উন্মত্তের মত উদ্যত সিক্সগান হাতে স্টোরের কোনা ঘুরে সামনে। পৌঁছে গেল অ্যাডাম। ওর দশ ফুট দূরে দাড়ানো ঘোড়াটায় অলিভকে উঠে বসতে বাধ্য করছে হিউ হুবার্ট। প্যাট্রিক হল সিক্সগানের নল জোডির দিকে তাক করে ঘোড়ায় উঠতে ইশারা করছে। জোডির চেহারায় পরিবর্তন আসতে দেখে সন্দেহ হলো জুয়াড়ীর। ঘুরে তাকাল। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে সে কোমরের কাছ থেকে তাক করল অ্যাডামের দিকে।
পাঁচবার ট্রিগার টানল অ্যাডাম। তিনবার প্যাট্রিক হলের উপর লক্ষ্য স্থির করে, দুবার হিউ হুবার্টের আবছা,শরীর লক্ষ্য করে। পাল্টা জবাব দিল হুবার্ট। লাগাতে পারল না। অলিভা লাথি কষেছে তার দুই উরুর ফাঁকে।
গুলি করে সিক্সগান খালি করল জুয়াড়ী। ঘৃণা ভরা চোখে তাকাল একবার অ্যাডামের দিকে। তারপর টলে উঠে কয়েক মুহূর্ত পর রক্তাক্ত শরীরে মাটিতে পড়ে গেল। অ্যাডাম শুনল কয়েকবার মুখ খিস্তি করল। হুবার্ট। কিন্তু তাকে দেখতে পেল না নিজে মাটিতে পড়ার আগে। হুবার্টকে উবু হয়ে বসে থাকতে দেখল অ্যাডাম। মাটিতে পড়ে গেছে। সিক্সগান, রক্তাক্ত শরীরে খুঁজছে লোকটা। শেষ গুলিটা অ্যাডাম খরচ করল উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায়। হুবার্টের খুলি ফুটো হয়ে রক্ত বের হতে দেখল। তারপর হঠাৎ করে অন্ধকার আর শব্দহীন হয়ে গেল ওর জগৎ।
অ্যাডাম জানে না কতক্ষণ অজ্ঞান ছিল। হেনরিখ বিউয়েলের গলা। প্রথমে শুনতে পেল সে জ্ঞান ফেরার পর। লোকটা বলছে: আমি অন্য ব্যবস্থা করে নেব, ওকে আমার বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দাও,
চেতন অচেতনের মাঝে অ্যাডাম বুঝতে পারল ওকে বয়ে নিয়ে,। খাওয়া হচ্ছে। চোখ মেলে দেখল স্ট্যানলি, জোডি, অলিভা আর ওয়েনের ঘোলা চেহারা। নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করল সে। ওর মনে হচ্ছে। আগুনে তপ্ত লোহা বুকে ঢুকিয়ে দিয়েছে কেউ। অসহ্য ব্যথা। হেনরিখ বিউয়েলের গলা শুনতে পেল আবার। ডিক উলফের ওখানে দুজন। হান্টার উঠেছে। তাদের একজন ডাক্তার। আমি বার্ট আর্থারকে পাঠিয়ে দিয়েছি তাকে নিয়ে আসার জন্য।
কখন জ্ঞান হারিয়েছে জানে না অ্যাডাম। ও জানে না আজকের স্টেজে রলিন্স থেকে এখানে চলে এসেছে উদ্বিগ্ন রোসা। খবরের পিছু ধাওয়া করে ছুটে এসেছে ডেপুটির বন্ধু ফ্রেড ম্যাকলিন। পোর্চে বসে ছিল স্ট্যানলি, ফ্রেডকে দেখে সে অবাক হয়নি। কিন্তু রোসা এখানে এসেছে কেন?
লম্বা যাত্রা শেষে ক্লান্ত আড়ষ্ট দেহে স্টেজ থেকে নেমেছে বোসা। স্ট্যানলিকে দেখেই প্রথম প্রশ্ন করেছে অ্যাডাম কোথায়।
মেয়েটা ভয় পাচ্ছে অ্যাডাম আহত, ভাবল স্ট্যানলি। অ্যাডামের ভাগ্যের সাথে নিজের ভাগ্যের তুলনা করে কপালকে গাল দিল মনে মনে। অ্যাডামকে ভালবাসে রোসা, খুবই ভালবাসে। মুখে বলল, অ্যাডাম গুলি খেয়েছে, তবে চিন্তার কিছু নেই। ডাক্তার বলেছে এক মাসের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবে।
অ্যাডলার! মুখ থেকে রক্ত সরে গেল রোসার। স্ট্যানলিকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত পায়ে স্টোরের ভেতরে ঢুকে গেল অ্যাডামকে দেখার জন্য।
বিস্মিত চেহারায় ফ্রেড ম্যাকলিনের দিকে তাকাল স্ট্যানলি। আশ্চর্য! আমি রলিন্স হয়ে এসেছি। জুডাস অ্যাডলারই হুবার্ট জানার পরও আমাকে রোসা তখন বলেনি কেন? ১, জানত না তখন, বলল সাংবাদিক। তুমি শহর ছাড়ার ঘণ্টাখানেক পরে নাস্তার টেবিলে জেনেছে। ম্যাক্সওয়েল হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল স্টেজ। ড্রাইভার কফি খেতে হোটেলে ঢোকায় রোসা, জিজ্ঞেস করে ফেরিসে সে দুজন হান্টারকে পৌঁছে দিয়েছে কিনা। ড্রাইভার বলে দেয়নি। কথায় কথায় জানায় ফেরিসে দুজন হান্টার সময় মত না পৌঁছনোয় খুব হতাশ হয়েছে অ্যাডলার নামের একজন গাইড। থেমে দম নিল ফ্রেড। ব্যাপারটা অ্যাডামকে জানানো দরকার মনে করেই ছুটে এসেছে মেয়েটা। চায়নি না জেনে হুবার্টের মুখোমুখি হয়ে মারাত্মক বিপদে জড়িয়ে পড়ুক অ্যাডাম।
তারপুলিনে পেঁচিয়ে বার্নে রাখা হয়েছে হুবার্ট আর তার সঙ্গীকে। ব্যাংকার দুজনও বাদ পড়েনি। বারে গিয়ে দেখো দুটো ব্ল্যাংকেটে চার লক্ষ ডলার আছে।
মাথা চাপড়াল সাংবাদিক। হাতে এরকম একটা স্টোরি, আর আমি পড়ে আছি টেলিগ্রাফ অফিস থেকে পঞ্চাশ মাইল দূরে! চার লক্ষ ডলার দেখে চোখ জুড়াতে তাড়াহুড়ো করে বারে গিয়ে ঢুকল সে।
কিছুক্ষণ পর সাপার খেতে সবাইকে ডাকা হলো। টেবিলে বসে স্ট্যানলি লক্ষ করল জোডি আর রোসা আসেনি। অলিভা বলল ওরা, অ্যাডামকে একা রেখে আসতে রাজি হয়নি দেখে খাবার পৌঁছে দিয়েছে সে।
খাওয়া শেষে ডাইনিঙ রূমের মই বেয়ে উঠে ঘুমাতে চলে গেল। হেনরিখ বিউয়েল আর ডাক্তার। রাতে সে এখানেই থাকবে। আজ সারাদিন সবার উপর দিয়ে কম ধকল যায়নি। একটু পরে স্টেজ ড্রাইভার, আর ফ্রেডও বুড়ো বিউয়েলের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করল। ফিরে যায়নি হতাশ বার্ট আর্থার। আর সবার চেয়ে কোনও অংশে কম ক্লান্ত নয় স্ট্যানলি বা আর্থার। তবু একটা অস্থিরতা পেয়ে বসেছে ওদের। চোখে ঘুম নেই।
স্টোরে পায়চারি করতে করতে ওরা দেখল বাসন ধুতে অলিভাকে সাহায্য করছে ওয়েন। নিঃসঙ্গতার অনুভূতি বুকে আরও চেপে বসল। ওদের। শুনতে পেল ওয়েন নরম গলায় বলছে, অলিভা, তোমাকে ছেড়ে আজ চলে যেতে হয়েছিল বলে নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী। মনে হচ্ছে আমার।