একটু কুঁজো হয়ে শেডের দিকে ট্রলি ঠেলতে শুরু করল স্ট্যানলি। স্তূপীকৃত ব্যাগেজের পেছন থেকে শুধু ক্যাপটা বেরিয়ে আছে। শেডের দরজা দিয়ে সে ট্রলি নিয়ে ঢুকলে খুনীর স্বাভাবিক ভাবেই মনে হবে ঘোড়ার খবর নিয়ে এসেছে বুড়ো ব্যাগেজম্যান। যখন সে বুঝবে, লাগেজের পেছনে কে, ততক্ষণে বেশি দেরি হয়ে যাবে সম্ভবত।
শেডের ভেতরে ঢুকে গেল ডেপুটি। আধমিনিট পর প্রায় একই সঙ্গে গর্জে উঠল দুটো সিক্সগান। বিশ সেকেণ্ড পর শেড থেকে বেরিয়ে এল। স্ট্যানলি। ডানহাতে সিক্সগান, বাঁ হাতে ধরে আছে আতঙ্কিত একটা বাচ্চা ছেলেকে।
লেফটি ইক, প্ল্যাটফর্মের মাঝ বরাবর এসে ডিপোর দরজায় দাঁড়ানো শেরিফের উদ্দেশে চেঁচাল স্ট্যানলি।
রলিন্সের সবাই লেফটি ইকলসের নাম শুনেছে। পলাতক আসামীদের মধ্যে এই লোক ছিল সবচেয়ে ভয়ঙ্কর খুনী। ল্যারামির জেল ভেঙে বেরিয়ে আসার পর ওয়াইয়োমিঙের কোনায় কোনায় উচ্চারিত হয়েছে এই লোকের নাম।
স্টেশন মাস্টার কোত্থেকে যেন ছুটে এল হন্তদন্ত হয়ে। ডাক্তার ডাকব, স্ট্যানলি?
গম্ভীর চেহারায় মাথা নাড়ল ডেপুটি। দরকার নেই, করোনারকে খবর দাও।
০৪.
পরদিন সকালে প্যাট্রিক হল চমৎকার একটা মেয়ার ভাড়া করল স্টেবল থেকে। তৈরি হয়ে দ্রুত গতিতে ছুটল স্যাণ্ড ক্রীক লক্ষ্য করে। ফেরিস আর সেমিনো মাউন্টিনের মাঝখানের প্রেইরি তাকে পথ দেখাল। আরেকবার চলার পথেই টেলিগ্রামটা পড়ল সে। টেলিগ্রাফারকে গোপনীয়তা ভঙ্গের দোষ দেয়া যায় না। আজকের কাগজেই নিশ্চয়। খবরটা বেরিয়েছে।
ওমাহা। অগাস্ট ১০।
বিলি বেঞ্চলি
ফেরিস ভায়া রলিন্স ওয়াইয়োমিঙ
তোমার ক্যাটল ঠিকমত পৌঁছেছে স্টপ ছাপান্ন হাজার চারশো ডলারে বিক্রি হয়েছে স্টপ কথামত পুরো টাকার হেফার কেনা হবে স্টপ চারদিনের মধ্যে ডাকোটা থেকে ক্যাটল কিনে পাঠানো হবে।
হেফটন লাইভ স্টক কমিশন কোং।
আরেকবার মাথা ঝাঁকাল প্যাট্রিক হল খামটা পকেটে রেখে। এতগুলো ক্যাটল বিক্রির খবর গোপন থাকে না। মনে মনে ভাবল ডেনভারে সে মিথ্যে শোনেনি, টাকা আছে র্যাঞ্চারের।
তিনঘণ্টা একটানা ঘোড়া ছুটিয়ে বেল প্রিঙসে পৌঁছাল প্যাট্রিক হল। রাস্তা এখানে দুভাগ হয়ে গেছে। ডান দিকে বাঁক নিয়ে উত্তর-পুবে বাজার্ড গ্যাপ আর ফেরিসে গেছে একটা রাস্তা। অন্যটা বামে, উত্তর পশ্চিমে রঙ্গিস আর ল্যানডারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছে। বেল ঙিসের স্টেজ স্টেশনে ছোট্ট রেস্টুরেন্টে এক কাপ কফি খাওয়ার জন্য থামল সে।
কিছুক্ষণ পর আবার রওয়ানা দিল। রলিন্স থেকে আসা একজন রাইডারকে দেখতে পেল সে। কাছে আসতে চিনে ফেলল। ডেপুটি জেরাল্ড স্ট্যানলি!
মনিঙ, স্ট্রেঞ্জার, ঘোড়া দুটো পাশাপাশি চলে আসার পর বলল ডেপুটি।
হাঁটার গতিতে একসাথে এগুলো ওরা। প্যাট্রিক হল অস্ত্র ঝোলায়নি। কিন্তু আজ ডেপুটির কোমরে দুটো হোলস্টার, স্যাডলে একটা কারবাইন। একটা সিগারেট রোল করে ঠোঁটে ঝোলাল সে, তামাক আর কাগজ বাড়িয়ে ধরল হলের দিকে। জানতে চাইল, গতকাল ট্রেন থেকে তোমাকে নামতে দেখেছিলাম না?
হ্যাঁ, গতকালের গাড়িতেই দেখেছ। ডেনভার থেকে এসেছি, আমি প্যাট্রিক হল, হ্যাণ্ডশেক করল সে ডেপুটির সাথে। বিলি বেঞ্চলির সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
কেন সে র্যাঞ্চারের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে প্রশ্ন করতে পারে, ডেপুটি। জবাব তৈরি রাখল হল। কিন্তু পশ্চিমের নিয়ম মেনে ব্যক্তিগত ব্যাপারে আগ্রহ দেখাল না স্ট্যানলি।
বিকেলে ডেভিড মুরের র্যাঞ্চে পৌঁছাল ওরা। রলিন্সের সবচেয়ে বড় সেলুনটাও ডেভিড মুরের, র্যাঞ্চে থাকারই সময় পায় না সে। আজও মুর রলিন্সে, তবে তার নিঃসঙ্গ কুক দুই রাইডারের খাতির যত্নে ত্রুটি রাখল না।
বুড়ো কুক টেবিলে খাবার দেয়ার পর প্যাট্রিক হলকে ব্যক্তিগত প্রশ্নটা করেই ফেলল কিছুক্ষণ উসখুস করে। বিলি বেঞ্চলির ওখানে কেন যাচ্ছ, মিস্টার? মাইনের ব্যাপারে হলে গিয়ে লাভ নেই, মাইন বেচে দিয়েছে সে। কয়েক মুহূর্ত পর বলল, ব্যবসার জন্য গিয়েও লাভ, নেই, সব ক্যাটল বেচে দিয়েছে র্যাঞ্চার।
তৈরি জবাব দিল প্যাট্রিক হল। আমি জোডির ঠিকানা জানতে এসেছি। আসলে সে ভালমতই জানে জোডি কোথায় আছে, তবে না জানার ভান করলে র্যাঞ্চারের সাথে দেখা করার একটা যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়।
আমার মনে হয় না র্যাঞ্চার জানে তার ছোট ছেলে কোথায়, বলল কুক। দুবছর আগে জেদ করে চলে গেছে জোডি, কখনও শুনিনি বাবাকে কোনও চিঠি দিয়েছে সে।
ওর একটা ভাই আছে, তাই না?
হ্যাঁ, ওই দুই ছেলেকে নিয়েই বিলি বেঞ্চলির সংসার। জোডি চলে যাবার পর অ্যাডাম ছাড়া দুনিয়ায় আর কেউ নেই তার। অ্যাডাম হয়েছে। ঠিক ওর বাবার মত। দুজনে খেটে দাঁড় করিয়েছে বিশাল র্যাঞ্চটা। ওর বাবা মারা গেলে অ্যাডামই হবে সবকিছুর মালিক।
জোডিকে ত্যাজ্যপুত্র করা হয়েছে? অতি কৌতূহল প্রকাশ না করে অলস গলায় জিজ্ঞেস করল প্যাট্রিক হল।
ব্যাপারটা আসলে অন্য জায়গায়। ক্যাটল একটাও পাবে না জোডি, মারফতি হাসি হেসে ওদের দুজনের দিকে তাকাল বুড়ো কুক। র্যাঞ্চার–উইলে সব গরু অ্যাডামকে আর টাকাগুলো জোডিকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু মজার কথা হলো আজকাল সব টাকা বিলি বেঞ্চলি ক্যাটলে খাটায়।