ঘোড়া দুটোর একটা জোডির কাছে খুব পরিচিত ঠেকছে। কিছুক্ষণ ভাবার পর মনে পড়ে গেল জোডির, ওই বে ঘোড়ায় করেই গত রোববার বক্স বিতে এসেছিল প্যাট্রিক হল!
কিচেনে হেনরিখ বিউয়েল কথা বলছে শুনতে পেল জোডি। স্পাইক হানাই, মিস্টার ল্যানট্রি। ডিক উলফের করাল থেকে চুরি করা সোরেলটা রেখে তোমাদের রোয়ান নিয়ে গেছে সে। চিন্তা কোরো না, তোমরা খেয়েদেয়ে বিশ্রাম নিতে নিতেই আরেকটা ঘোড়া নিয়ে ফিরে আসব আমি।
জোডিকে পাশ কাটাল হেনরিখ ডাইনিং রুম থেকে বেরিয়ে এসে। হান্টারদের ঘোড়া দুটো করালে নিয়ে গিয়ে স্যাডল নামাল। ওগুলোকে দানাপানি দিয়ে নিজের ঘোড়ায় স্যাডল চাপিয়ে বেরিয়ে পড়ল বাকবোর্ড টানতে অভ্যস্ত এমন একটা ঘোড়ার খোঁজে। র্যাঞ্চের বেশিরভাগ ঘোড়াই স্যাডলে অভান্ত, হার্নেসে বেঁধে ওগুলোর কাছ থেকে কাজ আদায় করা প্রায় অসম্ভব।
ডাইনিঙ রূমে ফিরে জোডি দেখল খেতে বসেছে হান্টাররা। খাওয়ার ফাঁকে ঢুলছে ক্লান্তিতে। মাঝে মাঝে রক্তলাল চোখে তাকিয়ে। দেখছে বস্তাটা ঠিক জায়গায় আছে কিনা। আজকে বিশ্রাম নিয়ে কালকেই বরং রওয়ানা হয়ে তোমরা, পরামর্শ দিল অলিভা।
ঝুঁকি নিতে চাই না। জবাবে মাথা নাড়ল ল্যানট্রি। এই উচ্চতায়। ভিনসেন্টের অবস্থার অবনতি হতে পারে।
জোডি স্পষ্ট বুঝল আবারও মিথ্যে বলছে লোকটা। বাকবোর্ডে করে পঞ্চাশ মাইল পথ পার হয়ে রলিন্সে জীবিত পৌঁছতে পারবে না কোনও অসুস্থ লোক। তাছাড়া রলিস উচ্চতার দিক থেকে ফেরিসের চেয়ে মোটেও কম নয়।
অলিভা ওদের দিকে বেকনের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল, বাবা ঘোড়া নিয়ে ফেরার আগ পর্যন্ত তোমাদের অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।
জোডি হান্টারদের দিকে তাকাল একদৃষ্টিতে। বাজার্ড গ্যাপ দিয়ে রলিসে যেতে হবে তোমাদের। জায়গাটা ফেরিসের চেয়ে উঁচুতে।
ও দিক দিয়ে যাব না আমরা, খাওয়ার ফাঁকে বলল উইডোফিল্ড, নদীর ধার দিয়ে ফোর্ট স্টীলে পৌঁছব।
ওয়ার্ড ল্যানট্রি অলিভার দিকে তাকাল। আমি বলতে ভুলে গেলে তোমার বাবাকে বোলো ফোর্ট স্টীলের বার্নে ঘোড়াটা রেখে যাব আমরা।
কি যেন একটা আছে লোকগুলোর আচরণে। ওদের এত তাড়াহুড়ো কিসের? কি আছে ওই বস্তাটায়? কৌতূহলী হয়ে উঠল জোডি, সিদ্ধান্ত নিল লোকগুলো চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত থাকবে এখানে। হয়তো গোপন কোনকিছু জানতে পারবে সে। জীবনে কখনও অ্যাডামের জন্য কিছু করেনি, এবার হয়তো কিছু একটা করার সুযোগ পেয়েও যেতে পারে। ওর ভাই একজন ডেপুটি, ভাবতেই গর্বে বুক ফুলে উঠল জোডির।
খাওয়া শেষে একজন একজন করে হাত ধুয়ে এল হান্টাররা, বস্তাটা তুলে নিয়ে বারে গেল মদ গিলতে। এক আউন্স হুইস্কি গলায় ঢেলেই একবার বাইরে উঁকি দিয়ে সঙ্গীর পাশে এসে বসল ল্যানট্রি। ঘোড়া ধরে আনতে অনেক সময় নিচ্ছে লোকটা।
কিচেনে গিয়ে অলিভাকে ডিশগুলো ধুতে সাহায্য করল জোডি। কি বুঝছ? ফিসফিস করে জানতে চাইল অলিভা ওর দিকে তাকিয়ে।
ভয় পেয়েছে।
জুডাস অ্যাডলার ওদের গাইড হিসেবে গিয়েছিল।
প্যাট্রিক হল সাথে ছিল না?
না।
ডিশ ধোয়া শেষে অলিভাকে অনুসরণ করে ডাইনিং রূমে এল। জোডি। বাইরে ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনে বলল, তোমার বাবা আসছে। বোধহয়।
দুটো ঘোড়া এগিয়ে আসার শব্দ অলিভাও শুনতে পেয়েছে। করালে। এসে থামল ঘোড়া দুটো।
খোলা দরজা দিয়ে বারের ভেতরে তাকাল জোডি। পাশাপাশি বাইরের দরজার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে হান্টার দুজন রাইফেল হাতে। অপরিচিত একজন লোকের পেছন পেছন প্যাট্রিক হলকে ঢুকতে দেখল জোডি। এদের অবস্থা হান্টার দুজনের চেয়েও করুণ।
লোকগুলোর চেহারায় নগ্ন হিংস্রতা দেখে জোডির পেছনে দাঁড়ানো। অলিভার মুখ দিয়ে অস্ফুট শব্দ হলো।
চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ভুয়া হান্টাররা। রাইফেল তুলতে শুরু করেছে দুজনই। ওরা হুবার্টকে বোকা বানিয়েছে নাকের ডগায় বসে, ছিনিয়ে নিয়েছে চার লক্ষ ডলার। কেউটের মত হোলস্টারে ছোবল মারল হুবার্টের হাত। না না… রাইফেল মেঝেতে ফেলে আর্তনাদ করে উঠল উইডেফিল্ড। কথা শেষ করতে পারল না। গর্জে উঠেছে। হবার্টের সিক্সগান। উইডোফিল্ডের হৃদপিণ্ড ফুটো হয়ে ঝরনার মত রক্ত বেরিয়ে আসায় জোডি মনে মনে বলল এবার সত্যি সত্যিই লোকটার হার্টে ট্রাবল দেখা দিয়েছে।
হাত থেকে বস্তা খসে গেল উইডেফিল্ডের, মাটিতে আছড়ে পড়ল। মৃত সঙ্গীকে দেখল আতঙ্কিত ওয়ার্ড ল্যানট্রি। হাঁ করল চিৎকার করার জন্য। আতঙ্কে ভুলেই গেছে হাতের রাইফেলটা ব্যবহারের কথা। রাগে বিকৃত চেহারায় লাফ দিয়ে তার সামনে পৌঁছে গেল হুবার্ট। সিক্সগানের নল লোকটার মুখে ঢুকিয়ে টাকরায় ঠেসে ধরে ট্রিগার টেনে দিল। মাথার তালু ফুটো করে এক থোকা রক্ত মগজ ছাদে ছিটাল বুলেট।
নীরবতা নেমে এল ঘরে। মেঝেড়ে পড়ে থাকা মৃত হান্টারদের টপকে সিক্সগান হাতে জোডি আর অলিভার দিকে এগোল হবার্ট আর প্যাট্রিক হল।
২২.
সাক্ষী রাখে না হুবার্ট কখনও। বুড়ো আঙুলে সিক্সগানের হ্যামার ওঠাল সে। পাশ থেকে প্যাট্রিক হল তাকে থামাল, এখনই না, হবার্ট। অলিভার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তোমার বাবা কোথায় গেছে?
ভয়ে গলা শুকিয়ে যাওয়ায় জবাব দিতে পারল না অলিভা। ডাইনিঙ। রূমের ওপরের হোটেল আঙুল ইশারায় দেখাল জুয়াড়ী। ওখানে কেউ আছে?