বার্ন থেকে বেরিয়ে কিচেনে এসে ঢুকল হুবার্ট। দেয়াল ঘড়ির দিকে। তাকিয়ে দেখল দেড়টা বাজে। তিনটার সময় রওয়ানা হব, বলল সে। ব্যাগটা নিয়ে এসো, প্যাট্রিক, ভাগাভাগি করে ফেলি।
অলিভার রান্না শেষ হওয়ার আগেই টাকা ভাগ করে নিজেদের অংশ বুঝে নিল ওরা। স্যাডলে বাঁধার জন্য ব্ল্যাংকেটে জড়িয়ে নিল। দুজনই দুজনকে খুন করে পুরো টাকা মেরে দেয়ার কথা ভাবছে, আন্দাজ করল অলিভা। আজ হয়তো নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করবে না ওরা, তবে আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেলেই করবে।
কিচেনে খেতে বসল প্যাট্রিক হল বারের দিকে নজর রাখার জন্য। সামনের দিক কাভার করতে স্টোরে বসল হিউ হুবার্ট। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে চোখে কৌতুক নিয়ে দেখল হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অসহায় জোডিকে।
খাওয়া শেষে আধঘণ্টা করে ঘুমাল ওরা একে অপরকে পাহারায়। রেখে। তিনটা বাজার দশ মিনিট আগে সামনের দিক থেকে একজন রাইডারকে আসতে দেখে প্যাট্রিক হলের উদ্দেশে হাঁক ছাড়ল হুবার্ট। কে যেন আসছে, প্যাট্রিক, তৈরি হও।
আগন্তুক এখনও আধমাইল দূরে আছে। লোকটার ঘোড়ায় চড়ার। ভঙ্গি কাউবয়দের মত। একপলকের জন্য রাইডারকে দেখার সুযোগ। পেয়েছে অলিভা। স্ট্যালিয়ন ঘোড়াটা আর হ্যাট দেখে ওর মনে হলো অ্যাডাম বেঞ্চলি আসছে।
কটমট করে অলিভার দিকে তাকাল হবার্ট। যদি একটাও শব্দ করো, তোমার বাবাকে পুড়িয়ে মারব?
লোকটা যে কথা রাখবে, মিথ্যে হুমকি দিচ্ছে না, সে-ব্যাপারে। অলিভার মনে কোনও সন্দেহ রইল না।
সামনের দরজার আড়াল থেকে উঁকি দিল প্যাট্রিক হল। রাইফেল রেঞ্জের বাইরে থেমে গেছে, হুবার্ট। আমার মনে হয় লোকটা অ্যাডাম। বেঞ্চলি।
ভুয়া হান্টারদের খবর নেয়ার জন্য ফোর্ট স্টীলে গিয়েছিল অ্যাডাম। ওখানে বার্ন মালিকের সাথে কথা বলে বাকবোর্ডের ট্র্যাক অনুসরণ করে এসেছে এখানে। হুবার্ট থাকতে পারে সন্দেহ হওয়ায় বাকবোর্ডটা বিউয়েলদের করালে আছে কিনা দেখার জন্য দূর দিয়ে র্যাঞ্চহাউসটা ঘিরে বৃত্ত রচনা করল সে।
প্যাট্রিক হল আর হুবার্ট অলিভাকে ঠেলতে ঠেলতে কিচেনে নিয়ে গেল। জুয়াড়ী জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে খিস্তি করল। তারপর বলল, বাকবোর্ড আর ঘোড়াগুলো দেখে ফেলেছে।
বার্নে অ্যাডামকে ঢুকতে দেখল ওরা। ওখানে চারটা ঘোড়া যব চিবাচ্ছে দেখেই সে বুঝতে পারবে শিগগিরই কোথাও রওয়ানা হবে চারজন লোক। হয়তো ভাববে দুটো ঘোড়া হান্টারদের জন্য, বাকি দুটো তাদের গাইডদের। ওদের ঘোড়া চিনতে না পারলেও কি সন্দেহ হবে অ্যাডামের মনে?
হুবার্ট কাঁধে রাইফেল তুলে জানালার পাশে দাঁড়াল। দরজার কাছাকাছি গিয়ে সিক্সগান বের করে প্যাট্রিক হল বলল, ওকে কাছাকাছি। আসতে দাও, হুবার্ট, মিস কোরো না।
হাসল হুবার্ট। আসছে সে।
কারবাইন হাতে বার্ন থেকে বেরিয়ে এগোতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল। অ্যাডাম। জিজ্ঞেস করল, হেনরিখ, অলিভা, তোমরা ভেতরে আছ?।
বাড়ির ভেতর থেকে জবাব দিল না কেউ। বাবা আর জোডির কথা মনে পড়ে যাওয়ায় অ্যাডামকে সাবধান করতে পারল না অলিভা। চেঁচালে জেনেশুনে আত্মহত্যা করা হবে। ওর বাবাকে পুড়িয়ে মারবে হবার্ট। জোডিকে খুন করবে।
জবাব দিচ্ছ না কেন, কোথায় গেলে তোমরা! আবার বলল অ্যাডাম।
উত্তর দিল না কেউ এবারও। কিচেনের চিমনি দিয়ে ধোয়া বেরচ্ছে দেখল সে।
শালা ঠিকই বুঝেছে আমরা আছি এখানে। রাইফেলের নলের গুঁতোয় জানালার কাঁচ ভেঙেই ট্রিগার টানল হুবার্ট। অকথ্য গালাগাল দিল। অ্যাডামকে গাঁথতে না পেরে।
বাড়ির ভেতর থেকে রাইফেল গর্জে উঠতেই কারবাইন কাঁধে তুলে পাল্টা জবাব দিল অ্যাডাম। হুবার্টের মুখে কাঠের কুচি ঢুকে গেল বুলেটটা জানালার চৌকাঠে লাগায়।
অলিভা জানালা দিয়ে দেখল বার্নের ভেতরে ঢুকে পড়েছে অ্যাডাম। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে। অ্যাডাম বার্নের ভেতর থেকে হয়তো ঠেকিয়ে রাখতে পারবে খুনীগুলোকে।
হুবার্ট পাশের ঘরে গিয়ে জোডিকে বাঁধনমুক্ত করে ঠেলতে ঠেলতে কিচেনে নিয়ে আসায় অলিভার মন থেকে শেষ আশাটুকুও দূর হয়ে গেল। জোডিকে জানালার সামনে দাঁড় করিয়ে হবার্ট বলল, ওকে বলো। তোমরা আছ এখানে।
অ্যাডাম! ভয় পাওয়া কাঁপা কাঁপা গলায় চেঁচাল জোডি। ওরা আমাদের বন্দী করে রেখেছে, অ্যাডাম!
তুমি আর কে? বার্ন থেকে অ্যাডাম জানতে চাইল।
বিউয়েলরা…
যথেষ্ট হয়েছে, জোডিকে সরিয়ে এনে আবার হাত-পা বাঁধল হুবার্ট। মুখে রুমাল গুঁজে দিল। তারপর অলিভাকে নিয়ে জানালার সামনে দাঁড় করাল যাতে বার্ন থেকে দেখতে পায় অ্যাডাম। চেঁচিয়ে বলল, তুমি চলে গেলে প্রাণে বাঁচবে ওরা। তোমার ভাই আর মেয়েটাকে জিম্মি করে নিয়ে যাব আমরা। যদি বুঝি আমাদের অনুসরণ করা হচ্ছে না, মাঝরাতে ট্রেইলে ছেড়ে দেব।
অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে জবাব দিল অ্যাডাম। আর কিছু বলবে?
হ্যাঁ, গর্জে উঠল প্যাট্রিক হল। আমরা দেখতে পাই এমন একটা জায়গায় রাইফেলটা নামিয়ে রেখে বার্নের পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে হাঁটতে শুরু করবে তুমি।
চুপ করে অ্যাডামের জবাবের অপেক্ষা করছে সবাই। অলিভা বুঝতে পারছে খুনী দুটোর প্রস্তাবে রাজি হলে বিরাট ভুল করবে অ্যাডাম। জিম্মিদের তত খুন করবেই ওরা, রাইফেলহীন অ্যাডামকেও যাওয়ার পথে শেষ করে যাবে। ওর .৪৫-এর রেঞ্জের বাইরে থেকে ঝুঁকি না নিয়েই খুন করে ফেলার মতলব আঁটছে প্যাট্রিক হল আর হুবার্ট।