- বইয়ের নামঃ মরণজয়ী
- লেখকের নামঃ নসীম হিজাযী
- প্রকাশনাঃ বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, ইসলামিক বই
মরণজয়ী
০১. সূর্য কতোবার পূর্ব দিকে
মরণজয়ী – নসীম হিজাযী
অনুবাদ: সৈয়দ আবদুল মান্নান
অনুবাদকের কথা
উর্দু সাহিত্যের জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক নসীম হিজাযীর বিখ্যাত ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘আখেরী চটান’-এর বাংলা তরজমা গত বছর শেষ প্রান্তর’ নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। বর্তমান গ্রন্থ তার অন্যতম উপন্যাস দাস্তান-ই-মুজাহিদ’ এর বাংলা তরজমা।
১৯৬০ সালের গোড়ার দিকে মূল লেখক যখন পাকিস্তান লেখক সংঘের প্রথম বার্ষিক উৎসব উপলক্ষে ঢাকায় আসেন, তার আগেই শেষ প্রান্তর এর পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করে রেখেছিলাম। মূল লেখক তখন বর্তমান গ্রন্থের তরজমার জন্য আমায় অনুরোধ করেন এবং সেই বছরের প্রথমার্ধের মধ্যেই আমি এ গ্রন্থের তরজমা শেষ করি। এছাড়া লেখকের আরো যে দুখানি উপন্যাস তরজমার ভার আমার উপর ন্যস্ত ছিলো, তার একখানি এখনো অসমাপ্ত রয়েছে। আশা করি, আল্লাহর ফজলে অনতিকালের মধ্যে তার তরজমা কার্য সমাপ্ত হবে।
জাতীয় কল্যাণের উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন অংশের জনগণের মধ্যে নিবিড় পরিচয় ও সম্প্রীতি সৃষ্টির মাধ্যম হিসাবে বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশিত সাহিত্যের তরজমা অপরিহার্য প্রয়োজন সরকারী-বেসরকারী উভয় মহলেই স্বীকৃতি লাভ করেছে। দীর্ঘকাল ধরে আমি অনুবাদকর্মে আত্মনিয়োগ করেছি এবং ইতিমধ্যে আমার বেশ কয়েকখানি অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আরো কয়েকটি অনুবাদ গ্রন্থ এখন মুদ্রণ প্রতীক্ষায়।
বর্তমান গ্রন্থ আমাদের তরুণ-মনে দেশ ও ধর্মের জন্য আল্লার পথে জীবনের সর্ব কোরবান করে মৃতুঞ্জয়ী হবার সংকল্প জাগিয়ে তুললেই আমার শ্রমের সার্থকতা।
সৈয়দ আবদুল মান্নান
হক ভিলা লেক সার্কাস,
উত্তর ধানমন্ডি ঢাকা-১০০০।
প্রকাশকের কথা
মরণজয়ী উপন্যাসটি সু-সাহিত্যিক সৈয়দ আবদুল মান্নান অনূদিত দান ই-মুজাহিদ’-এর বাংলা অনুবাদ। প্রখ্যাত উর্দু ঔপন্যাসিক নসীম হিজাযী বাংলাভাষী পাঠক সমাজে অত্যন্ত সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। তার প্রায় সব উপন্যাসই বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে ইতিহাসকে পাঠক সমাজে উপস্থাপন করার জন্যেই নসীম হিজাযী উপন্যাস রচনা করেছেন। তিনি ইতিহাস দরদী ঔপন্যাসিক। উপন্যাসের বিনোদনের জন্য তিনি ইতিহাসের সত্যকে বিকৃত করেননি। তথাপি একথা নিৰ্বিধায় বলা চলে, উপন্যাসের বিনোদন মোটেও ক্ষুণ্ণ হয়নি।
১৯৬৪ ইং সালে মরণজয়ী উপন্যাসটি বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ কর্তক প্রথম প্রকাশিত হয়। ১০ম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০১৩ সনে। পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী বর্তমানে এর ১১তম সংস্করণ প্রকাশিত হলো। বইটি পাঠক সমাজে সমাদৃত হয়েছে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
এস এম রইসউদ্দিন
পরিচালক (প্রকাশনী)
বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ
প্রসঙ্গ কথা
মরণজয়ী উপন্যাসটি নসীম হিজাযী রচিত উর্দু উপন্যাস দাস্তানে মুজাহিদ’-এর বাংলা অনুবাদ। দীর্ঘদিন ধরে এ পুস্তকটি আমাদের অনুবাদ সাহিত্যে এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। ১৯৬৪ সনে বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ এর অনুবাদ প্রথম প্রকাশ করে। অল্প সময়ের মধ্যেই এর দ্বিতীয় মুদ্রনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলেও নানাবিধ সীমাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘ দুই দশক পর এর দ্বিতীয় মুদ্রণ প্রকাশিত হয়। পাঠক মহলের চাহিদার প্রেক্ষিতে অতঃপর ১৯৮৯-এ এর তৃতীয় সংস্করণ এবং ১৯৯৬ সালে চতুর্থ প্রকাশিত হলে অদ্রুিত তা শেষ হয়ে যায়। অতঃপর ২০০৩ সালে পঞ্চম সংস্করণ প্রকাশিত হয় তাও শেষ হয়ে যায়। এক্ষণে এর ৬ষ্ঠ সংস্করণ মুদ্রণ করে বাংলাভাষী পাঠকবৃন্দের হাতে তুলে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।
বাংলায় অনুদিত নসীম হিজাযীর আরো কয়েকটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘শেষ প্রান্তর’, ‘খুন রাঙা পথ’, ‘ভেঙ্গে গেল তলোয়ার’, মুহাম্মদ ইব্ন কাসিম’ইত্যাদি। এক সময় এ অনুবাদ গ্রন্থগুলো বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের মধ্যে নসীম হিজাযী ও তাঁর উপন্যাস সম্পর্কে প্রভূত কৌতূহল ও আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল। মরণজয়ী’
এর এবারের প্রকাশনাও পাঠক মহলে সমানভাবে আদৃত হবে সন্দেহ নেই।
পাঠক মহলে ঔপন্যাসিক নসীম হিজাযীকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন নেই। উপমহাদেশের সার্থক ঐতিহাসিক ঔপন্যাসিকদের মধ্যে সম্ভবতঃ তিনি অন্যতম। জাতীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পটভূমিকায় রচিত তাঁর উপন্যাসগুলো নৈতিক অবক্ষয় প্রতিরোধ, মূল্যবোধ জাগরণে এবং জাতিসত্ত্বার স্বকীয় অনুভূতির উজ্জীবনে ফলপ্রসূ ও সুদূরপ্রসারী অবদান রেখেছে। বস্তুত নসীম হিজাযীর উপন্যাসের ভিন্নরূপ স্বাদ, বৈশিষ্ট এবং স্বতন্ত্র সাহিত্যমূল্যের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লিঃ তার সবগুলো উপন্যাস বাংলায় অনুবাদের গ্রন্থসত্ত্ব গ্রহণ করেছিল।
রসজ্ঞ পাঠক মহলের সাগ্রহ সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় নসীম হিজাযীর অন্যান্য পুস্তকগুলোসহ প্রকাশনা কার্যক্রম বাস্তবায়নে আমাদের অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আশা করি।
এ.জেড.এম.শামসুল আলম
সভাপতি
আমাদের কথা
সাহিত্য জীবনের প্রতিচ্ছবি, আর ইতিহাস জাতির দর্পণ। দর্পণের আলোতে জাতি আত্মপরিচয়ের সৌভাগ্য ভাল করে ভবিষ্যতের চলার পথের সন্ধান পেতে পারে। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার মধ্যে উপন্যাস সমাজের যে প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে তা জাতিকে তার নিগূঢ়তর নিবিড়তর পরিচয় লাভে সাহায্য করে। উপন্যাস, সে সামাজিক হোক অথবা ঐতিহাসিক, বৃহত্তর ক্যানভাসে সমাজের তথা সমাজের মানুষদের প্রতিকৃতি অংকন করে। সামাজিক উপন্যাসে যেমন একটি সমাজ কথা কয়ে ওঠে, ঐতিহাসিক উপন্যাসে তেমনি কথা কয়ে ওঠে জাতির ইতিহাস। ইতিহাস পুস্তকে আমরা অতীতের নিরেট ঘটনাবলীর বিবরণ পাই। কিন্তু সেই নিরেট ঘটনাবলী ঘটেছিল ফেলে আসা যে জীবন্ত সমাজে, তার প্রতিচ্ছবি পাই ঐতিহাসিক উপন্যাসে। প্রকৃতপক্ষে ঐতিহাসিক উপন্যাস ইতিহাসকে জীবন্ত প্রাণবন্ত করে তোলে। এ কারণেই ঐতিহাসিক উপন্যাস পাঠকের মনে সৃষ্টি করে এক জীবনদায়িনী প্রেরণা, কারণ অতীতের জীবন্ত গৌরব গাথা হিসাবেই রচিত হয় ঐতিহাসিক উপন্যাস।