ঘোড়া দুটোকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে এল সে। স্যাডল পরিয়ে দাঁতের ফাঁকে বলল, অনেকদূর চলে গেছে এতক্ষণে।
না, যায়নি, কফির মগ বাড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বোলাল জুয়াড়ী। রাতে ওই ট্রেইল বেয়ে ওরা নামতে পারবে না। কিছুদূর নেমে অপেক্ষা। করে ভোরে রওয়ানা হতে হয়েছে ওদের।
যাবে কোথায়? দাঁতে দাঁত পিষল হুবার্ট। শহুরে লোকগুলোর কাছে বোকা বনে যাওয়ায় আত্মসম্মানে ভীষণ লেগেছে তার।
দশমাইলের বেশি এগোতে পারেনি, এটা নিশ্চিত। ঘোড়া চড়তে অভ্যস্ত নয়, তাছাড়া খাওয়া আর ঘুমও দরকার ওদের। আমার মনে হয় বিউয়েলদের স্টোরে গিয়ে বাকবোর্ডে করে সরে পড়তে চাইবে ওরা।
কফি শেষ করে ক্যাম্পের সবকিছু ফেলে রওয়ানা হয়ে গেল হুবার্ট, আর প্যাট্রিক হল। বিপজ্জনক গতিতে গাছের ফাঁক দিয়ে পিছলে নামতে বাধ্য করল ওদের ঘোড়া দুটোকে। আধঘণ্টা পর একটা খোলা জায়গায় পৌঁছল। ওখান থেকে পুরো স্যাণ্ড ক্রীক উপত্যকা দেখা যায়। ক্রীকের উজানে ভাটিতে তিনটে র্যাঞ্চ, মাঝখানেরটা বিউয়েলদের।
বিউয়েলদের র্যাঞ্চ আর স্টোর লক্ষ্য করে ছুটছে দুজন অশ্বারোহী। অর্ধেক দূরত্ব পেরিয়ে গেছে তারা। ওগুলো যে ঘোড়া তা-ও ঠিক মত বোঝার উপায় নেই এখান থেকে, তবু ওখানে কারা যাচ্ছে আন্দাজ করে নিল প্যাট্রিক আর হুবার্ট।
ওরাই যদি রবিনসন আর আর্চার হয় তাহলে এতক্ষণ স্যাডলে বসে থেকে হাত-পা প্রায় অবশ হয়ে গেছে ওদের, বলল জুয়াড়ী। ওরা বিশ্রাম নিয়ে বাকবোর্ডে চড়ে ভাগার আগেই পৌঁছে যেতে পারব আমরা।
চলো তাহলে, দেরি কিসের? ভয়ঙ্কর একটুকরো হাসি খেলে গেল জুডাস অ্যাডলারের ভাবলেশহীন চেহারায়। স্পারের খোঁচায় পাহাড় থেকে দ্রুতগতিতে নামতে বাধ্য করল ওরা ঘোড়াগুলোকে।
.
অলিভা আর তার বাবা একজন কাস্টোমারের সঙ্গে লাঞ্চে বসেছে এমন সময় বাইরে ঘোড়ার শব্দ পেল। ওরা ভেরেছে কোনও একটা র্যাঞ্চ থেকে চিঠি নিতে এসেছে কেউ, হেনরিখ উঠে স্টোরে গেল ওদের সাথে দেখা করতে। আলভা টেবিলে বসে থাকল জোডি বেঞ্চলিকে সঙ্গ দেয়ার জন্য।
বক্স বি থেকে রসদ কিনতে এসেছে জোডি। অলিভা খেয়াল করল বদলে গেছে ছেলেটা, আগের সেই রুক্ষ দুর্বিনীত ভাব চেহারা থেকে বিদায় নিয়েছে। অলিভা স্টোরে জোডির ব্যাপারে র্যাঞ্চারদের গালগল্প মন দিয়ে শুনেছে। ভাল-মন্দে মেশানো সব কথা। কেউ বলছে ভাইকে বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে এসেছে ছোঁকরা, আবার কেউ কেউ মতামত দিয়েছে যে অ্যাডাম ছোটভাইকে মানুষ করে ফেলেছে। তবে একটা ব্যাপারে সবাই একমত, কার্বন কাউন্টিতে ফিরে আসার পর কখনও আর জুয়ার টেবিলে দেখা যায়নি জোডিকে।
আজকে মালপত্র কিনেই ফিরে যেত জোডি, কিন্তু কৌতূহলী অলিভার নিমন্ত্রণে লাঞ্চে বসতে বাধ্য হয়েছে।
অ্যাডাম ফিরবে কবে, জোডি?
বলেনি, তবে মনে হয় শিগগিরই।
ওদের আলাপ বন্ধ হয়ে গেল স্টোর থেকে হেনরিখ বিউয়েলের বিস্মিত কণ্ঠস্বর ভেসে আসায়। কি ব্যাপার, মিস্টার ল্যানট্রি? আমার। তো ধারণা ছিল কমপক্ষে একসপ্তাহ পর শিকার থেকে ফিরবে তোমরা। [ ক্লান্ত একটা অপরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেল জোডি। থাকার কথা ছিল এক সপ্তাই, কিন্তু উঁচুতে উঠতেই শরীর অসম্ভব খারাপ হয়ে গেল। বাঁচতে চাইলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উঁচু অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে হবে, আমাকে।
ভিনসেন্টের ক্রনিক হার্ট ট্রাবল, মিস্টার বিউয়েল। বাকবোর্ডে তুলে ওকে তাড়াতাড়ি রেলরোডে নিয়ে যেতে হবে, কথা বলে উঠল ল্যানট্রি, কিন্তু শুনে জোডির মনে হলো একসাথে বলছে দুতিনজন।
তোমাদের গাইড আসেনি সাথে?
প্যাক হর্স ছুটে যাওয়ায় ওগুলোকে সে খুঁজতে গেছে, চলে আসবে, বুক চেপে ধরে বলল উইডোফিল্ড। তুমি বাকবোর্ডে ঘোড়া, জুতে দাও, মিস্টার বিউয়েল, আমার দম এখানে বন্ধ হয়ে আসছে।
পরস্পরের দিকে তাকাল অলিভা আর জোডি। ওরা জানে চাইলেও রওয়ানা হতে পারবে না লোকগুলো। বাকবোর্ডের হার্নেস ছিড়ে ঘোড়াটা নিয়ে ল্যাঙড়া একটা সোরেল ওখানে বেঁধে রেখে গেছে কেউ একজন। ওরা জানে কাজটা কার।
হেনরিখ বিউলের মুখে কথাটা শুনে অধৈর্য ল্যানট্রি বলল, তাহলে। আরেকটা ঘোড় বাধো বাকবোর্ডে।
দুঃখিত, মিস্টার ল্যানট্রি, ঘোড়া আর নেই এখানে। রাউণ্ডআপ করে, ধরে আনতে সময় লাগবে। হাতের ইশারায় ডাইনিঙ রূম দেখাল হেনরিখ বিউয়েল। ততক্ষণে তোমরা হাতমুখ ধুয়ে খেতে বসে যাও। লোকগুলোর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে, কিচেনে চলে গেল। অলিভা। হেনরিখ বিউয়েল হান্টার দুজনকে নিয়ে ডাইনিং রুমে ঢোকার পর জোডি চমকে উঠল ওদের চেহারার অবস্থা দেখে। ওর মনে হলো ঘোড়ার পেছনে রুক্ষ জমিতে হেঁচড়ে আধমাইল নিয়ে গেলেও এত কাটা হেঁড়ার দাগ থাকত না লোকগুলোর সারা শরীরে। রাতেই বাধ্য হয়ে ঝোঁপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়েছে, জানাল উইডোফিল্ড।
উঠে স্টোররুমে চলে এল জোডি, জানালা দিয়ে হান্টার দুজনের ঘোড়াগুলো দেখল চিন্তিত চেহারায়। ও বুঝতে পারছে মিথ্যে বলছে লোকদুটো, গোপন করছে কিছু একটা। কোনও গাইড রাতে পাহাড় থেকে নামতে দেবে না এই এলাকায় নতুন আসা কাউকে। তারওপর। একজনের নাকি হৃদরোগ আছে!
আরেকটা ব্যাপার জোডির নজর কেড়েছে। বয়স্ক লোকটার যদি সত্যিই হার্টে ট্রাবল থাকে তাহলে তাকে ভারি একটা বস্তা বইতে দিচ্ছে কেন ভাঙা গলাওয়ালা লোকটা? স্টোরের মেঝেতে ব্যাগটা নামিয়ে রেখেও হাতমুখ ধধায়ার জন্য যেতে পারত ওরা। যায়নি কেন?