বন্দীকে নিয়ে ডিপোর ওয়েটিঙ রূমের দিকে চলে গেল শেরিফ। প্ল্যাটফর্মে আবার একা হয়ে গেল বিশালদেহী স্ট্যানলি। চুপ করে বোর্ডওয়াকে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে শখানেক লোক, কিছু একটা ঘটার অপেক্ষায়। ট্রেনের এঞ্জিনটা অলস দানবের মত নিথর পড়ে আছে। মাঝে মাঝে হিস হিস শব্দে চিমনি দিয়ে দম নিচ্ছে। দীর্ঘ একটা মিনিট গড়িয়ে গেল।
বগিগুলোর পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ব্রেকম্যান চেঁচাল। এখন নামতে পারে সবাই। রোসার জানালার সামনে এসে থামল সে। তোমাকে নিতে কেউ আসছে, মিস?
মনে হয় না, তবে ম্যাক্সওয়েন হাউসে আমার জন্য রূম বুক করা থাকবে।
তাহলে ম্যাক্সওয়েলের পোর্টার আসবে। বগিতে উঠে এসে রোসার সুটকেস তুলে নিল ব্রেকম্যান। চলো, লোকটাকে চিনিয়ে দিই।
ব্রেকম্যানকে অনুসরণ করে প্ল্যাটফর্মে নামল রোসা। জানালা দিয়ে প্যাট্রিক হল দেখল একজন হোটেল পোর্টার মেয়েটার লাগেজ বুঝে নিয়েছে। প্ল্যাটফর্মে নামার পর লক্ষ করল রাস্তার বাঁকে হারিয়ে গেছে রোসা।
যাত্রীরা সবাই নামায় ডিপোর পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে এল মুহূর্তে। অফিস থেকে বেরিয়ে এসে ব্রেকম্যানের হাতে নির্দেশ লেখা একটা কাগজ ধরিয়ে দিল এজেন্ট। ব্যাগেজ কারের দরজা খুলে নেমে এল, ব্যাগেজম্যান, স্থূপীকৃত মালপত্র ট্রলিতে তুলে ঠেলতে শুরু করল। স্থানীয় লোক, প্রত্যেকদিনের মেইল পোস্ট অফিসে পৌঁছে দেয়াও এরই দায়িত্ব।
প্ল্যাটফর্মে শুধু নিজের জায়গা ছেড়ে নড়ল না ডেপুটি স্ট্যানলি। এখনও ট্রেনে উঠে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পলাতক খুনীর। ট্রেন ছাড়তে বেশি দেরি নেই। মালপত্রের ওঠানামা শেষ হলেই রওনা। দেবে।
কিছু জরুরী তথ্য জানতে ডিপোতে ঢুকল প্যাট্রিক হল। ওয়েটিঙ, রূমের স্টোভের পাশে বন্দীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শেরিফ। ডেপুটির জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের পাশ কাটিয়ে টিকেট কাউন্টারে এসে দাঁড়াল হল। চৌকো ফোকর দিয়ে একজন টেলিগ্রাফারকে দেখে। জিজ্ঞেস করল, বিলি বেঞ্চলির র্যাঞ্চটা কোথায় বলতে পারো?
তথ্যের অভাব নেই অপারেটরের, কথা শুরু করার পর থামতে আর চায় না। বিলি বেঞ্চলি তো? বক্স বির মালিক। এখান থেকে উত্তর দিকে , যেতে হবে। পঁয়তাল্লিশ মাইল গেলে তবেই স্যাণ্ড ক্রীকের তীরে তার র্যাঞ্চ। সপ্তাহে দুবার ওখানে স্টেজ যায় চিঠি নিয়ে। কিন্তু আগামী দুদিন যাবে না, যেতে চাইলে তোমাকে ঘোড়ায় করে যেতে হবে।
ধন্যবাদ, হাসল প্যাট্রিক হল। সকালে স্টেবল থেকে স্যাডল হর্স ভাড়া করে রওয়ানা হয়ে যাব।
ডেনভারের জুয়াড়ী ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছে এই সময় বুদ্ধিটা খেলে গেল অপারেটরের মাথায়। এক মিনিট শোনো, মিস্টার! কাল যদি তুমি বক্স বিতে যাও তাহলে ছোট্ট একটা কাজ করে দেবে?জবাবের অপেক্ষা করল না সে, ফোকর দিয়ে একটা খাম বের করে ধরে বলল, আজকে ওমাহা থেকে এই টেলিগ্রামটা এসেছে। তুমি পৌঁছে দিলে তাড়াতাড়ি পাবে র্যাঞ্চার।
বেশ, কাঁধ ঝাঁকিয়ে খামটা কোটের পকেটে পুরল জুয়াড়ী।
গোপন কথা না, গরু বেচে কত পাওয়া গেছে এই খবর সবাই জানে, গোপন তথ্য ফাঁস করে আমি দায়িত্বে অবহেলা করছি মনে কোরো না,কৈফিয়ত দিল টেলিগ্রাফার।
ডিপো থেকে বেরিয়ে এল প্যাট্রিক হল, হাঁটতে শুরু করল বোর্ডওয়াকে উঠে।
নতুন যাত্রীরা সবাই বগিতে ঢুকে বসে পড়েছে যে যার জায়গায়। ট্রেন নড়ে উঠল হুইসল দিয়ে। প্ল্যাটফর্মে একা দাঁড়িয়ে আছে ডেপুটি স্ট্যানলি, ব্যাগেজম্যান ট্রলি ঠেলে তার দিকে এগুলো। এই মুহূর্তে ওরা দুজন ছাড়া আশেপাশে কেউ নেই।
ট্রেনের ধাতব চাকাগুলো ধীরে ধীরে ঘুরতে শুরু করেছে। বলা যায়, পলাতক আসামী হয়তো এখনও ট্রেনে উঠে সরে পড়ার চেষ্টা করতে পারে। শেষ বগিটাও প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে বেরিয়ে গেল, গতি বেড়ে গেল। ট্রেনের, এখন আর কেউ উঠতে পারবে না।
ট্রলি ঠেলে ডেপুটির পাশে পৌঁছুল ব্যাগেজম্যান, পুবে ব্যাগেজ শেড়ের দিকে এগুলো। লোকটার উপর চোখ পড়তে দুটো ব্যাপার লক্ষ করল ডেপুটি। বুড়ো ব্যাগেজম্যানকে ভীত দেখাচ্ছে। লোকটার বাঁ গালে রক্ত জমে নীল হয়ে আছে। তাকে থামিয়ে ডেপুটি জিজ্ঞেস করল, কে মেরেছে, স্টিভ?
কেউ না। পড়ে গিয়ে লেগেছে।
লোকটার কাঁপা কাঁপা গলার স্বরে স্পষ্ট আতঙ্ক। সন্দেহ হলো স্ট্যানলির। তোমার ছেলে কোথায়, স্টিভ? আজ স্টেশনে আসেনি তোমাকে সাহায্য করতে, কোথায় সে?
অসুস্থ, চকিতে ব্যাগেজ শেডের দিকে তাকাল বুড়ো।
উঁহু, একটু আগেই ওকে রাস্তায় ডাক্তারের জুতো পালিশ করতে দেখেছি। মিথ্যে বলছ কেন? ব্যাগেজম্যানের হাত আঁকড়ে ধরল স্ট্যানলি।
আবার ভীত চোখে ব্যাগেজ শেডের দিকে তাকাল বুড়ো। ফিসফিস করে বলল, ওর ক্ষতি হয়ে যাবে!
হতে দেব না, তাড়াতাড়ি বলো কি হয়েছে।
ট্রেন আসার আগে লুকিয়ে শেডে ঢুকে পড়েছে এক লোক। ভেবেছিল ট্রেনে উঠে পালিয়ে যেতে পারবে।
চোখ সরু হয়ে গেল ডেপুটির। ওখানেই তার সঙ্গে তোমাদের দেখা হয়েছে?
হ্যাঁ, আমাকে ঘুসি মেরেছে লোকটা, গালে হাত বোলাল বুড়ো। তোমাকে এখানে দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টেছে সে। আমার ছেলের বুকে পিস্তল ধরে আছে। আমাকে বলেছে যাতে তার জন্য একটা ঘোড়া যোগাড় করে দিই।
সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করল না ডেপুটি, ব্যাগেজম্যানের ক্যাপটা মাথায় পরল বুড়োর কাছ থেকে নিয়ে। এখানেই দাঁড়াও, স্টিভ, তোমার বদলে ট্রলি নিয়ে আমি শেডে ঢুকব।