পরচর্চায় বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল স্ট্যানলি। রওয়ানা হয়ে যাবো। আমার সাথে আসবে, প্যাট্রিক?
ফেরিস আর সেমিনো রেঞ্জের ফাঁক দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে এগুলো ওরা দুজন। মাঝের জমিতে ছোট একটা র্যাঞ্চ আছে। ওখানে পৌঁছে–কুয়ার পাড়ে নামল ডেপুটি, গাধাকে পানি দিতে ব্যস্ত র্যাঞ্চারের কাছে জানতে চাইল হিউ হুবার্ট নামের কাউকে সে চেনে কিনা।
চিন্তিত চেহারায় বাদামী গোঁফে তা দিল র্যাঞ্চার। চিনি না, কিন্তু মনে পড়ছে নামটা। ও, হ্যাঁ, এই লোকের নামে ফেরিস পোস্ট অফিসে একটা চিঠি এসেছিল। গত সপ্তাহের এই দিনে কে যেন চুরি করেছে চিঠিটা।
কে?
জানা যায়নি।
প্যাট্রিক হলের দিকে তাকাল ডেপুটি। তারমানে হুপার মিথ্যে বলেনি।
র্যাঞ্চারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে স্যাও ক্রীকের দিকে এগুলো ওরা। দুজন। ক্রীকের সাথে উত্তর-পুবে মাইল বারো এগিয়ে নর্থ প্ল্যাট নদীতে শেষ হয়েছে উপত্যকা। প্রতি দুই মাইল পর পর তিনটা র্যাঞ্চ চোখে পড়ল প্যাট্রিক হলের।
একটা ওয়াগন ট্রেইল বামে চলে গেছে। ওখানটায় ঘোড়া থামাল ডেপুটি। হাত উঠিয়ে রাস্তাটা দেখাল। এ-পথে গেলেই বক্স বিতে পৌঁছে যাবে।
ডেপুটি চলে যাওয়ার পর স্টেজ রোড ধরে বক্স বির দিকে এগুলো জুয়াড়ী। ক্রীক থেকে সরে এসেছে রাস্তাটা। কিছুক্ষণ পর একটা গেটের। সামনে থামল তার মেয়ারটা। গেট পোস্টের ওপর টাঙানো একটা বোর্ডে বড় করে লেখা আছে বক্স বি। মস্ত আঙিনার ওপাশে রুক্ষ চেহারার কাঠের র্যাঞ্চহাউস। বার্ন, করাল সবই আছে, তবে প্যাট্রিক হল খেয়াল করল কোনও বাগান নেই। র্যাঞ্চটায় মেয়েলি হাতের স্পর্শ পড়েনি বোঝা যায়।
গেট পেরিয়ে এগুনোর সময় র্যাঞ্চ সম্বন্ধে জোডি কি বলেছিল মনে পড়ল তার। হোমস্টেড ছাড়া আর কোনও জমি ওদের নিজস্ব না। ওয়াইয়োমিঙের অন্যান্য বড় র্যাঞ্চের মতই ফ্রী রেঞ্জ ব্যবহার করে বক্স বি। লক্ষ লক্ষ একর সরকারী জমির স্বঘোষিত মালিক ওরা। জমি কিনে এবং ট্যাক্স দিয়ে টাকা নষ্ট করতে রাজি নয় বুড়ো বেঞ্চলি।
তারমানে বক্স বি র্যাঞ্চের নিজস্ব জমি বলতে, প্রায় কিছুই নেই! ক্যাটল কেনার পেছনে বিশাল অঙ্কের টাকা ঢেলেছে র্যাঞ্চার। সে মারা গেলে সব ক্যাটল বড় ছেলে অ্যাডাম পাবে, ব্যাংকে সামান্য যা কিছু টাকা আছে সেটা পাবে জোডি।
গত এক ঘণ্টা ধরে একটা কথা ভাবছে প্যাট্রিক হল। টেলিগ্রামটা আরেকবার পড়ে পকেটে রেখে দিল সে। চোদ্দ তারিখে ক্যাটল কিনে পাঠানো হবে। র্যাঞ্চার চোদ্দ তারিখের আগে মারা গেলে গরু বেচার সমস্ত নগদ টাকা চলে যাবে জোডির হাতে!
হিচ র্যাকে ঘোড়া বেঁধে র্যাঞ্চহাউসের দরজায় নক করল প্যাট্রিক হল। কেউ জবাব দিল না। বাড়ির পেছনে কুড়াল দিয়ে কাঠ কাটার শব্দ শুনে সেখানে গিয়ে হাজির হলো সে। বয়স্ক, শক্ত-পোক্ত একজন লোক কুড়াল দিয়ে রান্নার কাঠ কাটছে। আগে না দেখলেও বুঝতে পারল এই লোকই বিলি বেঞ্চলি।
আগন্তুককে দেখে একটু খুঁড়িয়ে হেঁটে সামনে এসে দাঁড়াল র্যাঞ্চার। হাওডি?
আমি ডেনভার থেকে জোডি বেঞ্চলির ব্যাপারে এসেছি। প্যাট্রিক হল। হাত বাড়িয়ে দিল জুয়াড়ী।
উজ্জ্বল হয়ে উঠল র্যাঞ্চারের চেহারা, হাতটা জোরে কঁকিয়ে ছেড়ে দিল। তুমি জোডির বন্ধু? জোডি ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসছে, তাই না?
আমি ওর কাছে টাকা পাই সেজন্য ওকে খুঁজছি।
মুহূর্তে বিলি বেঞ্চলির চেহারায় হতাশা কালো ছায়া ফেলল। গেছে। দুবছর হলো, একটা চিঠিও দেয়নি জোডি। কত টাকা নিয়েছে ও তোমার কাছ থেকে?
ওয়ালেট থেকে একটা প্রমিসারি নোট বের করে র্যাঞ্চারের চোখের সামনে ধরল প্যাট্রিক হল। এক মাসের পুরানো নোট, টাকা পরিশোধ করতে হবে নব্বই দিনের মধ্যে। বাইশ হাজার ডলার ঋণ নিয়ে নব্বই দিনের মধ্যে শোধ করবে লিখে সই করেছে জোডি বেঞ্চলি।
জোডিরই সই, তিক্ত চেহারায় মাথা ঝাঁকাল র্যাঞ্চার। চোখ তুলে বলল, জানতাম জোডির খরচের হাত লম্বা, কিন্তু এতখানি ভাবতেও পারিনি। কি কিনেছে সে, এক স্টেবল ভরা রেসের ঘোড়া?
কার্ড গেম, বলল প্যাট্রিক হল। টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর অ্যাকাউন্টে টাকা নেই তবু চেক লিখে খেলা চালিয়ে গেছে সে জেতার আশায়।
তুমি ছিলে ওই খেলায়?
হ্যাঁ। চেক বইয়ের পাতা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সে স্বীকার করেছে ওই চেকগুলোর এক কানাকড়িও মূল্য নেই। এমনকি ওই ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্টও ছিল না কোনও কালে। সে আমাকে বাইশ হাজার ডলারের প্রমিসারি নোট লিখে দেয়, আমিও তাকে সমান অঙ্কের জাল চেক ফেরত দেই। চেকগুলো ছিড়ে ফেলে সে। এক সপ্তাহ পর গায়েব হয়ে
যায়। ভাবলাম বোধহয় বাড়িতে পালিয়ে আসবে, তাই খোঁজ নিতে এসেছি।
আসেনি।
নোটটা ওয়ালেটে রেখে দিল প্যাট্রিক হল। তোমার কথাই সত্যি _ বলে মেনে নিচ্ছি। দুঃখিত, তোমাকে বিরক্ত করলাম, ঘুরে দাঁড়াল সে।
দাঁড়াও! এক পা আগে বাড়ল বিলি বেঞ্চলি, এ-ব্যাপারে কি করবে তুমি?
ওকে খুঁজে বের করব, শীতল হেসে র্যাঞ্চারের মুখোমুখি দাঁড়াল, জুয়াড়ী। নব্বই দিনের সময় সীমা পেরিয়ে গেলে ওকে কোর্টে দাঁড় করাব।
জুয়ায় হারজিতের ব্যাপারে কোর্ট কেস নেয় না।
শ্রাগ করল প্যাট্রিক হল। প্রমিসারি নোটের কোথাও লেখা নেই জুয়ার কথা। তাছাড়া ওর লেখা একটা নকল চেকও আছে আমার কাছে। ওয়ালেট থেকে একটা ব্যাংক প্রত্যাখ্যাত চেক বের করে। র্যাঞ্চারকে দেখাল সে। জোডির কোনও অ্যাকাউন্ট নেই প্রমাণ হাতে। রাখতে ব্যাংকে দিয়েছিলাম এটা। এই ব্যাপারে কোর্ট কিন্তু কেস নেয়। হাসি হাসি হয়ে গেল জুয়াড়ীর চেহারা। অবশ্য তুমি চাইলে ব্যাপারটা আমরা এখনই মিটিয়ে ফেলতে পারি। বেশি না, প্রতি ডলারে মাত্র পঞ্চাশ সেন্ট করে দিলেই হবে।