মই বেয়ে ওপরে উঠে গেল সে, গা এলিয়ে শুয়ে পড়ল কটে। কিছুক্ষণ পর উঠে বসে লণ্ঠন জ্বালল। স্যাডল রোল খুলে নতুন শার্ট প্যান্ট, মোজা, শেভিঙ কিট, স্নিকার আর একটা ৪৫ সিক্সগান বের। করল। .৩৮ সিক্সগানটা শোল্ডার হোলস্টার থেকে খুলে মেঝেতে নামিয়ে রাখল সে। .৪৫টা বালিশের তলায় রেখে আবার শুয়ে পড়ল।
নিচে শুতে যাওয়ার আগে টুকিটাকি কাজ সারছে বিউয়েলরা, ঠুকঠাক আওয়াজগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনল সে।–তারপর একসময়। চারদিকে পিন পতন নীরবতা নামল। আজ রাতে একটা প্রাণীও ডাকছে না কেন যেন। লণ্ঠনটা নিভিয়ে দিল প্যাট্রিক।
.
রাত একটার সময় বিছানা ছাড়ল। অন্ধকারে জামাকাপড় পরে বুট জোড়া হাতে নিয়ে নিঃশব্দে গিয়ে দাঁড়াল জানালার কাছে। বালিশের নিচ থেকে বের করে বেল্টে খুঁজে নিয়েছে ৪৫ সিক্সগান। জানালা পথে কিচেনের। ছাদে লাফিয়ে নামল সে। সেখান থেকে মাটিতে। বার্নে নিয়ে গিয়ে ঘোড়ায় স্যাডল চড়াল। আওয়াজ যাতে না হয় সেজন্যে জন্তুটাকে। হাঁটিয়ে নিয়ে গেল আধমাইল। তারপর স্যাডলে উঠে ঘোড়া ছোটাল। বিলি বেঞ্চলি মারা গেলে সব টাকা জোডি পাবে। ওর কাছ থেকে ব্ল্যাকমেল করে পুরো টাকা খসিয়ে নেয়া কঠিন হবে না।
বক্সবি র্যাঞ্চের গেটের খুঁটিতে ঘোড়া বেঁধে হেঁটে এগুলো অন্ধকার বাড়িটা লক্ষ করে। পোর্টে উঠে সদর দরজায় নক করল। ঘরের ভেতর থেকে খালি পায়ে কেউ হেঁটে আসছে শব্দ পেল সে।
কে? ভেতর থেকে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল র্যাঞ্চার।
টেলিগ্রাম, মিস্টার বেঞ্চলি, বামহাতে নাক টিপে ধরে বলল প্যাট্রিক। তার ডানহাতের ৪৫ কোল্ট দরজার দিকে তাক করা। শীতল হাসি খেলে গেল ঠোঁটে। সত্যিই একটা টেলিগ্রাম নিয়ে এসেছে সে। র্যাঞ্চারও জানে ওমাহা থেকে টেলিগ্রাম আসবে গরু বিক্রির খবর নিয়ে।
একমিনিট, ঘরের ভেতরে লণ্ঠন জ্বলে উঠল। বোল্ট খুলে খোলা দরজায় এসে দাঁড়াল নাইট শার্ট পরা বিলি বেঞ্চলি।
কোঁচকানো বিছানা, জুলন্ত লণ্ঠন এবং নাইট শার্ট এই তিনটেই প্রমাণ করবে খুনী রাতে এসেছিল। ট্রিগার টানতে শুরু করল প্যাট্রিক হল, চেম্বার খালি হওয়ার আগে থামল না। ঝাঁকি খেয়ে পিছিয়ে গেল র্যাঞ্চার, ঘরের মধ্যে চিত হয়ে আছড়ে পড়ল। প্যাট্রিক পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলো মারা গেছে বিলি বেঞ্চলি। ঘরে ঢুকে একটা টেবিলের ওপর টেলিগ্রামটা নামিয়ে রাখল। তদন্তের সময় স্বাভাবিকভাবেই সবাই মনে করবে বিকেলে ওটা দিয়ে গেছে সে। দশঘণ্টা পরের এই ঘটনার জন্য কেউ ওকে দায়ী ভাববে না।
সন্তুষ্ট মনে গেট পর্যন্ত হেঁটে এল সে, ট্রাক মোছার ঝামেলায় গেল, ট্র্যাক পেলেও কেউ বলতে পারবে না বিকেলের পর রাতেও সে এসেছিল। স্যাডলে উঠে ঘোড়াটাকে দ্রুতগতিতে ছোটাল সে বিউয়েল স্টোরের উদ্দেশে। অর্ধেক পথ এসে একটা গর্তে সিক্সগানটা ফেলে দিল।
স্টোরের সামনে দিয়ে ঘোড়া হাঁটিয়ে করালে রাখল সে। স্যাডলটাও খুলে একই জায়গাতে ঝোলাল। একটা রেন ব্যারেলের ওপরে দাঁড়িয়ে অনেক কষ্টে কিচেনের ছাদে উঠল। যেখান থেকে। জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকে কাপড় জামা ছাড়ল। কটে শুয়ে ভাবতে লাগল। কোনও ভুল করেছে কিনা।
কাউন্টির সবচেয়ে নামকরা ডেপুটি খুনীকে খুঁজতে এই অঞ্চলে এসেছে, এই হত্যাটাকে সে কি ওই হিউ হুবার্টের কাজ বলেই ধরে, নেবে? হুবার্টের কীর্তি মনে করলেই বা কি, না করলেই বা কি ওর নিজের জোরাল অ্যালিবাই আছে। আপনমনে হাসল প্যাট্রিক হল।
.
সকালে হেনরিখ বিউয়েল এসে ডাকার পরও কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকল সে। দ্বিতীয়বার ধাক্কা দেয়ার পর ঘুম ভাঙার অভিনয় করে উঠে বসে আড়মোড়া ভাঙল। জানালা দিয়ে উজ্জ্বল সূর্যরশ্মি ঢুকছে ঘরে। উঠে পড়ো, মিস্টার হল, বিশ মিনিটের মধ্যে ব্রেকফাস্ট, তাকে চোখ মেলতে দেখে বলল বিউয়েল।
এমন ঘুম জীবনে ঘুমাইনি, হাই তুলে মুখে হাত চাপা দিল প্যাট্রিক। আসলে সারারাতে এক ফোঁটা ঘুমও হয়নি তার।
বিশ মিনিট পর শেভ ও মুখ-হাত ধোয়া শেষে খোঁড়াতে খোঁড়াতে–নাস্তার টেবিলে এসে বসল সে। অলিভার উদ্দেশে নড় করে বলল, এত পথ ঘোড়ায় চড়ে একেবারে মারা পড়েছি। আগামী কালের আগে আর রলিন্স ফিরতে পারব না। বক্স বির ঘটনাটা জানাজানি হওয়ার আগে; এখান থেকে চলে যেতে সাহস পাচ্ছে না সে। কেউ যদি কিছু সন্দেহ করে বসে?
হেনরিখ বিউয়েল খাওয়া থামিয়ে বোদ্ধার মত মুচকি হেসে মাথা। ঝাঁকাল। চল্লিশ মাইল অভ্যেস না থাকলে অনেক দূরের পথ।
রলিন্স থেকে স্টেজ আসে কবে? জানতে চাইল প্যাট্রিক হল।
সপ্তাহে দুই দিন আসে। বারের ঠিক নেই, চিঠি আর রসদপত্রের প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে ব্যাপারটা।
ওদের ব্রেকফাস্ট শেষ হয়নি, একটা ঘোড়া ছুটে এসে থামল স্টোরের সামনে। দরজায় টোকার শব্দ হলো। ডেপুটি স্ট্যানলি আছে এখানে? বাইরে থেকে ব্যস্ত কণ্ঠে জানতে চাইল আগন্তুক।
ক্যান্টলিন র্যাঞ্চের কাউহ্যাণ্ডের গলা মনে হচ্ছে, অনুচ্চ স্বরে বলল হেনরিখ বিউয়েল, তারপর গলা চড়িয়ে ডাকল, কি ব্যাপার, ভেতরে এসো!
ঘরে যে লোকটা ঢুকল তার চেহারা দেখে বোঝা যায় খারাপ খবর। নিয়ে এসেছে। স্ট্যানলি কোথায়?
ক্রীকের তীরের কোনও র্যাঞ্চে রাত কাটিয়েছে সে। কেন?