বলল জোডি বেঞ্চলি আসার আগ পর্যন্ত আছে।

তাহলে বোধহয় বহুদিন থাকতে হবে ওকে, রোসার দিকে তাকিয়ে হাসল লইয়ার।

মিস্টার হলের ধারণী ডেনভার বা শাইয়্যানের পেপারে খবরটা। পড়ে ছুটে আসবে জোডি বেঞ্চলি।

লোকটার ধারণা ভুল নয়, স্বীকার করল স্ট্যানলি।

লইয়ারও মাথা ঝাঁকাল। ওয়াইয়োমিঙের সবচেয়ে বড় র‍্যাঞ্চারের খুন হওয়া পেপারগুলোর ভাগ্য! হেডলাইন করবে ওরা বড় টাইপে। খবরটা চোখে পড়তেই কত টাকা বাগানোনা যাবে জানতে ছুটে আসবে জোডি। প্যাট্রিক হল ঠিকই বলেছে, রলিন্সে থাকলেই বড়শিতে মাছ গাঁথতে তার সুবিধা হবে।

ফেরিসে আরও অনেক কিছু ঘটে গেছে, নীরবতা ভাঙল স্ট্যানলি। গোলাগুলির ব্যাপারটা খুলে বলে জোসেফ ওয়েনের সংগ্রহ করা প্রথম চিঠিটা লইয়ারকে দেখাল।

চিঠি পড়া শেষে মুখ তুলে তাকাল জ্যাক হিগিনস। লরা নামের কোনও মেয়েকে চেনো?

না, বিনা কারণে গাল দুটো রক্তিম হয়ে উঠল স্ট্যানলির। সম্ভবত রোসার সামনে প্রশ্নটা করা হয়েছে বলেই। প্রত্যেকটা র‍্যাঞ্চে গিয়ে তদন্ত করেছি আমি, দুটো তারিখ মিলিয়ে দেখেছি। র‍্যাঞ্চার খুন হওয়ার সময় কে কোথায় ছিল খবর নিয়েছি। দুবছর আগে কে কোথায় ছিল, তাও জানার চেষ্টা করেছি। পকেট হাতড়ে লইয়ারকে একটা কাগজ দিল স্ট্যানলি। এখানে সাতজনের নাম আছে যাদের খুনী হিসেবে সন্দেহ করা যায়। এদের কোনও অ্যালিবাই নেই।

সবার সাথে তুমি কথা বলেছ?

সময় ছিল না। র‍্যাঞ্চারা আমাকে কথা দিয়েছে এই সাতজন আজ বিকেলের মধ্যে রলিন্সে এসে শেরিফের অফিসে রিপোর্ট করবে।

সাতজনের একজন যদি সত্যিই হিউ হুবার্ট হয়, তোমার কি ধারণা আসবে সে রলিন্সে? জিজ্ঞেস করল রোসা।

না এসে উপায় নেই, কেউ সরে পড়ার চেষ্টা করলেই তাকে হুবার্ট বলে মনে করবে সবাই। ওই সাতজনকে আমরা হুপারের সেলের সামনে দাঁড় করিয়ে দেখব হুপার মুখ খোলে কিনা।

খুলবে না, মাথা নাড়ল লইয়ার। হুপার জবানবন্দী প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এখন হুবার্টের ব্যাপারে কোনও কথা বলা মানে তার আগের স্বীকারোক্তি ঠিক ছিল সেটা মেনে নেয়া।

দেখা যাক কি হয়, বলল স্ট্যানলি। বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এল অফিস থেকে, সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করল দ্রুত পায়ে। শেরিফ রস লেম্যানের কাছে পুরো ঘটনা আবার খুলে বলতে হবে ওকে। বিকেল তিনটের দিকে ওমাহা থেকে একটা টেলিগ্রাম এল।

জ্যাক হিগিনস
রলিন্স, ওয়াইয়োমিঙ

আমরা আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি স্টপ তোমার টেলিগ্রাম পাবার আগেই নয়শো হেফার এবং বিশটা সেরা ষাড় নিয়ে অ্যাডাম বেঞ্চলি রওয়ানা হয়ে গিয়েছে স্টপ তোমার মেসেজ ফরোয়ার্ড করে দেয়া হলো।

হেফটন লাইভ স্টক কমিশন কোং।

দূরের একটা শহর থেকে দ্বিতীয় টেলিগ্রামটা এল শেষ বিকেলে।

জ্যাক হিগিনস
রলিন্স, ওয়াইয়োম

ট্রেন বদল করছি স্টপ কাল বিকেলে পৌঁছে যাব

অ্যাডাম বেঞ্চলি।

*

টেলিগ্রামগুলো পড়ে টেবিলে রাখার পর জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল রোসা। পুরো শহরে উত্তেজনার ছোঁয়া লেগেছে, স্যাণ্ডক্রীকে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আলোচিত হচ্ছে সবখানে। লোকজন চার পাঁচজন করে জটলা করছে রাস্তায়। সবার মনে একই প্রশ্ন, হিউ হুবার্ট কে?

তারপুলিনের ছাদ দেয়া একটা ওয়্যাগন ফার্নিচার স্টোরের সামনে থামতে দেখল রোসা। কম্বল মোড়া একটা শরীর বয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। স্টোরের ভেতর। পশ্চিমে অনেক জায়গাতেই ফার্নিচার ডিলাররা করোনারের কাজও করে।

বিকেল পাঁচটায় শহরের সব গুঞ্জন, হৈহট্টগোল থেমে গেল। দূর থেকে ভেসে আসছে কয়েকটা ঘোড়ার খুরের শব্দ। আসছে ওরা! সাতজনই! রাস্তা থেকে কর্কশ কণ্ঠে চেঁচাল কে যেন।

ঘাম আর ধুলোয় মোড়া সাতজন রাইডার এসে ঘোড়া থামাল–শেরিফের অফিসের সামনে। পঁচজনের চেহারা গম্ভীর। বাকি দুজনের একজন বোকার মত হাসছে, অন্যজনের চেহারা অনুভূতিশূন্য। সবারই স্যাডলে কারবাইন। প্রত্যেকেই উরুর সাথে নিচু করে বাধা হোলস্টারে সিক্সগান ঝুলিয়েছে।

আমরা এসেছি, শেরিফ, লুকিয়ে বসে আছ কোথায়, গম্ভীর চেহারার একজন চেঁচাল তিক্ত কণ্ঠে।

০৮.

শেরিফ লিভারি স্টেবলেরও পার্টনার। সাতজন রাইডারকেই চেহারায়। চেনে সে। এদের মধ্যে পাঁচজন ভবঘুরে। অফিস থেকে বেরনোর আগে ডেপুটির দেয়া লিস্টে চোখ বোলাল রস লেম্যান।

ম্যাভরিক প্লামার, বার হানড্রেডের স্ট্রেম্যান
জস হারমার, কারট হুইলের
স্যাণ্ডি পেকোস, র‍্যাফটার অ্যাণ্ড র‍্যাফটারের
কিরন হার্পার, জে বারের
বিল লেপম্যান, ফ্রাই প্যানের র‍্যাঙলার

বাকি দুজন হচ্ছে অক্স বোর স্ট্রেম্যান জুডাস অ্যাডলার এবং লু মেয়ার। শেরিফকে অফিস থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে এই দুজন ছাড়া বাকিরা চেঁচামেচি জুড়ে দিল। সবচে উত্তেজিত বার হানড্রেডের প্লামার। শেরিফের উদ্দেশে চেঁচাল সে, তোমার বুকে ওই ব্যজিটা না থাকলে এতক্ষণে পিটিয়ে রাস্তায় শুইয়ে ফেলতাম, রস! অন্যদের চেহারা দেখে বোঝা যায় তাদের মনেও একই ইচ্ছে জেগেছে।

হাত তুলে লোকগুলোকে চুপ করতে ইশারা করল শেরিফ। তারপর বলল, তোমাদের বিরুদ্ধে কোনও চার্জ আনা হয়নি। আমি হিউ হুবার্টকে খুঁজছি। এডমণ্ড হুপার তাকে চেনে, দেখি তোমাদের দেখে হুপার কি বলে। ভেতরে চলো।

শেরিফের পেছন পেছন পাথরের জেলভবনে ঢুকল সবাই। একপাশে দাঁড়িয়ে আছে ডেপুটি স্ট্যানলি। তীক্ষ্ণ নজরে দেখছে লোকগুলোর চেহারায় কোনও পরিবর্তন হয় কিনা।

সেলের শিকে নাক ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এডমণ্ড হুপার। লোকগুলোর ওপর চোখ বোলাল সে একবার। চেহারায় কোনও পরিবর্তন নেই। স্ট্যানলি দেখল রাইডারদের চেহারাও নির্বিকার।

এদের মধ্যে হিউ হুবার্ট আছে? কণ্ঠস্বরে হতাশা লুকাতে পারল না শেরিফ।

হুবার্ট বলে কেউ নেই। জান বাঁচাবার জন্য মিথ্যে বলেছিলাম, ঘুরে দাঁড়িয়ে কটে গিয়ে বসল হুপার মুখ ফিরিয়ে।

রাইডারদের চেহারায় স্বস্তির আভাস খুঁজল স্ট্যানলি। নেই। হুপার মিথ্যে বলছে জেনেও করার কিছু দেখতে পেল না শেরিফ। রাইডারদের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাদের অযথা বিরক্ত করেছি বলে দুঃখিত।

লোকগুলোর পিছু নিয়ে জেলহাউস থেকে বের হলো স্ট্যানলি। রাস্তায় অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। বেশিরভাগই লোক। পেছনে দাঁড়িয়ে মজা দেখছে মহিলারা। ওরা হতাশ হলো শেরিফের অফিস থেকে সাতজনকেই বেরতে দেখে। সবার ওপর চোখ বোলাল ডেপুটি। মহিলারা অপরিচিতা নয় কেউ, এদের মধ্যে লরা নামের রহস্যময়ী থাকতে পারে না।

তবে শহরেই কোথাও আছে লরা। হিউ হুবার্টের পরিচয় জানে মেয়েটা। সাতজন রাইডারের মধ্যে যদি হিউ হুবার্ট থাকে লরার সঙ্গে হয়তো সন্ধের পর দেখা করবে সে। চল্লিশ মাইল পথ পেরিয়ে এসেছে লোকগুলো, আজ রাতে অন্তত আবার ফিরতি পথ ধরবে না।

ওদের ওপর নজর রাখতে হবে, অনুচ্চস্বরে পাশে দাঁড়ানো শেরিফকে বলল স্ট্যানলি। প্যাট্রিক হলকেও হিসেবের বাইরে রাখা যাবেনা।

ওসব আমি দেখব। তুমি অনেক খেটেছ, এখন ঘুমাতে চলে যাও, জবাব দিল রস লেম্যান। কণ্ঠে স্নেহ।

.

ম্যাক্সওয়েল হোটেলে দোতলায় এক রূম ভাড়া নিয়ে থাকে ডেপুটি স্ট্যানলি। ঘরে ঢুকে ঘুমানোর চেষ্টা করল সে। পারল না। ওকে তাড়া। করে বেড়াচ্ছে কয়েকটা নাম। হিউ হুবার্ট। প্যাট্রিক হল। জোসেফ, ওয়েন। অ্যাডাম আর জোডি বেঞ্চলি। লরা নামের অদৃশ্য মেয়েটার কথাও ভাবল সে। তবে অনেক পরে ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখল শুধু রোসাকে।

হোটেল বয়ের ডাকে যখন ঘুম ভাঙল, স্ট্যানলির মনে হলো আধঘণ্টাও ঘুমাতে পারেনি সে। একটা মেসেজ, স্যার, গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছে ছোঁকরা।

ল্যাম্প জ্বেলে বিছানা ছাড়ল স্ট্যানলি। দরজা খুলে কাগজটা হোটেল বয়ের হাত থেকে নিয়ে পড়ল। শহরের সবচেয়ে বড় সেলুনের মালিক ডেভিড মুর লিখেছে:

স্ট্যানলি,

ফ্রেইটার ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড মাতাল। বলছে গ্যানন উইলিস শাইয়্যানে খুন হওয়ার সময় সে ওখানে ছিল। আউট-ল সম্বন্ধে কি সব যেন তোমাকে সকালে জানাবে বলছে। নেশা কেটে গেলে বোধহয় আর নাও বলতে পারে, আমার মনে হয় এখনই ওর সাথে তোমার আলাপ করা উচিত।

ডেভিড মুর

তাড়াতাড়ি জামাকাপড় পরে হোটেল ছেড়ে বেরল স্ট্যানলি। ডেভিড মুর। ঠিকই বলেছে, এখনই ফ্রেইটারের সাথে কথা বলা উচিত। হিউ হুবার্ট যদি শহরেই থাকে তাহলে বারে বসে গ্যানন উইলিসের ব্যাপারে বকবক করা লোকটার জন্য বিপজ্জনক।

ডিপো আর খবরের কাগজের অফিস ছাড়িয়ে বোর্ডওয়াক ধরে হেঁটে ডেভিড মুরের সেলুন ড্রিমল্যাণ্ডের সামনে পৌঁছে গেল স্ট্যানলি, ব্যাটউইঙের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। জাকজমক আছে সেলুনের। বিশাল একটা ঘর। এক কোণে পিয়ানো বাজাচ্ছে নিগ্রো বাদক। রোজউডের কাউন্টারের সামনে পিঠ উঁচু সুইভেল টুল। একা যারা। নিজের ভাবনায় ডুবে যেতে চায় তাদের জন্য টেবিল-চেয়ারও আছে।

ডেভিড মুরকে কোথাও দেখতে পেল না স্ট্যানলি। লোকটাকে। পছন্দ করে সে। র‍্যাঞ্চ আর সেলুন আছে ডেভিড মুরের, শহরে নিজ খরচায় একটা স্কুলও চালায়। রস লেম্যান কাজ ছেড়ে দিলে শেরিফ পদের জন্য নির্বাচনে দাঁড়াবে সবাইকে জানিয়েছে সে।

তোমার জন্য অপেক্ষা করছে, বুড়ো আঙুল দিয়ে পেছনের দরজা দেখিয়ে স্ট্যানলিকে বলল বারটেণ্ডারদের একজন।

ছোট্ট অফিসে ডেস্কের পেছনে বসে আছে ডেভিড মুর। ঘরে ঢুকেই প্রশ্ন ছুঁড়ল স্ট্যানলি, ফ্রেইটার কোথায়?

একঘণ্টা আগে বেরিয়ে গেছে। চুরুটে টান দিয়ে একমুখ ধোয়া ছাড়ল বুলডগের মত ভোবড়ানো চেহারার সেলুন মালিক। আমার মনে হয় না এখন আমি জানি না তেমন কিছু জানে ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড।

সেলুনে ড্রিংক করার সময় গ্যানন উইলিস তাকে বড়াই করে বলেছিল রলিন্সে আশি হাজার ডলারের একটা কাজ পেয়েছে।

আশি হাজার ডলার! শিস দিল স্ট্যানলি শহরের সবার টাকা এক করলেও অত হবে না। ইউ. পি. পে কার লুট করলে? ভ্রূ কোঁচকাল ডেভিড মুর, তারপর নিজেই জবাব দিল, শেরিফের কাছে লরা নামের এক মেয়ের কথা শুনলাম। সে তো লিখেছে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের কথা। অথচ ওই বিশেষ ট্রেন এখান দিয়ে যায় মাসের শেষে।

দুবছর আগে ব্যর্থ হওয়ার পর একই কাউন্টিতে আবারও একই চেষ্টা করবে না ওরা, মাথা নাড়ল স্ট্যানলি। গ্যানন উইলিসের সাথে ম্যাক্স ব্র্যাণ্ডের পরিচয় কিভাবে হলো বলেছে কিছু?

হ্যাঁ। দুবছর আগে শাইয়্যানের একটা বারে পরিচয়। ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড তখন জানত না লোকটা আউট-ল, আজকে রলিন্সে ফিরে লোকজনের মুখে শুনেছে।

ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড কোথায় গেছে জানো?

মাথা নাড়ল সেলুনমালিক।

ডেভিড মুরের ওখান থেকে বেরিয়ে আরও কয়েকটা সেলুনে ঢুঁ মারল স্ট্যানলি। কোথাও নেই ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড। গোল্ড রূমের কথা মনে পড়ল ওর। গোটা শহরে একমাত্র ওই সেলুনেই জুয়ার সবরকম ব্যবস্থা আছে।

উত্তর দিকে চলে যাওয়া রাস্তায় দুই ব্লক পুরে সেলুনটা। মাঝ রাত পেরিয়ে গেছে সেজন্য প্রায় খালি। একটা টেবিলে বসে মদ গিলছে এক ফ্রেইটার, তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল ডেপুটি। চারদিকে চোখ বুলিয়ে সেলুনের প্রধান আকর্ষণ সিসিলিয়াকে দেখতে পেল। মেয়েটার সামনে ডবসা রূপমুগ্ধ লোকটার পিঠ ওর দিকে হলেও গলাটা চিনতে পারল স্ট্যানলি। প্যাট্রিক হল বলছে, তোমার জীবনটা এখানে নষ্ট কোরো না, সিলিয়া, আমার সাথে ডেনভারে চলো।

ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড কোথায় জানো তুমি? ওদিক থেকে চোখ সরিয়ে ফ্রেইটারকে জিজ্ঞেস করল স্ট্যানলি।

স্টার রূমিঙ হাউস,ফ্রেইটারকে ভরা গ্লাসে চুমুক দিতে দেখে। ডেপুটি বুঝল আর কোনও কথা বলে সময় নষ্ট করতে নোকটা রাজি না।

বাফেলো স্ট্রীটে আধ ব্লক দূরে দোতলা কাঠের বাড়িতে স্টার জমি হাউস। কম পয়সায় ভাড়া দেয়া হয় টয়লেট সাইজের ঘরগুলো। সামনের হলওয়েতে একটা টিমটিমে আলো জ্বলতে দেখল স্ট্যানলি। ময়লা কাঁচের লণ্ঠনটার পাশেই একটা ঘণ্টি রাখা আছে কাউন্টারের ওপর। লণ্ঠনের সামনে ফেলে রাখা হয়েছে একটা জীর্ণ বোট। ওতে লেখা: সার্ভিস বেল।

স্ট্যানলি ঘণ্টি বাজানোর খানিক পরে নোঙরা চেহারার হোটেল ক্লার্ক এসে হাজির হলো খালি গায়ে।রূম? ঘুম জড়ানো স্বরে হাইয়ের ফাঁকে জিজ্ঞেস করল।

না। ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড কোথায়?

দুই তলায় দুইশো পাঁচ নম্বর রূমে খুঁজে দেখো। সে ফিরেছে বলে মনে হয় না। ঘুমাতে চলে গেল হোটেল ক্লার্ক। দোতলায় উঠে ম্যাক্স ব্র্যাণ্ডের ঘর খুঁজে বের করল স্ট্যানলি। নক করে কোনও সাড়া-শব্দ পেল না। দরজা লক করেনি ফ্রেইটার, জোরে নক করার ধাক্কাতেই ক্যাঁচকোঁচ শব্দ তুলে দরজা খুলে দিয়ে কর্তব্য সারল মরচে ধরা পুরানো কব্জাগুলো।

ঘরের ভেতর একনজর তাকিয়েই ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড এখনও ফেরেনি। বুঝতে পারল স্ট্যানলি। দরজা বন্ধ করে নিচে নেমে এসে বিল্ডিঙের সামনে বোর্ডওয়াকে দাঁড়াল। অপেক্ষা করাই ভাল, মাতাল ফ্রেইটার ঘুমাতে আসবেই। অপেক্ষার সময়টা পার করতে সিগারেট ধরাল ডেপুটি, মন দিয়ে আঁকার চেষ্টা করল রোসার নিখুঁত ছবি।

অনেকক্ষণ পর তৃতীয় সিগারেট সবে ধরাবে এমন সময় রাস্তার কোনা ঘুরে ম্যাক্স ব্র্যাণ্ডকে আসতে দেখল সে। বেঁটে একটা লোক। একহাত দাড়ির জঙ্গলে মুখ ঢেকে আছে। অল্প অল্প টলছে নেশার ঘোরে। ডেপুটির বিশাল দেহ হোটেলের দরজায় ঠেস দিয়ে আছে দেখে সামনে দাঁড়িয়ে মুখ তুলে তাকাল সে। চিনতে পেরে কুমড়োর হলুদ বিচিগুলো দেখাল। জড়ানো গলায় বলল, তোমাকেই খুঁজছিলাম, স্ট্যানলি, দারুণ। খবর আছে।

বলে ফেললো।

মাথা ঝাঁকিয়ে কথা শুরু করল মাতাল ফ্রেইটার। যা বলল তার মধ্যে নতুন কিছু নেই, ডেভিড মুরের কাছে এসব কথা আগেই শুনেছে স্ট্যানলি।

আর কোনও কথা বাদ পড়েনি তো, হতাশ গলায় জানতে চাইল, সে।

না। সেদিন বিকেলেই তো একলোকের সাথে গানফাইটে মারা গেল গ্যানন। আর কি কথা হতে পারে, তুমিই বলো?

ডেভিড মুর বলল, গ্যাননের সাথে দুবছর আগে তোমার পরিচয় হয়েছে। কিন্তু তুমি বলছ তিন বছর। কোনটা ঠিক? জ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল ডেপুটি।

আমার চেয়ে ডেভিড মুর বেশি জানে নাকি, নিজের বুকে টোকা দিল ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড। বড় লোক ইংরেজগুলোকে নিয়ে শিকারে গিয়েছিলাম যে, তখন আমার সাথে যেতে চেয়েছিল। আমি নিইনি। ফ্রেইটার উঁ দিয়ে ফুসফুসের বাতাস বের করায় সস্তা মদের গন্ধে এক পা সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলো স্ট্যানলি। তার একবছর পরে শাইয়্যানে গ্যাননের সাথে আবার দেখা হলো একটা সেলুনে। গ্যানন আর তার সঙ্গী..

ওদের মাথার ওপরে দুইশো পঁচ নম্বর রুমের জানালা থেকে গর্জে উঠল একটা সিক্সগান। বাড়িঘরের দেয়ালে প্রচণ্ড শব্দটার প্রতিধ্বনি মিলিয়ে যাওয়ার আগেই হাঁটু ভাঁজ হয়ে স্ট্যানলির পায়ের কাছে পড়ে গেল ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড। একপলক তাকিয়েই ডেপুটি বুঝতে পারল মারা গেছে। হতভাগ্য বাচাল ফ্রেইটার।

সিক্সগান হাতে দৌড়ে রূমিঙ হাউসের ভেতরে ঢুকল সে। একেকবারে চার ধাপ সিঁড়ি টপকে উঠে এল দোতলায়। এবারও দুইশে পাঁচ নম্বর রূমে কাউকে দেখতে পেল না। বাতাসে ভাসছে পোড়া করডাইটের গন্ধ। কাজটা কার বুঝতে পারছে সে, কিন্তু কোন্ নামের আড়ালে লুকিয়ে আছে হিউ হুবার্ট? চেষ্টা করেও লোকটাকে এখন আর ধরা যাবে না, এতক্ষণে নিশ্চয়ই পেছনের গলি দিয়ে অনেক দূরে চলে গেছে সে। স্যাণ্ডক্রীকের সাতজন রাইডারদের মধ্যে হয়তো হুবার্টও একজন।

তিক্ত মনে নিচে নেমে এল স্ট্যানলি, শেরিফের অফিসে গিয়ে ডিউটিরত দুজন কনস্টেবলকে পাঠিয়ে দিল লাশ ফার্নিচার স্টোরের মালিকের কাছে পৌঁছে দিতে।

০৯.

বাকি রাত আর ঘুমাল না, শেরিফের সাথে আলোচনা করে কাটিয়ে দিল। সকালে ক্লান্ত কণ্ঠে বলল, গ্যানন আর তার সঙ্গী… কি বলতে চেয়েছিল ম্যাক্স ব্র্যাণ্ড? গ্যাননের সঙ্গী বাড লরেন্স বা হুপার হতে পারে না। ওদের পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় এই কাউন্টিতে আসার সাহসই পেত না ওরা। তার মানে দাঁড়ায় গ্যাননের সঙ্গী যে লোকটা শিকারী দলের সাথে যেতে চেয়েছিল সে-ই সম্ভবত হিউ হুবার্ট।

হতে পারে,শেরিফের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ম্যাক্স ব্র্যাণ্ডের আততায়ী চায়নি গ্যাননের সঙ্গী সম্পর্কে তাকে কথা বলার সুযোগ দিতে। গত দুবছরে হান্টি পার্টির সাথে কারা গেছে খোঁজ নাও। গ্যাননকে ভাড়া করেছিল তেমন একজন হান্টারকে খুঁজে বের করতে পারলে গ্যাননের সঙ্গীর চেহারা সুরত কেমন জানা যাবে।

দ্রুত পায়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এল স্ট্যানলি, খিদেয় পেট জ্বলছে, কিন্তু নাস্তা করার ধৈর্য নেই তার।

দুবছর আগে শহরের একমাত্র হোটেল ছিল হেয়েস। ওখানেই আগে গেল ডেপুটি। মিস্টার হেয়েস ধুলোয় মোড়া কাভারের একটা লেজার বের করে দিল। দুবছর আগে সেপ্টেম্বর আর অক্টোবর মাসে শিকারে যাবার উদ্দেশ্যে কারা হোটেলে উঠেছিল লেজার উল্টেপাল্টে দেখল স্ট্যানলি।

আরেকটা স্টোরের লেজার ঘেঁটে আরও দুজনকে পাওয়া গেল। যারা শিকারের রসদ কিনেছে দুবছর আগে। হোটেল লেজার থেকে পাওয়া নামগুলোর মধ্যেও আছে এদের নাম। ভার্জিনিয়া হতে আগত চার্লি রবিনসন আর নেলসন আর্চার।

লিভারি বার্নেও খোঁজ নিল স্ট্যানলি। বার্নের মালিক শেরিফ আর। শেরিফের ভাইরা। ওখানে কোনও তথ্য পেল না সে, কিন্তু হফের বার্নের খাতায় গুরুত্বপূর্ণ একটা এন্ট্রি চোখে পড়ল। ছুটতে ছুটতে লইয়ারের অফিসে ঢুকল সে। অফিসে রোসা ছাড়া আর কেউ নেই। আঙ্কল জ্যাক অ্যাডাম বেঞ্চলিকে রিসিভ করতে গেছে, হাসল রোসা বিধ্বস্ত ডেপুটিকে দেখে, আমি কোনও সাহায্য করতে পারি?

পারো, ক্লান্ত স্বরে বলল স্ট্যানলি। ভার্জিনিয়ায় একটা চিঠি পাঠাতে হবে। লোকের নাম জানি শুধু, ঠিকানা জানি না। পুলিশ চীফকে লিখতে হবে খোঁজ নিতে বলে।

ডেপুটির কাছ থেকে একটা কাগজের টুকরো নিয়ে নামগুলোর ওপর চোখ বোলাল রোসা। কাজ হবে মনে হয়?

বোধহয় হবে। দুবছর আগে ভার্জিনিয়া থেকে আসা পার্টির জন্য। হফের কাছ থেকে ঘোড়া ভাড়া করেছিল গ্যানন উইলিস। আমার কপাল ভাল হফ কথাটা এতদিন পরেও মনে রেখেছে!

পুলিশ চীফ হান্টারদের খুঁজে বের করলে তারপর?

গ্যানন উইলিসের সঙ্গীর চেহারা কেমন ছিল জিজ্ঞেস করবে। হফের ওখানে লোকটা আসেনি। গ্যাননের সঙ্গী ছিল সম্ভবত হবার্ট। শিকার করতে চার্লি রবিনসন আর নেলসন আর্চারকে বেশিদূর নিয়ে। যায়নি ওরা, কারণ স্টোরের লেজার অনুযায়ী মাত্র দশদিনের রসদ নিয়েছিল ভার্জিনিয়ান হান্টাররা। এলক শিকারে র‍্যাটস্নেক মাউন্টিন বা উইও রিভার রেঞ্জে যায়নি, গিয়েছিল ফেরিস রেঞ্জ বা সেমিনো মাউন্টিনে।

চিঠি লেখা শেষ করল রোসা। মুক্তোর মত হস্তাক্ষরে একবার চোখ। বুলিয়ে রোসাকে ধন্যবাদ দিয়ে অফিস থেকে বেরল স্ট্যানলি। দ্রুত পায়ে হেঁটে পৌঁছে, গেল রেল ডিপোতে।

জ্যাক হিগিনস উকিলের কালো কোট পরে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে–আছে প্ল্যাটফর্মে। দূরের রেলওয়ে ট্রাকের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ তার। অ্যাডাম বেঞ্চলির সাথে এই পরিস্থিতিতে দেখা করার দায়িত্ব ঘাড়ে এসে চাপায় অস্বস্তি বোধ করছে লইয়ার। ট্রেন লেট, ডেপুটি পাশে এসে দাড়ানোয় বলল সে।

অ্যাডাম আসছে জানি, কিন্তু জোডিও কি এই ট্রেনেই আসবে? আলাপ চালানোর খাতিরে জানতে চাইল ডেপুটি। অ্যাডামকে উইলের ব্যাপারটা বলবে?

যতক্ষণ না বলে পারা যায় বলব না, টাক চুলকাল হিগিনস। তাছাড়া অ্যাডামকে চিনি, সে এসব ব্যাপারে কোনও কথা তুলবে না, ট্রেন থেকে নেমেই খুঁজতে শুরু করবে বাবার খুনীকে।

ওকে দেরি করিয়ে দেয়ার চেষ্টা কোরো। ভার্জিনিয়ায় পুলিশ চীফের কাছে চিঠি পাঠানোর ব্যাপারটা খুলে বলল স্ট্যানলি।

ওদের চারপাশে লোক গমগম করছে। কেউ এসেছে পরিচিতদের রিসিভ করতে, কেউ এসেছে ট্রেন ধরার জন্য। পরিচিত বুড়ো ব্যাগেজম্যানকে দেখতে পেয়ে কদিন আগের কথা মনে পড়ল স্ট্যানলির। সেদিনও একই ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল ও, কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন।

ল্যারামি থেকে পাচজন পালিয়েছিল, বাকি চারজনের কোনও খবর? জানো? গতকালের পেপারে দেখলাম ওদের তিনজন ধরা পড়েছে, বলল। লইয়ার, স্পাইক হান্না এখনও পলাতক। তাকে শেষ দেখা গেছে ওয়ার্ম স্প্রিংসের কাছে।

প্ল্যাটফর্মের এককোণে প্যাট্রিক হলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল, স্ট্যানলি। জোডির জন্য অপেক্ষা করছে লোকটা, নাকি পালিয়ে যেতে চায় ট্রেনে উঠে? প্যাট্রিক হল জানে তাকেও সন্দেহ করা হবে। জানে রলিন্সে কিরকম জনপ্রিয় ছিল বিলি বেঞ্চলি–মানুষজনের মুখে নিশ্চয়ই। শুনেছে। ভালমত খেয়াল করে দেখল ডেপুটি, লোকটার কাছে প্ল্যাটফর্মে কোনও মালপত্র নেই, ব্যাগেজ এখনও হোটেলেই আছে তো?

নিশ্চিত হবার জন্য দ্রুত পায়ে হেঁটে ডিপো থেকে বেরিয়ে এল সে। ম্যাক্সওয়েল হাউসে ঢুকে ক্লার্ককে জিজ্ঞেস করল, প্যাট্রিক হল হোটেল ছেড়ে দিয়েছে? ক্লার্ক মাথা নাড়ানোয় বলল, আমার চাবিটা অন্য প্যান্টের পকেটে রয়ে গেছে, জেস, পাস কীটা দাও।

ক্লার্কের কাছ থেকে পাস কী নিয়ে দোতলায় উঠে এল স্ট্যানলি। নিজের দরজায় ব্যবহার না করে প্যাট্রিক হলের ঘরের তালা খুলে ফেলল। ওর ঘরের দুটো ঘর পরের এই রূম থেকে ডেনভারের জুয়াড়ীকে বেরতে দেখেছে সে, ঘর চিনতে অসুবিধা হলো না।

বিছানার পাশে খোলা লাগেজ এলোমেলো পড়ে আছে মেঝেতে। চেয়ারের ওপর একটা কোঁচকানো শার্ট আর টাই। ড্রেসারের ওপর একটা কাগজের বাক্সে রাখা আছে কাফ লিঙ্ক, স্টাড আর টাই পিন। চলে যাবার ইচ্ছে থাকলে এসব এভাবে ফেলে রাখত না প্যাট্রিক হল।

পুরো ঘর ভালমত সার্চ করল স্ট্যানলি। সন্দেহজনক কিছু না পেলেও মন থেকে খুঁতখুঁতে ভাবটা দূর করতে পারল না। গুরুত্বপূর্ণ যা। কিছু নিজের সাথেই রাখবে জুয়াড়ী।

ট্রেন রলিন্সে পৌঁছে গেছে কাজে ব্যস্ত ডেপুটি টেরও পায়নি। দরজা। খুলে যাওয়ার শব্দও শুনতে পেল না সে। সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে এসেছ?

চমকে উঠল পেছন থেকে প্যাট্রিক হলের প্রশ্নে। অপ্রস্তুত চেহারায় ঘুরে দাঁড়িয়ে মাথা নাড়ল।

সময় নষ্ট করছ, আমার লুকানোর কিছু নেই, রাগে লাল চেহারায় বলল জুয়াড়ী।

ড্রেসারের ওপর চোখ আটকে গেল স্ট্যানলির। জিনিসটা ঘরে ঢুকেও দেখেছে, তাৎপর্য বুঝতে পারেনি তখন। আঙুল তুলে ড্রেসারের ওপর রাখা বাক্সটা দেখাল। তুমি বলেছিলে .৪৫ ক্যালিবারের সিক্সগান নেই তোমার।

ঠিক। মাথা দোলাল বিস্মিত প্যাট্রিক হল।

কিন্তু ছিল, গম্ভীর গলায় বলল ডেপুটি, নাহলে .৪৫ ক্যালিবারের বুলেটের বাক্স তোমার কাছে কেন?

একসময় ছিল। এখন এটা ব্যবহার করি, কোটের ভেতর হাত ঢুকিয়ে একটা .৩৮ বের করে কক করল সে। তারপর লক্ষ্যস্থির করল। ডেপুটির মাথায়। অনধিকার প্রবেশ করেছ, তোমাকে খুন করলেও কারও কিছু বলার নেই।

স্ট্যানলি বুঝতে পারেনি লোকটা ড্র করবে। অবাক হলেও তার চেহারায় কোনও ছাপ পড়ল না। খুন করতে পারো, তবে পার পাবে না। সবাই মনে করবে তোমার সম্বন্ধে আমি গুরুত্বপূর্ণ কিছু জেনে ফেলেছিলাম সেজন্যই খুন করেছ।

প্যাট্রিক হলের পেছনে খোলা দরজায় একজন কাউহ্যাণ্ডকে এসে দাঁড়াতে দেখল সে। পরিস্থিতি বুঝে সময় নষ্ট করল না কাউহ্যাও। সিক্সগান হোলস্টার মুক্ত করে সজোরে নামিয়ে আনল জুয়াড়ীর মাথায়। কাটা কলাগাছের মত মেঝেতে আছড়ে পড়ল প্যাট্রিক হল।

পাশের ঘরটায় উঠেছি আমি। তোমাদের ঝগড়া শুনে দেখতে। এসেছিলাম কি হচ্ছে, ব্যাখ্যা দিল কাউহ্যাণ্ড।

অসংখ্য ধন্যবাদ, জুয়াড়ীর .৩৮ উবু হয়ে তোলার ফাঁকে বলল স্ট্যানলি।

ওর কি ব্যবস্থা করবে? কাউহ্যাণ্ড কৌতূহল প্রকাশ করল।

থাকুক পড়ে এখানে, জ্ঞান ফিরলে যে মাথা ব্যথাটা থাকবে সেটাই ওর শাস্তি, হাসল স্ট্যানলি। জুয়াড়ীকে জেলে ভরে রাখার মত কোনও তথ্য প্রমাণ ওর হাতে নেই, খামোকা ঝামেলা না বাড়ানোই ভাল। চলো, বিল, ক্লার্ককে বলে ওর জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে, কাউহ্যাণ্ডকে ঘর থেকে বেরতে ইশারা করল সে।

কাউহ্যাণ্ডের পাশে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় তিক্ত হাসল। মজার ব্যাপার হচ্ছে একজন সন্দেহভাজন আরেকজনের হাত থেকে তাকে বিপদমুক্ত করেছে। ফ্রাই প্যানের বিল লেপম্যানও স্যাণ্ড ক্রীক থেকে আসা সাতজন রাইডারের একজন।

১০.

লবিতে এসে অ্যাডাম বেঞ্চলিকে রেজিস্টার খাতায় সই করতে দেখল ডেপুটি। লইয়ার অ্যাডামের কাঁধে হাত দিয়ে নরম গলায় সান্ত্বনা দিচ্ছে। তুমি বিশ্রাম নাও, অ্যাডাম, আমরা সবকিছু সামলে নেব।

মাথা নাড়ল অ্যাডাম। তার বাদামী চোখ জোড়া জ্বলছে। লাগেজ খুলে গানবেল্ট কোমরে ঝুলিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর পর স্ট্যানলিকে দেখতে পেল সে। শেরিফের সাথে কথা বলব আমি। শহরে আছে?

হাতের ইশারায় পথ দেখাল স্ট্যানলি। দুজনে হোটেল থেকে বেরিয়ে এসে বোর্ডওয়াক ধরে হাঁটতে শুরু করল। অ্যাডাম যথেষ্ট লম্বা, তারপরও ডেপুটির কাঁধ সমান মাত্র। পরনের টাউন স্যুট লম্বা ট্রেন জার্নিতে আভিজাত্য হারিয়েছে। পার আর বুট দেখে বোঝা যায় র‍্যাঞ্চার।

চুপচাপ হাঁটছিল ওরা কার্বন কাউন্টি জার্নালের সাংবাদিক স্যাম গারউড এসে জোটার আগ পর্যন্ত। লেকটা অ্যাডামের দিকে প্রশ্নবান ছুঁড়তে শুরু করল। কে খুন করেছে বলে তুমি মনে করো, অ্যাডাম?

চোয়াল শক্ত হয়ে গেল অ্যাডামের, জবাব না দিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল।

দমবার পাত্র নয় সাংবাদিক। হিউ হুবার্ট লোকটা কে বলে তুমি মনে করো, অ্যাডাম?

থমকে দাঁড়িয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল অ্যাডাম, তোমার কি ধারণা?

এখানে প্রশ্ন করতে এসেছে সাংবাদিক, জবাব দিতে নয়। অ্যাডামের কথা গায়েই মাখল না সে। জোডির খবর জানো? প্যাট্রিক হল ওর কাছে কত টাকা পায়? প্রতিবেশীদের সাথে কোনও গোলমাল ছিল তোমার, বাবার?

সাংবাদিকের ঘাড় ধরে ঠেলা দিয়ে বোর্ডওয়াক থেকে নামিয়ে দিল। অ্যাডাম। তোমার কিছু জানা থাকলে বলো, নাহলে দূর হয়ে যাও। আমার সামনে থেকে।

নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে বাধল স্ট্যানলির। আড়ামের। মত ভদ্র নম্র যুবক এভাবে বদলে যেতে পারে!

শেরিফকে অফিসেই পেল ওরা। ডেস্কের পেছন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হ্যাণ্ডশেক করল রস লেম্যান গম্ভীর চেহারায়। জানাল সাধ্যমত চেষ্টা করা হচ্ছে খুনীকে পাকড়াও করার জন্য।

আমিও তোমাদের সাথে খুঁজব তাকে, বলল অ্যাডাম। আমাকে বিনা বেতনের ডেপুটি করো লোকটা ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত।

আড়চোখে অ্যাডামের উরুতে বাঁধা সিক্সগানের বাট দেখল লেম্যান, কি যেন ভাবল দুএক মুহূর্ত। তারপর বলল, যদি কথা দাও লোকটাকে চেনামাত্র খুন করবে না, ডেপুটি হতে পারো। আমাদের লোকবল কম, ভাল একজন ডেপুটি পেলে কাজের অগ্রগতি দ্রুত হবে।

আমি রাজি, গম্ভীর কণ্ঠে বলল অ্যাডাম।

তাহলে ডানহাত উঁচু করো।

অস্থায়ী ডেপুটি হিসেবে অ্যাডিমি বেঞ্চলিকে শপথ গ্রহণ করাল শেরিফ। একটা ব্যাজ তার বুকে সেঁটে দিয়ে বলল, যতক্ষণ এটা পরে থাকবে, আমার নির্দেশ মানতে হবে তোমাকে। আমার প্রহ্ম নির্দেশ হচ্ছে আজ সারারাত ভালমত ঘুমাবে তুমি। কাল থেকে আমার নির্দেশ মত খুনীকে খুঁজতে শুরু করবে।

আপত্তি করল না অ্যাডাম, মাথা ঝাঁকিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। একটা চেয়ার টেনে আরাম করে বসল স্ট্যানলি, সিগারেট ধরাল। শেরিফের ঘোড়া বাইরের হিচর‍্যাকে দেখে এসেছে তাই জিজ্ঞেস করল, তোমার ঘোড়াটা যাওয়ার পথে বানে রেখে যাব?

আমার আর ওই বেচারার কপালে বিশ্রাম নেই, ক্লান্ত চেহারায় হাসল রস লেম্যান। কে নাকি সালফার প্রিঙসে স্পাইক হানুনাকে দেখেছে। গুজবও হতে পারে, তবে যাওয়া উচিত।

রলিন্স থেকে দক্ষিণে যোলো মাইল দূরে সালফার স্প্রিঙস। হোয়াইট রিভার স্টেজ রুটের ঘোড়া ওখানে বদলে নতুন ঘোড়া সরবরাহ করে স্টেশনটা।

তোমাকে কে জানাল? জিজ্ঞেস করল স্ট্যানলি।

স্টেজ ড্রাইভার কার কাছে যেন শুনেছে আমাকে এসে বলল। তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার আছে। কথায় কথায় বার্নে স্টেজ ড্রাইভার আমার ভাইকে জানিয়েছে সালফার স্প্রিংসে লরা নামের একটা মেয়ে কিছুদিন ছিল, খুবই নাকি সুন্দরী। এই লরাও আমাদের লরা হতে পারে।

হাত বাড়িয়ে রাইফেল আর হ্যাট তুলে নিল শেরিফ। আমি যাচ্ছি। তুমি খোঁজ নাও স্যাণ্ড ক্রীক থেকে আসা সাতজন রাইডারের মধ্যে কজন এখনও শহরে আছে। কালকেই ফিরে আসার চেষ্টা করব। দরজায় পৌঁছে থমকে দাঁড়াল শেরিফ, চিন্তিত চেহারায় কাঁধের ওপর দিয়ে বলল, চোখ-কান খোলা রেখো, স্ট্যান। ঘণ্টাখানেক আগে ডেভিড মুরের সেলুনে গিয়েছিলাম। কি যেন বলাবলি করছিল লোকগুলো, আমাকে দেখেই চুপ হয়ে যায়। আমি চলে যাচ্ছি ভান করে ব্যাটউইঙের, এপারে চলে আসতেই আবার আলোচনা শুরু করে ওরা।

মাথা ঝাঁকাল স্ট্যানলি। শেরিফকে শ্রদ্ধা করে সে, জানে বিনা কারণে সন্দেহপ্রবণ হয়ে ওঠেনি রস লেম্যান। শহরের লোকজন কি হুপারকে ছিনিয়ে নিয়ে ফাঁসিতে ঝোলানোর কথা ভাবছে?

শেরিফ ঘোড়া দাবড়ে শহরের বাইরে চলে যাবার পর একজন কনস্টেবলকে সর্বক্ষণ অফিসে থাকতে বলে রাস্তায় বেরিয়ে এল সে। ডেভিড মুরের সেলুনে যাওয়ার পথে হেয়েস হোটেল চোখে পড়তেই মনে পড়ে গেল গ্যানন উইলিসকে লরা নামের মেয়েটা মধ্য সেপ্টেম্বরে এই হোটেলে উঠতে বলেছিল। সিদ্ধান্ত বদলে হোটেলে ঢুকল স্ট্যানলি। জিজ্ঞেস করায় ক্লার্ক জানাল লরা নামের কেউ এই হোটেলে থাকেনি কখনও।

হোটেলের বাররূমে ঢুকে দেখল একটা টেবিলে বসে ফিসফিস করে কথা বলছে কয়েকজন। ডেপুটির ওপর চোখ পড়তেই অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে চুপ হয়ে গেল সবাই। ওদের মধ্যে র‍্যাফটার ক্রসের স্যাণ্ডি পেকোসও আছে। টেবিলের ধারে এসে দাঁড়িয়ে স্ট্যানলি বলল, গোপনীয় কিছু না হলে আমাকেও বলতে পারো।

না, না, গোপন কিছু না, তাড়াহুড়ো করে বলল স্যাণ্ডি পেকোস। ল্যারামি জেল ভেঙে বেরনো আসামীদের ব্যাপারে কথা বলছিলাম আমরা।

লোকটা মিথ্যে বলছে স্পষ্ট বুঝতে পারল স্ট্যানলি। শেরিফ ঠিকই বলেছে, সেলুন আর বারগুলোয় বসে কোনও একটা পরিকল্পনা আঁটছে লোকজন।

স্যাণ্ড ক্রীক থেকে আসা রাইডারদের কয়জন শইরে আছে খোঁজ নিতে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে এল সে। একটা সেলুনে দেখল ম্যাভরিক প্লামারকে। ঘণ্টাখানেক আগে দেখেছে বিল লেপম্যানকে। পকেট থেকে লিস্টটা বের করে তিনটা নামের পাশে নখ দিয়ে দাগ দিল স্ট্যানলি।

দুটো লিভারি বার্ন ঘুরে জস হারমার আর জুডাস অ্যাডলারের ঘোড়া দেখতে পেল। তারমানে ওরা এখনও শহরে আছে।

হারমার আর ফিরে যাবে না, তথ্য যোগাল বাচাল সহিস। রলিন্সে আসতে বাধ্য করায় বসের ওপর খেপে আছে। বলেছে এই অপমান সহ্য করে চাকরি করা যায় না।

আরও কয়েক জায়গায় খোঁজ নিয়ে লিস্টের সবগুলো নামের পাশে নখ দিয়ে চিহ্ন দিল স্ট্যানলি। স্যাণ্ড ক্রীকের সাত রাইডারের একজন ছাড়া বাকি কেউ ফিরে যায়নি। ম্যাক্সওয়েল হোটেলের ডাইনিং রূমে খাওয়ার সময় লইয়ার আর রোসাকে তদন্তের অগ্রগতি জানাল সে।

তাহলে কি দাঁড়াল ব্যাপারটা? টাক চুলকাল জ্যাক হিগিনস। কিলরন হার্পার ফিরে গেছে। লু মেয়ার আর জস হারমার অপমানিত বোধ করায় কাজ ছেড়ে দিয়েছে। লুমেয়ার চলে গেছে দক্ষিণে, হারমার শহরেই আছে। আরও আছে ম্যাডরিক প্লামার, স্যাণ্ডি পেকেসি, বিল লেপম্যান আর জুডাস অ্যাডলার।

প্যাট্রিক হলকেও হিসেব থেকে বাদ দিয়ো না। হাসল স্ট্যানলি।

হ্যাঁ, মুখ শুকিয়ে গেল লইয়ারের। এখনও অ্যাডামকে কিছু বলিনি, কিন্তু কালকে বলতে হবে। ফিউনারালের পরেই আলাপ করতে আসবে অ্যাডাম।

তুমি শেষকৃত্যে যাবে না? রোসা জিজ্ঞেস করল স্ট্যানলিকে।

যাওয়া উচিত, স্ট্যানলি বলল, দেখি পারি কিনা। র‍্যাঞ্চারের সম্মানে সকাল দশটা থেকে বারোটা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সমস্ত দোকানপাট। সবাই ওখানে গেলে শহর খালি হয়ে পড়বে, আমার এখানেও থাকা উচিত।

.

পরদিন সকাল দশটায় শহরের ছোট্ট গির্জায় প্রার্থনা করতে আসা মানুষজনের জায়গা হলো না। পঞ্চাশ মাইল দূর থেকেও এসেছে কেউ কেউ। গির্জার সামনে ট্রেনের মত লম্বা লাইন হলো ক্যারিজ আর ওয়াগনের। লাশ কবরস্থানে নেয়ার পথে নীরবে অনুসরণ করল সবাই। মিছিলের শেষে শেরিফের ছোট ভাইয়ের পাশে ঘোড়া হাঁটিয়ে এগুলো স্ট্যানলি।

জিম লেম্যান আর্মি স্কাউট ছিল। গত বছর একটানা একশো সত্তর মাইল ঘোড়া ছুটিয়ে মীকার ম্যাসাকারের খবর রলিন্সে বয়ে এনেছিল সে। অবিশ্বাস্য কাণ্ডটা ঘটানোয় সারা দেশের খবরের কাগজগুলো ওকে নিয়ে আরও অনেক অবিশ্বাস্য গল্প ফেঁদেছে। শেরিফের তিন ভাইয়ের মধ্যে জিমের নাম ডাকই সবচে বেশি।

কবরস্থানে যাওয়ার পথে ওরা দেখল দুপাশের রাস্তার সব দোকানপাট বন্ধ। বালির ওপর অশ্ব খুরের মৃদু শব্দ ছাড়া চারদিকে অন্য কোনও আওয়াজ নেই।

ফিফথ স্ট্রীটে শবযাত্রা পৌঁছুনোর পর কালো হুড দেয়া ক্লোক পরা এক মহিলা ডেপুটির দৃষ্টি আকর্ষণ করল হাত নেড়ে। হুডে চেহারা ঢেকে থাকায় মহিলাকে চিনতে পারল না ডেপুটি, জিম লেম্যানকে হাতের ইশারায় এগিয়ে যেতে বলে বোর্ডওয়াকের পাশে ঘোড়া থামাল।

তুমিই ডেপুটি স্ট্যানলি? নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল মহিলা।

তিরিশ হবে না বয়স, আন্দাজ করল স্ট্যানলি। মহিলা যথেষ্ট সুন্দরী। কাছ থেকে দেখে চিনতে পেরে বলল, তুমি রেল লাইনের উল্টোধারে দাঁড়িয়ে আছ, মার্গারিট।

রলিন্সে অলিখিত নিয়ম হচ্ছে যেসব মেয়েরা দুনিয়ায় আদিমতম–পেশা বেছে নিয়েছে তারা রেল ট্র্যাকের এদিকে আসবে না। গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলার না থাকলে এ সিডার স্ট্রীটে কেন এসেছে, ভাবল স্ট্যানলি।

সেলুনের লোকজন মিথ্যে গুজব ছড়িয়ে শেরিফকে সরিয়ে দিয়েছে হিপারকে জেল ভেঙে বের করে ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য, সময় নষ্ট না কিরে তথ্যটা দিয়েই নিজের গন্তব্যে পা বাড়াল পতিতা।

পরিস্থিতি বুঝতে সময় লাগল না স্ট্যানলির। কবরস্থান শহর থেকে একমাইল উত্তরে। সবাই যাচ্ছে সেখানে র‍্যাঞ্চারকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে, খালি শহরে যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে উন্মত্ত মাতালরা!

১১.

কবরস্থানে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে ড্রাগস্টোরের সামনের হিচর‍্যাকে ঘোড়া বাঁধল স্ট্যানলি। পায়ে হেঁটে পৌঁছে গেল পাথরের জেল হাউসে।

কনস্টেবল ওকে আসতে দেখেছে, দরজা খুলে দিল সে। বিস্মিত কণ্ঠে বলল, তোমাকে শবযাত্রায় দেখেছি বলে মনে হচ্ছে, ডেপুটি!

কথা বাড়াবার সুযোগ দিল না স্ট্যানলি। শটগান লোড করো, এড, অ্যামুনিশনের বাক্স খুলে হাতের কাছে রাখো। কার্বনের মত একই ঘটনা এখানে ঘটাতে চাইছে কিছু লোক।

বেআইনী কিছু যাতে না ঘটে সেজন্যেই আমাকে চাকরি দেয়া হয়েছে। হাতের তালুতে থুতু দিয়ে চাপড় মারল কনস্টেবল। র‍্যাক থেকে শটগান হাতে নিয়ে দুটো ট্রিপল এ শেল ভরল দ্রুত হাতে। অবস্থা আয়ত্তের বাইরে চলে না গেলে বাকশট ব্যবহার করবে না।

সিডার স্ট্রীট কাভার দাও তুমি, বলল স্ট্যানলি, আমি ফিফথ স্ট্রীটের দিকে নজর রাখব।

দুদিকের দরজাতেই ওপরের অংশে মোটা শিক আছে লিঞ্চিও মবকে বাধা দিয়ে ঠেকিয়ে রাখার সুবিধার্থে। নিজের অবস্থানে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে ফাঁকা রাস্তাটা দেখল ডেপুটি। উল্টোদিকের বিল্ডিঙের দোতলায় জানালা দিয়ে রোসাকে একপলকের জন্য দেখতে পেল সে।

কই আমার তো মনে হয় না কিছু ঘটবে, খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে বলল কনস্টেবল।

হওয়া শুরু হয়ে গেছে, সাবধান, এড! ফিফথ স্ট্রীটে আশেপাশের গলি থেকে একদল লোককে বেরিয়ে আসতে দেখে সতর্ক করল স্ট্যানলি। উত্তর দিক থেকে দ্রুত, নিঃশব্দ পদক্ষেপে এগিয়ে আসছে ওরা অমোঘ নিয়তির মত। সংখ্যায় পঞ্চাশজনেরও বেশি। সশস্ত্র লোকগুলো পরিচিতি প্রকাশের ভয়ে মুখোশ পরে আছে।

দুটো দরজাই বন্ধ, জেলহাউসে ঢোকার আর কোনও পথ নেই। জানালাগুলো দেয়ালের অনেক উঁচুতে, মোটা শিক দেয়া।

রাস্তার মোড়ে এসে দুভাগ হয়ে গেল নীরব লোকগুলো। দুদরজার সামনে অবস্থান নিল। কেউ কেউ পরিচয় ঢাকার জন্য মুখের নিম্নাংশে রুমাল বেঁধেছে। ওর দিকের লোকগুলোর মধ্যে অন্তত ছয়জনকে চিনতে পারল স্ট্যানলি। মুখোশ পরা থাকলেও লাল শার্টের কারণে বিল লেপম্যানকে চিনে ফেলল।

সিডার স্ট্রীটের দিক থেকে একটা কণ্ঠস্বর চেঁচিয়ে বলল, দরজা খুলে দাও, এড ম্যাকলিন, হুপারের সাথে কথা আছে আমাদের।

জবাবে দরজার গ্রিলের ভেতর দিয়ে শটগানের নল বের করে লোকগুলোর মাথার দুফুট ওপর দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ল কনস্টেবল। অবিচল কণ্ঠে সাবধান করল, পরের বার হাত কেঁপে গেলে কিন্তু তোমাদের গায়ে লাগবে।

সিডার স্ট্রীটে ভীড় করে থাকা লোকগুলো নিচু স্বরে গালি দিয়ে দুএক ফুট পিছালেও স্ট্যানলির দিকে জড় হওয়া লোকগুলো এগুলো।

ওরা ভেবেছে ভেতরে কনস্টেবল একাই আছে। লোকগুলো যখন দরজা থেকে ফুট দশেক দূরে, গ্রিলের ভেতর দিয়ে শটগান বের করে ট্রিগার টানল স্ট্যানলি। উঁচুতে গুলি করার ঝুঁকি নিল না সে। রাস্তার উল্টোদিকে লইয়ারের অফিসের জানালায় দাঁড়িয়ে উৎসুক চোখে কাণ্ডকারখানা দেখছে বোসা। লিঞ্চিঙ মবের একফুট সামনে ধুলো ওড়াল ট্রিপল এ ছররা।

চমকে উঠে পিছিয়ে গেল লোকগুলো। একজন মাতাল ফাটা গলায় জানতে চাইল, তোমার সাথে আরও কেউ আছে, এড?!

তৈরি জবাব দিল কনস্টেবল। শেরিফ আর তার তিন ভাই এখন আমার সাথে। গুজব ছড়িয়ে দিয়ে আর যাকে হোক রস লেম্যানকে বোকা বানাতে পারোনি তোমরা।

তুমিও মিথ্যে বলে আমাদের বোকা বানাতে পারোনি, এড, ব্যঙ্গ করে বলল ভীড়ের সামনে দাঁড়ানো নেতা গোছের একজন। আমরা। জানি শেরিফ সালফারে গেছে। তার ভাইদের যেতে দেখেছি। শবযাত্রায়।

ওটা জেরাল্ড স্ট্যানলির ঘোড়াটা না? একজন আঙুল তুলে ড্রাগস্টোরের সামনে হিচর‍্যাকে বাঁধা ঘোড়াটা দেখাল। সে-ই বোধহয় কনস্টেবলের সাথে আছে!

চুপ হয়ে গেল লোকগুলো। এই নামটাকে ভয় পায় কাউন্টির আইন অমান্যকারীরা। ওরা ভেবেছিল সবার সাথে স্ট্যানলিও শবযাত্রায় গেছে।

আমরা তোমার সাথে লাগতে চাই না, স্ট্যানলি, উঁচু গলায় বলল একজন। আমরা চাই হুপারের মুখ খোলাতে। হুবার্টের খবর আদায় করেই ওকে তোমার হাতে তুলে দেব আমরা।

টম, দরজার শিকের মধ্যে শটগানের ব্যারেল নড়িল স্ট্যানলি,  বাড়াবাড়ি করলে গুলি করতে বাধ্য হব।

মুখোশ পরে থাকার পরও ডেপুটি তাকে চিনে ফেলায় ভয় পেয়ে ভীড়ের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল টম সোরেনসন। নিচু গলায় নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করল লোকগুলো। ওরা স্বপ্নেও ভাবেনি জেরাল্ড স্ট্যানলির মুখোমুখি হতে হবে।

লোকগুলোর সিদ্ধান্তহীনতার সুযোগে করিডরের দরজা খুলে ভেতরে তাকাল ডেপুটি। ছাইয়ের মত ফ্যাকাসে মুখে উবু হয়ে কটে বসে আছে এডমণ্ড হুপার, দুচোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে নামছে। আমাকে ওদের হাতে তুলে দিয়ো না, কতির গলায় বলল সে, ওদের ঠেকাও।

ডিসেম্বরে বিচারে তোমার ফাঁসি হবে। তবু আমি দেখব কোর্টরুমে। যাতে জীবিত পৌঁছুতে পারো, করিডরের দরজা বন্ধ করার আগে বলল স্ট্যানলি। ফিরে এসে দরজার শিকের পাশে দাঁড়িয়ে দেখল তর্কাতর্কি শেষ করেছে লোকগুলো। নেতা বদল হয়েছে, এখন আটজনের উপদলে ভাগ হয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে তিনজন। কোত্থেকে যেন তিনটা কাঠের গুঁড়ি জোগাড় করে আনা হয়েছে।

দুটো গুঁড়ি এদিকের দরজা ভাঙার জন্য রেখে বাকিটা অন্য রাস্তায়। ভীড় করে থাকা লিঞ্চিঙ মবের ব্যবহারের জন্য দিয়ে এল কয়েকজন লোক।

জ্যাক হিগিনসের জানালার দিকে তাকাল স্ট্যানলি। অবাক চোখে, রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে রোসা। মাঝে মাঝেই ভয় মেশানো দৃষ্টিতে

রাস্তার মোড়ে ক্রস আর্ম লাগানো টেলিগ্রাফের খুঁটিটা দেখছে। কার্বনের, মতই এখানেও কয়েকজনের হাতে দড়ির ফাঁস!

দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়াও তোমরা! কাঠের গুঁড়ি হাতে তেড়ে আসার সময় চেঁচাল কয়েকজন দুদিক থেকে।

জবাবে ওদের মাথার একফুট ওপর দিয়ে শুভেচ্ছা পাঠাল। কনস্টেবল। স্ট্যানলি গুলি করল পায়ের কাছে।

হাউমাউ কান্নার আওয়াজ ভেসে এল সেলের ভেতর থেকে। গলা ছেড়ে বিলাপের ফাঁকে ফাঁকে কাদছে হুপার। চেঁচিয়ে হুমকি দিতে শুরু করল রাস্তায় দাঁড়ানো সশস্ত্র লোকগুলো।

স্ট্যানলি বুঝতে পারছে এভাবে ওদের বেশিক্ষণ আটকে রাখা যাবে। কোনও অপরাধবোধ নেই লোকগুলোর, ছোটবেলা থেকে যা স্বাভাবিক বলে জানে তাই করতে এসেছে। অপরাধীর মুখ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করে ঝুলিয়ে দেয়াকে খারাপ কিছু মনে করে না ওরা। খেপে ওঠার আগ পর্যন্ত সাধারণ ভালমানুষ সবাই। হুপারের মত একটা খুনীকে বাঁচাতে ওদের খুন করতে পারবে না কনস্টেবল বা সে।

আসছে ওরা! এড ম্যাকলিন চেঁচাল ডেপুটির উদ্দেশে।

স্ট্যানলির দিকের লোকজন গুড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তেড়ে আসার হুমকি দিচ্ছে, কিন্তু আসছে না। ওরা চায় ডেপুটি ব্যস্ত থাকুক, তাহলে কনস্টেবলকে সাহায্য করতে পারবে না। এড ম্যাকেনলির শটগান গর্জে উঠেছে আওয়াজে বুঝল স্ট্যানলি। ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠল কয়েকজন।

দমেনি লোকগুলো, কাঠের গুঁড়ি কনস্টেবলের দরজায় সশব্দে আঘাত করায় কেঁপে উঠল জেলহাউস। দরজা অক্ষত আছে, ভেঙে পড়ার শব্দ হয়নি। আরেকবার! গুড়িসহ পিছিয়ে যেতে যেতে চেঁচাল কয়েকজন।

ওর দিকের লোকগুলো এক পাও এগোয়নি। ওদের মাথার ওপর দিয়ে জানালার দিকে তাকাল স্ট্যানলি। মেয়েটা নেই, বোধহয় ভয় পেয়ে সরে গেছে। ড্রাগ স্টোরের সামনে হিচর‍্যাকের ওপর চোখ পড়তে দেখল ওর স্যাডল চড়ানো স্ট্যালিনও গায়েব!

.

গুঁড়ি দিয়ে কনস্টেবলের দরজায় চারবার আঘাত করা হলো। বোল্ট আটকে আছে, কিন্তু ভাঙতে শুরু করল দরজার কাঠ। চারবার আগুন উগরেছে এড ম্যাকেনলির শটগান। চার-পাঁচজন গালি দিয়ে খোঁড়াতে, খোঁড়াতে পিছিয়ে গেছে, কিন্তু চলে যায়নি।

অন্যদিকের দরজায় হুমকি ধামকি ছাড়া অন্যকিছুর মোকাবিলা করতে হচ্ছে না স্ট্যানলিকে, কিন্তু কনস্টেবলকে সাহায্য করতেও যেতে পারছে না সে। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে শটগান টেনে নিলেই এক পা এগিয়ে আসে লোকগুলো, শটগান তাক করলেই আবার পিছিয়ে যায়। ভয় দেখানোর জন্য একটা গুড়ি লক্ষ্য করে গুলি করল স্ট্যানলি। মুখ খিস্তি করে পিছিয়ে গেল লোকগুলো, কিন্তু এখনও তুলে ধরে আছে গুঁড়িটা।

কারা যেন আসছে! চেঁচিয়ে উঠল একজন।

স্ট্যানলিও শুনতে পেয়েছে শব্দটা। দ্রুতগতিতে এদিকে ছুটে

আসছে কয়েকটা ঘোড়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা গেল ওদের। ছয়জন অশ্বারোহী, প্রত্যেকের হাতেই উদ্যত সিক্সগান কবরস্থানের দিক থেকে আসছে। স্ট্যানলি হঠাৎই বুঝতে পারল জানালায় রোসাকে দেখতে পায়নি কেন, বুঝতে পারল ওর ঘোড়াটা হিচর‍্যাক থের্কৈ কেন উধাও হয়েছিল।

ভাগো এখান থেকে, মাতালের দল! কাছে এসে গর্জে উঠল শেরিফের দুই ভাই, জিম আর নেলি। মীকার ম্যাসাকারে অসামান্য বীরত্ব দেখিয়েছিল জিম। গোটা শহরের আদর্শ সে। জিম লেম্যানের দিকে আঙুলও তাক করবে না রলিন্সের কেউ।

কাঠের গুঁড়িগুলো মাটিতে ফেলে নিমেষে আশে পাশের গলিতে ঢুকে গা ঢাকা দিল পঞ্চাশ-ষাটজন লোক, চেহারা ঢেকে রাখতে ব্যস্ত সবাই। স্ট্যানলি সিদ্ধান্ত নিল কাউকে বিচারে দাঁড় করাবে না। রক্ত যা  ঝরেছে ওদের নিজেদেরই ঝরেছে।

দরজা খুলে জিম লেম্যানকে ঢোকার পথ করে দিল কনস্টেবল।  গভীর চেহারায় ভেতরে ঢুকে করিডরের দরজা খুলে হুপারকে দেখল জিম। তোমার মত খুনীকে বাঁচাতে আমরা ফিউনারাল ছেড়ে এখানে আসিনি, হুপার, বলল সে মাথা নেড়ে। এসেছি এড আর স্ট্যানলির যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য।

ডেভিড মুর এক পা এগিয়ে স্ট্যানলির দিকে তাকাল। জিম ঠিকই। বলেছে, জ্যাক হিগিনসের ভাতিজির মুখে যা শুনলাম তাতে মনে হয়েছিল তোমাদের বিপদ হতে পারে।

অফিস থেকে বেরিয়ে এসে ড্রাগস্টোরের সামনে দাঁড়াল স্ট্যানলি। সিডার স্ট্রীটের শেষ মাথায় ধীরে ঘোড়া ছুটিয়ে রোসাকে আসতে দেখল। ঘোড়া চড়ায় অনভ্যস্ত পরিশ্রান্ত চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, যে কোনও মুহূর্তে জ্ঞান হারাবে ওয়াইয়োমিঙে নতুন এসেই ইতিহাস গড়া মেয়েটি।

দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে ঘোড়াটাকে থামাল স্ট্যানলি। দুহাত বাড়িয়ে রোসাকে নামিয়ে আনল। গম্ভীর গলায় বলল, অসংখ্য ধন্যবাদ, রোসা।

না, না, এমন আর কি, লজ্জায় লাল হয়ে স্ট্যানলির কাছ থেকে। এক পা সরে দাঁড়াল বোসা।

অফিসে যাবে, না হোটেলে?

হোটেলে।

একসাথে হেঁটে ম্যাক্সওয়েল হোটেলে ঢুকল ওরা। রোসা পাশে থাকায় রাস্তায় প্যাট্রিক হলকে কখন পাশ কাটিয়ে এসেছে খেয়াল করেনি স্ট্যানলি। কিন্তু ডিপোতে ট্রেন থামার শব্দে মাথার ভেতর সতর্ক ঘণ্টি বেজে উঠল ওর।

রোসাকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে এল। ডিপোর। কাছাকাছি পৌঁছে-বোর্ডওয়াকে জুয়াড়ীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। লোকটা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে এইমাত্র পৌঁছুনো ক্যাটল ট্রেনের দিকে।

ক্যাটল নামাতে শুরু করেছে বক্স বির কাউহ্যাণ্ডরা। ছাপ্পান্ন হাজার ডলারের ক্যাটল, আপনমনে বলল স্ট্যানলি। কার? অ্যাডাম, না জোডির? জুয়াড়ীর দিকে তাকিয়ে দেখল চেহারায় চতুর হাসি ফুটে উঠেছে লোকটার।

১২.

ম্যাক্সওয়েল হোটেলে সাপার টেবিলে লইয়ারের সাথে স্ট্যানলি আলাপ শুরু করল। রোসা এখনও ঘর ছেড়ে বেরয়নি, এলে তখন খাবারের অর্ডার দেয়া হবে।

উইলের ব্যাপারটা অ্যাডামকে বলেছ?

ফিউনারালের পরপরই বলেছি, বলল জ্যাক হিগিনস, কোনও উৎসাহ দেখায়নি। বাবার খুনীকে খুঁজে বের করার আগে বৈষয়িক কোনকিছু ভাবতে চাইছে না সে।

গরু চেনে অ্যাডমি। ওমাহা থেকে যেগুলো এনেছে সেগুলোর কথা–বলছি। লইয়ারকে মাথা ঝাঁকাতে দেখে প্রশ্নটা করল স্ট্যানলি, ওগুলো অ্যাডামের, না জোডির?

আইনত জোডির। র‍্যাঞ্চার মারা যাওয়ার সময়কার নগদ টাকা দিয়ে যা-ই কেনা হয়েছে সব জোডির হবে। আমাকে সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে উইলে ভাগাভাগির আগ পর্যন্ত। সব ক্যাটল বক্স বির রেঞ্জে নিয়ে যেতে বলেছি কাউহাদের।

ওদের দেখেছি শহর থেকে ক্যাটল বের করে ফেরিসের পথ ধরতে। সাথে অ্যাডামও আছে।

রাতে ওরা ক্যাম্প করার পর অ্যাডাম ফিরে আসবে রলিন্সে। বিলি বেঞ্চলির হত্যাকারীকে খুঁজে বের করার আগে শান্তি পাবে না ছেলেটা।

লেপম্যান, আর স্যাণ্ডি পেকোসকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে অ্যাডাম, বলল স্ট্যানলি, এডমণ্ড হপারকে জেল ভেঙে বের করে হুবার্টের পরিচয় জানার চেষ্টা করছিল যে লোকগুলো তাদের মধ্যে পেকোসও ছিল।

আর কাউকে চিনেছ? মাথা চুলকে জিজ্ঞেস করল লইয়ার।

এই যে লিস্ট পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে জ্যাক হিগিনসকে দিল স্ট্যানলি। লিস্টের এগারোজনের মধ্যে পেকোস ছাড়া স্যাণ্ড ক্রীক থেকে আসা বাকি ছয়জন রাইডারের কারও নাম নেই।

শেরিফ সালফার থেকে ফিরেছে?

হ্যাঁ, সন্ধেয়। গুজবটা কে রটিয়েছে বের করতে না পারায়। সাংঘাতিক রেগে আছে।

দুজন পুরুষ আর একজন তরুণী গেন্ট হোটেল ডাইনিং রূমে, প্রবেশ করল। কম বয়সী লোকটার হাত স্লিঙে বাঁধা। ওদের দেখেই একসাথে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল লইয়ার আর স্ট্যানলি। আমাদের  সাথেই বসো?

অন্য টেবিল থেকে একটা চেয়ার এনে অলিভার বসার ব্যবস্থা করে দিল স্ট্যানলি। জোসেফ ওয়েনের পাশে বসে পড়ে অলিভা হাসল, এখনও ওয়েনের মাংস কেটে দিতে হয় আমাকে। ডেপুটি লক্ষ করল গত কদিনেই অলিভা যেন তরুণী থেকে যুবতী হয়ে গেছে। তুমি ওকে ঠুটো করে দেয়ার পর থেকেই আমার দেখাশোনা বাদ দিয়ে ওকে নিয়ে পড়েছে অলিভা, হাসিমুখে অভিযোগ করল হেনরিখ বিউয়েল।

ওয়েনের কাঁধে দক্ষ হাতে বাধা ব্যাণ্ডেজ। আমরা ফিউনারালে এমনিতেই আসতাম। ওকে নিয়ে এসেছি ডাক্তার দেখাতে, বলল অলিভা।

শহরে থাকবে কতক্ষণ? জোসেফ ওয়েনের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল স্ট্যানলি।

শ্রাগ করে কাঁধের ব্যথায় মুখ বিকৃত করল ওয়েন। হুবার্ট যতক্ষণ আছে আমিও থাকব।

তোমাকে কে বলল হুবার্ট রলিন্সে?

আঙুল তুলে র‍্যাকে ঝুলিয়ে রাখা নিজের হ্যাটটা দেখাল ওয়েন। গত সপ্তাহে দুইবার আমাকে খুন করার চেষ্টা করেছে হুবার্ট, কিন্তু এই সপ্তাহে একবারও না। কেন? সবার ওপর চোখ বোলাল সে, কারণ এ সপ্তাহে আমি ছিলাম ফেরিসে, আর সে রলিন্সে। আমার কথা যদি বিশ্বাসযোগ্য না মনে হয় তাহলে বুঝিয়ে দাও জানালা দিয়ে গুলি করে ম্যাক্স ব্র্যাণ্ডকে কে খুন করল।

যুক্তি আছে কথায়। গুড ইভনিং, মিস্টার হল। পরিচিত কণ্ঠস্বরে চিন্তার জাল ছিড়ে গেল স্ট্যানলির। এইমাত্র ডাইনিং রূমে এসেছে রোসা। ডেনভারের জুয়াড়ীর দিকে তাকিয়ে হাসছে সে। অকারণেই গা জ্বলে উঠল স্ট্যানলির, বুকের মধ্যে জ্বলে উঠল অভিমান।

রোসা এসে একটা চেয়ার টেনে বসল চাচার পাশে, উঠে দাঁড়িয়ে সাহায্য করল না ডেপুটি। ওদের উদ্দেশে হাত নেড়ে কোণার একটা টেবিল দখল করল প্যাট্রিক হল।

কিছু বলেছে? চোখের ইঙ্গিতে জুয়াড়ীকে দেখিয়ে জ্যাক, হিগিনসকে প্রশ্ন করল স্ট্যানলি।

না।

ক্যাটল ট্রেনের ওপর চোখ রেখেছিল, জোডি আসবে ভেবেছিল হয়তো।

সাপার শেষ হওয়ার পর মেয়েরা যার যার নিজেদের ঘরে চলে গেল। পুরুষরা হোটেলের রেলিঙ দেয়া পোর্চে এসে বসল ধোয়া গেলার। জন্য। বিল লেপম্যান আর জুডাস অ্যাডলার উঠেছে হোটেলে। একজন ছাড়া বাকিরাও শহরে,টাক চুলকে ডেপুটির বলা কথাটা আওড়াল জ্যাক হিগিনস।

সন্ধে নেমেছে, লেপম্যান বা অ্যাডলার হোটেলে ফেরেনি। ওদের একজন হুবার্ট হলে আজকের ঘটনা শোনার পর জীবনে আর ফিরবে কিনা কে জানে। এডমণ্ড হুপারকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে হুবার্টের পরিচয় নিশ্চয়ই জেনে নিত জনতা।

রাস্তার ওপারের সেলুন থেকে কোলাহল ভেসে আসছে। হিচরেইলে থেমে ঘোড়া বাঁধল তিনজন কাউহ্যাণ্ড। বারের পিয়ানো বাজছে। বিলিয়ার্ড বলের পরস্পর ঠোকাঠুকি খাওয়ার ঠক ঠক শব্দ হচ্ছে। তিন কাউহ্যাণ্ড সেলুনে ঢোকার সময় লণ্ঠনের আলোয় তাদের চেহারা চিনতে পারল স্ট্যানলি। ওদের মধ্যে জস হারমারও আছে। লোকটা চাকরি ছেড়ে দিয়েছে, বলল সে।

বোর্ডওয়াক ধরে হেঁটে হোটেলের পোর্চে উঠল লম্বা এক লোক। ডেপুটির দিকে তাকিয়ে হেসে ভেতরে চলে গেল। জুডাস অ্যাডলার, সাতজনের একজন, মনে মনে বলল স্ট্যানলি।

আরও এক ঘণ্টা পার হয়ে গেছে, বিল লেপম্যান, এখনও ফেরেনি। একসময় বিদায় নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল হেনরিখ বিউয়েল। বোর্ডওয়াকে পদশব্দ শুনে চোখ তুলে তাকাল স্ট্যানলি। অ্যাডাম বেঞ্চলি। কাউহ্যাণ্ডদের এগিয়ে দিয়ে বার্নে ঘোড়া রেখে এসেছে। পোর্চের রেলিঙে বসে স্ট্যানলির কাছ থেকে তামাক নিয়ে সিগারেট বানিয়ে ঠোঁটে ঝোলাল অ্যাডাম, আগুন ধরিয়ে একবুক ধোয়া টেনে বলল, আমি চিন্তা করে দেখেছি, স্ট্যানলি, তোমার ধারণা ঠিক নাও. হতে পারে। লিঞ্চিঙ মবে বিল লেপম্যান ছিল বলেই ওকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেয়া যায় না। মাথা নাড়ল অ্যাডাম। ধরো মার্গারিট এসে তোমাকে যদি সতর্ক না করত তাহলে?

স্ট্যানলি বুঝে ফেলল অ্যাডাম কি বলতে চাইছে। কবরস্থানে চলে যেতাম আমি, লোকজন হুপারকে জেল ভেঙে বের করে বার্টের পরিচয় জেনে নিত ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে।

তারমানে মার্গারিট হুপারকে জানে বাঁচিয়েছে। কেন? গ্যাননের _ কাছে চিঠি লেখা লরাই তো মার্গারিট হতে পারে, তাই না?

ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে গেল স্ট্যানলির কাছে। লইয়ার বলল, ওই পেশার মেয়েরা বিভিন্ন নাম ব্যবহার করবে এটাই তো স্বাভাবিক।

আমি খোঁজ নিতে যাচ্ছি, উঠে দাঁড়াল জোসেফ ওয়েন, হুবার্টের খোঁজে আমি নরকে যেতেও রাজি।

আমিও যাব, আইনগত পরামর্শ দরকার হতে পারে তোমার, টাক চুলকাল লইয়ার।

ওরা চারজনই হাঁটতে শুরু করল নিষিদ্ধ পল্লীর দিকে। জ্যাক হিগিনস ছাড়া বাকি তিনজন সশস্ত্র। রেল লাইন পেরিয়ে ডানে মোড় নিয়ে এগুলো ওরা।

বড়সড় দোতলা কাঠের বাড়িটা চমৎকার। দরজায় লাল লণ্ঠন জ্বলতে না দেখলে ভদ্রলোকের বাড়ি বলে ভ্রম হয়। হিচরেইলে মাত্র। দুটো ঘোড়া, আজ খদ্দের বেশি নেই। জোসেফ, ওখানে থেমে দাঁড়িয়ে বলল লইয়ার, তুমি আর আমি এখানেই দাঁড়াই। স্ট্যানলির কাছে সার্চ ওয়ারেন্ট চাইলে আমরা ওর হয়ে জাজের কাছ থেকে নিয়ে আসব।

পোর্চে উঠে রশি টেনে ঘণ্টি বাজাল অ্যাডাম। কিছুক্ষণ পর দরজা। খুলে উঁকি দিল মাঝ বয়েসী এক মহিলা। মার্গারিটের সাথে কথা আছে, আমাদের, ডেকে দাও, বলল স্ট্যানলি।

ওদের দুজনের শার্টে পিন দিয়ে লাগানো ব্যাজ দুটো পালা করে দেখল মহিলা, তারপর বলল, আমার লাইসেন্স দেখতে চাইলে দেখতে পারো। মার্গারিট বিকালের ট্রেনে চলে গেছে।

আবার আসবে?

কি জানি।

আমাদের কাছে ওয়ারেন্ট নেই, স্বীকার করল স্ট্যানলি, ওর রূমটা। সার্চ করতে চাই, আপত্তি আছে?

মাথা নেড়ে দরজা ছেড়ে পঁড়াল মহিলা। দোতলায়। আট নম্বর রূম।

ডেপুটি দুজন বাড়ির ভেতরে ঢোকার পর দরজা বন্ধ করে দিল মহিলা। বাইরে হিচর‍্যাকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে লইয়ার আর জোসেফ ওয়েন। একটা কার্ট হুইলের, অন্যটা স্পুর্কি র‍্যাঞ্চের, ঘোড়া দুটো। দেখিয়ে বলল সে।

দোতলার একটা ঘরের জানালায় লণ্ঠনের আলো দেখতে পেল ওরা। জানালা দিয়ে কাঁধ বের করে ওদের উদ্দেশে চেঁচাল স্ট্যানলি, মালপত্র সহ ভেগেছে। তোমরা স্টেশনে গিয়ে খবর নাও কোন ট্রেনে গেছে, আমরা ঘরটা সার্চ করে ওখানে তোমাদের সাথে দেখা করব।

দ্রুতপায়ে হেঁটে ডিপোতে পৌঁছে গেল ওয়েন আর লইয়ার। টিকেট কাউন্টারে প্রৌঢ় লইয়ার এজেন্টকে মার্গারিটর চেহারার হুবহু বর্ণনা জানানোয় অবাক হলো ওয়েন।

চার নাম্বার ট্রেনে গেছে, বলল এজেন্ট, শাইয়্যানে যাবার।; ওয়ানওয়ে টিকেট কেটেছে সে।

সাথে আর কেউ ছিল?

না। মাথা নেড়ে দেয়ালঘড়ি দেখল এজেন্ট। ট্রেন এক ঘণ্টা আগে শাইয়্যানে পৌঁছে গেছে।

দৌড়ে স্টেশনে এল উদগ্রীব ডেপুটি দুজন। স্ট্যানলির হাতে একটা। পুরানো খাম। খামের গায়ে প্রাপকের নাম ঠিকানা ঝাঁপসা হয়ে গেলেও পড়া যায়। ওটা লইয়ারকে দেখিয়ে অ্যাডামের দিকে তাকাল স্ট্যানলি, ও যে লরা হতে পারে সেকথা আমার মাথায়ই আসেনি। আমার বদলে, কাউন্টির টপ ডেপুটি তোমারই হওয়া উচিত ছিল।

টেলিগ্রাফ অপারেটরের কাউন্টারে গিয়ে মার্গারিটের খোঁজ জানতে চেয়ে শাইয়্যানের পুলিশ চীফের কাছে একটা টেলিগ্রাম পাঠাল সে।

ফিরে এসে দাঁড়াল অপেক্ষমাণ বাকি তিনজনের পাশে। আরেকটা ব্যাপারে আমাদের মনোযোগ দেয়া দরকার, স্ট্যানলির দিকে তাকিয়ে বলল অ্যাডাম। স্যাও ক্রীকের সাতজন রাইডারকে সন্দেহ করা হচ্ছে বলেছ। এদের মধ্যে সবচেয়ে পরে এই কাউন্টিতে এসেছে কে?

নোটবুক বের করে নামের পাশে লিখে রাখা তারিখগুলো দেখল স্ট্যানলি। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে, সবার পরে এসেছে ম্যাডরিক প্রামার। এ বছরের জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত অন্য কোথাও ছিল সে। কোথায় বলেনি।

শাইয়ানে গ্যানন উইলিস খুন হয়েছে কবে?

আবার নোটবুকের পাতা উল্টে দেখল স্ট্যানলি। জুন মাসের শেষ সপ্তাহে।

উইলিসের এখানে আসার কথা ছিল হুবার্টের সাথে কোনও একটা অপকর্মে অংশ নেয়ার জন্য। সে আসত সেপ্টেম্বরে। কিন্তু ধরে গ্যানন মারা যাওয়ায় একা হয়ে পড়ল হুবার্ট, এবং আরেকজনকে আসতে বলল। নতুন লোকটা এলাকা চিনতে জুলাই মাসেই চলে আসবে না? কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে অ্যাডাম বলল, আমার ধারণা ওই সাতজন রাইডারের মধ্যেই হুবার্ট আর তার সহকারী আছে। তারিখ মিলিয়ে দেখল বার্টের সহযোগী হতে পারে একমাত্র ম্যাভরিক প্লামার।

ডিপোর বিশাল দেয়াল ঘড়িতে রাত সাড়ে দশটা বাজে। বারগুলোয় খোঁজ নিলেই ওকে পাওয়া যাবে, বলল স্ট্যানলি। ওয়েনের দিকে তাকাল। তুমি আর মিস্টার হিগিনস গোল্ড রাম আর হোটেলগুলোয় দেখো। অ্যাডাম সাউথ ফ্রন্টে যাও। আমি যাচ্ছি নর্থ ফ্রন্টে। প্লামারকে দেখতে পেলে কিছু করে বোসা না তোমরা, আমাকে খবর দিয়ো।

আলাদা হয়ে গেল ওরা। ডেভিড মুরের সেলুনে যাচ্ছে অ্যাডাম। গোল্ড রূম সেলুনের দিকে হাঁটতে শুরু করল লইয়ার আর ওয়েন। পুব ব্লকের সবকটা বারে টু দিল স্ট্যানলি। একটাতেও নেই প্লামার। একজন বারটেণ্ডার ক্ষোভের সাথে বলল ফরচুন সেলুনে গিলতে যায় লোকটা।

দুব্লক হেঁটে ফরচুন সেলুনে ঢুকল স্ট্যানলি। কমদামী মদ বেচা হয় এখানে। জুয়ার প্রায় সবরকম ব্যবস্থা আছে। প্লামারকে এক একট টেবিলে বসে থাকতে দেখল সে। হ্যাট খুলে টেবিলে রেখেছে লোকটা। ফ্ল্যাপলেস হোলস্টার থেকে উঁকি দিচ্ছে .৪৫ সিক্সগান। সামনে গিয়ে দাঁড়াল স্ট্যানলি। এটা আগে দেখেছ কখনও? পুরানো খামটা বাড়িয়ে ধরে জানতে চাইল। তীক্ষ্ণ চোখে দেখল লোকটার চেহারায় কোনও পরিবর্তন হয় কিনা।

না। কেন? নির্বিকার চেহারায় চোখ সরু করে পাল্টা প্রশ্ন করল। প্রামার।

শহর ছেড়ে চলে গেছে মার্গারিট নামের একটা মেয়ে। তাকে খুঁজছি। আমি। তাতে আমার কি? গ্লাস তুলে হুইস্কিতে চুমুক দিল প্লামার।

ওর ঘর সার্চ করার সময় আরেকটা জিনিস পেয়েছি, মিথ্যে বলেনি।

স্ট্যানলি, ঘরে একটা নেলকাটার পেয়েছে সে। লোকটা যদি সত্যিই হুপারের সঙ্গী হয়ে থাকে, উল্টোপাল্টা ভেবে ভয় পেয়ে যাবে হয়তো। হয়তো ভাববে কারও নাম, ঠিকানা বা কোনও চিঠি পেয়েছে ডেপুটি, ওর পরিচয় জেনে ফেলেছে।

কি খুঁজে পেয়েছে লোকটা হয়তো জিজ্ঞেস করবে, মনে মনে আশা করল স্ট্যানলি। ওই প্রসঙ্গের ধার দিয়েও গেল না প্লামার। চেয়ার পেছনে ঠেলে উঠে দাঁড়াল।

কার্বন কাউন্টিতে এক দেড় মাস থেকেছে তেমন কোনও লোক স্ট্যানলির বিরুদ্ধে ড্র করার সাহস পেত না। কিন্তু অতদিন থাকেনি প্লামার। ডেপুটির ড্র কখনও দেখেনি সে, তবে নিজের দ্রুততায় আস্থা। আছে।

দুজন কাস্টোমার সেলুনের ব্যাটউইং ঠেলে ভেতরে ঢুকে থমকে দাঁড়াল। দেখল সিক্সগানের দিকে হাত বাড়াল প্লামার, পরক্ষণেই কুঁজো হয়ে আছড়ে পড়ল মাটিতে। অবাক চোখে ওরা তাকিয়ে থাকল ডেপুটির সিক্সথানের ধোয়া ওঠা নলটার দিকে। স্ট্যানলির হাতে কখন সিক্সগান উঠে এসেছে দেখতে পায়নি দুজনের একজনও।

টেবিল পাশ কাটিয়ে ঝুঁকে পড়ে মৃতদেহটা দেখল স্ট্যানলি।  গ্রেফতার করতে পারলে ভাল হত, মনে মনে বলল সে, একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসহ চিরতরে চলে গেল লোকটা।

১৩.

তেরো সকালের রোদে গম্ভীর চেহারায় দাঁড়িয়ে আছে প্যাট্রিক হল। রলিন্সের আবহাওয়া সুবিধার মনে হচ্ছে না তার। সেলুনে, হোটেলে, বারে, রাস্তায় সবাই উত্তেজিত। হিউ হুবার্টকে চায় ওরা। অস্বস্তি বোধ করছে জুয়াড়ী। প্রমাণ হয়ে গেছে ডেপুটির হাতে কাল রাতে মারা পড়া লোকটা হবার্টের সঙ্গী ছিল। ধরা পড়ার ভয়ে পতিতালয় থেকে পালিয়েছে এক যুবতী। হুবার্টের সঙ্গী সাথী আর কয়জন আছে চিন্তাভাবনা করতে শুরু। করেছে শহরবাসী।ওকে সন্দেহ করে বসলে বিপদ হতে পারে। সাবধানে চলতে হবে, সিদ্ধান্ত নিল প্যাট্রিক হল। হোটেল রূমে ডেপুটির সাথে গোলমালে জড়ানো ভুল হয়ে গেছে। এখন জোডি এসে সম্পত্তি বুঝে নেয়ার আগ পর্যন্ত ঘাপটি মেরে বসে থাকা উচিত। জোডির কাছ থেকে পাওনা আদায় করা কঠিন হবে না।

সকালে গোল্ড রূমে জুয়া খেলার ব্যবস্থা নেই, তবু ওখানে গিয়ে হাজির হলো সে। সিসিলিয়ার ওপর চোখ পড়তে মনে মনে বলল, গত বছরও ডেনভারের সেলুনে তোমাকে দেখেছি, সুন্দরী। এই পচা শহরে এসে চাকরি নিয়েছ যখন, বোঝা যায় ভাল ঝামেলা পাকিয়ে দিয়ে তারপর এসেছ এখানে!

প্যাট্রিক হলকে চেয়ার টেনে বসতে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে এসে টেবিলের ওপর বসল সিসিলিয়া। ঝুঁকে পড়ে কার্ডিগানের ফাঁক দিয়ে দৈহিক সম্পদের উপরের অংশ প্রায় উন্মুক্ত করে জানতে চাইল, জোডির কাছ থেকে টাকা বুঝে নিয়েছ?

জোডি? কোন জোডি? পাল্টা প্রশ্ন করল প্যাট্রিক হল।

জোডি বেঞ্চলি। তুমি জানো না সে ফিরেছে?

অসম্ভব, মাথা নাড়ল হল। প্রতিটা ট্রেনের ওপর নজর রেখেছি আমি।

মালগাড়ির ওপর রাখোনি, হাসল সিসিলিয়া। কাল মাঝরাতের ট্রেনে এসেছে সে। উঠেছে হেয়েস হোটেলে।

জোডি এখন কোথায় আছে জানো?

বোধহয় হোটেলে।

বারটেন্ডারের রেখে যাওয়া হুইস্কির গ্লাস একচুমুকে শেষ করল, প্যাট্রিক হল। টেবিলের ওপর একটা কয়েন রেখে সিসিলিয়ার কাছ থেকে বিদায় না নিয়েই সেলুন থেকে বেরিয়ে এল। হেয়েস হোটেলের কাউন্টারে গিয়ে জানতে চাইল জোডি বেঞ্চলি কোথায়।

জোডি? বিষণ্ণ চোখ জোড়া তুলে তাকাল হোটেল ক্লার্ক। বোধহয় লইয়ারের অফিসে গেছে। বিলি বেঞ্চলির কপাল ভাল ছেলের এই অবস্থা দেখে যেতে হয়নি তার। কাল রাতে যখন পৌঁছুল, শুয়োরের মত দুর্গন্ধ সারা গায়ে। কয়দিন অভুক্ত ছিল ঈশ্বর জানে। মুখে কয়েক সপ্তাহের না কামানো দাড়ি, পকেটে ফুটো পয়সা নেই, চোখে। ডাকাতের দৃষ্টি…

ক্লার্কের বয়ান শোনা ধৈর্যে কুলাল না প্যাট্রিক হলের। হোটেল থেকে বেরিয়ে দ্রুতপায়ে জ্যাক হিগিনসের অফিস লক্ষ্য করে হাঁটা দিল। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে দেখল দরজাটা ভেড়ানো, ভেতর থেকে উত্তপ্ত গলার আওয়াজ ভেসে আসছে। কথা শোনার জন্য অফিসে না, ঢুকে ওখানেই দাঁড়িয়ে পড়ল ডেনভারের জুয়াড়ী।

বেঞ্চলিদের সমস্ত দেনা পাওনার ব্যাপারটা আপাতত তুমি দেখছ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দিয়েছি, আঙ্কল, বলল রোসা।

আইনগত ঝামেলা মেটার আগ পর্যন্ত সম্পত্তি আগের মতই।থাকবে। র‍্যাঞ্চের সমস্ত খরচ তার আগ পর্যন্ত আমি বহন করব উইলের নির্দেশ অনুযায়ী…

আর একদিন কি আমি না খেয়ে থাকব? লইয়ারকে থামিয়ে দিয়ে খেঁকিয়ে উঠল জোডি। উইলে বাবা আমাকে টাকা দিয়ে গেছে তুমিই বলেছ। সেই টাকা থেকে কিছু ছাড়ো, আমার পকেট একদম ফাঁকা।

আমার যা আছে সবই তো তোমারও। অ্যাডাম বেঞ্চলির কণ্ঠস্বর চিনতে না পারলেও কে হতে পারে আন্দাজে বুঝল জুয়াড়ী। একবার অন্তত বাবার কথা রাখো। বাবা চেয়েছিল ফিরে আসো তুমি। চলো,

নাপিতের দোকানে গিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে নেবে। তারপর র‍্যাঞ্চে যাবার পথে কথা বলব আমরা।

র‍্যাঞ্চ জাহান্নামে যাক! অবুঝের মত চেঁচাল জোডি বেঞ্চলি, ওই গরুগুলো আমার টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। সব টাকা ফেরত চাই আমি। মনে রেখো, হিগিনস, একটা কানা কড়িও ছাড়ব না!

আমার কিছু করার বা বলার নেই, গম্ভীর স্বরে বলল লইয়ার। তোমার বাবার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। হলেও যে টাকা, তুমি চাইলেই পেয়ে যেতে তা নয়। কিন্তু এখন ব্যাপারটা আরও অনেক জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। টাকা পেতে তোমার দেরি হবে। হোটেলের ম্যানেজারকে গিয়ে বোলো তোমার বিল যেন সে আমার কাছ থেকে নিয়ে যায়। সমস্ত ঝামেলা মিটে যাওয়ার পর পাওনা টাকা কেটে রাখব আমি।

সিঁড়ির ল্যাণ্ডিঙে দাঁড়িয়ে যথেষ্ট শুনেছে প্যাট্রিক হল। নিঃশব্দে রাস্তায় নেমে এল সে, হেয়েস হোটেলে ঢুকে লবিতে বসল জোডির দেখা পাবার আশায়। বুঝে গেছে আপাতত ছোঁকরাকে মুচড়ে টাকাআদায় করা যাবে না। তবু দেনার কথাটা ওকে মনে করিয়ে দেয়া দরকার।

*

লইয়ারের অফিসে অ্যাডামের দিকে বোকার মত তাকিয়ে থাকল বাকি তিনজন। আমার মনে হয়, একটু আগে বলেছে সে, জোডি তাড়াতাড়ি  পাওনা বুঝে পাবে তার একটা ব্যবস্থা করা যায়।

ভুরু কুঁচকে গেল জ্যাক হিগিনসের। ব্যাপার কি, অ্যাডাম, সব, ছেড়েছুড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছ নাকি?

না। আমার বুঝতে ভুল না হলে যা আমি চাই তা-ও পাওয়া যাবে। ওই ব্যবস্থায়।

একটা চেয়ারে রুগ্ন দেহটা এলিয়ে দিয়ে সন্দেহের দৃষ্টিতে বড়, ভাইয়ের দিকে তাকাল জোডি। মনে কোন চালাকি থাকলে ভুলে যাও, অ্যাডাম। আমি প্রাপ্য টাকা বুঝে নেবই।

তুমি জানো কারও সাথে বাটপাড়ি করা আমার স্বভাব নয়, রোসার ডেস্কের কোনায় বসে নিরুত্তাপ কণ্ঠে বলল অ্যাডাম। একটা সিগারেট রোল করে জিজ্ঞেস করল, খাও? জোডি সিগারেটটা নেয়ায়, ম্যাচ। জ্বেলে আগুন ধরিয়ে দিল। নিজের জন্য রোল করল আরেকটা সিগারেট। অবাক বিস্ময়ে অ্যাডামকে দেখছে রোসা। পশ্চিমে এই কদিনে বহু ধরনের মানুষ দেখেছে সে, কিন্তু তারা কেউ সামনে। দাঁড়ানো এই মানুষটার মত নয়। কিছু একটা আছে অ্যাডামের ভেতরে যেটা আর কারও নেই।

আমার একটা কথা রাখো, জোডি। র‍্যাঞ্চে ফিরে চলো, সমস্ত কিছুর অধিকার তোমার হাতে তুলে দেব আমি। শর্ত, না? ব্যঙ্গ ঝরে পড়ল জোডি বেঞ্চলির হাসিতে। আমি জানতাম চালাকি আছে।

কোনওচালাকি নেই। তুমি শুধু বক্স বিতে গিয়ে থাকবে। কয়েকদিন। কোনও কাজ করতে হবে না, সমস্ত দিক সামলাবে কাউহ্যাণ্ডরা।…

আমি রলিন্সের হোটেলে থাকলে তোমার এত অসুবিধা কিসের? সন্দেহ ফিরে এল জোডির চোখে।

অসুবিধা নেই, তবে বাবার ইচ্ছে পূরণ হোক সেটাই চাই। তোমাকে বেশিদিন র‍্যাঞ্চে থাকতে হবে না, কোনও কাজ করতে হবে। বিনিময়ে তুমি চাইলে আমি কাগজে লিখে সই করে দেব আমার কোনও সম্পত্তি চাই না।

চিন্তিত চেহারায় দাড়ি চুলকাল জোডি বেঞ্চলি। অ্যাডামের উদ্দেশ্য বুঝতে পারছে না সে, তবে সত্যি সত্যিই যদি কাগজে লিখে দেয় কোনও সম্পত্তি নেবে না তাহলে মন্দ কি! অ্যাডাম সম্পত্তি নেবে না জানলে ঝামেলা অনেক কম হবে। খুব দ্রুত গরুগুলো বেচে নগদ টাকা হাতে পাবে সে। কয়দিন থাকতে হবে? অবশেষে জিজ্ঞেস করল জোডি।

জবাবটা শুনে থতমত খেয়ে গেল লইয়ার আর রোসা। চেয়ারে বসে বড় ভাইয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল জোডি।

নয়শো গরু আছে বক্স বির। পঞ্চাশটার বাচ্চা প্রসব হওয়ার আগ পর্যন্ত ওখানে থাকবে তুমি। তারপর ওই পঞ্চাশটা বাচ্চা গরু ছাড়া আর সবকিছুই তোমার হয়ে যাবে।

তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি, অ্যাডাম? চেয়ার ছেড়ে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করল লইয়ার। একমাসের মধ্যেই তো অন্তত দুশো বাচ্চা হবে হেফারগুলোর। আমি গরু চিনি না, তা-ও তো বুঝেছি ওগুলোর পেট দেখে। তাছাড়া সম্পত্তি জোডি পাবে তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। যদি প্রমাণ হয় খুনের সাথে সে জড়িত, তাহলে?

খবরদার, ফালতু কথা বলবে না, উকিলের দিকে তাকিয়ে ধমকে উঠল জোডি। এইমাত্র যা বললে লিখে দেবে তুমি? জিভ দিয়ে ঠোঁট চেটে অ্যাডামের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল সে। প্রস্তাবটা লোভনীয়। অবশ্যই, মাথা ঝাঁকাল অ্যাডাম। একটা দশ ডলা; নোট বের করে বাড়িয়ে ধরল ছোট ভাইয়ের দিকে। নাপিতের দোকানে চুলদাড়ি কেটে এসো। একঘণ্টা পর বাকবোর্ড ভাড়া করে রাস্তা থেকে তোমাকে তুলে নেব আমি।

কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে টাকাটা নিল জোডি, অফিস ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার আগে জানতে চাইল, সব আমার হয়ে গেলে তুমি চলবে কি করে?

দুবছর আগে আমাদের নিজেদের পঞ্চাশটা গরুও ছিল না। ঠিকমত র‍্যাঞ্চ চালালে আবার আমার সব হবে, হাসল অ্যাডাম। জোডি চলে যাবার পর আপন মনে বলল, কি ঘটে দেখি। প্যাট্রিক হল ওর কাছে টাকা পায়। আমি দেখতে চাই জোডিকে র‍্যাঞ্চে চলে যেতে দেখে লোকটি কি করে।

বিরক্তিতে মাথা চুলকাল জ্যাক হিগিনস। কি আর করবে, একবার র‍্যাঞ্চে গেছে জোডির খোঁজে। রাস্তা যখন চেনে আবার যাবে।

হয়তো একবার নয়, দুইবার গেছে।

প্রমাণ কোথায়? ভ্রূ কুঁচকাল চিন্তিত লইয়ার। দ্বিতীয়বার রাতে গিয়ে থাকলে তোমার বাবাকে সে-ই খুন করেছে। কিন্তু আইন চায় প্রমাণ।

খুনের জায়গায় সাধারণত যায় না খুনী। দেখি জোডির পেছন পেছন বক্স বিতে প্যাট্রিক হল যায় কিনা।

তোমার ভাইকে সেজন্যেই র‍্যাঞ্চে পাঠাচ্ছ? কণ্ঠস্বরে কেন যেন হতাশ মনে হলো রোসাকে।

না। আরও কি যেন বলতে গিয়ে চুপ হয়ে গেল অ্যাডাম।

ওর মনের কথা বুঝে ফেলল লইয়ার। মাথা নেড়ে বলল, ভাবছ ক্যাটলগুলোর প্রেমে পড়ে যাবে জোডি। কিন্তু আমার মনে হয় না কাজ হবে।

অত নিশ্চিত হয়ো না, হাসল অ্যাডাম। জোডির বয়স যখন দশ ছিল তখনকার একটা স্মৃতি মনে আছে আমার। বজ্রপাতে একমাসের বাচ্চা রেখে মারা গিয়েছিল একটা গরু। বাচ্চাটাকে বাড়িতে নিয়ে এসে বোতলে করে দুধ খাইয়ে বড় করেছিল জ্যোডি। ঘটনাটা ও ভুলে যেতে পারে, আমি ভুলিনি। হয়তো মনের গভীরে এখনও ক্যাটল ভালবাসে ও।

তুমি ছাপ্পান্ন হাজার ডলার হারানোর ঝুঁকি নিচ্ছ, অ্যাডাম। বড়ধরনের ঝুঁকি। গরুগুলো পেয়েই বেচে দেবে জোডি, জুয়া খেলে প্যাট্রিক হলের মত কারও কাছে খুইয়ে বসবে সব।

তুমি বুঝতে পারছ না, মিস্টার হিগিনস, আমার যা কিছু আছে তা জোডিকে আমি দেব না কেন! অসহায় ভঙ্গিতে শ্রাগ করল অ্যাডাম।

কিন্তু আমি বুঝেছি, হঠাৎ বলে উঠল রোসা। মেয়েটার দৃষ্টিতে উষ্ণতা দেখতে পেল অ্যাডাম। টাকা বা সম্পত্তির কথা ভাবছ না তুমি, ভাবছ শুধু জোডির কথা। ওর ভালর জন্য সবকিছু ছেড়ে দিতে রাজি আছ। তুমি।

মেয়েটা ওর মনের কথা বুঝে ফেলায় লজ্জায় বাচ্চাছেলের মত দুগাল লাল হয়ে উঠল অ্যাডামের। রোসার ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে লইয়ারের উদ্দেশে বলল, জোডির সাথে আমার চুক্তির কাগজপত্র তৈরি করে ফেলো, মিস্টার হিগিনস। আমি বাকবোর্ড ভাড়া করে ফিরে এসে সই করে দেব।

.

হেয়েস হোটেলের লবিতে জোডির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করল অধৈর্য প্যাট্রিক হল। একঘণ্টা পরেও যখন ফিরল না, জোডির খোঁজ করতে চেয়ার ছাড়ল সে। একের পর এক বারে খুঁজে দেখল। পোন্ড রূমে ঢোকার আগে ওকে পাশ কাটাল একটা বাকবোর্ড। পেছনে,স্যাডল। চড়ানো অবস্থায় বাধা আছে একটা ঘোড়া। বাকবোর্ডের রাস ধরে আছে অ্যাডাম বেঞ্চলি, পাশে জোডি। দাড়ি গোঁফ কামানোয় বাচ্চা ছেলের মত দেখাচ্ছে তাকে।

প্যাট্রিক হল ওদের থামানোর জন্য হাঁ করার আগেই ওকে পেরিয়ে গেল বাকবোর্ড। দ্রুতগতিতে ছুটছেফেরিসের পথে। পেছন থেকে তাকিয়ে রইল প্যাট্রিক হল।

১৪.

ক্যাটলগুলো নিয়ে বক্স বির পথে মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ এগিয়েছে কাউহ্যাণ্ডরা। ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই ওদের পাশে পৌঁছে গেল বাকবোর্ড। নয়শো গরু আর বিশটা ষাড় নিজেদের ওড়ানো ধুলোতেই প্রায় চোখের আড়াল হয়ে আছে। ফেরিস আর সেমিনো রেঞ্জের ফঁক–দিয়ে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ওগুলোকে।

তোমার কথামতই ধীরেসুস্থে যাচ্ছি, বাকবোর্ডের পাশে ঘোড়া ছুটিয়ে অ্যাডামের উদ্দেশে চেঁচাল ফোরম্যান ল্যারি। রাত নামার আগে ডেভিড মুরের র‍্যাঞ্চে পৌঁছুতে পারলে ভাগ্য ভাল বলতে হবে। পেছনের সারির পেট ফোলা গরুগুলোকে আঙুল তুলে দেখাল সে। পেটে বাচ্চা নিয়ে জোরে হাঁটতে পারছে না।

ওগুলোকে আলাদা করে ডেভিড মুরের র‍্যাঞ্চে রেখে যেয়ো, বুদ্ধি বাতলে দিল অ্যাডাম। জোডিকে দেখিয়ে বলল, আমার ভাই। রাঞ্চে থাকির্বে কয়েকদিন। র‍্যাঞ্চে ফিরে সবার সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে, দিয়ে। ত্রুরা কেউ একবছরের বেশি চাকরি করেনি বক্স বিতে। জোডিকে কেউ চেনে না, নাম শুনেছে শুধু।

নড করে ঘোড়া বাকবোর্ডের পাশ থেকে সরিয়ে নিল ল্যারি। এগিয়ে যেতে যেতে জোডিকে গরুগুলো দেখাল অ্যাডাম। চমৎকার, তাই না!

গরু তো গরুই, নির্বিকার চেহারায় জবাব দিল জোডি।

ডেভিড মুরের র‍্যাঞ্চে পৌঁছে কুকের সাথে কথা বলল অ্যাডাম। কুক জানে বসের বন্ধু ছিল বিলি বেঞ্চলি। বেড়ার ভেতর গরুগুলো রাখতে দিতে আপত্তি করল না সে। দুশো গরু আলাদা করে রাখা হলো হোল্ডি ফেন্সে।

সন্ধের পর বাজার্ড গ্যাপে পৌঁছুল বাকবোর্ড। দীর্ঘক্ষণের নীরবতা ভেঙে অ্যাডাম জিজ্ঞেস করল, প্যাট্রিক হল তোমার কাছে কত পায়?

কত পায় বলেছে?

কিছু বলেনি। তোমার লেখা একটা নোট তার কাছে আছে জানিয়েছে, বাবার কাছে তোমার ঠিকানা জানতে এসেছিল। সে ভালমতই জানত আমার ঠিকানা, বলল জোডি, আমাকে চিঠিতে তাগাদাও দিয়েছে।

কত পায়?

তোমার জানার কোনও দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।

জোর করল না অ্যাডাম, নোকটা মিথ্যে বলেছে কেন ভাবল চিন্তিত চেহারায়।

স্পূকি র‍্যাঞ্চে রাত কাটাল ওরা। সকালে পৌঁছে গেল স্যাণ্ড ক্রীকে। উপত্যকায় ফোঁটার মত দেখাচ্ছে অন্যান্য র‍্যাঞ্চের গরুগুলোকে। ওগুলোর সাথে ছেড়ে দেব আমাদেরগুলো, বলল অ্যাডাম, পরবর্তী রাউণ্ডআপে আলাদা করে নিলেই হবে, ওমাহা থেকেই ক্যাটলগুলো ব্যাণ্ডিঙ করিয়ে এনেছি।

ক্যান্টলিন র‍্যাঞ্চে পৌঁছুনোর রাস্তায় পড়ে বামে মোড় নিল ওরা। বেলা দশটার সময় পৌঁছে গেল বক্স বিতে। বাকবোর্ড ঘুরিয়ে জোডির কাছ থেকে বিদায় নিল অ্যাডাম। বাকবোর্ডের পেছনে স্যাডল চড়ানো ঘোড়াটাও দড়ির টানে ফেরিসের দিকে রওনা হলো। আজকে ফেরিসে বিশ্রাম নিয়ে কালকে রলিন্সে ফিরে যাবে সে, কেন যেন ওর মনে হচ্ছে বাবার খুনীকে খুঁজে পাবার পথে অনেকটা এগিয়ে গেছে।

.

পরদিন সকালে নাস্তা খাওয়ার জন্য বাবাকে ডাকল অলিভা বিউয়েল। তারপর ডাইনিঙ রূমের মই বেয়ে উঠে গিয়ে ট্র্যাপ ডোরে করাঘাত। করল। ব্রেকফাস্টের সময় হয়ে গেছে, অ্যাডাম, ঘুম থেকে ওঠো।

কাঠের মেঝেতে অ্যাডামের পায়ের শব্দ পেল অলিভা।

আধঘণ্টা পর টেবিল ঘিরে বসল ওরা তিনজন। কেমন ঘুমিয়েছ? হেনরিক বিউয়েল জিজ্ঞেস করল।

মোটামুটি, জবাব দিল অ্যাডাম। কাল বিকেলে পৌঁছে বিউয়েলদের করালে বাকবোর্ড রেখেছে সে। স্যাডল চড়ানো ঘোড়াটাকে বেঁধেছে বার্নের ভেতর।

সকালেই রওয়ানা হতে চাইবে মনে করে ঘোড়াগুলোকে দানাপানি, খাইয়ে এসেছি, গালে পোরা সেদ্ধ ডিমটা চিবিয়ে গিলে ফেলে বলল অলিভার বাবা।

হাসি হাসি চেহারায় অলিভার দিকে তাকাল অ্যাডাম। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আমি রাতে কোথায় ছিলাম, কি বলবে তুমি?

অ্যাডামের প্রশ্নে অবাক হলো অলিভা। কেন, বলব আমাদের সাথে ছিলে!

তুমি কি বলবে, হেনরিখ?

মেয়ের মত বাবাও নিশ্চিত অ্যাডাম সারারাত এখানে ছিল।

তাহলে ভুল বলবে তোমরা, তিক্ত স্বরে বলল অ্যাডাম। রাত একটায় জানালা দিয়ে বাইরে বেরিয়েছি আমি। বার্ন থেকে গোপনে। ঘোড়া বের করে পাঁচমাইল দূরের বক্স বি থেকে ঘুরে এসেছি।

কেন? বোকা বোকা দেখাল অলিভাকে।

সময় জানার জন্য। রাত দুটোয় পৌঁছেছি ওখানে। তিনটের মধ্যেই ফিরে এসে বার্নে ঘোড়া রেখেছি।

কিন্তু কেন? চোখ জোড়া আরও বড় বড় হলো অলিভার।

কেউ এভাবে বক্স বিতে যেতে পারে কিনা দেখার জন্য। উঠে। দাঁড়িয়ে টেবিল থেকে তুলে মাথায় হ্যাট পরল অ্যাডাম। রলিঙ্গে কেউ। গেলে তাকে দিয়ে বাকবোর্ড পাঠিয়ে দিয়ো, বার্নে যাওয়ার জন্য দরজার কাছে পৌঁছে বলল সে, এই মুহূর্তে আমি দেরি করতে চাই না।

অ্যাডাম ঘোড়ায় চড়ে বার্ন থেকে বেরিয়ে আসার পর হেনরিখ বিউয়েল দরজায় দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে জানতে চাইল সে কোথায় যাচ্ছে।

প্যাট্রিক হল নামের এক লোকের সাথে দেখা করতে, রলিন্সের পথে দ্রুত ছুটন্ত ঘোড়া থেকে জবাব দিল অ্যাডাম বেঞ্চলি।

.

ডেভিড মুরের র‍্যাঞ্চের মাইল তিনেক আগে ল্যারি এবং অন্যান্য কাউহ্যাণ্ডদের গরু তাড়িয়ে আনতে দেখল অ্যাডাম। ওদের পাশ কাটানোর আগে ল্যারিকে বলল, জোডি জানতে চাইবে কয়টা গরুর বাচ্চা হলো। ওকে বোলো নিজে গিয়ে খোঁজ নিতে। স্যাডল চড়িয়ে একটা ঘোড়া তৈরি রেখো ওর জন্য, গরুর বাচ্চা গুনতে কাজে লাগবে। ফোরম্যানকে অবাক চোখে তাকাতে দেখে রাসে ঝাঁকি দিয়ে হাসল অ্যাডাম। পরে তোমাকে সব বুঝিয়ে বলব, ল্যারি।

।বিকেলে বেল প্রিঙসে খাওয়ার জন্য রেস্টুরেন্টের সামনে থামল পরিশ্রান্ত অ্যাডাম। করালে ঘোড়াটা একজনের দায়িত্বে বুঝিয়ে দিয়ে জানতে চাইল ভেতরে কেউ আছে কিনা।

অপরিচিত একজন এসেছে লাঞ্চ করতে। বলছে ল্যানডারে যাবে। জানাল করাল ম্যান।

নতুন এসেছে এখানে?

হ্যাঁ, ঘোড়া দলাইমলাই করতে করতে জবাব দিল করাল ম্যান। নতুন লোক না হলে জিজ্ঞেস করত না কোনদিকের রাস্তা ধরে গেলে ল্যানডারে পৌঁছানো যাবে।

কৌতূহলী অ্যাডাম রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেখল কাউন্টারের পাশে একটা, টেবিলে বসে আছে লোকটা। সরু, লম্বাটে চেহারা। গায়ের ফ্যাকাসে ত্বক দেখে বোঝা যায় কখনও র‍্যাঞ্চে কাজ করেনি। পুরানো, কুঁচকে যাওয়া একটা শহুরে কোট পরেছে, কলারে কফির দাগ। গোগ্রাসে খাচ্ছে। শ্লৈষ্ট থেকে বেকন আর স্টেক তুলে।

পরিচিত কুকের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল অ্যাডাম। একটা প্লেটে আমাকেও দাও।

ওর গলার আওয়াজ শুনে তাকাল লোকটা। চোখের দৃষ্টি আটকে গেল অ্যাডামের বুক পকেটের ওপর। লোকটা উঠে দাঁড়ানোর পরও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না অ্যাডাম। ডেপুটির চাকরি

বেশিদিন করলে ও বুঝতে পারত লোকটার চেহারা ওর বুকের ব্যাজ দেখেই বদলে গেছে। অপ্রস্তুত অ্যাডাম দেখল কোটের পকেট থেকে পিস্তল বের করে; ট্রিগার টিপল লোকটা। চুলে সিথি কেটে খুলির চামড়া ছিড়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল বুলেট। ঝুঁকিতে আছড়ে পড়ল অ্যাডাম। অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় দেখতে পেল না ওকে টপকে এক দৌড়ে করালে গিয়ে ঘোড়ায়। উঠে ছুটেছে আগন্তুক।

মুখে ঠাণ্ডা পানির ঝাঁপটায় জ্ঞান ফিরল অ্যাডামের। মাথায় হাত। বুলিয়ে চোখের সামনে এনে দেখল রক্তাক্ত হয়ে গেছে তালু। ওর ওপর ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে কুক আর করালের সেই লোকটা। রেস্টুরেন্টের মালিক স্টেশন মাস্টার কালকের আগে কোনও স্টেজ আসবে না দেখে বউকে নিয়ে রলিন্সে গেছে।

শুধু চামড়া ছড়েছে, ওকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে মন্তব্য করল, কুক।

কোথায় গেছে? চারপাশে তাকিয়ে দুর্বল কণ্ঠে জানতে চাইল অ্যাডাম।

ল্যানডারের রাস্তা ধরেছে। টেলিগ্রাফ লাইনটা থাকলে রঙ্গিসে খবর। পাঠিয়ে ওকে ধরার ব্যবস্থা করা যেত। আফসোস করল করাল ম্যান। কালকের স্টেজে খবর পাঠানোর আগেই কাউন্টি ছেড়ে পালাবে। লোকটা।

ওকে চিনতে পেরেছি আমি, উত্তেজিত স্বরে বলল কুক। তাই তো বলি ঢোকার পর থেকেই চেনা চেনা লাগছে কেন! ওর ছবি দেখেছি, রলিন্স পোস্ট অফিসের দেয়ালে সাঁটা ওয়ান্টেড পোস্টারে। পাইক হাননা!

ল্যারামি জেল ভেঙে পালানো পাঁচ অপরাধীর কথা মনে পড়ল। অ্যাডামের। ডেপুটি স্ট্যানলির হাতে ট্রেন ডিপোতে মরেছে একজন। তিনজন আবার ধরা পড়েছে, স্পাইক হান্নাই কেবল পালিয়ে বেড়াচ্ছে এখনও।

আমার দোষেই ব্যাপারটা ঘটল, বলল কুক। পরিচিত চেহারা দেখে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম রলিন্স পোস্ট অফিসে সে কাজ করে, কিনা। তখন থেকেই দুশ্চিন্তায় ভুগছে লোকটা। তারপর ডেপুটির ব্যাজ পরা তোমাকে ঢুকতে দেখে মনে করেছে খেল খতম।

১৫.

অনেকক্ষণ হলো গোল্ডরূমে একটা টেবিল দখল করে বসে আছে প্যাট্রিক হল। স্টাড গেমের হাউসম্যানের আমন্ত্রণ আজ উপেক্ষা করেছে সে। ঝলমলে গোল্ডরূম সেলুনের সমস্ত আকর্ষণও আজ রাতে তার বিরক্তি দূর করতে পারছে না।

আরও অনেক বড় মাপের একটা জুয়ায় কিভাবে চাল দেবে ভাবছে সে। বাইশ হাজার ডলারের জন্য জীবনের ঝুঁকি নেয়া যায় কিনা হিসেব কষছে। মনে অনেক রকমের সন্দেহ দোলা দিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা, দুচোখে গরু দেখতে পারে না তারপরও বক্স বিতে গেল কেন জোডি? বড় ভাইকে কতটুকু বলেছে ছোঁকরা? খুনের জায়গায় আবার যেতে দশবার ভাবে যে-কোন খুনী। দুভাই কি তাকে সন্দেহ করেই টোপ ফেলেছে?

গর্তে পড়ে থাকা .৪৫ সিক্সগানটা খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব একটা কাজ। হাজার হাজার গর্ত খুঁজে ওটা পাওয়া গেলেও কেউ ওকে দোষী প্রমাণিত করতে পারবে না। ধরা পড়ে যাওয়ার মত আর কোন সূত্র আছে কিনা জ কুঁচকে ভাবল প্যাট্রিক হল।

সন্দেহ হলেই ওকে সার্চ করবে অ্যাডাম। সে অধিকার ডেপুটি শেরিফ হিসেবে আছে তার। সার্চ করলেই ওর ওয়ালেটে পেয়ে যাবে দুটো কাগজ। একটা নব্বই দিনের মধ্যে বাইশ হাজার ডলার। পরিশোধের লিখিত রসিদ, অন্য কাগজটা জোডির ব্যাংক প্রত্যাখ্যাত নকল চেক। এই কাগজ দুটো র‍্যাঞ্চার ছাড়া আর কাউকে দেখায়নি সে। সই করেছে বলে জোডি রসিদের ব্যাপারটা জানে। কিন্তু সব চেক ছিঁড়ে যে একটা নকল চেক সে প্রমাণ হিসেবে রেখে দিয়েছে সেটা জানে না। জোডির ধারণা লিখিত রসিদ দিয়েছে, কাজেই সবকটা চেক ছিড়ে ফেলেছে সে। আপন মনে হাসল প্যাট্রিক হল। বাইশ হাজার ডলার আদায় করার পরও নকল চেকের গুণে জোডিকে ছিবড়ে বানিয়ে। ফেলতে পারবে সে। পশ্চিমে প্রতারণার দায়ে কারও জেল হলে সমাজে। সেই লোক টিকতে পারে না। নাহ্, গরু বিক্রির পুরো ছাপান্ন হাজার ডলার আদায় না করে ছোঁকরাকে ছাড়া যায় না, সিদ্ধান্ত নিল জুয়াড়ী।

কি ব্যাপার, আজ একা বলে যে? সিসিলিয়া এসে দাঁড়াল প্যাট্রিক হলের পাশে।

এমনি, ডার্লিঙ, উঠে দাঁড়িয়ে কাউন্টারের দিকে হাঁটতে শুরু করে বলল সে। সিসিলিয়ার নগ্ন কাঁধ দেখার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে আছে তার।

একটা খালি এনভেলপ দাও, চিপস ভাঙিয়ে ক্যাশ করার পে, কাউন্টারে গিয়ে ক্যাশিয়ারকে বলল হল।

নীল রঙের একটা ম্যানিলা এনভেলপ ক্যাশিয়ারের হাত থেকে নিয়ে ওপরে নিজের নাম লিখল সে। খামের মধ্যে জোডির রসিদ আর নকল চেকটা ভরে আঠা লাগাল। তারপর ক্যাশিয়ারের হাতে দিয়ে বলল, সেফে রেখে দাও।

মাথা ঝাঁকিয়ে মুখে মেকি হাসি ধরে রেখে নির্দেশ পালন করল ক্যাশিয়ার। গোল্ডরূমের মত জুয়া সর্বস্ব সেলুনে এরকম ঘটনা প্রায়ই  ঘটে। বড় অঙ্কের টাকা জিতে বাড়ি যাওয়ার পথে বিপদ হতে পারে ভেবে অনেক জুয়াড়ীই সেলুনের সেফে টাকা রেখে যায়। আমানত; রক্ষার অলিখিত নিয়ম মেনে চলে সেলুনগুলো। গোল্ডরূমের সেফে টাকা বা মূল্যবান কাগজপত্র রাখা ব্যাংকেরই মত নিরাপদ।

বার কাউন্টারে এসে সিসিলিয়ার মান ভাঙাতে ড্রিঙ্ক অফার করল সে। কিছুক্ষণ তোষামোদ করতেই একটু আগের অবহেলা ভুলে উচ্ছল হয়ে উঠল সিসিলিয়া, প্যাট্রিক হলের কাঁধে মাথা রেখে জিজ্ঞেস করল, নতুন গোলাগুলির খবরটা জানো?

না তো, ডার্লিঙ!

আজ বিকেলে বেল স্প্রিঙস স্টেজ স্টেশনে ওরা আরেকটু হলেই পাইক হান্নাকে ধরে ফেলত। করাল ম্যানের মুখে শুনলাম লোকটা। ডেপুটি অ্যাডামকে আহত করে ল্যানডারের পথ ধরেছে।

পুরো খবর জানার কোনও আগ্রহ প্যাট্রিক হলের নেই বুঝতে পেরে কষ্ট করে বিস্তারিত বর্ণনাটা পেটের মধ্যে চেপে রাখল সিসিলিয়া, তবে পরবর্তী রূপমুগ্ধ কাস্টোমারকে শুনিয়েই ছাড়বে।

সেলুনের সেফে নকল চেকটা রাখতে পেরে স্বস্তি অনুভব করছে প্যাট্রিক হল। ওকে সার্চ করে ওটা পাওয়া গেলে সন্দেহের উদ্রেগ হতে পারত। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না ওই চেক দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলের ইচ্ছে ছিল তার, বা র‍্যাঞ্চারকে সে খুন করেছে। তবু কথা বলার সুযোগ। দিতে চায় না সে, শহরবাসীদের কথা বলার ধরনটা এখানে ভাল না। অনেক সন্দেহভাজন খুনীকেই কোর্ট থেকে ছিনিয়ে এনে ফাঁসিতে লটকেছে রলিন্সের জনতা।

প্যাট্রিক হল সিদ্ধান্ত নিল র‍্যাঞ্চ পর্যন্ত জোডিকে ধাওয়া করে যাবে না। গরু দেখে দেখে বিরক্ত হয়ে শিগগিরই রলিন্সে আসতে বাধ্য হবে ছোঁকরা।

.

মাঝরাত পার করে গোল্ডরূম থেকে বেরল সে। এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা এসে ঢুকল হোটেলে। লণ্ঠনের আলোয় মৃদু আলোকিত হয়ে আছে লবি। হোটেল ক্লার্ক নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে একটা কাউচে। লোকটাকে না জাগিয়ে কাউন্টার থেকে চাবি নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করল প্যাট্রিক হল। কী হোলে চাবি ঢুকিয়ে মোচড় দিয়ে বুঝল দরজাটা খোলা। ঠেলা দিয়ে পাল্লা সরাতেই ভেতরে আলো জ্বলছে দেখতে পেল। ঘরের এককোণে চেয়ার টেনে বসে আছে ডেপুটি অ্যাডাম বেঞ্চলি। মাথায় বাধা লাল ব্যাণ্ডেজটা একসময় সাদা ছিল বোঝা যায় কাপড়ের রক্ত না লাগা অংশ দেখে।

ঢুকলে কি করে? স্বাভাবিক চেহারায় গলার স্বর নামিয়ে জানতে চাইল জুয়াড়ী।

তুমি যেভাবে ঢুকেছু। বসো, তোমার কাছে কয়েকটা প্রশ্নের জবাব। চাই আমি।

দাঁড়িয়েই থাকল প্যাট্রিক হল। সার্চ ওয়ারেন্ট এনেছ?

না। তবে আনতে পারব।

ইচ্ছে থাকলে সার্চ করতে পারো, লুকানোর কিছু নেই আমার, বাম গোড়ালির টানে পেছনে দরজাটা বন্ধ করে দিল প্যাট্রিক হল।

আছে। তোমার ৩৮ সিক্সগানটা লুকানো হোলস্টার থেকে বের করে দেখাও।

কোটের ভেতরে হাত গলিয়ে সিক্সগান বের করে এগিয়ে দিল জুয়াড়ী। ওটা ওর পেছনে ড্রেসারের ওপর নামিয়ে রাখল অ্যাডাম। ডেনভার থেকে এত দূরে এসে বক্স বিতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ল কেন তোমার?

জোডি কোথায় আছে জানতে এসেছিলাম। ওর কাছে টাকা পাই আমি। ভেবেছিলাম র‍্যাঞ্চার হয়তো জানবে,কোথায় আছে তার ছেলে।

তুমি জানতে সে কোথায় ছিল। লুকানোর কিছু না থাকলে মিথ্যে বলছ কেন?

যা ইচ্ছে বলো, তোমার কাছে অস্ত্র আর শেরিফের ব্যাজ আছে, প্যাট্রিক হলের হাসিতে ব্যঙ্গ ঝরে পড়ল। আমাকে মিথ্যুক বলেছ বলে যদি গায়ে হাত তুলি, ওরা আমাকে জেলে ভরবে তোমার মিথ্যে কথা বিশ্বাস করে।

যা জিজ্ঞেস করছি ঠিক ঠিক জবাব না দিলে আমিই তোমাকে জেলে ভরব। জোডির কাছে কত পাও তুমি?

সেটা জোডিকেই জিজ্ঞেস কোরো।

জোডিকে দিয়ে কোনও রসিদে সই করিয়েছ তুমি?

আমি করাব কেন! নিজের ইচ্ছেয় সই করেছে সে।

কাগজটা কোথায়?

নিরাপদ জায়গায় রেখেছি।

তোমার ওয়ালেট দেখাও।

ওয়ালেট বের করে অ্যাডামের দিকে ছুঁড়ে দিল প্যাট্রিক হল। ওটা লুফে নিয়ে উঠে দাঁড়াল অ্যাডাম। ভেতরটা তন্নতন্ন করে খুঁজেও। গুরুত্বপূর্ণ কোনও কাগজপত্র পেল না। টাকাগুলো ওয়ালেটে ভরে ফেরত দিল সে, নতুন পথে জুয়াড়ীর দুর্বলতা আবিষ্কার করার চেষ্টা। করল। স্যাণ্ড ক্রীকে যাওয়ার পথে ডেভিড মুরের র‍্যাঞ্চে যখন থেমেছিলে। অনেক কথাই নিশ্চয়ই বলেছে কুক।

হয়তো বলেছে। আমার ঠিক মনে নেই।

জেরাল্ড, স্ট্যানলির মনে আছে। আমার বাবার উইলের ব্যাপারে কথা বলেছিল কুক।

তো?

টেলিগ্রাম পড়ে তুমি জানতে পেরেছিলে ক্যাটল বেচে ফেলা হয়েছে, বাবার পুরো সম্পত্তি তখন নগদ টাকায়। বাবা মারা গেলে উইল অনুযায়ী সব জোডি পাবে।

আলোচনা কোনদিকে যাচ্ছে বুঝতে পেরে চেহারা কালো হয়ে উঠল প্যাট্রিক হলের। ভয়ের ভাব গোপন রাখতে গর্জে উঠল, তোমার ফালতু প্যাচাল অনেক শুনেছি, এবার দূর হও!

আরেকটা কথা তোমাকে শুনতে হবে, উঠে দাঁড়িয়ে জুয়াড়ীর চোখে চোখ রেখে বলল অ্যাডাম, জিজ্ঞেস করে দেখো বিউয়েলদের, জানালা গলে বেরিয়ে আমিও বক্স বিতে গিয়েছিলাম।

সিক্সগান আর ব্যাজের জোরে যা ইচ্ছে তাই বলতে পারছ, ঠোঁটের কোণ বেঁকে গেল প্যাট্রিক হলের, নাহলে এতক্ষণে ঘর থেকে ঘাড় ধরে বের করে দিতাম।

শার্ট থেকে ব্যাজ খুলে ড্রেসারের ওপর রাখল অ্যাডাম। সিক্সগানটা নামিয়ে রাখল ওটার পাশে। ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, আমাকে ঘাড় ধরে বের করে দিতে না পারলে কাল সকালে জেলখানায় ঘুম ভাঙবে তোমার।

প্রথম ঘুসি ছুঁড়েই অ্যাডাম বুঝতে পারল রাগের মাথায় বোকামি করে ফেলেছে। আহত, ক্লান্ত শরীরে ওর জোর নেই লড়াই করার মত। প্যাট্রিক হলের জ্যাব মুখের ওপর পড়ায় ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরিয়ে এল ওর। শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাল। মাথা ঝাঁকিয়ে দৃষ্টি স্বচ্ছ করার আগেই চোয়ালের হাড়ে প্রচণ্ড শক্তিতে আছড়ে পড়ল জুয়াড়ীর ডান হাত।

দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে পড়েই যেত অ্যাডাম। তেড়ে আসা প্যাট্রিকের একটা ঘুসি এড়াতে পারু। সে মাথা সরিয়ে নেয়ায়। পুরো শক্তিতে হাতটা দেয়ালে আছড়ে পড়ায় ব্যথায় কেঁউ করে উঠল জুয়াড়ী। পেটে পরপর কয়েকটা ঘুসি খেয়ে হাঁ করে বাতাস টানতে টানতে পিছিয়ে গেল দুপা। তারপর পরস্পরের ওপরে ঝাপিয়ে পড়ল ওরা আবার। প্যাট্রিক হলের পায়ে বেধে চেয়ারটা মেঝেতে আছড়ে পড়ায় বিকট শব্দ হলো মাঝরাতের নিস্তব্ধতায়।

কি, শুরু হলোটা কি? পাশের ঘরের লোকটা আচমকা আওয়াজে ঘুম থেকে উঠে চেঁচিয়ে উঠল গলা ফাটিয়ে। ধুপধাপ শব্দে খুলে গেল। করিডরের দুপাশের বেশিরভাগ দরজা। স্যাণ্ডেল পরা পায়ের শব্দ এগিয়ে আসতে শুরু করল প্যাট্রিক হলের ঘরের দিকে।

ওরা নিঃশব্দে হাত চালাচ্ছে, দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল আট দশজন। প্রত্যেকেই অজস্র প্রশ্ন করে কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা করল ওদের দুজনকে ছাড়িয়ে দিয়ে। আমার বাবাকে খুন করেছে এই লোক, অ্যাডামের সংক্ষিপ্ত উত্তরে চুপ হয়ে গেল জুয়াড়ী ছাড়া সবকজন।

আমি খুন করিনি! লোকগুলোর চোখে সন্দেহ দানা বেঁধে উঠছে। দেখে আতঙ্কে চেঁচাল প্যাট্রিক হল, সবাই জানে তখন আমি পাঁচ মাইল দূরে ছিলাম।

হৈচৈ শুনে ঘুম থেকে উঠে স্ট্যানলিও দেখতে এসেছে কি হলো। অ্যাডামের হাত ধরে ঘরের একপাশে টেনে নিয়ে গিয়ে সে বলল, প্রমাণ থাকলে বলো, অ্যাডাম, ওকে জেলে ভরে দিই। অ্যাডাম বুঝতে পারছে নিশ্চিত কোনও প্রমাণ ওর হাতে নেই। প্যাট্রিক হলের সাথে তর্কে জড়িয়ে সব জানিয়ে দেয়ার আগেই ডেপুটি আর লইয়ারের সাথে আলাপ করে নেয়া উচিত ছিল। বিউয়েলদের ওখানে কি ঘটেছে সংক্ষেপে ডেপুটিকে জানাল সে নিচুস্বরে।

আর কিছু? জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল স্ট্যানলি।

আমরা সবাই জানি বাবাকে খুন করলে তার লাভ হবে।

হ্যাঁ, জানি। কিন্তু এই জানাটাই যথেষ্ট নয়, কোর্টে প্যাট্রিক হলকে দাঁড় করালে বিচারক দেখতে চাইবে প্রমাণ।

তারমানে আমরা ওকে অ্যারেস্টও করতে পারব না?

সন্দেহভাজন খুনী হিসেবে চব্বিশ ঘণ্টা ওকে জেলে ভরে রাখা যায়। আইন আছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে ওর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ সংগ্রহ করতে না পারলে ছেড়ে দিতে হবে।

তাহলে ওকে তুমি জেলে ভরো, স্ট্যানলি, অনুরোধের সুরে বলল, অ্যাডাম, আশা করছি ওকে দোষী সাব্যস্ত করার মত কিছু একটা এরই মধ্যে পেয়ে যাব।

ঘুরে দাঁড়াল স্ট্যানলি, জুয়াড়ীর হাত ধরে টানতে টানতে ঘর থেকে বের করে নিয়ে গেল।

ঘরে উপস্থিত একজনও অ্যাডামকে দোষ দিল না। ওরা অ্যাডামের মনের অবস্থা বুঝতে পারছে। ঘুম থেকে ডেকে তুলে যদি ওদের বাবাকে, হত্যা করা হত, আইনের প্রতি অতি শ্রদ্ধা থাকত না ওদেরও।

গোলমালের আর কোনও সম্ভাবনা নেই দেখে একজন দুজন করে নিজেদের ঘরে ফিরে গেল ওরা। ঘরটা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার পর অ্যাডাম ডেস্কের ওপর থেকে ব্যাজ আর সিক্সগানটা তুলে নিল, দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে বেরিয়ে এল ক্লান্ত পায়ে, নিজের ঘরে ঢুকে আছড়ে পড়ল বিছানায়। ঘুমিয়ে গেল চোখ বোজার সঙ্গে সঙ্গেই।

১৬.

সেলের দরজা খোলার ধাতব শব্দে ঘুম ভেঙে গেল এডমণ্ড হুপারের। মাঝরাতে ঘুমিয়েছে সে। জানালায় আলো না দেখে বুঝল এখনও রাত। পাশের সেলে কাকে যেন ঠেলে ঢোকানো হলো। আবার আওয়াজ তুলে বন্ধ হয়ে গেল দরজা। বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করল হুপার।

কনস্টেবলের সাথে নতুন বন্দীর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুনে বুঝতে পারল লোকটা সাধারণ চোর হ্যাঁচোড় নয়। উঠে বসে তাকাল কৌতূহলী চোখে। লণ্ঠনের হলদে আলোয় কনস্টেবল এডকে দেখা গেল দুই নম্বর সেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। সেলের ভেতরে দাঁড়ানো লোকটার চেহারা পোশাকে হুপারের মনে হলো হয় উঁচু শ্রেণীর প্রতারক, নাহলে শহুরে জুয়াড়ী।

আইন আমার কম জানা নেই, খেঁকিয়ে উঠল প্যাট্রিক হল। উকিলের সাথে কথা বলতে চাই আমি।

দুঃখিত চেহারায় মাথা নাড়ল কনস্টেবল। র‍্যাঞ্চারের খুনী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এমন কারও সাথে দেখা করবে না মিস্টার হিগিনস। রলিন্সে সে ছাড়া আপাতত আর কোনও উকিল নেই। ঘুরে দাঁড়িয়ে করিডরের দরজা বন্ধ করে অফিসে ফিরে গেল সে।

চোখ থেকে ঘুম উড়ে গেছে হুপারের, কটে বসে ভাবছে সে। খবরের কাগজে র‍্যাঞ্চারের খুন হওয়ার ব্যাপারটা পড়েছে। র‍্যাঞ্চারের শবযাত্রার দিনই ওকে ঝুলিয়ে দিতে চেয়েছিল লিঞ্চিঙ মব!

ঘটনাটা মনে পড়তেই শিউরে উঠল হুপার। পাশের সেলের। লোকটাই যদি র‍্যাঞ্চারের খুনী হয়ে থাকে, আবারও হামলা চালাতে, পারে উন্মত্ত জনতা। এবার হয়তো রাতের আঁধারে আসবে। কনস্টেবলের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে শুধু ওই লোককে খুন করতে নিয়ে যাবে না, ওকেও নিয়ে যাবে। ধূসর ভোরে ঘুম ভেঙে শহরবাসী হয়তো দেখবে র‍্যাঞ্চারের খুনীর পাশে টেলিগ্রাফ পোল থেকে ঝুলছে হবার্টের দোসর। তোমাকে ধরেছে কেন? মধ্যবর্তী শিকের ফাঁক দিয়ে পারের ফাঁসফেঁসে গলা শুনতে পেল জুয়াড়ী। বিনা কারণে, কাঁধ ঝাঁকাল সে। বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারবে না।

মনে খানিকটা শান্তি ফিরে পেল হুপার। কটে শোয়র পর ঘুমাতে পারল।

সকাল সাতটার সময় ওদের ব্রেকফাস্ট এনে দিল অন্য একজন কনস্টেবল। নটায় প্যাট্রিক হলের সাথে কথা বলতে এল লইয়ার জ্যাক হিগিনস। চার্জ আনার মত কোনও তথ্য প্রমাণ হাতে না এলে মাঝরাতের আগেই শেরিফ তাকে ছেড়ে দেবে জানিয়ে চলে গেল।

তোমার বদলে যদি আমাকে ছেড়ে দেয়া হত! লইয়ার বিদায় নেয়ার পর প্যাট্রিক হলের দিকে তাকিয়ে আফসোসের সুরে বলল হুপার।

কোনও জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করল না জুয়াড়ী। কটে শুয়ে পড়ল ঘুম দেয়ার জন্য। লোকটা নিশ্চিত তাকে ছেড়ে দেয়া হবে, মনে মনে বলল হুপার। ওর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে আপাত ভদ্রলোকের মুখোশের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে লোকটা।

বিকেল পর্যন্ত গভীর ভাবে প্রত্যেকটা আচরণ পর্যবেক্ষণ করে হুপারের মনে হলো প্যাট্রিক হল আর সে একই জগতের বাসিন্দা। সন্ধে নামার অনেকক্ষণ পর ভেতর থেকে একটা তাগাদা অনুভব করল সে। মনে হচ্ছে মূল্যবান সময় যেন ফুরিয়ে আসছে। হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে কি যেন একটা সুযোগ।

মাঝরাতের খানিক আগে হুপার বুঝতে পারল অবচেতন মন তাকে কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। শিকে কপাল ঠেকিয়ে পায়চারিরত প্যাট্রিক হলকে সে ডাক দিল নিচু স্বরে। কৌতূহলী জুয়াড়ী কাছে এসে দাঁড়ানোর পর বলল, আমার হয়ে একটা খবর পৌঁছে দিতে পারবে একজনের কাছে?

কার কাছে? হুপারের অনুকরণে ফিসফিস করে জানতে চাইল প্যাট্রিক হল।

চারপাশে তাকিয়ে নিল হুপার মুখ খোলার আগে। তারপর বলল, হবার্ট। হিউ হুবার্টের কাছে।

আউট-লর নামটা রলিন্সে আসার আগেও শুনেছে জুয়াড়ী। এখানে, এসে শুনতে শুনতে কান পচে যাওয়ার দশা। এতদিন কৌতূহল অনুভব করত সে। কিন্তু এখন হুপারের মুখে নামটা উচ্চারিত হওয়ার পর সতর্ক হিসেবী মনটা সজাগ হয়ে উঠল ওর। পুরো ওয়াইয়োমিঙ খুঁজছে হিউ হবার্টকে! হুপারের কাছ থেকে লোকটার ছদ্ম পরিচয় জানতে পারলে। ভবিষ্যতে তথ্যটা কোন কাজে লেগে যায় কে জানে।

খবর পৌঁছে দিতে যে বলছ, কিসের খবর? অদম্য কৌতূহল চেপে নিরাসক্ত একটা ভাব চেহারায় ফুটিয়ে তুলল প্যাট্রিক হল।

শুধু বললেই হবে আমাকে যাতে এখান থেকে বের করে নিয়ে যায়। নাহলে শেরিফকে আমি ওর পরিচয় জানিয়ে দেব।

তোমাকে জেল ভেঙে বের করবে কিভাবে?

হুবার্টের জন্য এটা কোনও ব্যাপারই না। কনস্টেবলকে ডাক দিয়ে দরজা খুলিয়ে মাথায় বাড়ি মেরেই কাজ সেরে ফেলতে পারবে সে।

তারপর কনস্টেবলের জ্ঞান ফেরার পর তো হিউ হুবার্টের পরিচয় জানবে সবাই। সেই ঝুঁকি হুবার্ট নেবে কেন?

হাসি হাসি হয়ে গেল হুপারের চেহারা। কোনও ঝুঁকি নেই। হুবার্ট মাথায় বাড়ি মারার পর আজ পর্যন্ত বাঁচেনি কোনও লোক।

হিউ বার্টের ইতিহাস খবরের কাগজে পড়ে পড়ে মুখস্থ হয়ে গেছে। প্যাট্রিক হলের। মনে মনে সায় দিল সে হপারের কথায়। মুখে জিজ্ঞেস করল, কি করে বুঝলে সে আশেপাশেই আছে?

আমার সামনে যে সাতজনকে দাঁড় করানো হয়েছিল তাদের মধ্যে। সে-ও ছিল। হুবার্ট ভালমতই জানে সেদিনই কেন ওকে আমি ধরিয়ে দিইনি।.।

হুবার্টকে ধরিয়ে দিলে প্রমাণ হয়ে যেত কার্বনে দেয়া তোমার। স্বীকারোক্তি সত্যি।

হ্যাঁ। কিন্তু সেজন্যে না, আরেকটা কারণ আছে ওকে চিনিয়ে না দেওয়ার। হুবার্ট বন্দী হলে জেল থেকে বেরনোর শেষ সম্ভাবনাটাও নষ্ট হয়ে যেত আমার। তুমি ওকে বলবে আমি যদি ফাঁসিতে ঝুলতে বাধ হই, ওকেও ঝুলতে হবে আমার পাশে।

বেশ। সাতজন রাইডারের মধ্যে কে হিউ হুবার্ট বলে ফেলো।

ইশারায় জুয়াড়ীর কানটা মুখের কাছে আনতে বলল এডমণ্ড হুপার। তারপর ফিসফিস করে এত আস্তে নামটা বলল যে ঠিকমত শুনতে পেল না প্যাট্রিক হল।

আরেকবার বলো, গতবার ঠিক শুনেছে নিশ্চিত হবার জন্য বলল। সে।

কে যেন আসছে! পায়ের শব্দে চমকে পিছিয়ে গেল হুপার, কটে শুয়ে পড়ে ঘুমের ভান করল।

দরজা খুলে জেল করিডরের আবছা আলোয় এসে দাঁড়াল শেরিফ লেম্যান আর একজন কনস্টেবল। দুই নম্বর সেলের তালা খোলার শব্দ। শুনে অজান্তেই ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল হুপার। প্যাট্রিক হলকে নিয়ে ওরা দুজন চলে যাওয়ার পরে ভাবল, হুবার্টকে খবরটা পৌঁছে দেবে তো ওই লোক!

.

জেল থেকে সোজা গোল্ড রূমে গেল প্যাট্রিক হল। একপলক তাকিয়ে দেখেই হুপারের বলা লোকটা নেই নিশ্চিত হয়ে বেরিয়ে এল। আরও কয়েকটা সেলুন ঘুরেও কোথাও হিউ হুবার্টকে দেখতে পেল না। প্রত্যেকটা সেলুনেই আধমাতালরা নিষ্ঠুর চোখের তীক্ষ্ণ-দৃষ্টিতে বিদ্ধ করল তাকে। শহর ছেড়ে ভেগে যাওয়ার অযাচিত পরামর্শ দিল পুরো মাতালরা।

ভেতর থেকেও পালানোর তাগিদ অনুভব করছে প্যাট্রিক হল। লোকজন যদি ভেবে বসে সে-ই র‍্যাঞ্চারকে খুন করেছে, লটকে দিতে দেরি করবে না। এখনও সে শহরে ঘুরে বেড়াতে পারছে কারণ, বেশিরভাগ মানুষের ধারণা হিউবার্ট খুন করেছে বিলি বেঞ্চলিকে।

হেয়েস হোটেলের বারে সবশেষে গেল প্যাট্রিক হল। পেপারে পড়েছে লরা নামের এক পতিতা এই হোটেলেই গ্যানন উইলিসকে উঠতে বলে চিঠি লিখেছিল। লোকটার আসার কথা ছিল আরও দিন পনেরো পরে। সে মারা যাওয়ায় ম্যাভরিক প্লামারকে কাজে লাগিয়েছিল। হুবার্ট। সে-লোকও ডেপুটি স্ট্যানলির হাতে মরেছে। নতুন সঙ্গী যোগাড় করতে হলে হুবার্ট কি হেয়েস হোটেলই বেছে নেবে? শহরে আছে তো হুবার্ট?

হিউ হুবার্টকে বার কাউন্টারে বুক ঠেকিয়ে টুলে বসে থাকতে দেখে একই সাথে স্বস্তি আর ভয় অনুভব করল প্যাট্রিক হল। রলিন্সের রাস্তায় গত কয়েকদিনে সে অনেকবার দেখেছে লোকটাকে। কিন্তু এই প্রথম অনুভব করল সাপের মত শীতল একটা ভাব রয়েছে হুবার্টের চেহারায়। লক্ষ করল বা হাতে মদের গ্লাস ঠোঁটে ঠেকিয়েছে সে, ডান হাতটা সবসময় ঝুলছে হোলস্টারের কাছাকাছি।

পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাওয়াটা হুবার্ট কেমন ভাবে নেবে বুঝতে না পেরে অসুস্থ বোধ করল প্যাট্রিক হল। অনেক নিরীহ লোকের রক্ত লেগে আছে বার্টের হাতে। ওকেও শেষ করে দেবে না তো!

নিজেকে শাসন করে শহর ছেড়ে পালানোর ইচ্ছেটা দমন করল। সে। ভয়ের জায়গা ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে লোভ। বড় ধরনের কোনও কাজ সারবে বলে এত ঝুঁকি নিয়ে পড়ে আছে হিউ হুবার্ট কার্বন কাউন্টিতে। মধ্য সেপ্টেম্বরে করবে সে যা করার। সঙ্গী দরকারলোকটার। সাথে জুটে পড়তে পারলে হয়তো বড়সড় দাও মারা যাবে!

মনস্থির করে হুবার্টের পাশে বার কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়িয়ে হুইস্কির অর্ডার দিল সে।

বার্ট আর বারটেণ্ডার দুজনেই চিনতে পারল প্যাট্রিক হলকে। র‍্যাঞ্চারের খুনী সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া লোকটার ছবি ছাপতে ভুল করেনি রলিন্সের পেপার। হুবার্টের কৌতূহলী দৃষ্টি মুখের ওপর অনুভব। করল জুয়াড়ী। বারটেণ্ডার ড্রিঙ্ক দিয়ে সরে যাওয়ার পর একঢোকে। হুইস্কিটুকু গিলে ফেলে ফিসফিস করে বলল, হুপার একটা খবর জানাতে বলেছে তোমাকে। কথা বলতে চাইলে দশ মিনিটের মধ্যে স্প্রিংয়ে চলে এসো।

জবাবের অপেক্ষা না করে হোটেল থেকে বেরিয়ে এল সে। বোর্ডওয়াক ধরে দক্ষিণে হাঁটতে শুরু করল। রলিন্সে শেষ বাড়িটা পার হয়ে বামে মোড় নিল। ওদিকে একটা ঝরনার পাড়ে ওয়্যাগন থামিয়ে, ক্যাম্প করে ফ্রেইটাররা। জায়গাটা রলিন্স স্প্রিঙ নামে পরিচিত।

আজকেও দুটো ওয়াগন ক্যাম্প করেছে ঝরনার পাড়ে। খুঁটিতে বাধা খচ্চরগুলো অস্থির ভঙ্গিতে থেকে থেকে পা ঠুকছে নরম, ভেজা মাটিতে। রাতের অন্ধকারেও ওয়াগনের সাদা ক্যানভাস দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার। সবকিছু পরিকল্পনা মত এগোচ্ছে দেখে স্বস্তি কিছুটা হলেও ফিরে এল প্যাট্রিক হলের মনে।

লোকজন হিউ হার্টের সাথে তাকে দেখে ফেলুক চায় না সে। কিন্তু মানুষ জনের ধারে কাছে থাকাও দরকার। ভয়ঙ্কর খুনী হলেও হিসেবী লোক হিউ হুবার্ট, লোকজনের কাছে পরিচয় প্রকাশের ঝুঁকি থাকলে হয়তো ওকে খুন করতে চাওয়ার আগে দুইবার ভাববে। ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে, তবে জীবনটাই তো জুয়া। পাকা জুয়াড়ী হিসেবে নিজের অবস্থান ভালই বোঝে সে। হুপারের দূত হিসেবে হিউ হুবার্টের বিশ্বাসযোগ্যতা সে অর্জন করতে পারবে। কিন্তু হুবার্ট যদি তাকে দলে। টেনে না নেয়?

পিঠে সিক্সগানের নল চেপে বসার আগে প্যাট্রিক হল টের পায়নি পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে কেউ। নিঃশব্দে পৌঁছে গেছে হিউ হুবার্ট! যদিফঁদ পেতে থাকো, ঠাণ্ডা, মসৃণ স্বরে বলল সে, খুন হয়ে যাবে চোখের পলক ফেলার আগে।

দুহাত মাথার ওপর তুলল প্যাট্রিক হল, তারপর ঘুরে দাঁড়াল। সামনে দাঁড়ানো লোকটাকে দেখে ধূর্ত হাসি ফুটে উঠল তার চেহারায়। কোনও ফাঁদ বা চালাকি নেই, অ্যাডলার।

১৭.

জুয়াড়ীর পেটে সিক্সগানের নল দাবিয়ে খোঁচা দিল জুডাস অ্যাডলার। তাড়াতাড়ি যা বলার বলে ফেলো।

হুপার বলেছে ট্রায়ালের আগেই ওকে জেল ভেঙে বের করে না আনলে তোমার পরিচয় বলে দেবে শেরিফকে।

ওয়্যাগনগুলোর কাছে একটা কুকুর ডেকে উঠল কয়েকবার। ঘুম জড়ানো স্বরে কথা বলল কে যেন। ইশারায় প্যাট্রিক হলকে পেছনে সরে আসার নির্দেশ দিল জুডাস অ্যাডলার ওরফে হিউ হুবার্ট। চল্লিশ গজ হটিয়ে একটা পড়ে থাকা গুড়ির ওপর জুয়াড়ীকে বসতে বাধ্য করল। তারপর নিচু গলায় স্বগোতক্তি করল, শেষ করে দেব না বিশ্বাস করব। বুঝতে পারছি না।

কথাটা শুনে, প্যাট্রিক হলের মেরুদণ্ড বেয়ে ভয়ের ঠাণ্ডা হোত নেমে গেল। শ্বাস বন্ধ করে ঢোক গিলে বলল, আমি মরলেও হুপার বা লরা তোমার পরিচয় ফাস করে দিতে পারে। কাঁপা কাঁপা হাতে একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোয়া বুকের ভেতর টেনে নিল সে।

লরা বলবে না, হাসল অ্যাডলার। ফাঁসিতে ঝোলার আগে হুপারও মুখ খুলবে না। ওর ট্রায়াল ডিসেম্বরে। তখন সে আমার পরিচয় সবাইকে। জানালেও ক্ষতি নেই, ততদিনে বহুদূর চলে যাব আমি। সবাই মনে করছে র‍্যাঞ্চারকে আমি খুন করেছি। কিন্তু আমি করিনি, বুঝতে পারছি। কাজটা তোমার।

সতীর্থ খুনীর দেখা পেয়েছে বলেই হয়তো বার্টের গলাটা অপেক্ষাকৃত নরম, মনে হলো জুয়াড়ীর কাছে। খানিকটা সাহস ফিরে পেয়ে প্রতিবাদ করল সে, যুক্তি ছাড়া কথা বলছ।

আমরা দুজন ছাড়া স্যাণ্ড ক্রীকে র‍্যাঞ্চারকে খুন করার মত কেউ নেই। কাজটা তুমিই করেছ। গম্ভীর হয়ে গেল হুবার্টের চেহারা। আর আইন তোমাকে খুঁজছে বলেই এখনও আমার হাতে খুন হয়ে যাওনি তুমি।

তাছাড়া লোক দরকার তোমার, হাতের উল্টোপিঠে চেহারার ঘাম মুছে শুকনো গলায় বলল জুয়াড়ী।

আমি শুনেছি তুমিও একটা বিশেষ কাজেই ডেনভার থেকে এসেছ।

হ্যাঁ। বক্স বির জোডি বেঞ্চলির কাছে টাকা পাই। কিন্তু ওই র‍্যাঞ্চের সম্পত্তি ভাগাভাগির আগ পর্যন্ত আরও দুতিন মাস অপেক্ষা করতে হবে আমাকে। দুএক মুহূর্ত অপেক্ষা করে প্রশ্নটা করল সে, এই দুই মাসের মধ্যে করার মত কোনও কাজ আছে তোমার হাতে?

জবাব না দিয়ে দক্ষ হাতে প্যাট্রিক হলকে সার্চ করে দেখল হুবার্ট। .৩৮ টা নেই, অ্যাডাম রাখার পর থেকেই পড়ে আছে ড্রেসারের ওপর। নিজের সিক্সগান হোলস্টারে ঢুকিয়ে হাসল হুবার্ট। তোমার সাহস আছে। আমার সাথে কাজ করার মত?

কি ধরনের কাজ?

বড়। চার লক্ষ ডলারের।

নিচু সুরে শিস বাজাল জুয়াড়ী। সমান ভাগ পাব?

না। ষাট-চল্লিশ। সবকিছু আমাকে ভেবে ঠিক করতে হয়েছে। তারপরও গ্যানন উইলিসের দুগুণ অফার করেছি তোমাকে। পুরো টাকা নগদে পাবে। এক লক্ষ ষাট হাজার ডলার।

ট্রেন-ডাকাতি হলে আমি নেই।

ট্রেন-ডাকাতি না, কাজটা পাহাড়ে।

তাহলে তোমার সঙ্গী দরকার কেন?

পরে বলব। রাজি আছ? জুয়াড়ী সাথে সাথে মাথা ঝাঁকানোয় হাসল। হবার্ট। তাহলে চলো মদ গিলে নতুন বন্ধুত্বকে স্বাগত জানাই।

লোকজন দুজনকে একসাথে দেখুক চায় না ওরা। বড় রাস্তায় উঠে। আলাদা হয়ে গেল দুজন। ফাঁকা ট্রেন ডিপোয় গিয়ে ব্যাগেজ ট্রলির ওপর বসল প্যাট্রিক হল। ডেভিড মুরের সেলুন থেকে একবোতল হুইস্কি নিয়ে এসে তার পাশে বসল হিউ হুবার্ট। বোতলের গলা পর্যন্ত এক চুমুকে নামিয়ে দিয়ে বাড়িয়ে দিল প্যাট্রিক হলের দিকে।

চুমুক দিয়ে মুখ থেকে নামিয়ে বোতলটা দোলাল জুয়াড়ী। কাজের ব্যাপারে কিছু বলো।

দুবছর আগে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে দুজন হান্টারকে এল শিকারে নিয়ে গিয়েছিলাম গ্যানন উইলিস আর আমি। ভয় ছিল না কোনও, হপার আর লরেন্সকে ছাড়া আর কাউকে চিনতে পারেনি পাসি গোলাগুলির মধ্যে। যাই হোক, আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম শিকারী দুজন শিকার করতে আসেনি। ক্যাম্পের ধারেকাছেই সর্বক্ষণ ঘুরঘুর করত ওরা, বড়জোর পায়ে হেঁটে জঙ্গলে ঘুরে আসত।

এক সকালে ওদের ট্র্যাক দেখে আমরা বুঝলাম রাতে ওরা দুজনেই ক্যাম্পের বাইরে ছিল। তাছাড়া ওদের কেনা একটা খাবারের বস্তা উধাও। গ্যানন ওদের শিকারে নিয়ে যাওয়ার পর পায়ের ছাপ অনুসরণ করলাম আমি। অনেকদূর যাওয়ার পর শক্ত মাটি আর পাথরে ট্রাক হারিয়ে ফেললাম।

তারমানে বস্তায় ভরে মূল্যবান কোনকিছু লুকিয়ে রেখেছে ওরা?

তাছাড়া আর কি! দুদিন পরই একটা করে ছোট এল মারল ওরা। বলল যথেষ্ট শিকার হয়েছে। মালপত্র গুছিয়ে বেল প্রিঙ পর্যন্ত পৌঁছে দিলাম ওদের। স্টেজে ওঠার আগে জিজ্ঞেস করে গেল আবার শিকারে আসতে চাইলে কোথায় আমাদের খোঁজ পাবে। ফেরিসের ঠিকানা, দিয়েছি আমি।

তারপর আর চেহারা দেখায়নি ওরা?

না। তবে শিকাগোর পেপারে ওদের ছবি দেখেছি। নাম আলাদা যদিও, তবু প্রথমবার দেখেই চিনেছি। ব্যাংকার, নিজেদের ব্যাংকের চারলক্ষ ডলার নিয়ে পলাতক। পুলিশের ধারণা মেক্সিকোতে চলে গেছে ওরা। কিন্তু আমি জানি সেমিনো মাউন্টিনে টাকা লুকিয়ে রেখে আত্মগোপন করে আছে।

হয়তো এরইমধ্যে ফিরে এসে টাকা নিয়ে গেছে।

অসম্ভব! খারাপ কথা বলে ফেলা দুই ছাত্রকে যেন স্কুল শিক্ষকের ভঙ্গিতে বকে দিল হুবার্ট। ওই ক্যাম্প যাতে শহুরে লোকগুলো না চেনে। সেজন্য গ্যানন আর আমি সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলেছি। উঁচু একটা পাইন গাছ ছিল ক্যাম্পের পাশে, ওটা কেটে ফেলা হয়েছে। ওরকম দুএকটা ল্যাণ্ডমার্ক ছাড়া জঙ্গল ওখানে মাইলের পর মাইল একই রকম। ওরা ক্যাম্পই খুঁজে পাবেনা, লুটের মাল উদ্ধার করবে কোত্থেকে!

তোমরা খুঁজে দেখোনি?

হ্যাঁ। গ্যানন হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দেয়ার পরও অনেক খুঁজেছি। পাইনি। অক্স বোর স্ট্রেম্যানের চাকরি নিয়েছি কারও মনে সন্দেহ না, জাগিয়ে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবার জন্য। বেশ কিছুদিন আগে লরেন্সের হাত ঘুরে আমার একটা চিঠি এসেছে নিউ অরলিন্স থেকে। সেই লোক দুজন। আবার এসে একই ক্যাম্প থেকে শিকার শুরু করতে চায়। লিখেছে ওই ক্যাম্পের চারপাশের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে ওরা নাকি মুগ্ধ, এখনও ভুলতে পারে না!

হাসল প্যাট্রিক হল। চিঠি লিখে জানিয়ে দিয়েছ তুমি রাজি।

অবশ্যই। রলিন্সে পৌঁছে স্টেজে করে ফেরিসে পৌঁছুবে ওরা সেপ্টেম্বরের পনেরো তারিখে। বলেছি মালামাল, ঘোড়াসই ওখানে। উপস্থিত থাকব আমি আর একজন কুক। তুমিই হচ্ছ সেই কুক, প্যাট্রিক। একসাথে ফেরিসে যাওয়া আমাদের উচিত হবে না। তুমি তেরো। তারিখে অক্স বোর দুই নম্বর লাইন ক্যাম্পের কাছে অপেক্ষা করবে। ওখানে ক্যাম্পের মালপত্র বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাব আমি। পনেরো তারিখে আবার দেখা হবে তোমার সঙ্গে।

চেহারায় অস্বস্তি নিয়ে হিউ হুবার্টের দিকে তাকাল জুয়াড়ী। আমাকে তোমার কেন প্রয়োজন এখনও বুঝতে পারলাম না।

ওদেরকে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখতে হলে আমি ছাড়াও আরেকজনকে দরকার। ঘুম থেকে উঠে চার লক্ষ ডলার নিয়ে ওরা সরে পড়েছে দেখতে চাই না আমি। দুজন হলে একজন ঘুমালে অন্যজন পাহারায় থাকতে পারবে। হয়তো টাকাগুলো উদ্ধারের আগে পরিস্থিতি বোঝার জন্য সপ্তাখানেক শিকারের ভান করবে ওরা, কে জানে!

ওরা বস্তাটা খুঁজে বের করলে তারপর?

সশব্দে হাসল হুবার্ট। সে-রাতে বিলি বেঞ্চলি ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে দেয়ার পর তুমি কি করেছিলে, হাওডি বলে বিদায় নেয়ার আগে তার গালে চুমু খেয়েছিলে? কথা বলার জন্য জুয়াড়ীকে হাঁ করতে দেখে হাতের ঝাঁপটায় তাকে থামিয়ে দিল সে। তুমি যা করেছিলে আমরাও তাই করব।

ওদের আসতে আরও তিনসপ্তাহ দেরি আছে। এই কদিন কি হাঁ। করে বসে থাকব?

স্বাভাবিক আচরণ করবে।

ঠিক আছে, অ্যাডলার, বলল, জুয়াড়ী, জোডির জন্য অপেক্ষা করছি এমন একটা ভাব দেখিয়ে সেপ্টেম্বরের বারো তারিখ পর্যন্ত রলিন্সে থাকব। এরমধ্যে টাকা যদি কিছু পাওয়া যায় ভাল, না হলেও কোনও চাপ দেব না ছোঁকরাকে। তারপর ডেনভারে ফিরে যাচ্ছি খবর ছড়িয়ে দিয়ে গোপনে ফেরিসের পথ ধরব।

ভাল। সন্তুষ্টির সাথে মাথা দোলাল হুবার্ট। অক্স বোতে গিয়ে বেতন বুঝে নিয়ে চাকরি ছেড়ে দেব আমি। কেউ সন্দেহ করবে না, হান্টিঙ সীজনে অনেকেই বড় শহর থেকে আসা পয়সাওয়ালা লোকদের শিকারে নিয়ে গিয়ে কাউহ্যাণ্ডদের একবছরের বেতনের সমান টাকা কামায়।

তেরো তারিখে দেখা হবে, বলে ট্রলি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ম্যাক্সওয়েল হোটেলের দিকে হাঁটতে শুরু করল প্যাট্রিক হল। কাজটায় সফল হলে বাকি জীবন বসে খেতে পারবে। ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস। ফিরে আসছে তার, মাথায় নতুন কূটবুদ্ধি খেলতে শুরু করল।

১৮.

শেরিফের অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে জোসেফ ওয়েন। অনেকক্ষণ হলো ডেপুটি স্ট্যানলির জন্য অপেক্ষা করছে সে। তদন্তের অগ্রগতি জানতে হবে। সেপ্টেম্বর প্রায় এসে গেল, এখনও বার্টের কোনও হদিস নেই। বিরক্তিতে চেহারা বিকৃত করে ব্যাণ্ডেজের ওপর দিয়ে দ্রুত শুকিয়ে আসা কাঁধের ক্ষতটা চুলকাল সে ডান হাতে।

সবার ধারণা ওয়াইয়োমিঙ ছেড়ে চলে গেছে হুবার্ট, কিন্তু জোসেফের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে সর্বক্ষণ ধারেকাছেই কোথাও ঘুরে বেড়াচ্ছে লোকটা। প্লামার ডেপুটির হাতে মরার পর বাকি ছয়জন স্যাণ্ড ক্রীক রাইডারের একজনই যে হুবার্ট সে-ব্যাপারে ওর মনে কোনও সন্দেহ নেই।

লু মেয়ার দক্ষিণে পাড়ি জমিয়েছে, জস হারমার এখনও রলিন্সে। বাকি চারজন, পেকোস, অ্যাডলার, লেপম্যান আর কিলরন হার্পার ফিরে গেছে নিজেদের র‍্যাঞ্চে। প্যাট্রিক হলের ব্যাপারে ওর কোনও মাথা ব্যথা। নেই, ওই লোক হিউ হুবার্ট না, ওর চাচা-চাচীকে খুন করেনি ডেনভারের জুয়াড়ী।

শেরিফের অফিসের সামনে হিচর‍্যাকে ঘোড়া থামিয়ে লাফ দিয়ে নামল অ্যাডাম আর স্ট্যানলি। দুজনেই হতাশ, ক্লান্ত। ঘোড়া দুটো বেঁধে ওয়েনের সামনে গিয়ে দাঁড়াল ওরা। এত খেটেও তদন্তে একপাও অগ্রসর হতে পারেনি। লরার খোঁজ বের করতে পারেনি খবর পাঠিয়েছে শাইয়্যানের পুলিশ।

তাড়াতাড়ি আসো, স্ট্যানলি, আজকের মেইলে দারুণ একটা খবর এসেছে! রাস্তার উল্টোপাশে জ্যাক হিগিনসের অফিসের জানালা থেকে চেঁচাল রোসা।

রাস্তা পেরিয়ে একেকবারে সিঁড়ির চার ধাপ অতিক্রম করে দোতলায় উঠে এল স্ট্যানলি। বাকি দুজনও তেমন পিছিয়ে নেই। হুড়মুড় করে অফিসে ঢুকে ওরা দেখতে পেল ডেস্কে বসে আছে রোসা। ডান হাতে ধরা নীল রঙের এনভেলপটা নাড়ছে বাতাস করার ভঙ্গিতে।

ভার্জিনিয়ার পুলিশ চীফ লিখেছে, স্ট্যানলি।

খাম থেকে কাগজের টুকরোটা বের করে ভাজ খুলে এগিয়ে দিল সে। ডেপুটির উদ্দেশে। চোখ বুলাল স্ট্যানলি। রিচমন্ড, ভার্জিনিয়া থেকে পুলিশ চীফ লিখেছে:

চার্লি রবিনসন আর নেলসন আর্চারকে এখানে কেউ চেনে না। হান্টারদের সাথে আলাপ করে বুঝতে পেরেছি ভুয়া নাম ব্যবহার করেছে লোক দুজন। রিচমণ্ড থেকে রলিন্সে গত পাঁচ বছরের মধ্যে শিকার করতে যায়নি কোনও স্পোর্টসম্যান।

একে একে দুই ডেপুটির দিকে তাকাল ওয়েন। কিছু বুঝলে?

দুটো ব্যাপার, উজ্জল হাসিতে ঝলসে উঠল স্ট্যানলির সুদর্শন চেহারা। দুবছর আগে মিথ্যে নাম ভূঁড়িয়ে হোটেলে উঠেছিল রবিনসন আর আর্চার পনেরোই সেপ্টেম্বরে। আবার ওই একই দিনে হফের বার্ন থেকে দুটো করে স্যাডল আর প্যাক হর্স ভাড়া নিয়েছিল গ্যানন উইলিস। ষোলো তারিখে দুই হান্টার বা গ্যানন কেউ রলিন্সে ছিল না।

শিকার শেষে ওরা রলিন্স হয়ে ফিরেছিল? জানতে চাইল অ্যাডাম।

গ্যানন উইলিস ঘোড়া ফিরিয়ে দিয়েছে কবে সে রেকর্ড হফের রেজিস্টারে আছে। তবে রবিনসন বা আর্চার হোটেলে আর ওঠেনি।

এতসব তথ্য আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? একটা সিগারেট, ধরিয়ে অধৈর্য কণ্ঠে জানতে চাইল ওয়েন।

বুঝতে পারছ না, দুই বছরের ফারাকে একই তারিখে একটা কাজ সারবে বলে আসার কথা ছিল গ্যানন উইলিসের? কি কাজ যে এত বিপদ মাথায় নিয়েও কাউন্টি ছেড়ে পালাচ্ছে না হিউ হুবার্ট? শেষ প্রশ্নটা যেন নিজেকেই করল স্ট্যানলি। রোসার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার কি মনে হয়?

হয়তো শিকার করতে নয়, কোন কিছু লুকিয়ে রাখতে এসেছিল আর্চার আর রবিনসন।

সম্মতির ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল স্ট্যানলি। যদি ধরে নিই বড় ধরনের কোনও অপরাধ করার পর অনেকদিন লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে, কি করবে ওরা? একই লোককে ভাড়া করছে, নাহলে গ্যানন উইলিস.. বোধহয় রলিন্সে আসতে চাইত না। তারমানে…

প্রথমবার লুটের মাল লুকিয়ে রেখে গেছে। দ্বিতীয়বার আসছে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হবার পর। জায়গা খুঁজে বের করার জন্য ভাড়া করছে। একই প্যাকারকে… সিগারেটটা পায়ের নিচে পিষে নেভাল ওয়েন।

শাইয়্যানে গ্যানন উইলিস বলেছিল আশি হাজার ডলারের একটা কাজ হাতে আসছে তার। মেলে! সবকিছু মিলে যাচ্ছে খাপে খাপে। এসব কথা আমাদের চারজনের বাইরে যাতে আর কেউ না জানে, সবার ওপর চোখ বুলিয়ে সাবধান করল জেরাল্ড স্ট্যানলি। এতদিন পর্যন্ত যতটুকু আমরা অগ্রসর হয়েছি, খবরের কাগজের কল্যাণে জেনে গেছে হুবার্টসহ শহরের সবাই। এখন থেকে শেরিফ লেম্যান ছাড়া আর কেউ যেন কিছু টের না পায়।

চাচাকেও বলব না? আহত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল রোসা।

না। যত কম মানুষ জানবে হুবার্টের কানে খবর পৌঁছুনোর সম্ভাবনা তত কম। ওকে সতর্ক হয়ে উঠতে দেয়া যাবে না।

ঠিক, সায় দিল অ্যাডাম, সতর্ক নজর রাখব আমরা। ভুয়া শিকারীরা এসে যাদের সাথে এলক শিকারে যাবে তাদেরই কেউ একজন হিউ হুবার্ট। অন্যজনও যে দুধে ধোয়া তুলসি পাতা হবে তা নয়। সঙ্গী হিসেবে প্রথমে গ্যানন তারপর প্লামারকে কাজে লাগাতে চেয়েছে হুবার্ট। এখন কাকে সঙ্গী করবে কে জানে।

হিউ হুবার্ট এত ঝুঁকি নিচ্ছে কেন? জানতে চাইল রোসা।

নিশ্চয়ই সে টের পেয়ে গেছে নকল শিকারীদের উদ্দেশ্য, ওয়েন দৃঢ়কণ্ঠে বলল, লোকগুলোর কাছ থেকে লুটের মাল কেড়ে নিয়ে খুন করবে সে ওদের। আমাদের কারও চেয়ে মাথায় বুদ্ধি কম নেই হুবার্টের, যেহেতু লোকগুলোকে কাছ থেকে দেখেছে কয়েকদিন, অনেক আগেই। আমাদের মত দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে বসে আছে সে।

হেয়েস হোটেলে আর্চার আর রবিনসন ছিল, ওদের চেহারার বর্ণনা বলতে পারেনি কেউ? স্ট্যানলির দিকে তাকাল অ্যাডাম।

না। ওয়েনের দিকে তাকিয়ে হাসল স্ট্যানলি। তবে আরেকটা চিন্তা এইমাত্র মাথায় এল। ফেরিসে বিউয়েলদের ওখানে গিয়ে কদিন ঘুরে এসো না, ওয়েন, ওদিকে হুবার্টের যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে। জিজ্ঞেস করে দেখো, হান্টাররা ওদের স্টোর থেকে কিছু কিনে থাকতে পারে। হয়তো চেহারার বর্ণনা দিতে পারবে।

স্ট্যানলির মুখে যাওয়ারও শুনে হেসে ফেলল অ্যাডাম আর রোসা। লজ্জায় চেহারা লাল হয়ে গেল জোসেফ ওয়েনের। ম্যাক্সওয়েল; হোটেলের নিয়মিত বোর্ডার হওয়ায় ওরা জেনে গেছে ফেরিস থেকে আসা সবকটা স্টেজে ওয়েনের চিঠি থাকে। আহত অবস্থায় অলিভার নিঃস্বার্থ সেবা ওয়েনকে প্রথমে কৃতজ্ঞ করেছে, হঠাৎ তারপর বুঝতে পেরেছে ওরা পরস্পরকে ভালবাসে।

তলে তলে যদিও, তবু তোমরাও কম যাও না, পাল্টা জবাব দিল ওয়েন লজ্জা কাটিয়ে উঠে।

লাজুক বোকা বোকা হাসি হেসে এবার মুখ নামিয়ে নিল স্ট্যানলি। হতাশ রোসা দেখল অ্যাডামের মুখের অভিব্যক্তি বিন্দুমাত্র পাল্টায়নি। কাল সকালে রওনা হয়ে যাব, এক মুহূর্ত ওদেরকে দেখে বলল ওয়েন।

ঘুরে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এগুচ্ছে এসময় অ্যাডাম কথা বলে উঠল, হাতে সময় থাকলে বক্স বিতে গিয়ে জোডির অবস্থা দেখে এসো।

যাব। দরজা, পেরনোর সময় জবাব দিল জোসেফ। তিন দিনের মধ্যেই ফিরে এসে ম্যাক্সওয়েল হোটেলে সাপার টেবিলে দেখা করব তোমাদের সাথে।

.

ঘটনা বিহীন তিনটা দিন পেরিয়ে গেল রোসার জন্য। ওর চাচা কেস। লড়তে পাশের কাউন্টিতে গেছে। দিনগুলো পার করল অফিসের জানালায় দাঁড়িয়ে ধুলোময় রাস্তার ওপর চোখ রেখে। শেরিফের অফিসের ব্যস্ততা দেখল কৌতূহলের সাথে। শেরিফ ইভানস্টোনে গেছে। একজন বন্দীকে নিয়ে আসতে, তবে অ্যাডমি আর স্ট্যানলিরও বিশ্রাম। নেই এদিকে।

এইমাত্র ফ্রেড স্টীল দুর্গ থেকে ফিরল স্ট্যানলি। রোসা জানে ওখানে সে এক সার্জেন্টের বউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েছিল। মহিলা আগে হেয়েস হোটেলের ওয়েট্রেস ছিল। হয়তো সে ভুয়া হান্টারদের চেহারার বর্ণনা দিতে পেরেছে।

কিচ্ছু কাজ হয়নি, ঘোড়া বেঁধে জানালায় দাঁড়ানো রোসার উদ্দেশে চেঁচাল স্ট্যানলি।

দুই ডেপুটি অন্য পথেও এগোতে পারেনি। সেপ্টেম্বরে শিকারের। জন্য পার্টিরা ঘোড়া ভাড়া করেছে কি না বার্নগুলোয় খোঁজ নিয়ে দেখেছে ওরা। বার্ন মালিকরা যেসব পার্টির কথা বলেছে তাদের কেউ আর্চার বা রবিনসন হতে পারে না, প্রত্যেকেই তারা নিজ এলাকায় হান্টার হিসেবে। সুপরিচিত।

রোসাও বসে নেই, গত কদিন মনোযোগ দিয়ে দুটো কাজ করেছে সে। প্রতিটা ট্রেনের ওপর চোখ রেখেছে দুজন শিকারী একসাথে আসে কিনা দেখার জন্য। দিনে দুইবার হোটেল রেজিস্টার পরীক্ষা করে দেখেছে। আর্চার আর রবিনসন, হোটেলে উঠলে সম্ভবত একই নাম ব্যবহার করবে।

তৃতীয়দিন অনেক দেরিতে এল তিন নম্বর ট্রেন। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে সন্ধের আলোয় যাত্রীদের নামতে দেখল রোসা। আজও হতাশ হতে হলো ওকে। আসেনি কোনও হান্টার। ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছে এমন সময় ঘাড়ের কাছে কথা বলে উঠল স্ট্যানলি, দেখা যাচ্ছে তোমার কপালও আমাদের চেয়ে ভাল না। রোসা দেখল অ্যাডামও দাঁড়িয়ে আছে দৈত্যাকার ডেপুটির পাশে। সাপারের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ভুলে গেছ। ওয়েনের আসার কথা? মনে করিয়ে দিল স্ট্যানলি।

ম্যাক্সওয়েলে ঢুকে ওরা দেখল যাত্রা ক্লান্ত, চেহারায় ওদের জন্য সাপার টেবিলে অপেক্ষা করছে জোসেফ ওয়েন। বাঁ কাঁধের স্লিঙ খুলে ফেলেছে সে, কিন্তু ব্যাণ্ডেজ খোলার অনুমতি পায়নি অলিভার কাছ থেকে। সময় নষ্ট না করে কাজের কথা পাড়ল সে, অলিভার বাবা ওদের  চেহারার বর্ণনা দিতে পেরেছে। একজনের বয়স পঞ্চাশ মত হবে। লম্বা। চুল পাকা। চেহারায় অসংখ্য ভাজ। অন্যজন বেঁটে আর মোটা। গালে দাড়ি আছে। কপালে একটা কাটা দাগ। সঙ্গীর চেয়ে বয়সে বছর দশেকের ছোট হবে।

আর কিছু মনে করতে পারেনি হেনরিখ? সামনে ঝুঁকে জিজ্ঞেস, করল অ্যাডাম।

না। বুড়োর মুখ থেকে এটুকু বের করতেই জান খারাপ হয়ে গেছে। খালি প্রশ্ন করে ভবিষ্যতে আমার কি করবার ইচ্ছে!

স্ট্যানলি নোসার দিকে তাকাল। কাজ খুঁজছিলে, পেয়ে গেছ একটা। আমার বন্ধু ফ্রেড ম্যাকলিনের কাছে শাইয়্যানে একটা চিঠি পাঠাতে হবে। ফ্রেড শাইয়্যানের নামকরা একটা পেপারের সাংবাদিক। ওর কাছে হান্টার দুজনের বর্ণনা দিয়ে জানতে চাইবে দুবছর আগে। পলিশ এই বর্ণনার সাথে মেলে এমন দুজন দুবৃত্তকে খুঁজছিল কিনা। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সব পেপার ঘাটতে হবে ওকে। লোক দুজন পুব, দক্ষিণ বা মধ্য পশ্চিমের ওয়ান্টেড হতে পারে। চিঠিতে পুনশ্চ, দিয়ে লিখবে কিছু খুঁজে পেলে যেন মুখ বন্ধ রেখে খবর পাঠায়।

রাতেই লিখে ফেলব, কাল সকালে অফিসে এসে সই করে। দিয়ো। কাজ পেয়ে খুশিই হয়েছে রোসা।

এতক্ষণ ওদের আলাপে বাধা দেয়নি অধৈর্য অ্যাডাম। এখন ওয়েনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল সে, জোডির খোঁজ নিয়েছ?

মাথা ঝাঁকাল ওয়েন। হ্যাঁ। বাসায় ছিল না, রেঞ্জে ছিল ক্যাটলগুলোর কাছাকাছি।

কি করছিল?

একটা ঘোড়ার পিঠে বসে সদ্য প্রসূত একটা বাছুর আর ওটার মাকে দেখছিল। জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছে, জবাব দিল না। কিছুক্ষণ লাল সাদা রঙের বাছুরটাকে দেখে পকেট থেকে কাগজ কলম বের করে একটা দাগ দিল কাগজে। তার কথা বলার ইচ্ছে নেই দেখে বাংকহাউসে গিয়ে ল্যারির সাথে খানিকক্ষণ গল্প করলাম। ল্যারি তোমাকে বলতে। বলেছে যে এই পর্যন্ত সাতটা গুণেছে জোডি।

অলিভার কি খবর? জানতে চাইল রোসা।

আরেকজন লোক ঢুকেছে হোটেল ডাইনিঙ রূমে। রোসার কথার জবাব দিতে গিয়েও হঠাৎ অ্যাডামের চেহারায় পরিবর্তন দেখে থেমে গেল ওয়েন। ওদের টেবিল পাশ কাটানোর সময় পিঠে অ্যাডামের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অনুভব করল প্যাট্রিক হল। অ্যাডাম খোঁজ নিয়ে দেখেছে জেল থেকে ছাড়া পাবার পর গোল্ড রূমে জুয়া খেলা ছাড়া আর কোনদিকে নজর নেই লোকটার।

অ্যাডামের কাঁধে হাত রাখল স্ট্যানলি। গতকাল আবার ওকে জেরা করেছি। জানতে চাওয়ায় বলেছে জোডির জন্য অপেক্ষা করছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে জোডি শহরে না এলে নাকি সে-ই বক্স বিতে গিয়ে। পাওনা দাবি করবে।

ওয়েট্রেস এসে খাবারের অর্ডার নিয়ে চলে যাওয়ার পর ওয়েন বলল, আরেকটা ব্যাপার, ফেরিসে যাওয়ার পথে বেল স্পিঙে রাস্তা যেখানে। দুভাগ হয়ে গেছে সেখানে বড় একটা সাইনবোর্ড দেখলাম। আঙুল একে ল্যানডার আর ফেরিসে যাওয়ার রাস্তা আলাদা করে দেখানো আছে।

তো কি হয়েছে? অ্যাডাম আর স্ট্যানলি বহুবার দেখেছে সাইনবোর্ডটা।

ঠোঁটে মুচকি হাসি নিয়ে অ্যাডামের দিকে তাকাল ওয়েন। পাইক হানার কথা ভুলে গেছ? তোমাকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার পর করাল ম্যান জানিয়েছিল লোকটা ল্যানডার কোন রাস্তা দিয়ে যেতে হয় জানতে চেয়েছিল। কেশে গলা পরিষ্কার করে নিল ওয়েন, হাসি হাসি চেহারায় চোখ বোলাল সবার ওপরে। অতবড় সাইনবোর্ড তার চোখ এড়িয়ে যেতে পারে না। ভাওতা দিয়েছে। কেউ খোঁজ জানতে চাইলে ওরা বলবে সে ল্যানডারের পথে গেছে। করাল ম্যানের চোখের সামনে ল্যানডারের দিকে ঘোড়া ছুটিয়েছে সে, তারপর কিছুদূর গিয়ে ফেরিসের রাস্তা ধরে বাজার্ডস গ্যাপের দিকে এগিয়েছে।

কথা শুনে মনে হচ্ছে সব তোমার চোখের সামনে ঘটেছে, চেষ্টা  করেও গলা থেকে ঠাট্টার সুর তাড়াতে পারল না স্ট্যানলি।

আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি ডিক উলফের র‍্যাঞ্চে, সমুচিত জবাব দেয়ার ভঙ্গিতে চোখ পাকাল ওয়েন। সেরাতে কাউকে ওরা দেখেনি বটে, তবে পরদিন সকালে করালে ওদের একটা সোরেল কম ছিল।

ওয়েনের যুক্তি বুঝতে পারল স্ট্যানলি। স্পাইক হাননা ল্যানডারে যাবার ধোকা দিয়ে স্যাণ্ড ক্রীকের পথ ধরেছে, ঘোড়া বদলে নিয়েছে ডিক উলফের করাল থেকে। উঠে দাঁড়াল সে, যাই শেরিফকে খবরটা দিয়ে আসি।

এক নম্বর সেলের সামনে শেরিফকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল স্ট্যানলি। রোজকার মত আজও হুপারকে একই প্রশ্ন করছে লেম্যান নির্বিকার চেহারায়। হিউ হুবার্ট কে? একই জবাব দিচ্ছে হুপারও। আমি জানি না। স্ট্যানলিকে সাথে নিয়ে করিডরের দরজা বন্ধ করে অফিসে এসে

বসল শেরিফ। কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, হুবার্ট ওকে জেল থেকে পালাতে সাহায্য করছে না দেখে একদিন হয়তো অধৈর্য হয়ে বলে ফেলবে কোন্ পরিচয়ের আড়ালে আত্মগোপন করে আছে খুনীটা।

স্ট্যানলির মুখে পাইক হাননার খবর শুনে গম্ভীর চেহারায় মাথা দোলাল লেম্যান। কালকে স্যাণ্ড ক্রীকে গিয়ে ট্রাক খুঁজতে শুরু করব। ওই লোকের ব্যাপারে আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে গভর্নর। জেল ভাঙার ব্যাপারটা নাকি রাজনৈতিক চক্রান্ত। গভর্নর চায় নভেম্বরের নির্বাচনের আগেই স্পাইক হান্নাকে আমরা ল্যারামি জেলে ঢোকাই।

একাই যাবে, না আমাকেও আসতে হবে?

একাই যাব। হিউ হুবার্টকে ধরার জন্য অ্যাডাম আর তোমার রলিন্সেই থাকা প্রয়োজন।

.

প্যাট্রিক হল সাপার টেবিল ছাড়ল মন ভরা অস্বস্তি নিয়ে। গত কয়েক দিন। ধরেই শহরের হাওয়া হালচাল ভাল ঠেকছে না তার। লক্ষ করেছে অফিসের জানালায় দাঁড়িয়ে পুর্ব থেকে আসা প্রত্যেকটা ট্রেনের ওপর চোখ রাখছে রোসা হিগিনস, দুই ডেপুটির সাথে নিয়মিত নিচু স্বরে আলাপ করছে সাপার টেবিলে। কিসের এত কথা ওদের! লিভারি বার্ন। আর হোটেলগুলোয় খোঁজ খবর নিচ্ছে দুই ডেপুটি। ব্যাঙ্ক ডাকাত আর্চার আর রবিনসনের ব্যাপারে কিছু জেনে যায়নি তো ওরা!

গোল্ড রূমে ঢুকে টেবিল দখল করে বসল জুয়াড়ী ভাবনা চিন্তার। ফাঁকে মদ গেলার জন্য। কিছুক্ষণ পর গল্প করার জন্য এসে জুটল। সিসিলিয়া। আজ মেয়েটার সাহচর্য অসহ্য লাগছে প্যাট্রিক হলের, বাইরে বেরিয়ে এল সে। হাঁটতে শুরু করে পৌঁছে গেল ট্রেন ডিপোর সামনে। এইমাত্র এসে পৌঁছেছে চার নম্বর ট্রেন। অন্ধকারেও হাতের সাদা ব্যাণ্ডেজ দেখে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো জোসেফ ওয়েনকে চিনল সে। তারমানে রোসা আর ওয়েন রাতদিন নজর রাখছে ট্রেনগুলোর

ওপর! আর এক সপ্তাহও নেই এই স্টেশনে এসে নামবে রবিনসন আর আর্চার। ডেপুটিদের সন্দেহ হলে ওদের অনুসরণ করে ফেরিসে পৌঁছে যাবে। দেখবে লোক দুজন জুডাস অ্যাডলারের সাথে দেখা করছে ওখানে।

এই বিপদের কথা বাদ দিলেও আরেকটা সম্ভাবনা মাথা থেকে দূর করতে পারছে না প্যাট্রিক হল। হুপার যদি মুখ খোলে সর্বনাশ হয়ে, যাবে। একই সাথে এই দুটো বিপদ দূর করে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত একটা বুদ্ধি খেলে গেল জুয়াড়ীর মাথায়। মনে মনে নিজের পিঠ চাপড়ে শেরিফের অফিসের দিকে হাঁটতে শুরু করল।

হুপারের সেলের দেয়ালে উঁচুতে বসানো ভেন্টিলেটর দিয়ে ছোট একটা নুড়ি পাথর ছুঁড়ল সে। মৃদু ঠুক শব্দে পড়া পাথরটা নাক ডাকার শুরুগম্ভীর আওয়াজের মাঝে হারিয়ে গেল বলেই হয়তো ঘুম ভাঙল না এডমণ্ড হুপারের। দ্বিতীয় নুড়িটা থুতনির ওপরে পড়ায় চমকে উঠে বসল।

হুবার্ট খবর পাঠিয়েছে, ফিসফিস করে বলল প্যাট্রিক হল।

বেশ অনেকদিন ধরে সুখবর শোনার আশায় উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটাচ্ছিল হুপার, দ্বিধা না করে উঠে দাঁড়িয়ে ভেন্টিলেটরের শিক দুহাতে আঁকড়ে ধরল। কবে আমাকে এখান থেকে বের করবে সে?

একটা কাজে শহরের বাইরে থাকতে হচ্ছে তাকে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তোমাকে মুক্ত করবে ফিরে এসে।

করলেই ভাল, নাহলে ওর পরিচয় জানিয়ে দেব শেরিফকে আমি।

হুবার্ট তোমাকে ডোবাবে না। তবে একটা সাহায্য চেয়েছে সে। সেপ্টেম্বরের চোদ্দ তারিখে হুবার্টের ছদ্মনাম শেরিফকে বলে দেবে তুমি রাগের মাথায়–দুঃখে।

হুবার্ট ধরা পড়ে গেলে আমি জেল থেকে বেরব কিভাবে! বিস্ময়ে হাঁ করে তাকিয়ে থাকল এডমণ্ড হুপার।

ধরা পড়বে না। লুমেয়ার ছাড়া স্যাণ্ড ক্রীকের বাকি পঁচজন জীবিত রাইডারদের কেউ এলাকা ছেড়ে চলে যায়নি। তুমি বলবে লু মেয়ারই আসলে হিউ হুবার্ট। মনে রেখো, লু মেয়ারই হুবার্ট। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বে লু মেয়ারকে ধরার জন্য, কাজ করতে সুবিধা হবে হুবাটের। বিনিময়ে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে জেল ভেঙে পালাতে তোমাকে সে সাহায্য করবে।

১৯.

হুপারকে রলিন্সে আনার ঠিক একমাস পর, বারোই সেপ্টেম্বর একই ট্রেন থেকে নামল অপরিচিত একজন লোক। প্রথমবার দেখেই রোসা বুঝতে পারল চিকন কাঠির মত লম্বা কম বয়েসী এই লোক আর্চার বা রবিনসন হতে পারে না।

রোসার সামনে থেমে দাঁড়িয়ে মাথা থেকে হ্যাট নামাল পাটখড়ি। নড করে জানতে চাইল, ডেপুটি স্ট্যানলিকে কোথায় পাওয়া যাবে বলতে পারো, ম্যাম? রোসা মাথা দোলানোয় হাত বাড়িয়ে বলল, আমি শাইয়্যান থেকে এসেছি, ম্যাম। ফ্রেড ম্যাকলিন।

হাতটা ঝাঁকিয়ে ছেড়ে দিল বোসা, তুমি স্ট্যানলির চিঠি পেয়ে এসেছ।

তুমি জানলে কি করে, ম্যাম?

স্ট্যানলির হয়ে চিঠিটা আমিই লিখেছি। চলে যেতে যেতে কথা। হবে।

ছোট্ট ব্যাগটা প্ল্যাটফর্ম থেকে তুলে নিয়ে রোসার সাথে শেরিফের অফিসে পৌঁছুল ফ্রেড ম্যাকলিন। অ্যাডামের সাথে মীটিঙে বসেছিল। স্ট্যানলি, ঘরে বোসার পেছনে পাটখড়িকে ঢুকতে দেখে চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার। কিছু জানতে পেরেছ, ফ্রেড?

বোধহয়, পকেট থেকে একটা নোটবুক বের করে ডেস্কের ওপর বসল ম্যাকলিন। দুবছর আগে জুলাইয়ের ছয় তারিখে আমাদের পেপারে একটা খবর ছেপেছিল। বাল্টিমোর, মেরিল্যাণ্ডের দুই ব্যাংকার পার্টনার গ্রাহকদের চার লক্ষ ডলার নিয়ে পলাতক। পুলিশ খোঁজ নিয়ে। দেখেছে লোক দুজন কানাডা যাবার ট্রেনে টিকেট কেটেছে, কিন্তু ধারণা করা হয় ওরা আসলে গেছে মেক্সিকোতে।

নাম?

ভিনসেন্ট উইডোফিল্ড আর ওয়ার্ড ল্যানট্রি। উইডোফিল্ড লম্বা, পাকা চুল। ল্যানট্রি বেঁটে-মোটা। চল্লিশ-বিয়াল্লিশ হবে তার বয়স। কপালে কাটা দাগ আর গালে চাপ দাড়ি আছে লোকটার।

কাউকে কিছু বলেনি তো?

না।

স্বস্তির ছাপ ফুটে উঠল স্ট্যানলির চেহারায়। আমাদের ধারণা এ মাসের পনেরো তারিখে আসবে ওরা। ভিনসেন্ট আর ল্যানট্রি। চোখ। খোলা রাখো, কাউকে বুঝতে দিয়ো না এখানে কেন এসেছ। কেউ জানতে চাইলে বলবে এডমণ্ড হুপারের সাক্ষাৎকার নিতে পাঠিয়েছে। তোমার পেপার।

বেশ। আমার পেপার জানতে চাইলে বলব শেরিফের সাথে দেখা করেই ফিরে যাব। রোসার মুখে শুনলাম লেম্যান শহরের বাইরে গেছে। আসবে কবে?

শ্রাগ করল স্ট্যানলি। বলা যায় না কবে আসবে। স্পাইক হাননাকে ধাওয়া করে মনট্যানার দিকেই গেছে কিনা কে জানে! এখনও কোনও, খবর পাঠায়নি।

.

শাইয়্যান থেকে রিপোর্টার আসায় আরও বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ল প্যাট্রিক হল। লক্ষ করে দেখেছে ডেপুটি স্ট্যানলির সাথে লোকটার বেশ মাখামাখি আছে। অ্যাডাম বেঞ্চলির সাথে গোল্ড রূমে এসেও আড্ডা মারছে রিপোর্টার। এগারোই সেপ্টেম্বর ওদের অনুসরণ করে ম্যাক্সওয়েল হোটেল পর্যন্ত এল সে।

হোটেল পোর্চে বসল রিপোর্টার। অ্যাডাম, স্ট্যানলি আর রোসা। নিচু স্বরে কি যেন আলাপ শুরু করল। আজ ওদের সাথে জ্যাক হিগিনসও আছে। দম বন্ধ হয়ে আসার মত একটা অনুভূতি জুয়াড়ীকে গ্রাস করল। রলিস ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছেটাকে বহুকষ্টে দমন করে আবার গোল্ড রূমের দিকে পা চালাল সে। চার লক্ষ ডলারের মায়া ছেড়ে। চলে যাওয়া সহজ কাজ নয়। তেরো তারিখে অ্যাডামের চোখ এড়িয়ে হুবার্টের সাথে দেখা করতে হবে ওকে।

অ্যাডাম বেঞ্চলি দিনে দুইবার করে ওর খোঁজ নিচ্ছে জানে সে। প্যাট্রিক হল ঘোড়া ভাড়া করলে সাথে সাথে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে বার্নগুলোকে। ডেপুটিরা আশা করছে জোডির সাথে দেখা করতে বক্স বিতে যাবে সে। ঠিক তাই করবে সিদ্ধান্ত নিল প্যাট্রিক হল। অ্যাডামকে আট-দশ ঘণ্টা পেছনে ফেলে দেবে সে।

গোল্ড রূমের সামনে চমৎকার একটা বে ঘোড়া থেকে একজন কাউহ্যাণ্ডকে নামতে, দেখল প্যাট্রিক হল। স্যাডলে কারবাইন ঝুলছে দৈখে মনে মনে খুশি হলো। লোকটাকে অনুসরণ করে প্রবেশ করল। গোল্ড রূমের ভেতরে।

জুয়াড়ীর চোখের সামনে হুইল অভ ফরচুনে এক ডলার খোয়াল কাউহ্যাণ্ড। তারপর ডাইস টেবিলে হারল আরও দশ ডলার। লোকটার পাশে দাঁড়িয়ে নিজে একদান খেলল প্যাট্রিক হল। জেতা চিপসগুলো নিজের দিকে টেনে বলল, তোমার ঘোড়াটা চমৎকার। বেচবে?

ওর আপাদমস্তকে নজর বোলাল কাউহ্যাণ্ড চেহারায় বিরক্তি নিয়ে। তারপর বলল, দুইশো ডলার দেয়ার সাধ্য আছে তোমার? বেচার ইচ্ছে নেই বলেই অসম্ভব দাম হেঁকেছে সে।

রাজি। স্যাডল গিয়ার সহ তিনশো দেব।

টেবিলে গিয়ে বসল ওরা দুজন, কয়েকটা পেগ পেটে পড়তেই জুয়াড়ীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গেল কাউহ্যাণ্ড। প্যাট্রিক হলের পিঠ চাপড়ে জড়ানো গলায় বলল, আর কেউ হলে বেচতাম না। কিন্তু তোমার জন্য, দোস্ত, দুইশো ডলারেই রাজি।

বিল অভ সেল বুঝে নিয়ে কাউহ্যাণ্ডের হাতে দুইশো ডলার গুঁজে দিল প্যাট্রিক হল। কাউন্টারে গিয়ে ক্যাশিয়ারের কাছ থেকে সেফে রাখা এনভেলপটা সংগ্রহ করল। কাগজ দুটো ওয়ালেটে খুঁজে বেরিয়ে এল কাউহ্যাণ্ডের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে।

রাত সাড়ে এগারোটায় বের স্যাডলে চাপল প্যাট্রিক হল। ম্যাক্সওয়েল হোটেলের এক ব্লক আগে ঘোড়া বেঁধে রূম থেকে কম্বল নিয়ে ফিরে এল। তারপর তারার আবছা আলোয় পথ দেখে ঘোড়া ছোটাল উত্তরে, স্যাণ্ড ক্রীকের দিকে।

.

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে এসময় বেল প্রিঙ স্টেজ স্টেশনে পৌঁছল সে। রেস্টুরেন্ট মাত্র খুলেছে। ঘোড়া করালে রেখে নাস্তা করল সে। ঘোড়াটাকে তিন ঘণ্টা বিশ্রাম দিয়ে এগুলো আবার। বাজার্ড গ্যাপে পৌঁছল দুপুর বেলায়।

সে জানে সকালে ম্যাক্সওয়েল হোটেলের ডাইনিঙ রূমে ওকে না দেখে অ্যাডাম বেঞ্চলির সন্দেহ হবে। খোঁজ নিলেই বুঝে যাবে শহর ছেড়েছে সে। ধরেই নেবে পাওনা টাকা সংগ্রহ করতে বক্স বিতে যাচ্ছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই, আপন মনে হাসল প্যাট্রিক হল, ডেপুটির চেয়ে অন্তত বিশ মাইল এগিয়ে আছে সে।

জোডির সাথে কথা বলার জন্য বক্স বিতে দুঘণ্টা কাটানোই। যথেষ্ট। টাকা পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, তবে বক্স বি হয়ে অক্স বোর দুই নম্বর লাইন ক্যাম্পের দিকে গেলে অনুসরণ করে আসা অ্যাডাম। বেঞ্চলি ওর আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারবে সেই সম্ভাবনা কম।

ডিক উলফের র‍্যাঞ্চ পাশ কাটানোর পর স্ক্যাবার্ড থেকে খুলে কারবাইনটা পরীক্ষা করল। গুলি না থাকলে সামনে ক্যান্টলিন র‍্যাঞ্চের স্টোর থেকে কিনে নেবে। চেম্বার খালি, তবে ম্যাগাজিনে পাঁচটা শেল দেখে সন্তুষ্ট হয়ে আবার স্ক্যাবার্ডে রেখে দিল কারবাইন। অ্যাডামের সাথে তার রাইফেল যুদ্ধ হওয়ার কোনও কারণ নেই। মুখোমুখি যদি দাঁড়াতেই হয়, ব্রেস্ট হোলস্টারে রাখা .৩৮ টাই বেশি পছন্দ তার।

স্যাণ্ড ক্রীকের কাছে এসে ক্যান্টলিন র‍্যাঞ্চ এড়ানোর জন্য পশ্চিমে সরে গেল সে, এগোল প্রেইরির মধ্যে দিয়ে। চারপাশে অসংখ্য গরু চরছে। ওমাহা থেকে আনা অ্যাডামের হেফারগুলোও আছে ওগুলোর মাঝে। ওগুলোর মালিক হতে পারলে গর্ব হবে যেকোন র‍্যাঞ্চারের।

শেষ বিকেলে বক্স বির পরিচিত গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকল প্যাট্রিক হল। করালের কাছে একজন কাউহ্যাণ্ডকে কুড়াল ধার করতে দেখে এগিয়ে গেল। জিজ্ঞেস করল জোডি কোথায়।

চেহারায় জুয়াড়ীকে চেনে না ফোরম্যান ল্যারি। বাইরে গেছে। ছেলেটা, কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরবে, জানাল সে। হাতের ইশারায়। একটা বেঞ্চ দেখাল। করালে ঘোড়া রেখে ওখানে বসে জিরিয়ে নাও।

কটনউড গাছের নিচে বেঞ্চটা। ঘোড়া করালে বেঁধে এসে বসল। প্যাট্রিক হল। একটা সিগারেট ধরিয়ে কাউহ্যাণ্ডের কাজ দেখতে লাগল। এখানে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করার ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না, ভাবল সে। অস্বস্তি ভরে দেখল র‍্যাঞ্চ হাউসের পোর্চটা। এখানে দাঁড়িয়েই সেরাতে শুলি করে মেরেছে সে র‍্যাঞ্চারকে। অ্যাডাম সন্দেহ করছে কাজটা তার। এখানে এসেছে দেখতে পেলে যদি অ্যাডাম গোলাগুলি করে, ফলাফল যাই হোক কালকে হুবার্টের সাথে দেখা করাটা অসম্ভব হয়ে যাবে।

কুড়ালটা ধার দেয়া শেষে উঠে দাঁড়াল ফোরম্যান, ওর দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার জন্য সাপারের কথা বলে আসি।

সাপার পর্যন্ত থাকব না আমি, দ্রুত বলল প্যাট্রিক হল। কোথায় গেছে জোডি, এখনও আসছে না কেন?

হাসল ফোরম্যান। জোডি পঞ্চাশটা গোনায় ব্যস্ত।

পঞ্চাশটা কি?

ফোরম্যানের হাসি আরও চওড়া হলো। জোডি এলে তাকেই। জিজ্ঞেস কোরো। সাপারের কথা বলতে র‍্যাঞ্চহাউসের ভেতরে চলে গেল সে।

ছায়া ঢাকা বেঞ্চে একা বসে আছে প্যাট্রিক হল। অস্বস্তি লাগছে। তার। উঠে দাঁড়িয়ে করাল থেকে ঘোড়াটা এনে বেঞ্চের পাশে বেঁধে বসল আবার।

আধঘণ্টা পর একটা পনিতে চড়ে এল জোডি বেঞ্চলি, কটনউড গাছের ছায়ায় বসে থাকায় প্যাট্রিক হলকে প্রথমে দেখতে পেল না। হাত নাড়ানোয় বুঝতে পারল ওখানে কেউ আছে। বেঞ্চের সামনে ঘোড়া থামিয়ে লাফ দিয়ে নামল সে, জুয়াড়ীকে দেখে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, তুমি!

কেন, আসতে বারণ আছে নাকি?

ঋণ শোধ দেয়ার সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি।

তা ঠিক, সায় দিয়ে হাসল প্যাট্রিক হল। কিন্তু টাকাটা এখনই শোধ করে দিলে শুধু ষাট ভাগ পেলেই খুশি থাকব আমি। বাইশ হাজার ডলারে তোমাকে দিতে হবে মাত্র তেরো হাজার দুশো ডলার। কি?

জবাব দেয়ার সুযোগ পেল না জোডি, ওদের কথা শুনে র‍্যাঞ্চহাউসের পোর্চ থেকে লাফ দিয়ে নেমে সিক্সগান হাতে তেড়ে এল ফোরম্যান। গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছে সে, এই র‍্যাঞ্চে আসার সাহস পেলে কোথায়! ভাগে! দশ গুনে গুলি করব আমি। এক…

বেঞ্চের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে এক লাফে বের পিঠে চাপল প্যাট্রিক হল, ঝুঁকে পড়ে দড়ির গিট খুলে ঘোড়া ছোটাল গেট লক্ষ্য করে। গেটের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে এমন সময় পেছনে একটানা ছয়বার গর্জে উঠল সিক্সগান। বুলেটগুলো লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত করতে না পারলেও কাছ দিয়ে গিয়ে আতঙ্ক জাগাতে পারল লক্ষ্যবস্তুর মনে।

পাঁচমাইল দূরে ক্যান্টলিন র‍্যাঞ্চে পৌঁছুনোর আগ পর্যন্ত পেছনে তাকিয়েও সময় নষ্ট করল না প্যাট্রিক,হল। সন্ধে সাতটায় র‍্যাঞ্চে পৌঁছে দেখল কোরম্যান ছাড়া আর কেউ নেই, কাউহ্যাণ্ডরা অন্যান্য র‍্যাঞ্চের কাউহ্যাণ্ডদের সাথে রঙ্গিসে গেছে রাউণ্ডআপ করতে। এখানেও থামত না, কিন্তু সকাল পর্যন্ত বিশ্রাম না নিলে ঘোড়াটা ছুটতে পারবে না বুয়ে থেকে যেতে বাধ্য হলো। ঘোড়া স্টলে রেখে এসো, জুয়াড়ীকে চেনে বলে খাতির করল কোরম্যান, আমি তোমার খাবারের ব্যবস্থা করছি।

পরদিন তেরো তারিখ ভোরে রওনা হয়ে গেল প্যাট্রিক হল। আজ তাকে হুবার্টের সাথে দেখা করতেই হবে। কোরম্যানের মনে যাতে ভুল ধারণা জন্মায় সেজন্য রলিন্সের পথে কিছুদূর এগুলো সে। তারপর একমাইল দূরে গিয়ে পেছনদিকটা দেখল তীক্ষ্ণ নজরে। বক্স বি আর ক্যান্টলিন র‍্যাঞ্চের মাঝের জমি পার হচ্ছে একজন অশ্বারোহী। ঘোড়াটা স্ট্যালিয়ন! অ্যাডাম বেঞ্চলিও স্ট্যালিয়নে চড়ে।

আগেই আন্দাজ করেছিল, চমকাল না জুয়াড়ী। বক্স বিতে সম্ভবত কাল রাতে পৌঁছেছে অ্যাডাম। ওর খবর জেনেছে ফোরম্যান বা জোডির মুখে। তারপর বুঝে নিয়েছে কোথায় রাত কাটাবে সে। ভোরে উঠেই ক্যান্টলিন র‍্যাঞ্চের উদ্দেশে ঘোড়া ছুটিয়েছে।

গতি বাড়ানোর জন্য বের পেটে স্পরের খোঁচা দিল প্যাট্রিক হল। চিন্তার আপাতত কোনও কারণ নেই, ক্যান্টলিনে গিয়ে প্রথমে কোরম্যানের কাছ থেকে ওর খোঁজ জানবে অ্যাডাম। তারপর সে রলিন্স যাচ্ছে মনে করে ঘোড়া ছোটাবে।

ওর কিছুদূর সামনেই ফেরিস আর সেমিনো মাউন্টিনের মাঝখানের সরু প্যাসেজ। ওই পথে গেলে ওকে ধরে ফেলতে পারবে অ্যাডাম। না পারলেও অন্তত খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাবে, নজর রাখতে পারবে ওর ওপর। অ্যাডামের চোখের সামনে হুবার্টের সাথে দেখা করার কোনও ইচ্ছে নেই প্যাট্রিক হলের।

ট্রেইলের বামপাশে সেমিনো পর্বতের গায়ে জন্মানো জঙ্গল আধমাইল দূরে এসে থেমে গেছে। ট্রেইল ছেড়ে সেদিকে এগুলো জুয়াড়ী। দুশো গজ এগুনোর পর সামনে শুকনো, শক্ত জমি। হাল্কা হলেও ঘোড়র পায়ের ছাপ পড়বে, অনুসরণ করতে অসুবিধে হবে না। কোনও দক্ষ ট্র্যাকারের। ট্রাকগুলো অ্যাডামের চোখে পড়ুক না পড়ুক, এখন আর কিছুই যায় আসে না প্যাট্রিক হলের।

সমতল জমি নিচু হয়ে গেছে হঠাৎ। কিনারায় পড়ে আছে বড় বড় বোল্ডার। ঢাল বেয়ে ঘোড়া নামিয়ে থামল সে। একহাতে বের দড়ি ধরে স্ক্যাবার্ড থেকে নামিয়ে আনল কারবাইন। একটা পাথরে ঘোড়ার দড়ি পেঁচিয়ে বোল্ডারের আড়ালে সরে এল। পাম্প করে কারবাইনের চেম্বারে একটা শেল ঢুকিয়ে কাঁধে ঠেকাল ওটা ঢালের উঁচুতে বুক রেখে।

ট্রিগারে আঙুল বসিয়ে অসীম ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করছে। অ্যাডাম যদি ট্র্যাক করতে না পারে, চলে যেতে দেবে সে অক্ষত অবস্থায়। কিন্তু যদি অনুসরণ করে এগিয়ে আসে, আজ কেউ ওকে বাচাতে পারবে না। অ্যাডামকে খুন করে হলেও বার্টের সাথে দেখা তাকে করতেই হবে। চার লক্ষ ডলার ছেড়ে দেয়া যায় না!

আধঘণ্টা পর দেখা গেল অ্যাডামকে। সহজ ভঙ্গিতে ঘোড়ায় বসেছে। সে, রলিন্স যাবার রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। জুয়াড়ী যে তার সামনে আছে সে ব্যাপারে অ্যাডাম নিশ্চিত। আগে বেড়ে ধরতে চায় না।

প্যাট্রিক হল যেখানটায় রাস্তা ছেড়েছে তার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছে অ্যাডাম বেঞ্চলি। কারবাইন তাক করল জুয়াড়ী। অ্যাডাম ট্রাক দেখে এদিকে এগিয়ে আসতে শুরু করলেই গুলি করবে মাথায়। ঘোড়াটাকে নিজের ইচ্ছেয় চলতে দিয়ে একটা সিগারেট বানিয়ে ধরাল অ্যাডাম, যেখানে জুয়াড়ী রাস্তা বদলেছে সে জায়গাটা পেরিয়ে গেল অজান্তেই। টের পেল না নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ভাগ্য আজ বাচিয়ে দিল তাকে।

কাঁধ থেকে কারবাইন নামিয়ে নিল প্যাট্রিক হল। ট্রেইলের দিকে তাকিয়ে থাকল দশ-পনেরো মিনিট। অ্যাডাম রলিন্সের পথে চোখের আড়ালে চলে যাওয়ার পর উঠে দাঁড়িয়ে কাপড় থেকে ধুলোমাটি ঝাড়ল। কারবাইনটা স্ক্যাবার্ডে ঢুকিয়ে রেখে স্যাডিলে চাপল। এখন হুবার্টের সাথে দেখা করতে যাবার পথে আর কোনও বাধা নেই।

২০.

চারমাইল পুবে সেমিনো পর্বতের কাছাকাছি অক্স বো র‍্যাঞ্চের দুই নম্বর লাইন ক্যাম্পটা। দেখে মনে হয় পরিত্যক্ত। পাশে জঙ্গলের দিকে বয়ে যাচ্ছে একটা ঝর্না। ছোট ছোট বাধ বানিয়েছে বিভারের দল, ফলে অনেকটা জায়গার মাটি সিক্ত হয়েছে পানিতে।

ওখানে পৌঁছুনোর পর গাছের আড়াল থেকে ডাক দিল হবার্ট। জঙ্গলে ঢুকে প্যাট্রিক হল দেখল দুটো প্যাক হর্সের দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে হিউ হুবার্ট। সময় নষ্ট না করে কাজের কথা জানতে চাইল সে, এখানে আসতে কেউ তোমাকে দেখে ফেলেনি তো, প্যাট্রিক?

না। অ্যাডাম বেঞ্চলির ব্যাপারটা খুলে বলল জুয়াড়ী। তারপর রাগে দুহাত মুঠি করল। ভুল করেছি। ওকে শেষ করে দেয়া উচিত ছিল। আমি ওর সামনে ট্রেইলে নেই টের পেয়ে এখন ফিরে আসতে পারে লোকটা।

চোখ সরু করে দুএক মুহূর্ত ভাবল হুবার্ট, তারপর নিষ্ঠুর একটুকরো হাসি খেলে গেল তার ঠোঁটে। তোমাকে ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসব আমি। কয়েকটা গরু ট্রেইলে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে তোমার ট্র্যাক মুছে ফেলব। অ্যাডামের কপাল ভাল হলে আমার সাথে দেখা হবে না ওর।

ঝোপঝাড়ে বুজে যাওয়া উঁচু একটা ট্রেইল ধরে পাহাড়ের দিকে। এগুলো ওরা দুজন। পাক হর্স দুটো প্যাট্রিক হলের দায়িত্বে ছেড়ে দিয়ে পথ দেখাচ্ছে হুবার্ট ওরফে অ্যাডলার। অসংখ্য পাইনগাছ জন্মেছে। পাহাড়ের গায়ে। ওগুলোর মাঝে হলুদের ছোপ দেখে চেনা যাচ্ছে মধ্য, সেপ্টেম্বরের অ্যাসপেনগুলোকে। সামনের পথ আরও অনেক খারাপ। বিপজ্জনক, বলল হবার্ট, আমি পথ না দেখালে বাকি জীবন চেষ্টা করেও ক্যাম্প খুঁজে পাবে না আর্চার বা রবিনসন।

অপেক্ষাকৃত কম ঢালু ট্রেইল ধরে পাহাড়ের গায়ে আরও দুমাইল, এগুলো ওরা দুজন। তিন হাজার ফুট উচ্চতায় উঠে এল। প্রায় পুরো পথই হেঁটে এগুতে হলো ওদের। একবার একটা মাদি ভালুক তেড়ে আসতে গিয়েও সিদ্ধান্ত বদলে বাচ্চাসহ ঢুকে গেল ট্রেইলের পাশে গভীর জঙ্গলে।

পাহাড়ের একটা তাকে উঠে বামে মোড় নিয়ে সরু একটা শিকারের ট্রেইল ধরে আধমাইল এগুলো ওরা। তারপর ডানদিকের পাহাড়ে উঠতে শুরু করল অবিশ্বাস্য ঝুঁকি নিয়ে। কোনও ট্রেইল এখানে কোনকালে ছিল বলে মনে হলো না প্যাট্রিক হলের। পা ফস্কালে ঢাল বেয়ে কয়েক–হাজার ফুট গড়িয়ে নামতে হবে। গাছের গুঁড়ি বা পাথরে বাড়ি খেলে দেহের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। কেউ আসে না। এদিকে, মন্তব্য করল হুবার্ট।

পাহাড়ের ওপরে একটা মেসামত জায়গায় উঠে এল ওরা। একটা বিশাল হরিণ ওদের দেখে জঙ্গলের ভেতরে ছুটে পালাল। ওরা আওয়াজ পেল হরিণটা পানির ওপর দিয়ে শব্দ তুলে ছুটছে। আমরা ওই ঝর্না ধরে এগিয়েই ক্যাম্পে পৌঁছে যাব, বলল হুবার্ট।

জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ঝর্না অনুসরণ করে এগুলো ওরা। আরেকটা মোটামুটি খাড়া ঢাল বেয়ে একটা ক্লিফের পাদদেশের সমতল ভূমিতে পৌঁছে থামার নির্দেশ দিল হুবার্ট। ক্যাম্পে এসে গেছি। প্যাকহর্স দুটো থেকে মালপত্র নামিয়ে একটা তাঁবু দাড় করাল ওরা দুজন। এই তাবুতে থাকার সুযোগ ওদের হবে না, বাইরে ঘুমাতে হবে। ওদের। তবু আর্চার আর রবিনসনের জন্য। এক সপ্তাহের খাবার এনেছে। হবার্ট চারজনের আন্দাজে। ক্যাম্প করার আনুষঙ্গিক অন্যান্য জিনিস আনতেও ভুল করেনি।

ওদের সাথে ফেরিসে দেখা করব আমি, কাজ শেষে বলল হুবার্ট, রলিস থেকে ফেরিসেই আসবে ওরা।

প্যাট্রিক হলের ঘোড়াটা ছাড়া বাকি তিনটে নিয়ে চলে গেল সে। জানে চার লক্ষ ডলারের মুলো ঝুলানোর পর ক্যাম্প থেকে নড়বে না জুয়াড়ী গায়ে আগুন লাগলেও।

.

মঙ্গলবার, চোদ্দই সেপ্টেম্বরে এডমণ্ড হুপার হার্টের পরিচয় বলে দিয়ে স্ট্যানলিকে চমকে দিল। পাঁচমিনিট পর অফিসে ঢুকে উত্তেজিত চেহারায়। ডেস্কের ওপর বসল ডেপুটি। জিজ্ঞাসু চোখে কনস্টেবল এডকে তাকাতে দেখে বলল, এডমণ্ড হুপার হুবার্টের ছদ্মনাম বলে দিয়েছে!

কে?.

লু মেয়ার! বাকি ছয়জন স্যাণ্ড ক্রীক রাইডারদের মধ্যে একমাত্র সে-ই চলে গেছে কাউন্টি ছেড়ে।

লোকটা কোথায় গেছে সে সম্বন্ধে হুপার কিছু বলেছে?

না, তবে আমরা জানি সে দক্ষিণে স্নেক রিভারের দিকে গেছে। অ্যাডাম বা ওয়েন যেকোন একজনকে নিয়ে আজই রওয়ানা হয়ে যাব আমি।

ম্যাক্সওয়েল হোটেলের টেবিলে ব্রেকফাস্ট নিয়ে মাত্র বসেছে। ওয়েন, অ্যাডাম আর রোসা। প্যাট্রিক হলের গায়েব হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা অ্যাডাম শোনাচ্ছে এমন সময় ওখানে হাজির হলো স্ট্যানলি। সে চেয়ার টেনে বসার পর অ্যাডাম বলল, আমি মনে করেছিলাম আমার সামনে ট্রেইলে কোথাও আছে প্যাট্রিক হল। কিন্তু শহরে ফিরে খবর নিয়ে দেখেছি হোটেলে ফেরেনি। বুঝতে পারছি না কোথায় গেছে।

আমি বোধহয় জানি কোথায় গেছে, বলল স্ট্যানলি। দক্ষিণে স্নেক রিভারের দিকে।

ওদিকে যাবে কেন? জানতে চাইল ওয়েন।

হয়তো হুবার্টের সাথে যোগ দিতে গেছে। এডমণ্ড হপার কিছুক্ষণ আগে বলে দিয়েছে যে লু মেয়ারই আসলে হিউ হুবার্ট। আমরা জানি স্নেক রিভারের ব্যাগসে একটা র‍্যাঞ্চে কাজ নিয়ে চলে গেছে লোকটা। আমি হুবার্টকে ধরে আনতে যাচ্ছি, তোমাদের মধ্যে কে যাবে আমার সাথে?

আমি, অ্যাডামকে হাঁ করতে দেখে দ্রুত বলে উঠল জোসেফ ওয়েন।

আমি এখানেই থাকছি তাহলে, গম্ভীর চেহারায় সবার দিকে  তাকাল অ্যাডাম। আগেও একবার স্বীকারোক্তি দিয়ে পরে অস্বীকার করেছে হুপার। আমি জানি না কেন, তবে মনে হচ্ছে লোকটা আমাদের  ভুল পথে ঠেলে দিতে চাইছে।

আমার তা মনে হয় না, প্রতিবাদ করল ওয়েন। মিথ্যে বলে। হুপারের কি লাভ!

তবু… কথা শেষ করল না চিন্তিত অ্যাডাম।

বেশ, ট্রেনগুলোর ওপর তুমি আর বোসা নজর রাখো, বলল। স্ট্যানলি। কালকে যদি ভয়া হান্টার দুজন আসে, ওদের অনুসরণ করে হয়তো ব্যাগসে পৌঁছে যাবে তুমি। ওদিকে প্রচুর হরিণ আছে। স্নেক, রিভারেই হয়তো ক্যাম্প করেছিল ওরা গ্যানন উইলিস আর হার্টের সাথে। সেজন্যেই সম্ভবত স্নেক রিভারে গেছে হুবার্ট। উঠে দাঁড়াল ডেপুটি স্ট্যানলি। চলো, ওয়েন, এখনই রওয়ানা হব আমরা।

ওরা দুজন তাড়াহুড়ো করে চলে যাবার পর রোসা অ্যাডামের দিকে তাকাল। বক্সি বিতে গিয়ে জোডির দেখা পেয়েছ, অ্যাডাম? কেমন আছে সে?

চিন্তা কেটে গিয়ে মুহূর্তের জন্য উজ্জ্বল হয়ে উঠল অ্যাডামের মুখ। হাসল সে। ভাল, আগের চেয়ে অনেক ভাল আছে ও।

.

চোদ্দই সেপ্টেম্বর যেদিন হুপার মুখ খুলেছে সেদিনের তিন নাম্বার ট্রেনে রলিন্সের পথে পশ্চিমে আসছে দুজন লোক। ওদের ব্যাগেজের সাথে দুটো গানকেস আছে। অপেক্ষাকৃত বয়স্ক লোকটার চেহারায় অসংখ্য। ভঁজ, ওয়ালনাটের মত। চোখে উদ্বিগ্ন চাহনি। শাইয়্যানে প্রকাশিত দি নিউজ পত্রিকাটি পড়ছে সে গভীর মনোযোগের সাথে। হিউ হুবার্টের কীর্তি কাণ্ড ফলাও করে ছাপিয়েছে আজকের পত্রিকায়।

অবস্থা সুবিধার মনে হচ্ছে না আমার পাশে বসা বেঁটে লোকটার কানের কাছে মুখ এনে বলল ওয়ালনাট।

কপালে কাটা দাগওয়ালা লোকটা হিউ হুবার্টের ওপর লেখা আর্টিকেলটা আগেই পড়েছে। হাসল সে ফাটা বাঁশের শব্দ তুলে। বুড়ো মেয়েছেলের মত খামোকা চিন্তা কোরো না তো, উইডো। হুবার্টের সাথে আমাদের সম্পর্ক কি! পাইপ ধরিয়ে নিশ্চিন্ত চেহারায় ধোয়া ছাড়তে লাগল সে।

কিন্তু, ল্যানট্রি, অধৈর্যকণ্ঠে বলল পাকাচুল। যে সাতজনকে সন্দেহ করা হচ্ছে হুবার্ট হিসেবে, তাদের মধ্যে আমাদের গাইড জুডাস অ্যাডলারের নামও আছে।

শ্রাগ করল ওয়ার্ড ল্যানট্রি। তো কি হয়েছে? এডমণ্ড হুপার তো সাতজনের একজনকেও হুবার্ট বলে ধরিয়ে দেয়নি। এমনকি হুবার্টের  অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে সে, বলেছে ফাঁসির দড়ি এড়াতে হাওয়া থেকে হুবার্টকে তৈরি করেছে।

পেপারের দিকে নজর ফিরিয়ে উইডোফিল্ড বলল, কিন্তু আমাদের আরেকজন গাইড ছিল গ্যানন উইলিস। পেপারে বলছে লোকটা আউট-ল ছিল।

হ্যাঁ, ছিল। এখন আর নেই, মারা গেছে সে, পাকাচুলকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করল ল্যানট্রি।

চিন্তা দূর হলো না উইডোফিল্ডের মাথা থেকে। মেডিসিন বোতে ট্রেন থামার পর আজকে বেরনো রলিন্সের একটা খবরের কাগজ কিনল সে। এই পেপারেও সামনের পৃষ্ঠা দখল করে আছে হুবার্ট। রলিন্সের ভেতর দিয়ে আমাদের যেতে না হলেই ভাল হয়, ল্যানটি, কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলল উইডোফিল্ড। জুডাস অ্যাডলারকে সন্দেহ করে থাকলে ওর ওপর চোখ রাখবে শেরিফ।

কিন্তু রলিন্সে অ্যাডলারের সাথে আমাদের দেখা হবে না, উইডো, আবারও পাকাচুলকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করল বেঁটে ল্যানট্রি। বুড়ো মেয়েমানুষের মত অযথা ভয় পেয়ো না, স্টেজে করে ফেরিসে যাওয়ার পর ক্যাম্পে আমাদের নিয়ে যেতে আসবে সে।

তবুও আরেকবার ম্যাপ দেখো, ল্যানট্রি, অন্য কোনও পথে। ফেরিসে পৌঁছতে পারলে ভাল হয়।

কোলের ওপর থেকে কার্বন কাউন্টির ম্যাপ তুলে নিয়ে ভাঁজ খুলে দেখল ল্যানটি। কিছুক্ষণ পর বলল, আমরা ফোর্ট স্টীলে নামতে পারি।

ফোর্ট স্টীল থেকে ফেরিস পর্যন্ত স্টেজ সার্ভিস আছে?

দাঁড়াও, ব্রেকম্যানকে জিজ্ঞেস করে আসি। ট্রেন কার্বনে থেমেছে, উঠে দাঁড়িয়ে-বলল ল্যানট্রি। কিছুক্ষণ পর ব্রৈকম্যানকে খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে ফিরে এসে বসল আবার। না, উইডো, স্টেজ সার্ভিস নেই। তবে ফোর্ট স্টীলের বার্নে বাকবোর্ড ভাড়া পাওয়া যাবে।

আমরা তাহলে ফোর্ট স্টীলে নেমে একদিন থেকে তারপর বাকবোর্ড ভাড়া করে ফেরিসে যাব। বার্নে কথায় কথায় জানাব জমি কিনতে এসেছি, পছন্দ হলে র‍্যাঞ্চ করব। এদিকে খালি জমির অভাব নেই, কেউ সন্দেহ করবে না, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়ার ভঙ্গিতে বলল ভিনসেন্ট উইডোফিল্ড।

বুড়ো মেয়েমানুষের মত উইডোফিল্ডকে চিন্তা করতে দেখে দেখে গত দুবছরে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ওয়ার্ড ল্যানট্রি। আপত্তি করল না সে।

.

সেদিন বিকেলে তিন নম্বর ট্রেন থেকে সব কজন যাত্রী নেমে যাওয়ার পর মনটা খারাপ হয়ে গেল প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো রোসার। আজ চৌদ্দ তারিখ, অথচ আসেনি হান্টার দুজন।

তোমার চাচার কাছে কোনও খবর পৌঁছে দিতে হবে, মিস হিগিনস? মাথায় টুপি, মুখে লাল লাল ফুটকি ভরা একটা বাচ্চা ছেলে জিজ্ঞেস করল রোসাকে। শাইয়্যান থেকে গ্রীন রিভার পর্যন্ত ট্রেনে খবরের কাগজ বিক্রি করে ছেলেটা। বাড়ি গ্রীন রিভারে হওয়ায় সে জানে ওখানে একটা কেস লড়তে গেছে রোসার চাচা।

প্রতিদিনের মত আজও ছেলেটাকে একটা ক্যাণ্ডি দিল রোসা। হেসে বলল কোনও খবর নেই দেয়ার মত।

ট্রেন নড়ে উঠতেই দৌড়ে একটা বগিতে উঠে পড়ল ছেলেটা, রোসা ফিরে এল ম্যাক্সওয়েল হোটেলে।

পরদিনও তিন নম্বর ট্রেন হতাশ করল ওকে। গ্যাননের কাছে লরার লেখা চিঠিতে মধ্য সেপ্টেম্বরের কথা উল্লেখ থাকায় ও ধরেই নিয়েছিল। হান্টাররা আসবে সেপ্টেম্বরের পনেরো তারিখে। কিন্তু আসেনি ওরা।

.

পনেরো তারিখে রলিন্স থেকে ফেরিসে আসা স্টেজে হান্টার দুজনকে দেখতে না পেয়ে রোসার তুলনায় অনেক বেশি হতাশ হলো হিউ হুবার্ট।

বিউয়েলদের বারে বসে আধবোতল হুইস্কি গলা দিয়ে নামিয়ে। দিল। কিছুক্ষণ পর স্টেজ ড্রাইভার এসে বসল তার পাশে। রলিন্সে নতুন কিছু ঘটেছে? জানতে চাইল হুবার্ট।

শোনোনি তুমি? চোখ টিপল স্টেজ ড্রাইভার। হুবার্টের ছদ্ম পরিচয়। ফাঁস করে দিয়েছে হুপার। স্ট্যানলি আর জোসেফ ওয়েন ব্যাগস থেকে লু মেয়রকে ধরে আনতে ছুটেছে! আমার কিন্তু আগেই সন্দেহ হয়েছিল যে লু মেয়ারই হুবার্ট। চারপাশে তাকিয়ে কথাটা অলিভা আর তার বাবা শুনতে পেয়েছে কিনা নিশ্চিত হয়ে তৃপ্তির সাথে গ্লাসের হুইস্কি গলায় চালান দিল স্টেজ ড্রাইভার।

বিস্ময়ে চমকে গেলেও কাউকে টের পেতে দিল না জুডাস অ্যাডলার ওরফে হিউ হুবার্ট। কোন্ খেলা খেলছে এডমণ্ড হুপার? বোধহয় বুদ্ধিটা প্যাট্রিক হলের মাথা থেকে বেরিয়েছে। সুবিধাই হয়েছে, তবে মনে শান্তি ফিরে পেল না হুবার্ট। আসছে না কেন হান্টার দুজন!

বেডরোল নিয়ে ঘুমানোর জন্য ক্রীকের তীরে চলে এল সে। ফোর্ট স্টীলের দিকের অব্যবহৃত ট্রেইলে চোখ পড়তেই চমকে উঠল দ্বিতীয়বার। ওদিক থেকে হেলতে দুলতে এগিয়ে আসছে একটা বাগি। দুজন লোক বসে আছে সীটের ওপর। দুজনকেই সে চেনে ভালমতন।

উন্মত্তের মত বাকবোর্ডের কাছে দৌড়ে গেল হুবার্ট। ওকে দেখে। চওড়া হাসি ফুটল হান্টার দুজনের চেহারায়।

বিউয়েলদের ওখানে সাপার সারার সময় ফোর্ট স্টীল থেকে বাকবোর্ড ভাড়া করে এখানে আসার কারণ ব্যাখ্যা করল উইডোফিল্ড। অলিভা বা তার বাবার মনে কোনও সন্দেহ জাগল না। ফোর্ট স্টীল থেকে এদিকে আসার পথে বিস্তৃত জমি অব্যবহৃত পড়ে আছে, এরা যদি র‍্যাঞ্চ করে ভালই তো! মনে মনে শুধু হাসল হিউ হুবার্ট।

পরদিন সকালে বিউয়েলদের করালে বাকবোর্ড রেখে রওয়ানা, হলো ওরা তিনজন। দুঘণ্টা পর পৌঁছল অক্স বো লাইন ক্যাম্পে। ওখান থেকে বুনো পরিবেশের দিকে এগিয়ে চলল ট্রেইল ধরে। খাড়া পাহাড় বেয়ে ক্যাম্পে যেতে হবে ওদের শিকার করতে হলে।

২১.

ষোলো তারিখ, বৃহস্পতিবার পশ্চিম থেকে আসা দুই নম্বর ট্রেন তিন ঘণ্টা দেরিতে রলিন্সে পৌঁছল, আজও রোসা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে, তবে হান্টারদের দেখা পাবার আশা নেই তার মনে। পুবের লোকরা পশ্চিম থেকে আসবে সেই সম্ভাবনা কম। হকার ছেলেটা দুই নম্বরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে, রোসাকে দেখে প্ল্যাটফর্মে নেমে হ্যাট ছুঁলো। কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে বলল, তুমি কি সব ট্রেনের জন্যই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। অপেক্ষা করো, ম্যাম?

ওর হাতে একটা ক্যাণ্ডি ধরিয়ে দিয়ে হেসে ফেলল রোসা, মাথা ঝাঁকাল। স্ট্যানলির নির্দেশ ভুলে বলে বসল, দুজন হান্টারের জন্য অপেক্ষা করি, টড।

হান্টার? পরশু রলিন্সের টিকেট থাকার পরও ফোর্ট স্টীলে নেমে গেছে দুজন বোকা হান্টার।

শ্বাস বন্ধ হয়ে এল রোসার। কোনমতে জিজ্ঞেস করল, দেখতে কেমন ছিল ওরা?

একজন লম্বা, অন্যজন বেঁটে। বেঁটে লোকটার গলা ফাটা বাঁশের মত। পাশে বসা পাকা চুলওয়ালা লোকটাকে উইডো উইডো বলে ডাকছিল।রোসা ওর কথা শুনতে আগ্রহী দেখে আরও কিছু বলার ইচ্ছে বোধহয় ছিল টড মুলিনসের, কিন্তু ট্রেন নড়ে ওঠায় বাড়ি যাবার কথা মনে পড়ে গেল ওর। বিদায় নিয়ে চলন্ত ট্রেনের বগিতে লাফিয়ে উঠে হাত নাড়ল রোসার উদ্দেশে।

যা জানার জানা হয়ে গিয়েছে রোসার। ওই শিকারী দুজন ভিনসেন্ট উইডোফিল্ড আর ওয়ার্ড ল্যানট্রি না হয়ে যায় না। অ্যাডামকে খুঁজতে। দ্রুত পায়ে ম্যাক্সওয়েল হোটেলে ফিরে এল রোসা।

টডের চোখে ধরা না পড়ে গেলে ঠিকই চালাকিটা করে পার পেয়ে যেত ভুয়া শিকারীরা। সারাদিন খুঁজে রাতে অ্যাডামের দেখা পেল রোসা। ওর মুখে সবকথা শুনে কপালকে ধন্যবাদ দিল অ্যাডাম। হোটেল লবিতে রাখা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমি এখনি ফোর্ট স্টীলের পথে রওয়ানা হচ্ছি। ওখান থেকে খবর নিয়ে পৌঁছে যাব ওরা যেখানে গেছে।

হোটেলের সামনে হিচর‍্যাকে বাধা ঘোড়াটায় অ্যাডাম উঠে বসার। পর স্টিরাপে দাঁড়িয়ে ওর হাত শক্ত করে ধরল রোসা। তোমার একা যাওয়া উচিত হবে না, অ্যাডাম। ওদের সাথে যদি হিউ হবার্ট থাকে… কথা শেষ না করেই কেঁপে উঠল সে।

আমি চাই হবার্ট থাকুক, স্ক্যাবার্ড থেকে রাইফেল বের করে। ম্যাগাজিন পরীক্ষা করে আবার রেখে দিল অ্যাডাম। স্যাডলে ঝুঁকে পড়ে বাচ্চা মেয়েকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়ার মত রোসাকে নামিয়ে দিল। মাটিতে। চিন্তা কোরো না, রোসা, আমি সতর্ক থাকব।

অ্যাডামের চলে যাওয়া দেখতে চায় না বলে ঘুরে দাড়াল রোসা, নির্জনে কাঁদার জন্য দৌড়ে চলে গেল হোটেলে নিজের ঘরে। ওর মন বলছে বিপদে পড়তে যাচ্ছে অ্যাডাম। অনেকক্ষণ পর জানালা দিয়ে দেখল ফেরিসের অন্ধকার ট্রেইল গিলে নিয়েছে নিঃসঙ্গ অশ্বারোহীকে।

হোটেল থেকে বেরিয়ে শেরিফের ভাই জো লেম্যানের সাথে দেখা করল রোসা। পথে যারাই ওর সুন্দর দুচোখ লাল দেখেছে, বুঝতে পেরেছে কেঁদেছে মেয়েটা। বুঝতে পারল জিম লেম্যানও। সমস্ত ঘটনা শুনে ওকে আশ্বস্ত করল, চিন্তা কোরো না, ম্যাম, কালকের মধ্যেই স্ট্যানলির কাছে আমি নিজে খবর পৌঁছে দেব।

জিম লেম্যান যদি বলে খবর পৌঁছে দেবে তাহলে চিন্তার কারণ নেই, এক বছর আগে আর্মি স্কাউট থাকার সময় চব্বিশ ঘণ্টায় সে একশো ষাট মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ইতিহাস গড়েছিল। মনে খানিকটা স্বস্তি পেল রাসা। স্ট্যানলি আর ওয়েনকে নিয়ে দ্রুতই ফিরে আসবে জিম। ওরা হয়তো অ্যাডামকে সাহায্য করতে পারবে।

.

রাতের ঠাণ্ডা নেমেছে ওয়াইমিঙের পাহাড়ী এলাকায়। রলিন্সের দক্ষিণে ছুটে চলেছে জিম লেম্যান, রলিন্সের পুবে, প্রতিশোধের আগুন বুকে চেপে এগুচ্ছে অ্যাডাম বেঞ্চলি। রলিন্সের উত্তর-পূবে সেমিনো মাউন্টিনের ওপর খোলা আকাশের নিচে ক্যাম্প করেছে হিউ হুবার্ট আর তার সাথে আসা হান্টাররা।

রাতে দুইবার তাবু থেকে উঁকি দিয়েছে ওয়ার্ড ল্যানট্রি, দুবারই দেখেছে গাইডদের অন্তত একজন জেগে বসে আছে ক্যাম্পফায়ারের পাশে। লোকগুলো কি কিছু টের পেয়েছে, পালা করে পাহারা দিচ্ছে ওদের?

দূরের জঙ্গলে গর্জে উঠল একটা প্যানথার। ভয়ে হ্রেসাধ্বনি করল একটা ঘোড়া।

সকাল বেলা ওয়ার্ড ল্যানট্রি উইডোফিল্ডকে ক্যাম্প থেকে খানিক দূরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলল, ওরা সব টের পেয়ে গেছে, উইডো। সর্বক্ষণ নজর রাখছে আমাদের ওপর।

সারাদিন শিকারের অভিনয় করে কাটাল ওরা। ল্যানট্রি একটা হরিণকে গুলি করে মিস করল ইচ্ছে করে। বিকেলে আবার উইডোফিল্ডকে একপাশে টেনে নিয়ে গিয়ে জানাল সে লুটের টাকা। রাখার জায়গাটা খুঁজে পেয়েছে, তারার আলোতেও ওখানে পৌঁছতে পারবে। . আজ রাতে? ফিসফিস করে জানতে চাইল উইডোফিল্ড।

হ্যাঁ, আজ রাতে।

রাতে সাপার সারার পরে ক্যাম্পফায়ার ঘিরে বসল চারজন। খানিকক্ষণ গল্প করার পর বেড রোলগুলোর কাছে ঘুমাতে চলে গেল হুবার্ট, দুএক মুহূর্ত পরই নাক ডাকতে লাগল তার। আগুনে আরেক টুকরো কাঠ ফেলো, বিড়বিড় করল ল্যানট্রি।

কাঠের টুকরো তুলে আগুনে ফেলার জন্য প্যাট্রিক হল ঘুরে বসতেই হোলস্টার থেকে সিক্সগান বের করে তার মাথায় প্রচণ্ড জোরে নামিয়ে আনল ভিনসেন্ট উইডোফিল্ড। জ্ঞান হারিয়ে নিঃশব্দে লুটিয়ে পড়ল জুয়াড়ী, টেরও পায়নি আঘাতটা দুজনের কে করেছে।

উঠে দাঁড়িয়ে বেড রোলের কাছে গিয়ে ঘুমন্ত হুবার্টের মাথাতেও হাতের একই কারিশমা দেখাল উইডোফিল্ড। বোধহয় জ্ঞান হারানোয় নাক ডাকার আওয়াজ আরও গুরুগম্ভীর হয়ে উঠল হুবার্টের। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাসি বিনিময় করল প্রাক্তন ব্যাংকার দুজন। এখন চার লক্ষ ডলার নিয়ে সরে পড়ায় বাধা দেবার কেউ নেই।

.

সকালের রোদ মুখে পড়ায় কিনা কে জানে, আগে জ্ঞান ফিরল প্যাট্রিক হলের। শূন্য তাঁবু দেখেই ঘটনা বুঝে ফেলল সে। দুহাতে মাথা চেপে ধরে হুবার্টের পাশে গিয়ে বসে পড়ল। হুবার্টের জ্ঞান ফেরার পর ব্যথায় বিকৃত চেহারায় আঙুল তুলে ক্যাম্পের সামনে পড়ে থাকা স্যাডলগুলো দেখাল। ওখানে থাকার কথা চারটে স্যাডল, কিন্তু আছে মাত্র দুটো।

হিউ হুবার্ট উঠে বসার পর বলল সে, ওরা আমাদেরকে বোকা বানিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেছে!

কফি চড়াও, বিড়বিড় করে বলে বাকি ঘোড় দুটো খুঁজতে চলে। গেল হিউ হুবার্ট। কফির পানি বসানোর ফাঁকে প্যাট্রিক হল দূর থেকে ভেসে আসা হুবার্টের প্রাণবন্ত গালাগাল শুনতে পেল। হাতের কাছে পেয়েও চার লক্ষ ডলার হারানোর ব্যথা অন্য আর সব যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়েছে লোকটাকে!

উইডোফিল্ড আর ল্যানট্রি ঘোড়া দুটো সাথে নিয়ে যেতে পারত, কিন্তু অনভিজ্ঞ বলে নেয়নি। দড়ি খুলে ভাগিয়ে দিয়েই ভেবেছে কাজ হয়ে যাবে। ওরা জানে না রাতে প্যানথারের ভয়ে মানুষজনের কাছ থেকে দূরে কোথাও যাবে না পোষ মানা ঘোড়া। ওগুলোকে খুঁজে বের করতে ঘণ্টাখানেকের বেশি লাগল না হুবার্টের।

ঘোড়া দুটোকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে এল সে। স্যাডল পরিয়ে দাঁতের ফাঁকে বলল, অনেকদূর চলে গেছে এতক্ষণে।

না, যায়নি, কফির মগ বাড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বোলাল জুয়াড়ী। রাতে ওই ট্রেইল বেয়ে ওরা নামতে পারবে না। কিছুদূর নেমে অপেক্ষা। করে ভোরে রওয়ানা হতে হয়েছে ওদের।

যাবে কোথায়? দাঁতে দাঁত পিষল হুবার্ট। শহুরে লোকগুলোর কাছে বোকা বনে যাওয়ায় আত্মসম্মানে ভীষণ লেগেছে তার।

দশমাইলের বেশি এগোতে পারেনি, এটা নিশ্চিত। ঘোড়া চড়তে অভ্যস্ত নয়, তাছাড়া খাওয়া আর ঘুমও দরকার ওদের। আমার মনে হয় বিউয়েলদের স্টোরে গিয়ে বাকবোর্ডে করে সরে পড়তে চাইবে ওরা।

কফি শেষ করে ক্যাম্পের সবকিছু ফেলে রওয়ানা হয়ে গেল হুবার্ট, আর প্যাট্রিক হল। বিপজ্জনক গতিতে গাছের ফাঁক দিয়ে পিছলে নামতে বাধ্য করল ওদের ঘোড়া দুটোকে। আধঘণ্টা পর একটা খোলা জায়গায় পৌঁছল। ওখান থেকে পুরো স্যাণ্ড ক্রীক উপত্যকা দেখা যায়। ক্রীকের উজানে ভাটিতে তিনটে র‍্যাঞ্চ, মাঝখানেরটা বিউয়েলদের।

বিউয়েলদের র‍্যাঞ্চ আর স্টোর লক্ষ্য করে ছুটছে দুজন অশ্বারোহী। অর্ধেক দূরত্ব পেরিয়ে গেছে তারা। ওগুলো যে ঘোড়া তা-ও ঠিক মত বোঝার উপায় নেই এখান থেকে, তবু ওখানে কারা যাচ্ছে আন্দাজ করে নিল প্যাট্রিক আর হুবার্ট।

ওরাই যদি রবিনসন আর আর্চার হয় তাহলে এতক্ষণ স্যাডলে বসে থেকে হাত-পা প্রায় অবশ হয়ে গেছে ওদের, বলল জুয়াড়ী। ওরা বিশ্রাম নিয়ে বাকবোর্ডে চড়ে ভাগার আগেই পৌঁছে যেতে পারব আমরা।

চলো তাহলে, দেরি কিসের? ভয়ঙ্কর একটুকরো হাসি খেলে গেল জুডাস অ্যাডলারের ভাবলেশহীন চেহারায়। স্পারের খোঁচায় পাহাড় থেকে দ্রুতগতিতে নামতে বাধ্য করল ওরা ঘোড়াগুলোকে।

.

অলিভা আর তার বাবা একজন কাস্টোমারের সঙ্গে লাঞ্চে বসেছে এমন সময় বাইরে ঘোড়ার শব্দ পেল। ওরা ভেরেছে কোনও একটা র‍্যাঞ্চ থেকে চিঠি নিতে এসেছে কেউ, হেনরিখ উঠে স্টোরে গেল ওদের সাথে দেখা করতে। আলভা টেবিলে বসে থাকল জোডি বেঞ্চলিকে সঙ্গ দেয়ার জন্য।

বক্স বি থেকে রসদ কিনতে এসেছে জোডি। অলিভা খেয়াল করল বদলে গেছে ছেলেটা, আগের সেই রুক্ষ দুর্বিনীত ভাব চেহারা থেকে বিদায় নিয়েছে। অলিভা স্টোরে জোডির ব্যাপারে র‍্যাঞ্চারদের গালগল্প মন দিয়ে শুনেছে। ভাল-মন্দে মেশানো সব কথা। কেউ বলছে ভাইকে বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে এসেছে ছোঁকরা, আবার কেউ কেউ মতামত দিয়েছে যে অ্যাডাম ছোটভাইকে মানুষ করে ফেলেছে। তবে একটা ব্যাপারে সবাই একমত, কার্বন কাউন্টিতে ফিরে আসার পর কখনও আর জুয়ার টেবিলে দেখা যায়নি জোডিকে।

আজকে মালপত্র কিনেই ফিরে যেত জোডি, কিন্তু কৌতূহলী অলিভার নিমন্ত্রণে লাঞ্চে বসতে বাধ্য হয়েছে।

অ্যাডাম ফিরবে কবে, জোডি?

বলেনি, তবে মনে হয় শিগগিরই।

ওদের আলাপ বন্ধ হয়ে গেল স্টোর থেকে হেনরিখ বিউয়েলের বিস্মিত কণ্ঠস্বর ভেসে আসায়। কি ব্যাপার, মিস্টার ল্যানট্রি? আমার। তো ধারণা ছিল কমপক্ষে একসপ্তাহ পর শিকার থেকে ফিরবে তোমরা। [ ক্লান্ত একটা অপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেল জোডি। থাকার কথা ছিল এক সপ্তাই, কিন্তু উঁচুতে উঠতেই শরীর অসম্ভব খারাপ হয়ে গেল। বাঁচতে চাইলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উঁচু অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে হবে, আমাকে।

ভিনসেন্টের ক্রনিক হার্ট ট্রাবল, মিস্টার বিউয়েল। বাকবোর্ডে তুলে ওকে তাড়াতাড়ি রেলরোডে নিয়ে যেতে হবে, কথা বলে উঠল ল্যানট্রি, কিন্তু শুনে জোডির মনে হলো একসাথে বলছে দুতিনজন।

তোমাদের গাইড আসেনি সাথে?

প্যাক হর্স ছুটে যাওয়ায় ওগুলোকে সে খুঁজতে গেছে, চলে আসবে, বুক চেপে ধরে বলল উইডোফিল্ড। তুমি বাকবোর্ডে ঘোড়া, জুতে দাও, মিস্টার বিউয়েল, আমার দম এখানে বন্ধ হয়ে আসছে।

পরস্পরের দিকে তাকাল অলিভা আর জোডি। ওরা জানে চাইলেও রওয়ানা হতে পারবে না লোকগুলো। বাকবোর্ডের হার্নেস ছিড়ে ঘোড়াটা নিয়ে ল্যাঙড়া একটা সোরেল ওখানে বেঁধে রেখে গেছে কেউ একজন। ওরা জানে কাজটা কার।

হেনরিখ বিউলের মুখে কথাটা শুনে অধৈর্য ল্যানট্রি বলল, তাহলে। আরেকটা ঘোড় বাধো বাকবোর্ডে।

দুঃখিত, মিস্টার ল্যানট্রি, ঘোড়া আর নেই এখানে। রাউণ্ডআপ করে, ধরে আনতে সময় লাগবে। হাতের ইশারায় ডাইনিঙ রূম দেখাল হেনরিখ বিউয়েল। ততক্ষণে তোমরা হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসে যাও। লোকগুলোর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে, কিচেনে চলে গেল। অলিভা। হেনরিখ বিউয়েল হান্টার দুজনকে নিয়ে ডাইনিং রুমে ঢোকার পর জোডি চমকে উঠল ওদের চেহারার অবস্থা দেখে। ওর মনে হলো ঘোড়ার পেছনে রুক্ষ জমিতে হেঁচড়ে আধমাইল নিয়ে গেলেও এত কাটা হেঁড়ার দাগ থাকত না লোকগুলোর সারা শরীরে। রাতেই বাধ্য হয়ে ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়েছে, জানাল উইডোফিল্ড।

উঠে স্টোররুমে চলে এল জোডি, জানালা দিয়ে হান্টার দুজনের ঘোড়াগুলো দেখল চিন্তিত চেহারায়। ও বুঝতে পারছে মিথ্যে বলছে লোকদুটো, গোপন করছে কিছু একটা। কোনও গাইড রাতে পাহাড় থেকে নামতে দেবে না এই এলাকায় নতুন আসা কাউকে। তারওপর। একজনের নাকি হৃদরোগ আছে!

আরেকটা ব্যাপার জোডির নজর কেড়েছে। বয়স্ক লোকটার যদি সত্যিই হার্টে ট্রাবল থাকে তাহলে তাকে ভারি একটা বস্তা বইতে দিচ্ছে কেন ভাঙা গলাওয়ালা লোকটা? স্টোরের মেঝেতে ব্যাগটা নামিয়ে রেখেও হাতমুখ ধধায়ার জন্য যেতে পারত ওরা। যায়নি কেন?

ঘোড়া দুটোর একটা জোডির কাছে খুব পরিচিত ঠেকছে। কিছুক্ষণ ভাবার পর মনে পড়ে গেল জোডির, ওই বে ঘোড়ায় করেই গত রোববার বক্স বিতে এসেছিল প্যাট্রিক হল!

কিচেনে হেনরিখ বিউয়েল কথা বলছে শুনতে পেল জোডি। স্পাইক হানাই, মিস্টার ল্যানট্রি। ডিক উলফের করাল থেকে চুরি করা সোরেলটা রেখে তোমাদের রোয়ান নিয়ে গেছে সে। চিন্তা কোরো না, তোমরা খেয়েদেয়ে বিশ্রাম নিতে নিতেই আরেকটা ঘোড়া নিয়ে ফিরে আসব আমি।

জোডিকে পাশ কাটাল হেনরিখ ডাইনিং রুম থেকে বেরিয়ে এসে। হান্টারদের ঘোড়া দুটো করালে নিয়ে গিয়ে স্যাডল নামাল। ওগুলোকে দানাপানি দিয়ে নিজের ঘোড়ায় স্যাডল চাপিয়ে বেরিয়ে পড়ল বাকবোর্ড টানতে অভ্যস্ত এমন একটা ঘোড়ার খোঁজে। র‍্যাঞ্চের বেশিরভাগ ঘোড়াই স্যাডলে অভান্ত, হার্নেসে বেঁধে ওগুলোর কাছ থেকে কাজ আদায় করা প্রায় অসম্ভব।

ডাইনিঙ রূমে ফিরে জোডি দেখল খেতে বসেছে হান্টাররা। খাওয়ার ফাঁকে ঢুলছে ক্লান্তিতে। মাঝে মাঝে রক্তলাল চোখে তাকিয়ে। দেখছে বস্তাটা ঠিক জায়গায় আছে কিনা। আজকে বিশ্রাম নিয়ে কালকেই বরং রওয়ানা হয়ে তোমরা, পরামর্শ দিল অলিভা।

ঝুঁকি নিতে চাই না। জবাবে মাথা নাড়ল ল্যানট্রি। এই উচ্চতায়। ভিনসেন্টের অবস্থার অবনতি হতে পারে।

জোডি স্পষ্ট বুঝল আবারও মিথ্যে বলছে লোকটা। বাকবোর্ডে করে পঞ্চাশ মাইল পথ পার হয়ে রলিন্সে জীবিত পৌঁছতে পারবে না কোনও অসুস্থ লোক। তাছাড়া রলিস উচ্চতার দিক থেকে ফেরিসের চেয়ে মোটেও কম নয়।

অলিভা ওদের দিকে বেকনের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল, বাবা ঘোড়া নিয়ে ফেরার আগ পর্যন্ত তোমাদের অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।

জোডি হান্টারদের দিকে তাকাল একদৃষ্টিতে। বাজার্ড গ্যাপ দিয়ে রলিসে যেতে হবে তোমাদের। জায়গাটা ফেরিসের চেয়ে উঁচুতে।

ও দিক দিয়ে যাব না আমরা, খাওয়ার ফাঁকে বলল উইডোফিল্ড, নদীর ধার দিয়ে ফোর্ট স্টীলে পৌঁছব।

ওয়ার্ড ল্যানট্রি অলিভার দিকে তাকাল। আমি বলতে ভুলে গেলে তোমার বাবাকে বোলো ফোর্ট স্টীলের বার্নে ঘোড়াটা রেখে যাব আমরা।

কি যেন একটা আছে লোকগুলোর আচরণে। ওদের এত তাড়াহুড়ো কিসের? কি আছে ওই বস্তাটায়? কৌতূহলী হয়ে উঠল জোডি, সিদ্ধান্ত নিল লোকগুলো চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত থাকবে এখানে। হয়তো গোপন কোনকিছু জানতে পারবে সে। জীবনে কখনও অ্যাডামের জন্য কিছু করেনি, এবার হয়তো কিছু একটা করার সুযোগ পেয়েও যেতে পারে। ওর ভাই একজন ডেপুটি, ভাবতেই গর্বে বুক ফুলে উঠল জোডির।

খাওয়া শেষে একজন একজন করে হাত ধুয়ে এল হান্টাররা, বস্তাটা তুলে নিয়ে বারে গেল মদ গিলতে। এক আউন্স হুইস্কি গলায় ঢেলেই একবার বাইরে উঁকি দিয়ে সঙ্গীর পাশে এসে বসল ল্যানট্রি। ঘোড়া ধরে আনতে অনেক সময় নিচ্ছে লোকটা।

কিচেনে গিয়ে অলিভাকে ডিশগুলো ধুতে সাহায্য করল জোডি। কি বুঝছ? ফিসফিস করে জানতে চাইল অলিভা ওর দিকে তাকিয়ে।

ভয় পেয়েছে।

জুডাস অ্যাডলার ওদের গাইড হিসেবে গিয়েছিল।

প্যাট্রিক হল সাথে ছিল না?

না।

ডিশ ধোয়া শেষে অলিভাকে অনুসরণ করে ডাইনিং রূমে এল। জোডি। বাইরে ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনে বলল, তোমার বাবা আসছে। বোধহয়।

দুটো ঘোড়া এগিয়ে আসার শব্দ অলিভাও শুনতে পেয়েছে। করালে। এসে থামল ঘোড়া দুটো।

খোলা দরজা দিয়ে বারের ভেতরে তাকাল জোডি। পাশাপাশি বাইরের দরজার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে হান্টার দুজন রাইফেল হাতে। অপরিচিত একজন লোকের পেছন পেছন প্যাট্রিক হলকে ঢুকতে দেখল জোডি। এদের অবস্থা হান্টার দুজনের চেয়েও করুণ।

লোকগুলোর চেহারায় নগ্ন হিংস্রতা দেখে জোডির পেছনে দাঁড়ানো। অলিভার মুখ দিয়ে অস্ফুট শব্দ হলো।

চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভুয়া হান্টাররা। রাইফেল তুলতে শুরু করেছে দুজনই। ওরা হুবার্টকে বোকা বানিয়েছে নাকের ডগায় বসে, ছিনিয়ে নিয়েছে চার লক্ষ ডলার। কেউটের মত হোলস্টারে ছোবল মারল হুবার্টের হাত। না না… রাইফেল মেঝেতে ফেলে আর্তনাদ করে উঠল উইডেফিল্ড। কথা শেষ করতে পারল না। গর্জে উঠেছে। হবার্টের সিক্সগান। উইডোফিল্ডের হৃদপিণ্ড ফুটো হয়ে ঝরনার মত রক্ত বেরিয়ে আসায় জোডি মনে মনে বলল এবার সত্যি সত্যিই লোকটার হার্টে ট্রাবল দেখা দিয়েছে।

হাত থেকে বস্তা খসে গেল উইডেফিল্ডের, মাটিতে আছড়ে পড়ল। মৃত সঙ্গীকে দেখল আতঙ্কিত ওয়ার্ড ল্যানট্রি। হাঁ করল চিৎকার করার জন্য। আতঙ্কে ভুলেই গেছে হাতের রাইফেলটা ব্যবহারের কথা। রাগে বিকৃত চেহারায় লাফ দিয়ে তার সামনে পৌঁছে গেল হুবার্ট। সিক্সগানের নল লোকটার মুখে ঢুকিয়ে টাকরায় ঠেসে ধরে ট্রিগার টেনে দিল। মাথার তালু ফুটো করে এক থোকা রক্ত মগজ ছাদে ছিটাল বুলেট।

নীরবতা নেমে এল ঘরে। মেঝেড়ে পড়ে থাকা মৃত হান্টারদের টপকে সিক্সগান হাতে জোডি আর অলিভার দিকে এগোল হবার্ট আর প্যাট্রিক হল।

২২.

সাক্ষী রাখে না হুবার্ট কখনও। বুড়ো আঙুলে সিক্সগানের হ্যামার ওঠাল সে। পাশ থেকে প্যাট্রিক হল তাকে থামাল, এখনই না, হবার্ট। অলিভার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমার বাবা কোথায় গেছে?

ভয়ে গলা শুকিয়ে যাওয়ায় জবাব দিতে পারল না অলিভা। ডাইনিঙ। রূমের ওপরের হোটেল আঙুল ইশারায় দেখাল জুয়াড়ী। ওখানে কেউ আছে?

থাকলে তোমাকে বলবে মনে করেছ? নিজে গিয়ে দেখো গে যাও, অধৈর্য কণ্ঠে ধমকে উঠল হুবার্ট।প্যাট্রিক হল মই বেয়ে উঠে গিয়ে ওপর থেকে চেঁচিয়ে জানাল, হোটেলে কেউ নেই।

নেমে এসে পেছনদিকটা ঘুরে দেখে এসো, নির্দেশ দিল হিউ হুবার্ট।

পুরো বাড়ি চক্কর দিয়ে ফিরে এসে হুবার্টের পাশে দাঁড়াল প্যাট্রিক হল। বলল, এক রাইডার আসছে। পেছনে ঘোড়াও আছে একটা, মনে হয় হেনরিখ বিউয়েল।… ঘোড়ার খুরের শব্দ কাছাকাছি চলে আসার পর হুঁশ ফিরল অলিভার, চেঁচিয়ে উঠল সে, ভেতরে এসো না, বাবা!

দুপা এগিয়ে অলিভার মুখে হাত চাপা দিল প্যাট্রিক হল। একই সাথে সামনে বাড়ল হিউ হবার্ট। সিক্সগানটা সজোরে নামিয়ে আনল অপ্রস্তুত জোডির মাথায়।

কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরতে জোডি দেখল হাত-পা বেঁধে। কাউন্টারের গায়ে ঠেস দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে ওকে। মুখে রুমাল, গোজা। অলিভারও একই অবস্থা। বার থেকে বস্তাটা নিয়ে এসে খুলেছে। হুবার্ট আর প্যাট্রিক হল, ভেতরে হাত ঢুকিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে হুবার্ট বলে। উঠল, আছে! সবই ঠিক আছে।

কিন্তু আজকে স্টেজ আসতে পারে এখানে, বাস্তবচিত্র তুলে ধরল জুয়াড়ী। আমাদের ঘোড়াগুলো ক্লান্ত, স্টেজ যদি আসে বিপদ হবে।

জবাব দিতে গিয়েও করালে ঘোড়া থামার শব্দে চুপ হয়ে গেল হবার্ট। পায়ের আওয়াজ কিচেনের দিকে এগিয়ে আসছে শুনে ওদিকে তাকাল। ফিসফিস করে বলল, কিচেনে যাও। লোকটা ঢুকলেই মাথায় বাড়ি মেরে অজ্ঞান করে ফেলবে।

নিঃশব্দ পায়ে কিচেনে চলে গেল প্যাট্রিক হল। কল্পনার চোখে জোডি দেখতে পেল দরজার পাশে দাঁড়িয়ে হেনরিখের মাথায় সিক্সগান নামিয়ে আনছে লোকটা। ঘাড় ফিরিয়ে দেখল অলিভার জ্ঞান ফিরেছে। বিস্ফারিত চোখে আর্তি নিয়ে হুবার্টের দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা।

কিচেনের দরজা খোলার শব্দ হলো। তারপরই খট করে একটা আওয়াজ। সশব্দে ভারী একটা দেহ আছড়ে পড়ল মেঝেতে। দুমিনিট পর ডাইনিঙ রূমের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে প্যাট্রিক হল বলল, বিউয়েল।

কি অবস্থা?

অজ্ঞান। কিচেনের নিচের আলু রাখার সেলারে ফেলে ট্র্যাপ ভোর আটকে দিয়েছি।

আর কেউ আছে কিনা দেখেছ?

নেই। হাসল জুয়াড়ী। দুএক ঘণ্টা থাকতে হবে ঘোড়াগুলোকে বিশ্রাম দেয়ার জন্য। মেয়েটাকে দিয়ে খাবারের বন্দোবস্ত করিয়ে নিই, কি বলো?

সায় দিল হুবার্ট। গতকাল রাতের পর থেকে কিছুই প্রায় পেটে পড়েনি ওদের। পোস্ট অফিস থেকে চিঠি সংগ্রহের জন্য কেউ এসে পড়তে পারে ভেবে বারে পড়ে থাকা লাশ দুটো কাউন্টারের পেছনে টেনে সরিয়ে রাখল ওরা।

ডাইনিঙ রূমে ফিরে এসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাতের ইশারায় জোডি আর অলিভাকে দেখাল প্যাট্রিক হল। এদের কি করবে?

জিম্মি হিসেবে সাথে নিয়ে যাব।

মাথা ঝাঁকাল জুয়াড়ী। ঠিকই বলেছে হুবার্ট। সাথে জিম্মি থাকলে, পালাবার সময় বিপদ হলে বাড়তি সুবিধা পাবে ওরা।

মেয়েটার বাঁধন খুলে কিচেনের কাজে লাগিয়ে দাও, দরজার দিকে। পা বাড়িয়ে বলল হুবার্ট। আমি যাচ্ছি ঘোড়া চারটের দানাপানি দিতে। রাতের খাবারও তৈরি করিয়ে নিয়ো, আজ সারারাত ঘোড়ার পিঠে কাটবে আমাদের সবার।

.

হুবার্ট বেরিয়ে যাওয়ার পর অলিভার বাঁধন খুলে দিল জুয়াড়ী। মুখ থেকে রুমালটা খুলে পকেটে পুরে বলল, চলো, আজকে আমরা বিচার করব তোমার রান্নার হাত কেমন।

কিচেনে ঢুকে ব্যস্ত হয়ে পড়ল অলিভা, পেছনে পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকল প্যাট্রিক হল। জানালা দিয়ে বার্ন আর করাল চোখে পড়ছে। অলিভার। ওখানে সেরা চারটে ঘোড়া বাছছে হুবার্ট। ঘোড়াগুলো বার্নে নিয়ে যব দিল তারপর।

কোনকিছুতেই আর কোনও প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না অলিভার মনে। আতঙ্কে কুঁকড়ে আছে ও। চোখের সামনে মরে যেতে দেখেছে দুজন মানুষকে। ওর বাবা আটকা পড়ে আছে মেঝের তলার সেলারে। ওদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে না বুঝতে পারছে স্পষ্ট। বিপদমুক্ত দূরত্বে পৌঁছেই খুন করা হবে ওদের, সাক্ষী রাখবে না প্যাট্রিক হল আর তার সঙ্গী।

একটা পটে সুপ ঢেলে গরম করতে দিল অলিভা। বেকন, বিন আর। বারোটা ডিম ভাজল। রাতে লাগবে, আরও এক ডজন ডিম সেদ্ধ করে। রাখো, বলল প্যাট্রিক হল।

নিচের সেলার থেকে মৃদু একটা শব্দ হতেই আবার চেঁচিয়ে সাহায্য চাওয়ার জন্য হাঁ করল অলিভা। চুপ। একদম চুপ! শান্ত গলায় সতর্ক করল প্যাট্রিক। চেঁচামেচি শুনে আসতে বাধ্য হলে তোমাকে খুন করে। ফেলবে হবার্ট।

সাহায্য করার মত কেউ ধারে কাছে আছে কিনা ভাবার চেষ্টা করল অলিভা। অন্যদিন চিঠি নিতে র‍্যাঞ্চগুলো থেকে দুএকজন আসে। আজকে কেউ আসছে না কেন! স্টেজ পৌঁছবে সন্ধ্যায়; আরও ছয় ঘণ্টা পরে!

হঠাৎ বার্ট আর্থারের কথা মনে পড়ল ওর। লোকটাকে পাত্তা না দিলেও প্রতিদিন অন্তত একবার তার আসা চাই। আজ কি আসবে লোকটা? যদি আসেও নিরস্ত্র বার্ট আর্থার কী সাহায্য করতে পারবে? প্যাট্রিক হল সঙ্গীকে হুবার্ট নামে ডেকেছে। হুবার্টই যদি হয় লোকটা,; তাহলে দশজন সশস্ত্র বার্ট আর্থারও কোনও কাজে আসবে না আজ।

কাজের ফাঁকে কিচেনের জানালা দিয়ে উত্তর-পশ্চিমে তাকাল অলিভা। সব সময় ওদিক থেকেই ঘোড়া ছুটিয়ে আসে লোকটা। শেড আর বার্নের দেয়ালে দৃষ্টি বাধা পেল ওর। কারও চোখে না পড়েই বার্নের পেছনের দরজা পর্যন্ত চলে আসতে পারবে বার্ট আর্থার। আজকে লোকজন ওদের এখানে আসছে না কেন? অস্থির চোখে বাইরে তাকিয়ে। ভাবল অলিভা।

বার্ন থেকে বেরিয়ে কিচেনে এসে ঢুকল হুবার্ট। দেয়াল ঘড়ির দিকে। তাকিয়ে দেখল দেড়টা বাজে। তিনটার সময় রওয়ানা হব, বলল সে। ব্যাগটা নিয়ে এসো, প্যাট্রিক, ভাগাভাগি করে ফেলি।

অলিভার রান্না শেষ হওয়ার আগেই টাকা ভাগ করে নিজেদের অংশ বুঝে নিল ওরা। স্যাডলে বাঁধার জন্য ব্ল্যাংকেটে জড়িয়ে নিল। দুজনই দুজনকে খুন করে পুরো টাকা মেরে দেয়ার কথা ভাবছে, আন্দাজ করল অলিভা। আজ হয়তো নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করবে না ওরা, তবে আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলেই করবে।

কিচেনে খেতে বসল প্যাট্রিক হল বারের দিকে নজর রাখার জন্য। সামনের দিক কাভার করতে স্টোরে বসল হিউ হুবার্ট। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে চোখে কৌতুক নিয়ে দেখল হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অসহায় জোডিকে।

খাওয়া শেষে আধঘণ্টা করে ঘুমাল ওরা একে অপরকে পাহারায়। রেখে। তিনটা বাজার দশ মিনিট আগে সামনের দিক থেকে একজন রাইডারকে আসতে দেখে প্যাট্রিক হলের উদ্দেশে হাঁক ছাড়ল হুবার্ট। কে যেন আসছে, প্যাট্রিক, তৈরি হও।

আগন্তুক এখনও আধমাইল দূরে আছে। লোকটার ঘোড়ায় চড়ার। ভঙ্গি কাউবয়দের মত। একপলকের জন্য রাইডারকে দেখার সুযোগ। পেয়েছে অলিভা। স্ট্যালিয়ন ঘোড়াটা আর হ্যাট দেখে ওর মনে হলো অ্যাডাম বেঞ্চলি আসছে।

কটমট করে অলিভার দিকে তাকাল হবার্ট। যদি একটাও শব্দ করো, তোমার বাবাকে পুড়িয়ে মারব?

লোকটা যে কথা রাখবে, মিথ্যে হুমকি দিচ্ছে না, সে-ব্যাপারে। অলিভার মনে কোনও সন্দেহ রইল না।

সামনের দরজার আড়াল থেকে উঁকি দিল প্যাট্রিক হল। রাইফেল রেঞ্জের বাইরে থেমে গেছে, হুবার্ট। আমার মনে হয় লোকটা অ্যাডাম। বেঞ্চলি।

ভুয়া হান্টারদের খবর নেয়ার জন্য ফোর্ট স্টীলে গিয়েছিল অ্যাডাম। ওখানে বার্ন মালিকের সাথে কথা বলে বাকবোর্ডের ট্র্যাক অনুসরণ করে এসেছে এখানে। হুবার্ট থাকতে পারে সন্দেহ হওয়ায় বাকবোর্ডটা বিউয়েলদের করালে আছে কিনা দেখার জন্য দূর দিয়ে র‍্যাঞ্চহাউসটা ঘিরে বৃত্ত রচনা করল সে।

প্যাট্রিক হল আর হুবার্ট অলিভাকে ঠেলতে ঠেলতে কিচেনে নিয়ে গেল। জুয়াড়ী জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে খিস্তি করল। তারপর বলল, বাকবোর্ড আর ঘোড়াগুলো দেখে ফেলেছে।

বার্নে অ্যাডামকে ঢুকতে দেখল ওরা। ওখানে চারটা ঘোড়া যব চিবাচ্ছে দেখেই সে বুঝতে পারবে শিগগিরই কোথাও রওয়ানা হবে চারজন লোক। হয়তো ভাববে দুটো ঘোড়া হান্টারদের জন্য, বাকি দুটো তাদের গাইডদের। ওদের ঘোড়া চিনতে না পারলেও কি সন্দেহ হবে অ্যাডামের মনে?

হুবার্ট কাঁধে রাইফেল তুলে জানালার পাশে দাঁড়াল। দরজার কাছাকাছি গিয়ে সিক্সগান বের করে প্যাট্রিক হল বলল, ওকে কাছাকাছি। আসতে দাও, হুবার্ট, মিস কোরো না।

হাসল হুবার্ট। আসছে সে।

কারবাইন হাতে বার্ন থেকে বেরিয়ে এগোতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল। অ্যাডাম। জিজ্ঞেস করল, হেনরিখ, অলিভা, তোমরা ভেতরে আছ?।

বাড়ির ভেতর থেকে জবাব দিল না কেউ। বাবা আর জোডির কথা মনে পড়ে যাওয়ায় অ্যাডামকে সাবধান করতে পারল না অলিভা। চেঁচালে জেনেশুনে আত্মহত্যা করা হবে। ওর বাবাকে পুড়িয়ে মারবে হবার্ট। জোডিকে খুন করবে।

জবাব দিচ্ছ না কেন, কোথায় গেলে তোমরা! আবার বলল অ্যাডাম।

উত্তর দিল না কেউ এবারও। কিচেনের চিমনি দিয়ে ধোয়া বেরচ্ছে দেখল সে।

শালা ঠিকই বুঝেছে আমরা আছি এখানে। রাইফেলের নলের গুঁতোয় জানালার কাঁচ ভেঙেই ট্রিগার টানল হুবার্ট। অকথ্য গালাগাল দিল। অ্যাডামকে গাঁথতে না পেরে।

বাড়ির ভেতর থেকে রাইফেল গর্জে উঠতেই কারবাইন কাঁধে তুলে পাল্টা জবাব দিল অ্যাডাম। হুবার্টের মুখে কাঠের কুচি ঢুকে গেল বুলেটটা জানালার চৌকাঠে লাগায়।

অলিভা জানালা দিয়ে দেখল বার্নের ভেতরে ঢুকে পড়েছে অ্যাডাম। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। অ্যাডাম বার্নের ভেতর থেকে হয়তো ঠেকিয়ে রাখতে পারবে খুনীগুলোকে।

হুবার্ট পাশের ঘরে গিয়ে জোডিকে বাঁধনমুক্ত করে ঠেলতে ঠেলতে কিচেনে নিয়ে আসায় অলিভার মন থেকে শেষ আশাটুকুও দূর হয়ে গেল। জোডিকে জানালার সামনে দাঁড় করিয়ে হবার্ট বলল, ওকে বলো। তোমরা আছ এখানে।

অ্যাডাম! ভয় পাওয়া কাঁপা কাঁপা গলায় চেঁচাল জোডি। ওরা আমাদের বন্দী করে রেখেছে, অ্যাডাম!

তুমি আর কে? বার্ন থেকে অ্যাডাম জানতে চাইল।

বিউয়েলরা…

যথেষ্ট হয়েছে, জোডিকে সরিয়ে এনে আবার হাত-পা বাঁধল হুবার্ট। মুখে রুমাল গুঁজে দিল। তারপর অলিভাকে নিয়ে জানালার সামনে দাঁড় করাল যাতে বার্ন থেকে দেখতে পায় অ্যাডাম। চেঁচিয়ে বলল, তুমি চলে গেলে প্রাণে বাঁচবে ওরা। তোমার ভাই আর মেয়েটাকে জিম্মি করে নিয়ে যাব আমরা। যদি বুঝি আমাদের অনুসরণ করা হচ্ছে না, মাঝরাতে ট্রেইলে ছেড়ে দেব।

অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে জবাব দিল অ্যাডাম। আর কিছু বলবে?

হ্যাঁ, গর্জে উঠল প্যাট্রিক হল। আমরা দেখতে পাই এমন একটা জায়গায় রাইফেলটা নামিয়ে রেখে বার্নের পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করবে তুমি।

চুপ করে অ্যাডামের জবাবের অপেক্ষা করছে সবাই। অলিভা বুঝতে পারছে খুনী দুটোর প্রস্তাবে রাজি হলে বিরাট ভুল করবে অ্যাডাম। জিম্মিদের তত খুন করবেই ওরা, রাইফেলহীন অ্যাডামকেও যাওয়ার পথে শেষ করে যাবে। ওর .৪৫-এর রেঞ্জের বাইরে থেকে ঝুঁকি না নিয়েই খুন করে ফেলার মতলব আঁটছে প্যাট্রিক হল আর হুবার্ট।

পাগলের মত চেঁচাল অলিভা। রাজি হয়ো না, অ্যাডাম, রাজি…

হুবার্টের প্রচণ্ড চড়ে ছিটকে পড়ে গেল মেয়েটা। প্যাট্রিক হল জানালায় গিয়ে দাঁড়াল। ভাবার জন্য তোমাকে আমরা দশ মিনিট সময় দিচ্ছি, অ্যাডাম।

ওদের ছেড়ে দাও, আমি তোমাদের জিম্মি হতে রাজি আছি, আশি গজ দূরের বার্ন থেকে স্পষ্ট ভেসে এল অ্যাডামের গলা। ওরা চোখের আড়ালে চলে যাবার পর দুহাত মাথার ওপর তুলে তোমাদের দিকে এগিয়ে আসব আমি।

পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করল হুবার্ট আর প্যাট্রিক হল। লড়াই না করে সরে পড়ার সুযোগ আছে লোভনীয় প্রস্তাবটাতে। তবে অ্যাডাম ভাওতাও দিতে পারে। শালা যদি কথা না রাখে তখন? আপনমনে বলল হুবার্ট। অ্যাডামের উদ্দেশে চেঁচাল, আমরা দশ মিনিট শুনতে শুরু করেছি, অ্যাডাম। রাইফেলসহই চলে যেতে পারো তুমি, আমরা অনুসরণ করব না। বার্নের পেছন দরজা দিয়ে হাঁটতে শুরু করো।

আর নয় মিনিট পর তোমার ভাইকে খুন করব, হুমকি দিল প্যাট্রিক হল।

ভয়ে ভয়ে দেয়াল ঘড়িটা দেখল অলিভা। ওটা দ্রুত চলছে নাকি? কিছুক্ষণ আগেই সে দেখেছে আট মিনিট বাকি আছে, আর এখন বড়। কাটাটা দেখাচ্ছে হাতে সময় রয়েছে মাত্র এক মিনিট!

বার্ন থেকে বেরিয়ে এল অ্যাডাম বেঞ্চলি। শ্রাগ করে বলল, চলে। যাচ্ছি, হবার্ট!

২৩.

বার্নের পেছনে গিয়ে পশ্চিমে হাঁটতে শুরু করল অ্যাড়াম। লক্ষ রাখল যাতে বার্নের আড়াল পায়। রাইফেল রেঞ্জের বাইরে চলে গিয়ে দক্ষিণে পা বাড়াল সে। স্টেজ রোডের দিকে ওর চোখ। দুজন অশ্বারোহী আসছে ওদিক থেকে। বার্ন থেকে ওদের দেখেই দল ভারী করার জন্য–হুবার্টদের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে অ্যাডাম।

এখনও লোকগুলো একমাইল দূরে আছে। ও জানে না কারা ওরা, তবে সতর্ক না করলে যে স্টোরে ঢুকতে গিয়ে হুবার্টের হাতে মরবে সে ব্যাপারে মনে কোনও সন্দেহ নেই অ্যাডামের।

কাছে আসার পর দুজনকে চিনতে পেরে অবাক হলো অ্যাডাম। স্ট্যানলি আর ওয়েন! ব্যাগস থেকে নব্বই মাইল পথ পাড়ি দিয়ে হঠাৎ এখানে এসেছে কেন?

নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছে জিম লেম্যান তিনবার ঘোড়া পাল্টে তেরো ঘণ্টায় নব্বই মাইল পেরিয়ে। তার মুখে ভুয়া হান্টারদের ফোর্ট, স্টীলে নামার খবর শুনে আর দেরি করেনি ডেপুটি এবং ওয়েন, রলিন্স হয়ে ছুটে এসেছে ফেরিসে।

পাঁচশো গজ দূরে এসে ঘাড় ফিরিয়ে স্টোরটা দেখল অ্যাডাম। ও আরও দূরে চলে যাবে সেই অপেক্ষায় আছে আউট-লরা। ডেপুটি আর ওয়েন ওর সামনে ঘোড়া থেকে নামার পর দুটো রাইফেল গর্জে উঠল স্টোর থেকে।

কি ব্যাপার, অ্যাডাম? জানতে চাইল ক্লান্ত স্ট্যানলি স্টোরের দিকে তাকিয়ে।

শিউরে উঠল অ্যাডাম। এতক্ষণে হুবার্ট জেনে গেছে চালাকি করা হয়েছে তার সাথে। জোডি আর অলিভাকে লোকটা খুন করে বসবে না। তো! মনে হয় না, নিজেকে আশ্বস্ত করল অ্যাডাম। তিনজনকে ঠেকিয়ে রেখে নিরাপদে পালাতে হলে জিম্মি দরকার হবে হুবার্টদের। হুবার্ট আর প্যাট্রিক হল জোডিদের স্টোরে জিম্মি করেছে, বলল সে।

কেউ কারও সাথে কথা বলল না। ওরা জানে কি করা উচিত। রাইফেল রেঞ্জের বাইরে থেকে বার্নের আড়ালে চলে এল তিনজন। সরাসরি সামনে বার্ন থাকায় ওদের আর দেখতে পাচ্ছে না হুবার্ট। প্রতিটা মুহূর্তে অ্যাডামের মনে হচ্ছে রাগে উন্মত্ত হয়ে বন্দীদের খুন করে বসবে না তো লোকটা!

ওদের জন্য এটা একটা ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক বুদ্ধির খেলা। হেরে গেলে। প্রাণ হারাবে তিনজন মানুষ। মারা যাবে জোডি আর বিউয়েলরা।

বার্নের পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল ওরা। নিজেদের ঘোড়া বেঁধে বার্নটা ঘুরে দেখল স্ট্যানলি। তারপর বলল, সামনের দিকে নজর রাখতে হবে না আমাদের। চারটে ঘোড়াই এখানে। পায়ে হেঁটে পালানোর চেষ্টা মারা গেলেও করবে না ওরা।

বার্নের সামনের দরজা থেকে স্টোরের উদ্দেশে চেঁচাল জোসেফ ওয়েন। অলিভা, আমরা তোমাকে বের করে আনব! হুবার্ট, অলিভার একটা চুল ছুঁলেও নরক পর্যন্ত তোমাকে ধাওয়া করব আমি!

ওয়েনের কথার জবাবে কিচেনের জানালা থেকে গর্জে উঠল একটা রাইফেল। বার্নের দরজায় বুলেট গাঁথল। রাগে গাল দিয়ে উঠে। কারবাইন হাতে বার্ন থেকে এক পা বেরিয়ে এল ওয়েন। পাঁচবার পাম্প করে ম্যাগাজিন খালি করল ট্রিগার টেনে।

দুকাঁধ ধরে টেনে তাকে বার্নের ভেতরে নিয়ে এল স্ট্যানলি। শান্ত, কণ্ঠে বলল, মাথা গরম করে কোনও লাভ নেই ক্ষতি ছাড়া। পরেরবার গুলি করার আগে ভেবে কোরো, অলিভাকে ওরা জানালার সামনে ঠেলে দিলে তোমার গুলিতেই মরবে মেয়েটা।

কি করা উচিত তাহলে? তিক্ত কণ্ঠে বলল ওয়েন। আমার চাচা চাচীকে খুন করেছে হুবার্ট। এখন তার জিম্মি হয়ে আছে আমার প্রেমিকা। তুমি হলে কি করতে?

বুদ্ধি দিয়ে হারিয়ে দিতাম ওদের।

তাহলে ফালতু দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করছ কেন, বের করো বুদ্ধি, খেঁকিয়ে উঠল অধৈর্য ওয়েন।

স্ট্যানলি কথা বলার আগেই স্টোর থেকে হুবার্টের গলা ভেসে এল। তোমরা আমাদের ঘোড়া না দিলে ধরা পড়ব আমরা, কিন্তু জোডি আর বিউয়েলদের বাঁচতে দেব না। ভেবে দেখো, অ্যাডাম, খুনীর ফাঁসি একবারই হয়। এখনও সময় আছে, আমার আগের প্রস্তাব মেনে নাও, হাঁটতে শুরু করো তোমরা তিনজন।

হাসার ভঙ্গিতে দাঁত খিচাল ওয়েন। আমরা তোমাদের কথা শুনে চলে গেলে ওদেরকে ছাড়া রওয়ানা হবে তোমরা?

না, জবাব দিল প্যাট্রিক হল। আমাদের ধাওয়া করা হবে না নিশ্চিত হবার জন্য দুজনকে সাথে নিয়ে যাব। কাল সকালে ছেড়ে দেয়া হবে ওদের।

আমরা তোমাদের বিশ্বাস করব কেন? স্ট্যানলি জানতে চাইল।

না করে তোমাদের উপায় নেই, সশব্দে হাসল প্যাট্রিক হল। আবারও তোমাদের দশ মিনিট সময় দিচ্ছি। খোলা প্রেইরি ধরে হাঁটতে শুরু করো, সময় বেশি নেই তোমাদের হাতে। কথা না শুনলে প্রথমে মেয়েটার দুঊরুতে গুলি করা হবে। সে মরার পর একই ভাবে ধীরে। ধীরে মারা হবে জোডিকেও।

জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট চাটল অ্যামি। অসহায় দৃষ্টিতে পালাক্রমে তাকাল ওয়েন আর স্ট্যানলির দিকে। আর আলোচনা সমঝোতার সময় নেই, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই। আগুন ঝরানো অস্ত্র হাতে স্টোর আক্রমণ করতে পারে ওরা, কিন্তু তাতে সত্যিকার অর্থে কোনও লাভ। হবে না জিম্মিদের মৃত্যু তরান্বিত করা ছাড়া।

স্ট্যানলি, ওরা আসলেই কি….

মাথা ঝাঁকাল ডেপুটি। হুবার্ট ঠিকই বলেছে, অ্যাডাম। আরও দুটো খুন করলেও বিচারে তো ফাঁসির বেশি কিছু হবে না ওর।

আর পাঁচ মিনিট। স্টোর থেকে হুবার্টের গলা শোনা গেল।

একটা মিনিট খুব দ্রুত পেরিয়ে গেল। বার্নের পেছনের দরজাটা খুলে গেছে প্রথম টের পেল স্ট্যানলি। তার দেখাদেখি ঘুরে দাঁড়াল বাকি দুজন। দেখল ঘোড়া থেকে মাটিতে নেমেছে নিরস্ত্র একটা লোক।

কি ব্যাপার? বিস্ময় মেশানো কণ্ঠে সবার ওপর চোখ বোলাল বার্ট আর্থার।

চুপ, আর্থার, গলা নামিয়ে বলল স্ট্যানলি, তুমিই আমাদের শেষ ভরসা।

কোট পরে এসেছে বার্ট আর্থার, অলিভার মন পাওয়ার জন্য হাতে বুনো ফুল। চোখ কপালে উঠল তার। ভরসা? কিসের?

আঙুলের ইশারায় লোকটাকে চুপ করতে বলে বার্নের সামনের দরজায় দাঁড়িয়ে উঁচু কণ্ঠে স্ট্যানলি বলল, তোমরা ঠিকই বলেছ, আইনে ফাঁসির চেয়ে বেশি কিছু নেই। যদি কথা দাও নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে ওদের তোমরা ছেড়ে দেবে, তাহলে তোমাদের কথা মেনে পায়ে হেঁটে সরে যাব আমরা।

আমরা রাজি, রওয়ানা হও তোমরা, চেষ্টা করেও গলায় ফুটে ওঠা স্বস্তি চাপা দিতে পারল না জুয়াড়ী।

স্ট্যানলি বার্নের পেছনে ওদের তিনজনের কাছে ফিরে এল দ্রুত পায়ে। ওদের দৈহিক গড়নের সাথে ওর গড়নের মিল নেই অনুভব করে হতাশ হয়েছে মনে মনে। অ্যাডাম আর আর্থারকে কাপড় বদলাবদলি করে নিতে বলল সে। অ্যাডামের উঁচু ক্রাউনের সমব্রেরো হ্যাট বসিয়ে। দিল আর্থারের মাথায়। ওরা কাপড় বদলে নেয়ার পর বলল, অ্যাডাম বার্নে থাকবে। চলো হাঁটতে শুরু করি আমরা তিনজন।

যাব না আমি, প্রতিবাদ করল ওয়েন। ওদের সাথে ব্যক্তিগত বোঝাপড়া আছে আমার।

তাহলে অলিভা মরবে, জায়গা মত খোঁচা দিল স্ট্যানলি। আমাকে যেতে হচ্ছে কারণ পেছন থেকে দেখে ওরা বুঝবে চলে যাচ্ছি আমি ওদের নির্দেশ মেনে। তোমাকে চিনবে কাঁধের মস্ত সাদা ব্যাণ্ডেজ দেখে। কিন্তু অ্যাডামের কাপড় পরা আর্থারকে পেছন থেকে চিনতে পারবে না ওরা। কি বলছি বুঝতে পারছ? জেদাজেদি না করে হাঁটতে শুরু করি চলো।

অ্যাডামও বুঝতে পেরেছে ডেপুটির পরিকল্পনা, ফিসফিস করে ধন্যবাদ দিল স্ট্যানলিকে। খালি হোলস্টার আর গানবেল্ট কোমরে পরে নিল বার্ট আর্থার, হাতে অ্যাডামের রাইফেল ধরে মাথা কঁকাল।

একসাথে বার্ন থেকে বেরিয়ে এল ওরা তিনজন। বার্নের আড়াল নিয়ে রাইফেলের রেঞ্জের বাইরে চলে যাবার পর বামে মোড় নিল। ক্রীকের ধার দিয়ে পায়ে হেঁটে এগিয়ে চলল। এই মুহূর্তে স্টোর থেকে বিনকিউলার দিয়ে ওদের পিঠ দেখলেও কারও বোঝার উপায় নেই বা পাশের লোকটা অ্যাডাম নয়, অন্য কেউ।

২৪.

একা হয়ে যাওয়ার পর একটা স্টলে ঢুকে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল অ্যাডাম। ও আশা করছে ঘোড়াগুলোয় স্যাড়ল চাপানোর আগে বন্দীদের বাইরে আনবে না হবার্টরা। জোডি আর অলিভা গানফাইটের মধ্যে পড়ে গেলে কি হয় বলা যায় না।

জিম্মিদেরগুলো ধরে চারটা ঘোড়া নেবে ওরা বার্ন থেকে। না, ভুল হলো। প্যাক হর্সও লাগবে ওদের। অ্যাডাম জানে না উইডোফিল্ড আর ল্যানট্রির কি হয়েছে, তবে বুঝতে পারছে যে করেই হোক টাকা পেয়ে। গেছে হুবার্টরা। টাকা বইবার জন্যও আলাদা প্যাক হর্স নেবে হুবার্ট আর প্যাট্রিক হল। যা খুশি করুক ব্যাংক ডাকাতির টাকা দিয়ে, জোডি আর অলিভার চিন্তা ছাড়া অ্যাডামের মাথায় আর কোনও চিন্তা নেই এই মুহূর্তে।

দড়াম করে বন্ধ হলো কিচেনের দরজা। বুট পরা পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে বার্নের দিকে। দুই আউট-লই যদি আসে সুবিধা হবে। অ্যাডামের। ওরা ঘোড়ায় স্যাডল ওঠানোর সময় অপ্রস্তুত অবস্থায় থাকবে। বন্দী করতে পারবে সে সহজেই।

শুধু প্যাট্রিক হলকে বার্নে ঢুকতে দেখে বুক ভরা আশা দপ করে নিভে গেল অ্যাডামের। জুয়াড়ীকে বন্দী বা হত্যা করলে হুবার্ট টের পাবেই। বার্নের দরজায় নজর না রাখার মত বোকা সে নয়। সেক্ষেত্রে খুন হয়ে যাবে অলিভা আর জোডি। বাচবে না হেনরিখ বিউয়েলও।

একে একে ছয়টা ঘোড়ায় স্যাডল, চড়াল প্যাট্রিক হল। ওগুলোর। দড়ি ধরে বাইরে নিয়ে গেল। অ্যাডাম ভেবেছিল কিচেনের দরজায় থামবে লোকটা। কিন্তু স্টোরের সামনের দিকে চলে গেল সে বাড়ির কোনা ঘুরে।

চমকে উঠল অ্যাডাম। মারাত্মক একটা ভুল করে ফেলেছে সে। বার্ট আর্থারকে ওর উচিত হয়নি রাইফেলটা দিয়ে দেয়া। তবে এখনও সময় আছে। ওরা প্যাকহর্সে মালপত্র তুলে বন্দীদের বের করে রওনা হওয়ার আগেই স্টোরের সামনে পৌঁছুতে হবে তাকে। দৌড়ে বার্ন থেকে বেরিয়ে এল সে। হুবার্ট সম্ভবত স্টোরের সামনে জোডি আর অলিভাকে নিয়ে ব্যস্ত, বার্নের দিকে খেয়াল নেই। আর সে দেখল কি দেখল না পাত্তাও দিচ্ছে না অ্যাডাম এখন। ওর সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই। হয় মরো নয় মারো।

উন্মত্তের মত উদ্যত সিক্সগান হাতে স্টোরের কোনা ঘুরে সামনে। পৌঁছে গেল অ্যাডাম। ওর দশ ফুট দূরে দাড়ানো ঘোড়াটায় অলিভকে উঠে বসতে বাধ্য করছে হিউ হুবার্ট। প্যাট্রিক হল সিক্সগানের নল জোডির দিকে তাক করে ঘোড়ায় উঠতে ইশারা করছে। জোডির চেহারায় পরিবর্তন আসতে দেখে সন্দেহ হলো জুয়াড়ীর। ঘুরে তাকাল। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে সে কোমরের কাছ থেকে তাক করল অ্যাডামের দিকে।

পাঁচবার ট্রিগার টানল অ্যাডাম। তিনবার প্যাট্রিক হলের উপর লক্ষ্য স্থির করে, দুবার হিউ হুবার্টের আবছা,শরীর লক্ষ্য করে। পাল্টা জবাব দিল হুবার্ট। লাগাতে পারল না। অলিভা লাথি কষেছে তার দুই উরুর ফাঁকে।

গুলি করে সিক্সগান খালি করল জুয়াড়ী। ঘৃণা ভরা চোখে তাকাল একবার অ্যাডামের দিকে। তারপর টলে উঠে কয়েক মুহূর্ত পর রক্তাক্ত শরীরে মাটিতে পড়ে গেল। অ্যাডাম শুনল কয়েকবার মুখ খিস্তি করল। হুবার্ট। কিন্তু তাকে দেখতে পেল না নিজে মাটিতে পড়ার আগে। হুবার্টকে উবু হয়ে বসে থাকতে দেখল অ্যাডাম। মাটিতে পড়ে গেছে। সিক্সগান, রক্তাক্ত শরীরে খুঁজছে লোকটা। শেষ গুলিটা অ্যাডাম খরচ করল উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায়। হুবার্টের খুলি ফুটো হয়ে রক্ত বের হতে দেখল। তারপর হঠাৎ করে অন্ধকার আর শব্দহীন হয়ে গেল ওর জগৎ।

অ্যাডাম জানে না কতক্ষণ অজ্ঞান ছিল। হেনরিখ বিউয়েলের গলা। প্রথমে শুনতে পেল সে জ্ঞান ফেরার পর। লোকটা বলছে: আমি অন্য ব্যবস্থা করে নেব, ওকে আমার বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দাও,

চেতন অচেতনের মাঝে অ্যাডাম বুঝতে পারল ওকে বয়ে নিয়ে,। খাওয়া হচ্ছে। চোখ মেলে দেখল স্ট্যানলি, জোডি, অলিভা আর ওয়েনের ঘোলা চেহারা। নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করল সে। ওর মনে হচ্ছে। আগুনে তপ্ত লোহা বুকে ঢুকিয়ে দিয়েছে কেউ। অসহ্য ব্যথা। হেনরিখ বিউয়েলের গলা শুনতে পেল আবার। ডিক উলফের ওখানে দুজন। হান্টার উঠেছে। তাদের একজন ডাক্তার। আমি বার্ট আর্থারকে পাঠিয়ে দিয়েছি তাকে নিয়ে আসার জন্য।

কখন জ্ঞান হারিয়েছে জানে না অ্যাডাম। ও জানে না আজকের স্টেজে রলিন্স থেকে এখানে চলে এসেছে উদ্বিগ্ন রোসা। খবরের পিছু ধাওয়া করে ছুটে এসেছে ডেপুটির বন্ধু ফ্রেড ম্যাকলিন। পোর্চে বসে ছিল স্ট্যানলি, ফ্রেডকে দেখে সে অবাক হয়নি। কিন্তু রোসা এখানে এসেছে কেন?

লম্বা যাত্রা শেষে ক্লান্ত আড়ষ্ট দেহে স্টেজ থেকে নেমেছে বোসা। স্ট্যানলিকে দেখেই প্রথম প্রশ্ন করেছে অ্যাডাম কোথায়।

মেয়েটা ভয় পাচ্ছে অ্যাডাম আহত, ভাবল স্ট্যানলি। অ্যাডামের ভাগ্যের সাথে নিজের ভাগ্যের তুলনা করে কপালকে গাল দিল মনে মনে। অ্যাডামকে ভালবাসে রোসা, খুবই ভালবাসে। মুখে বলল, অ্যাডাম গুলি খেয়েছে, তবে চিন্তার কিছু নেই। ডাক্তার বলেছে এক মাসের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবে।

অ্যাডলার! মুখ থেকে রক্ত সরে গেল রোসার। স্ট্যানলিকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত পায়ে স্টোরের ভেতরে ঢুকে গেল অ্যাডামকে দেখার জন্য।

বিস্মিত চেহারায় ফ্রেড ম্যাকলিনের দিকে তাকাল স্ট্যানলি। আশ্চর্য! আমি রলিন্স হয়ে এসেছি। জুডাস অ্যাডলারই হুবার্ট জানার পরও আমাকে রোসা তখন বলেনি কেন? ১, জানত না তখন, বলল সাংবাদিক। তুমি শহর ছাড়ার ঘণ্টাখানেক পরে নাস্তার টেবিলে জেনেছে। ম্যাক্সওয়েল হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল স্টেজ। ড্রাইভার কফি খেতে হোটেলে ঢোকায় রোসা, জিজ্ঞেস করে ফেরিসে সে দুজন হান্টারকে পৌঁছে দিয়েছে কিনা। ড্রাইভার বলে দেয়নি। কথায় কথায় জানায় ফেরিসে দুজন হান্টার সময় মত না পৌঁছনোয় খুব হতাশ হয়েছে অ্যাডলার নামের একজন গাইড। থেমে দম নিল ফ্রেড। ব্যাপারটা অ্যাডামকে জানানো দরকার মনে করেই ছুটে এসেছে মেয়েটা। চায়নি না জেনে হুবার্টের মুখোমুখি হয়ে মারাত্মক বিপদে জড়িয়ে পড়ুক অ্যাডাম।

তারপুলিনে পেঁচিয়ে বার্নে রাখা হয়েছে হুবার্ট আর তার সঙ্গীকে। ব্যাংকার দুজনও বাদ পড়েনি। বারে গিয়ে দেখো দুটো ব্ল্যাংকেটে চার লক্ষ ডলার আছে।

মাথা চাপড়াল সাংবাদিক। হাতে এরকম একটা স্টোরি, আর আমি পড়ে আছি টেলিগ্রাফ অফিস থেকে পঞ্চাশ মাইল দূরে! চার লক্ষ ডলার দেখে চোখ জুড়াতে তাড়াহুড়ো করে বারে গিয়ে ঢুকল সে।

কিছুক্ষণ পর সাপার খেতে সবাইকে ডাকা হলো। টেবিলে বসে স্ট্যানলি লক্ষ করল জোডি আর রোসা আসেনি। অলিভা বলল ওরা, অ্যাডামকে একা রেখে আসতে রাজি হয়নি দেখে খাবার পৌঁছে দিয়েছে সে।

খাওয়া শেষে ডাইনিঙ রূমের মই বেয়ে উঠে ঘুমাতে চলে গেল। হেনরিখ বিউয়েল আর ডাক্তার। রাতে সে এখানেই থাকবে। আজ সারাদিন সবার উপর দিয়ে কম ধকল যায়নি। একটু পরে স্টেজ ড্রাইভার, আর ফ্রেডও বুড়ো বিউয়েলের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করল। ফিরে যায়নি হতাশ বার্ট আর্থার। আর সবার চেয়ে কোনও অংশে কম ক্লান্ত নয় স্ট্যানলি বা আর্থার। তবু একটা অস্থিরতা পেয়ে বসেছে ওদের। চোখে ঘুম নেই।

স্টোরে পায়চারি করতে করতে ওরা দেখল বাসন ধুতে অলিভাকে সাহায্য করছে ওয়েন। নিঃসঙ্গতার অনুভূতি বুকে আরও চেপে বসল। ওদের। শুনতে পেল ওয়েন নরম গলায় বলছে, অলিভা, তোমাকে ছেড়ে আজ চলে যেতে হয়েছিল বলে নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী। মনে হচ্ছে আমার।

আর্থার আর স্ট্যানলি দেখল ওয়েনের দিকে তাকিয়ে হাসছে অলিভা। নির্ভরতার হাসি। যেন জানে আজই শেষ, আর কোনদিনও ওকে ছেড়ে যাবে না ওর পছন্দের মানুষটা।

নিঃশব্দে বিদায় নিয়ে চলে গেল বার্ট আর্থার, দরজা খুলে হেনরিখ বিউয়েলের ঘরে এক পা ঢুকে থমকে দাঁড়াল ডেপুটি। বিছানায় ঘুমিয়ে আছে অ্যাডাম।স্ট্যানলির দিকে পেছন ফিরে বসে আছে রোসা আর জোডি। ওরা দুজন দেখতে পায়নি ওকে।

আমার জন্যই ওর এই অবস্থা, ফিসফিস করে বলল জোডি।

ভাই যে ভাইকে এত ভালবাসে আগে কখনও দেখিনি, বলল রোসা।

আমিও জানতাম না। সম্পত্তি বাড়াবার দিকে ওর এত খেয়াল দেখে ওকে সাধারণ এক স্বার্থপর লোক হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম।

এখন তাহলে চিনলে?

পকেট থেকে অ্যাডামের লিখে দেয়া কাগজটা বের করল জোডি। কয়েকটানে ছিড়ে ফেলল কুচি কুচি করে।

কি করছ? প্রশ্ন করল রোসা।

ভাইয়ের কাছে অনেক পেয়েছি, বাপের সম্পত্তি দখল করার কোন দরকার নেই আমার। কোনদিন ওর কথার অবাধ্য আর হব না। ও যা দেবে তাতেই আমি খুশি।

চুপ করে অ্যাডামের মুখের দিকে তাকিয়ে বসে রইল ওরা দুজন।

নিঃশব্দে দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে স্টোরের সামনের সিঁড়িতে এসে বসল স্ট্যানলি। একটা সিগারেট ধরাল। প্যাট্রিক হলের ওয়ালেট থেকে পাওয়া দুটো কাগজ বের করল পকেট থেকে। ম্যাচের কাঠি জ্বেলে, পুড়িয়ে ছাই করে দিল।

দূরে কয়োট ডাকছে। কিচেনে নিচু গলায় হাসল অলিভা আর ওয়েন। চারটা মৃতদেহ পড়ে আছে বার্নে। আকাশ থেকে খসে পড়ল একটা উল্কা। পৃথিবীতে নিজেকে ভীষণ একা মনে হচ্ছে স্ট্যানলির। এখানে কাজ শেষ। কাল আবার রওনা হয়ে যাবে সে। শেরিফ লেম্যানের সাথে খুঁজে বের করবে আরেক খুনী–স্পাইক হাননাকে। স্টোরের দরজায় মাথা ঠেকিয়ে একদৃষ্টিতে রাতের তারাভরা আকাশে চোখ রাখল সে। ঠোঁটে ঝুলছে বিষণ্ণ একটুকরো হাসি।

Exit mobile version