না, জবাব দিল প্যাট্রিক হল। আমাদের ধাওয়া করা হবে না নিশ্চিত হবার জন্য দুজনকে সাথে নিয়ে যাব। কাল সকালে ছেড়ে দেয়া হবে ওদের।
আমরা তোমাদের বিশ্বাস করব কেন? স্ট্যানলি জানতে চাইল।
না করে তোমাদের উপায় নেই, সশব্দে হাসল প্যাট্রিক হল। আবারও তোমাদের দশ মিনিট সময় দিচ্ছি। খোলা প্রেইরি ধরে হাঁটতে শুরু করো, সময় বেশি নেই তোমাদের হাতে। কথা না শুনলে প্রথমে মেয়েটার দুঊরুতে গুলি করা হবে। সে মরার পর একই ভাবে ধীরে। ধীরে মারা হবে জোডিকেও।
জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট চাটল অ্যামি। অসহায় দৃষ্টিতে পালাক্রমে তাকাল ওয়েন আর স্ট্যানলির দিকে। আর আলোচনা সমঝোতার সময় নেই, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এখনই। আগুন ঝরানো অস্ত্র হাতে স্টোর আক্রমণ করতে পারে ওরা, কিন্তু তাতে সত্যিকার অর্থে কোনও লাভ। হবে না জিম্মিদের মৃত্যু তরান্বিত করা ছাড়া।
স্ট্যানলি, ওরা আসলেই কি….
মাথা ঝাঁকাল ডেপুটি। হুবার্ট ঠিকই বলেছে, অ্যাডাম। আরও দুটো খুন করলেও বিচারে তো ফাঁসির বেশি কিছু হবে না ওর।
আর পাঁচ মিনিট। স্টোর থেকে হুবার্টের গলা শোনা গেল।
একটা মিনিট খুব দ্রুত পেরিয়ে গেল। বার্নের পেছনের দরজাটা খুলে গেছে প্রথম টের পেল স্ট্যানলি। তার দেখাদেখি ঘুরে দাঁড়াল বাকি দুজন। দেখল ঘোড়া থেকে মাটিতে নেমেছে নিরস্ত্র একটা লোক।
কি ব্যাপার? বিস্ময় মেশানো কণ্ঠে সবার ওপর চোখ বোলাল বার্ট আর্থার।
চুপ, আর্থার, গলা নামিয়ে বলল স্ট্যানলি, তুমিই আমাদের শেষ ভরসা।
কোট পরে এসেছে বার্ট আর্থার, অলিভার মন পাওয়ার জন্য হাতে বুনো ফুল। চোখ কপালে উঠল তার। ভরসা? কিসের?
আঙুলের ইশারায় লোকটাকে চুপ করতে বলে বার্নের সামনের দরজায় দাঁড়িয়ে উঁচু কণ্ঠে স্ট্যানলি বলল, তোমরা ঠিকই বলেছ, আইনে ফাঁসির চেয়ে বেশি কিছু নেই। যদি কথা দাও নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে ওদের তোমরা ছেড়ে দেবে, তাহলে তোমাদের কথা মেনে পায়ে হেঁটে সরে যাব আমরা।
আমরা রাজি, রওয়ানা হও তোমরা, চেষ্টা করেও গলায় ফুটে ওঠা স্বস্তি চাপা দিতে পারল না জুয়াড়ী।
স্ট্যানলি বার্নের পেছনে ওদের তিনজনের কাছে ফিরে এল দ্রুত পায়ে। ওদের দৈহিক গড়নের সাথে ওর গড়নের মিল নেই অনুভব করে হতাশ হয়েছে মনে মনে। অ্যাডাম আর আর্থারকে কাপড় বদলাবদলি করে নিতে বলল সে। অ্যাডামের উঁচু ক্রাউনের সমব্রেরো হ্যাট বসিয়ে। দিল আর্থারের মাথায়। ওরা কাপড় বদলে নেয়ার পর বলল, অ্যাডাম বার্নে থাকবে। চলো হাঁটতে শুরু করি আমরা তিনজন।
যাব না আমি, প্রতিবাদ করল ওয়েন। ওদের সাথে ব্যক্তিগত বোঝাপড়া আছে আমার।
তাহলে অলিভা মরবে, জায়গা মত খোঁচা দিল স্ট্যানলি। আমাকে যেতে হচ্ছে কারণ পেছন থেকে দেখে ওরা বুঝবে চলে যাচ্ছি আমি ওদের নির্দেশ মেনে। তোমাকে চিনবে কাঁধের মস্ত সাদা ব্যাণ্ডেজ দেখে। কিন্তু অ্যাডামের কাপড় পরা আর্থারকে পেছন থেকে চিনতে পারবে না ওরা। কি বলছি বুঝতে পারছ? জেদাজেদি না করে হাঁটতে শুরু করি চলো।
অ্যাডামও বুঝতে পেরেছে ডেপুটির পরিকল্পনা, ফিসফিস করে ধন্যবাদ দিল স্ট্যানলিকে। খালি হোলস্টার আর গানবেল্ট কোমরে পরে নিল বার্ট আর্থার, হাতে অ্যাডামের রাইফেল ধরে মাথা কঁকাল।
একসাথে বার্ন থেকে বেরিয়ে এল ওরা তিনজন। বার্নের আড়াল নিয়ে রাইফেলের রেঞ্জের বাইরে চলে যাবার পর বামে মোড় নিল। ক্রীকের ধার দিয়ে পায়ে হেঁটে এগিয়ে চলল। এই মুহূর্তে স্টোর থেকে বিনকিউলার দিয়ে ওদের পিঠ দেখলেও কারও বোঝার উপায় নেই বা পাশের লোকটা অ্যাডাম নয়, অন্য কেউ।
২৪.
একা হয়ে যাওয়ার পর একটা স্টলে ঢুকে ঠেস দিয়ে দাঁড়াল অ্যাডাম। ও আশা করছে ঘোড়াগুলোয় স্যাড়ল চাপানোর আগে বন্দীদের বাইরে আনবে না হবার্টরা। জোডি আর অলিভা গানফাইটের মধ্যে পড়ে গেলে কি হয় বলা যায় না।
জিম্মিদেরগুলো ধরে চারটা ঘোড়া নেবে ওরা বার্ন থেকে। না, ভুল হলো। প্যাক হর্সও লাগবে ওদের। অ্যাডাম জানে না উইডোফিল্ড আর ল্যানট্রির কি হয়েছে, তবে বুঝতে পারছে যে করেই হোক টাকা পেয়ে। গেছে হুবার্টরা। টাকা বইবার জন্যও আলাদা প্যাক হর্স নেবে হুবার্ট আর প্যাট্রিক হল। যা খুশি করুক ব্যাংক ডাকাতির টাকা দিয়ে, জোডি আর অলিভার চিন্তা ছাড়া অ্যাডামের মাথায় আর কোনও চিন্তা নেই এই মুহূর্তে।
দড়াম করে বন্ধ হলো কিচেনের দরজা। বুট পরা পায়ের শব্দ এগিয়ে আসছে বার্নের দিকে। দুই আউট-লই যদি আসে সুবিধা হবে। অ্যাডামের। ওরা ঘোড়ায় স্যাডল ওঠানোর সময় অপ্রস্তুত অবস্থায় থাকবে। বন্দী করতে পারবে সে সহজেই।
শুধু প্যাট্রিক হলকে বার্নে ঢুকতে দেখে বুক ভরা আশা দপ করে নিভে গেল অ্যাডামের। জুয়াড়ীকে বন্দী বা হত্যা করলে হুবার্ট টের পাবেই। বার্নের দরজায় নজর না রাখার মত বোকা সে নয়। সেক্ষেত্রে খুন হয়ে যাবে অলিভা আর জোডি। বাচবে না হেনরিখ বিউয়েলও।
একে একে ছয়টা ঘোড়ায় স্যাডল, চড়াল প্যাট্রিক হল। ওগুলোর। দড়ি ধরে বাইরে নিয়ে গেল। অ্যাডাম ভেবেছিল কিচেনের দরজায় থামবে লোকটা। কিন্তু স্টোরের সামনের দিকে চলে গেল সে বাড়ির কোনা ঘুরে।
চমকে উঠল অ্যাডাম। মারাত্মক একটা ভুল করে ফেলেছে সে। বার্ট আর্থারকে ওর উচিত হয়নি রাইফেলটা দিয়ে দেয়া। তবে এখনও সময় আছে। ওরা প্যাকহর্সে মালপত্র তুলে বন্দীদের বের করে রওনা হওয়ার আগেই স্টোরের সামনে পৌঁছুতে হবে তাকে। দৌড়ে বার্ন থেকে বেরিয়ে এল সে। হুবার্ট সম্ভবত স্টোরের সামনে জোডি আর অলিভাকে নিয়ে ব্যস্ত, বার্নের দিকে খেয়াল নেই। আর সে দেখল কি দেখল না পাত্তাও দিচ্ছে না অ্যাডাম এখন। ওর সামনে আর কোনও পথ খোলা নেই। হয় মরো নয় মারো।