পাগলের মত চেঁচাল অলিভা। রাজি হয়ো না, অ্যাডাম, রাজি…
হুবার্টের প্রচণ্ড চড়ে ছিটকে পড়ে গেল মেয়েটা। প্যাট্রিক হল জানালায় গিয়ে দাঁড়াল। ভাবার জন্য তোমাকে আমরা দশ মিনিট সময় দিচ্ছি, অ্যাডাম।
ওদের ছেড়ে দাও, আমি তোমাদের জিম্মি হতে রাজি আছি, আশি গজ দূরের বার্ন থেকে স্পষ্ট ভেসে এল অ্যাডামের গলা। ওরা চোখের আড়ালে চলে যাবার পর দুহাত মাথার ওপর তুলে তোমাদের দিকে এগিয়ে আসব আমি।
পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করল হুবার্ট আর প্যাট্রিক হল। লড়াই না করে সরে পড়ার সুযোগ আছে লোভনীয় প্রস্তাবটাতে। তবে অ্যাডাম ভাওতাও দিতে পারে। শালা যদি কথা না রাখে তখন? আপনমনে বলল হুবার্ট। অ্যাডামের উদ্দেশে চেঁচাল, আমরা দশ মিনিট শুনতে শুরু করেছি, অ্যাডাম। রাইফেলসহই চলে যেতে পারো তুমি, আমরা অনুসরণ করব না। বার্নের পেছন দরজা দিয়ে হাঁটতে শুরু করো।
আর নয় মিনিট পর তোমার ভাইকে খুন করব, হুমকি দিল প্যাট্রিক হল।
ভয়ে ভয়ে দেয়াল ঘড়িটা দেখল অলিভা। ওটা দ্রুত চলছে নাকি? কিছুক্ষণ আগেই সে দেখেছে আট মিনিট বাকি আছে, আর এখন বড়। কাটাটা দেখাচ্ছে হাতে সময় রয়েছে মাত্র এক মিনিট!
বার্ন থেকে বেরিয়ে এল অ্যাডাম বেঞ্চলি। শ্রাগ করে বলল, চলে। যাচ্ছি, হবার্ট!
২৩.
বার্নের পেছনে গিয়ে পশ্চিমে হাঁটতে শুরু করল অ্যাড়াম। লক্ষ রাখল যাতে বার্নের আড়াল পায়। রাইফেল রেঞ্জের বাইরে চলে গিয়ে দক্ষিণে পা বাড়াল সে। স্টেজ রোডের দিকে ওর চোখ। দুজন অশ্বারোহী আসছে ওদিক থেকে। বার্ন থেকে ওদের দেখেই দল ভারী করার জন্য–হুবার্টদের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে অ্যাডাম।
এখনও লোকগুলো একমাইল দূরে আছে। ও জানে না কারা ওরা, তবে সতর্ক না করলে যে স্টোরে ঢুকতে গিয়ে হুবার্টের হাতে মরবে সে ব্যাপারে মনে কোনও সন্দেহ নেই অ্যাডামের।
কাছে আসার পর দুজনকে চিনতে পেরে অবাক হলো অ্যাডাম। স্ট্যানলি আর ওয়েন! ব্যাগস থেকে নব্বই মাইল পথ পাড়ি দিয়ে হঠাৎ এখানে এসেছে কেন?
নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছে জিম লেম্যান তিনবার ঘোড়া পাল্টে তেরো ঘণ্টায় নব্বই মাইল পেরিয়ে। তার মুখে ভুয়া হান্টারদের ফোর্ট, স্টীলে নামার খবর শুনে আর দেরি করেনি ডেপুটি এবং ওয়েন, রলিন্স হয়ে ছুটে এসেছে ফেরিসে।
পাঁচশো গজ দূরে এসে ঘাড় ফিরিয়ে স্টোরটা দেখল অ্যাডাম। ও আরও দূরে চলে যাবে সেই অপেক্ষায় আছে আউট-লরা। ডেপুটি আর ওয়েন ওর সামনে ঘোড়া থেকে নামার পর দুটো রাইফেল গর্জে উঠল স্টোর থেকে।
কি ব্যাপার, অ্যাডাম? জানতে চাইল ক্লান্ত স্ট্যানলি স্টোরের দিকে তাকিয়ে।
শিউরে উঠল অ্যাডাম। এতক্ষণে হুবার্ট জেনে গেছে চালাকি করা হয়েছে তার সাথে। জোডি আর অলিভাকে লোকটা খুন করে বসবে না। তো! মনে হয় না, নিজেকে আশ্বস্ত করল অ্যাডাম। তিনজনকে ঠেকিয়ে রেখে নিরাপদে পালাতে হলে জিম্মি দরকার হবে হুবার্টদের। হুবার্ট আর প্যাট্রিক হল জোডিদের স্টোরে জিম্মি করেছে, বলল সে।
কেউ কারও সাথে কথা বলল না। ওরা জানে কি করা উচিত। রাইফেল রেঞ্জের বাইরে থেকে বার্নের আড়ালে চলে এল তিনজন। সরাসরি সামনে বার্ন থাকায় ওদের আর দেখতে পাচ্ছে না হুবার্ট। প্রতিটা মুহূর্তে অ্যাডামের মনে হচ্ছে রাগে উন্মত্ত হয়ে বন্দীদের খুন করে বসবে না তো লোকটা!
ওদের জন্য এটা একটা ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক বুদ্ধির খেলা। হেরে গেলে। প্রাণ হারাবে তিনজন মানুষ। মারা যাবে জোডি আর বিউয়েলরা।
বার্নের পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল ওরা। নিজেদের ঘোড়া বেঁধে বার্নটা ঘুরে দেখল স্ট্যানলি। তারপর বলল, সামনের দিকে নজর রাখতে হবে না আমাদের। চারটে ঘোড়াই এখানে। পায়ে হেঁটে পালানোর চেষ্টা মারা গেলেও করবে না ওরা।
বার্নের সামনের দরজা থেকে স্টোরের উদ্দেশে চেঁচাল জোসেফ ওয়েন। অলিভা, আমরা তোমাকে বের করে আনব! হুবার্ট, অলিভার একটা চুল ছুঁলেও নরক পর্যন্ত তোমাকে ধাওয়া করব আমি!
ওয়েনের কথার জবাবে কিচেনের জানালা থেকে গর্জে উঠল একটা রাইফেল। বার্নের দরজায় বুলেট গাঁথল। রাগে গাল দিয়ে উঠে। কারবাইন হাতে বার্ন থেকে এক পা বেরিয়ে এল ওয়েন। পাঁচবার পাম্প করে ম্যাগাজিন খালি করল ট্রিগার টেনে।
দুকাঁধ ধরে টেনে তাকে বার্নের ভেতরে নিয়ে এল স্ট্যানলি। শান্ত, কণ্ঠে বলল, মাথা গরম করে কোনও লাভ নেই ক্ষতি ছাড়া। পরেরবার গুলি করার আগে ভেবে কোরো, অলিভাকে ওরা জানালার সামনে ঠেলে দিলে তোমার গুলিতেই মরবে মেয়েটা।
কি করা উচিত তাহলে? তিক্ত কণ্ঠে বলল ওয়েন। আমার চাচা চাচীকে খুন করেছে হুবার্ট। এখন তার জিম্মি হয়ে আছে আমার প্রেমিকা। তুমি হলে কি করতে?
বুদ্ধি দিয়ে হারিয়ে দিতাম ওদের।
তাহলে ফালতু দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করছ কেন, বের করো বুদ্ধি, খেঁকিয়ে উঠল অধৈর্য ওয়েন।
স্ট্যানলি কথা বলার আগেই স্টোর থেকে হুবার্টের গলা ভেসে এল। তোমরা আমাদের ঘোড়া না দিলে ধরা পড়ব আমরা, কিন্তু জোডি আর বিউয়েলদের বাঁচতে দেব না। ভেবে দেখো, অ্যাডাম, খুনীর ফাঁসি একবারই হয়। এখনও সময় আছে, আমার আগের প্রস্তাব মেনে নাও, হাঁটতে শুরু করো তোমরা তিনজন।
হাসার ভঙ্গিতে দাঁত খিচাল ওয়েন। আমরা তোমাদের কথা শুনে চলে গেলে ওদেরকে ছাড়া রওয়ানা হবে তোমরা?