থাকলে তোমাকে বলবে মনে করেছ? নিজে গিয়ে দেখো গে যাও, অধৈর্য কণ্ঠে ধমকে উঠল হুবার্ট।প্যাট্রিক হল মই বেয়ে উঠে গিয়ে ওপর থেকে চেঁচিয়ে জানাল, হোটেলে কেউ নেই।
নেমে এসে পেছনদিকটা ঘুরে দেখে এসো, নির্দেশ দিল হিউ হুবার্ট।
পুরো বাড়ি চক্কর দিয়ে ফিরে এসে হুবার্টের পাশে দাঁড়াল প্যাট্রিক হল। বলল, এক রাইডার আসছে। পেছনে ঘোড়াও আছে একটা, মনে হয় হেনরিখ বিউয়েল।… ঘোড়ার খুরের শব্দ কাছাকাছি চলে আসার পর হুঁশ ফিরল অলিভার, চেঁচিয়ে উঠল সে, ভেতরে এসো না, বাবা!
দুপা এগিয়ে অলিভার মুখে হাত চাপা দিল প্যাট্রিক হল। একই সাথে সামনে বাড়ল হিউ হবার্ট। সিক্সগানটা সজোরে নামিয়ে আনল অপ্রস্তুত জোডির মাথায়।
কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরতে জোডি দেখল হাত-পা বেঁধে। কাউন্টারের গায়ে ঠেস দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে ওকে। মুখে রুমাল, গোজা। অলিভারও একই অবস্থা। বার থেকে বস্তাটা নিয়ে এসে খুলেছে। হুবার্ট আর প্যাট্রিক হল, ভেতরে হাত ঢুকিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে হুবার্ট বলে। উঠল, আছে! সবই ঠিক আছে।
কিন্তু আজকে স্টেজ আসতে পারে এখানে, বাস্তবচিত্র তুলে ধরল জুয়াড়ী। আমাদের ঘোড়াগুলো ক্লান্ত, স্টেজ যদি আসে বিপদ হবে।
জবাব দিতে গিয়েও করালে ঘোড়া থামার শব্দে চুপ হয়ে গেল হবার্ট। পায়ের আওয়াজ কিচেনের দিকে এগিয়ে আসছে শুনে ওদিকে তাকাল। ফিসফিস করে বলল, কিচেনে যাও। লোকটা ঢুকলেই মাথায় বাড়ি মেরে অজ্ঞান করে ফেলবে।
নিঃশব্দ পায়ে কিচেনে চলে গেল প্যাট্রিক হল। কল্পনার চোখে জোডি দেখতে পেল দরজার পাশে দাঁড়িয়ে হেনরিখের মাথায় সিক্সগান নামিয়ে আনছে লোকটা। ঘাড় ফিরিয়ে দেখল অলিভার জ্ঞান ফিরেছে। বিস্ফারিত চোখে আর্তি নিয়ে হুবার্টের দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটা।
কিচেনের দরজা খোলার শব্দ হলো। তারপরই খট করে একটা আওয়াজ। সশব্দে ভারী একটা দেহ আছড়ে পড়ল মেঝেতে। দুমিনিট পর ডাইনিঙ রূমের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে প্যাট্রিক হল বলল, বিউয়েল।
কি অবস্থা?
অজ্ঞান। কিচেনের নিচের আলু রাখার সেলারে ফেলে ট্র্যাপ ভোর আটকে দিয়েছি।
আর কেউ আছে কিনা দেখেছ?
নেই। হাসল জুয়াড়ী। দুএক ঘণ্টা থাকতে হবে ঘোড়াগুলোকে বিশ্রাম দেয়ার জন্য। মেয়েটাকে দিয়ে খাবারের বন্দোবস্ত করিয়ে নিই, কি বলো?
সায় দিল হুবার্ট। গতকাল রাতের পর থেকে কিছুই প্রায় পেটে পড়েনি ওদের। পোস্ট অফিস থেকে চিঠি সংগ্রহের জন্য কেউ এসে পড়তে পারে ভেবে বারে পড়ে থাকা লাশ দুটো কাউন্টারের পেছনে টেনে সরিয়ে রাখল ওরা।
ডাইনিঙ রূমে ফিরে এসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাতের ইশারায় জোডি আর অলিভাকে দেখাল প্যাট্রিক হল। এদের কি করবে?
জিম্মি হিসেবে সাথে নিয়ে যাব।
মাথা ঝাঁকাল জুয়াড়ী। ঠিকই বলেছে হুবার্ট। সাথে জিম্মি থাকলে, পালাবার সময় বিপদ হলে বাড়তি সুবিধা পাবে ওরা।
মেয়েটার বাঁধন খুলে কিচেনের কাজে লাগিয়ে দাও, দরজার দিকে। পা বাড়িয়ে বলল হুবার্ট। আমি যাচ্ছি ঘোড়া চারটের দানাপানি দিতে। রাতের খাবারও তৈরি করিয়ে নিয়ো, আজ সারারাত ঘোড়ার পিঠে কাটবে আমাদের সবার।
.
হুবার্ট বেরিয়ে যাওয়ার পর অলিভার বাঁধন খুলে দিল জুয়াড়ী। মুখ থেকে রুমালটা খুলে পকেটে পুরে বলল, চলো, আজকে আমরা বিচার করব তোমার রান্নার হাত কেমন।
কিচেনে ঢুকে ব্যস্ত হয়ে পড়ল অলিভা, পেছনে পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকল প্যাট্রিক হল। জানালা দিয়ে বার্ন আর করাল চোখে পড়ছে। অলিভার। ওখানে সেরা চারটে ঘোড়া বাছছে হুবার্ট। ঘোড়াগুলো বার্নে নিয়ে যব দিল তারপর।
কোনকিছুতেই আর কোনও প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না অলিভার মনে। আতঙ্কে কুঁকড়ে আছে ও। চোখের সামনে মরে যেতে দেখেছে দুজন মানুষকে। ওর বাবা আটকা পড়ে আছে মেঝের তলার সেলারে। ওদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে না বুঝতে পারছে স্পষ্ট। বিপদমুক্ত দূরত্বে পৌঁছেই খুন করা হবে ওদের, সাক্ষী রাখবে না প্যাট্রিক হল আর তার সঙ্গী।
একটা পটে সুপ ঢেলে গরম করতে দিল অলিভা। বেকন, বিন আর। বারোটা ডিম ভাজল। রাতে লাগবে, আরও এক ডজন ডিম সেদ্ধ করে। রাখো, বলল প্যাট্রিক হল।
নিচের সেলার থেকে মৃদু একটা শব্দ হতেই আবার চেঁচিয়ে সাহায্য চাওয়ার জন্য হাঁ করল অলিভা। চুপ। একদম চুপ! শান্ত গলায় সতর্ক করল প্যাট্রিক। চেঁচামেচি শুনে আসতে বাধ্য হলে তোমাকে খুন করে। ফেলবে হবার্ট।
সাহায্য করার মত কেউ ধারে কাছে আছে কিনা ভাবার চেষ্টা করল অলিভা। অন্যদিন চিঠি নিতে র্যাঞ্চগুলো থেকে দুএকজন আসে। আজকে কেউ আসছে না কেন! স্টেজ পৌঁছবে সন্ধ্যায়; আরও ছয় ঘণ্টা পরে!
হঠাৎ বার্ট আর্থারের কথা মনে পড়ল ওর। লোকটাকে পাত্তা না দিলেও প্রতিদিন অন্তত একবার তার আসা চাই। আজ কি আসবে লোকটা? যদি আসেও নিরস্ত্র বার্ট আর্থার কী সাহায্য করতে পারবে? প্যাট্রিক হল সঙ্গীকে হুবার্ট নামে ডেকেছে। হুবার্টই যদি হয় লোকটা,; তাহলে দশজন সশস্ত্র বার্ট আর্থারও কোনও কাজে আসবে না আজ।
কাজের ফাঁকে কিচেনের জানালা দিয়ে উত্তর-পশ্চিমে তাকাল অলিভা। সব সময় ওদিক থেকেই ঘোড়া ছুটিয়ে আসে লোকটা। শেড আর বার্নের দেয়ালে দৃষ্টি বাধা পেল ওর। কারও চোখে না পড়েই বার্নের পেছনের দরজা পর্যন্ত চলে আসতে পারবে বার্ট আর্থার। আজকে লোকজন ওদের এখানে আসছে না কেন? অস্থির চোখে বাইরে তাকিয়ে। ভাবল অলিভা।