যা জানার জানা হয়ে গিয়েছে রোসার। ওই শিকারী দুজন ভিনসেন্ট উইডোফিল্ড আর ওয়ার্ড ল্যানট্রি না হয়ে যায় না। অ্যাডামকে খুঁজতে। দ্রুত পায়ে ম্যাক্সওয়েল হোটেলে ফিরে এল রোসা।
টডের চোখে ধরা না পড়ে গেলে ঠিকই চালাকিটা করে পার পেয়ে যেত ভুয়া শিকারীরা। সারাদিন খুঁজে রাতে অ্যাডামের দেখা পেল রোসা। ওর মুখে সবকথা শুনে কপালকে ধন্যবাদ দিল অ্যাডাম। হোটেল লবিতে রাখা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমি এখনি ফোর্ট স্টীলের পথে রওয়ানা হচ্ছি। ওখান থেকে খবর নিয়ে পৌঁছে যাব ওরা যেখানে গেছে।
হোটেলের সামনে হিচর্যাকে বাধা ঘোড়াটায় অ্যাডাম উঠে বসার। পর স্টিরাপে দাঁড়িয়ে ওর হাত শক্ত করে ধরল রোসা। তোমার একা যাওয়া উচিত হবে না, অ্যাডাম। ওদের সাথে যদি হিউ হবার্ট থাকে… কথা শেষ না করেই কেঁপে উঠল সে।
আমি চাই হবার্ট থাকুক, স্ক্যাবার্ড থেকে রাইফেল বের করে। ম্যাগাজিন পরীক্ষা করে আবার রেখে দিল অ্যাডাম। স্যাডলে ঝুঁকে পড়ে বাচ্চা মেয়েকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়ার মত রোসাকে নামিয়ে দিল। মাটিতে। চিন্তা কোরো না, রোসা, আমি সতর্ক থাকব।
অ্যাডামের চলে যাওয়া দেখতে চায় না বলে ঘুরে দাড়াল রোসা, নির্জনে কাঁদার জন্য দৌড়ে চলে গেল হোটেলে নিজের ঘরে। ওর মন বলছে বিপদে পড়তে যাচ্ছে অ্যাডাম। অনেকক্ষণ পর জানালা দিয়ে দেখল ফেরিসের অন্ধকার ট্রেইল গিলে নিয়েছে নিঃসঙ্গ অশ্বারোহীকে।
হোটেল থেকে বেরিয়ে শেরিফের ভাই জো লেম্যানের সাথে দেখা করল রোসা। পথে যারাই ওর সুন্দর দুচোখ লাল দেখেছে, বুঝতে পেরেছে কেঁদেছে মেয়েটা। বুঝতে পারল জিম লেম্যানও। সমস্ত ঘটনা শুনে ওকে আশ্বস্ত করল, চিন্তা কোরো না, ম্যাম, কালকের মধ্যেই স্ট্যানলির কাছে আমি নিজে খবর পৌঁছে দেব।
জিম লেম্যান যদি বলে খবর পৌঁছে দেবে তাহলে চিন্তার কারণ নেই, এক বছর আগে আর্মি স্কাউট থাকার সময় চব্বিশ ঘণ্টায় সে একশো ষাট মাইল পথ পাড়ি দিয়ে ইতিহাস গড়েছিল। মনে খানিকটা স্বস্তি পেল রাসা। স্ট্যানলি আর ওয়েনকে নিয়ে দ্রুতই ফিরে আসবে জিম। ওরা হয়তো অ্যাডামকে সাহায্য করতে পারবে।
.
রাতের ঠাণ্ডা নেমেছে ওয়াইমিঙের পাহাড়ী এলাকায়। রলিন্সের দক্ষিণে ছুটে চলেছে জিম লেম্যান, রলিন্সের পুবে, প্রতিশোধের আগুন বুকে চেপে এগুচ্ছে অ্যাডাম বেঞ্চলি। রলিন্সের উত্তর-পূবে সেমিনো মাউন্টিনের ওপর খোলা আকাশের নিচে ক্যাম্প করেছে হিউ হুবার্ট আর তার সাথে আসা হান্টাররা।
রাতে দুইবার তাবু থেকে উঁকি দিয়েছে ওয়ার্ড ল্যানট্রি, দুবারই দেখেছে গাইডদের অন্তত একজন জেগে বসে আছে ক্যাম্পফায়ারের পাশে। লোকগুলো কি কিছু টের পেয়েছে, পালা করে পাহারা দিচ্ছে ওদের?
দূরের জঙ্গলে গর্জে উঠল একটা প্যানথার। ভয়ে হ্রেসাধ্বনি করল একটা ঘোড়া।
সকাল বেলা ওয়ার্ড ল্যানট্রি উইডোফিল্ডকে ক্যাম্প থেকে খানিক দূরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলল, ওরা সব টের পেয়ে গেছে, উইডো। সর্বক্ষণ নজর রাখছে আমাদের ওপর।
সারাদিন শিকারের অভিনয় করে কাটাল ওরা। ল্যানট্রি একটা হরিণকে গুলি করে মিস করল ইচ্ছে করে। বিকেলে আবার উইডোফিল্ডকে একপাশে টেনে নিয়ে গিয়ে জানাল সে লুটের টাকা। রাখার জায়গাটা খুঁজে পেয়েছে, তারার আলোতেও ওখানে পৌঁছতে পারবে। . আজ রাতে? ফিসফিস করে জানতে চাইল উইডোফিল্ড।
হ্যাঁ, আজ রাতে।
রাতে সাপার সারার পরে ক্যাম্পফায়ার ঘিরে বসল চারজন। খানিকক্ষণ গল্প করার পর বেড রোলগুলোর কাছে ঘুমাতে চলে গেল হুবার্ট, দুএক মুহূর্ত পরই নাক ডাকতে লাগল তার। আগুনে আরেক টুকরো কাঠ ফেলো, বিড়বিড় করল ল্যানট্রি।
কাঠের টুকরো তুলে আগুনে ফেলার জন্য প্যাট্রিক হল ঘুরে বসতেই হোলস্টার থেকে সিক্সগান বের করে তার মাথায় প্রচণ্ড জোরে নামিয়ে আনল ভিনসেন্ট উইডোফিল্ড। জ্ঞান হারিয়ে নিঃশব্দে লুটিয়ে পড়ল জুয়াড়ী, টেরও পায়নি আঘাতটা দুজনের কে করেছে।
উঠে দাঁড়িয়ে বেড রোলের কাছে গিয়ে ঘুমন্ত হুবার্টের মাথাতেও হাতের একই কারিশমা দেখাল উইডোফিল্ড। বোধহয় জ্ঞান হারানোয় নাক ডাকার আওয়াজ আরও গুরুগম্ভীর হয়ে উঠল হুবার্টের। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাসি বিনিময় করল প্রাক্তন ব্যাংকার দুজন। এখন চার লক্ষ ডলার নিয়ে সরে পড়ায় বাধা দেবার কেউ নেই।
.
সকালের রোদ মুখে পড়ায় কিনা কে জানে, আগে জ্ঞান ফিরল প্যাট্রিক হলের। শূন্য তাঁবু দেখেই ঘটনা বুঝে ফেলল সে। দুহাতে মাথা চেপে ধরে হুবার্টের পাশে গিয়ে বসে পড়ল। হুবার্টের জ্ঞান ফেরার পর ব্যথায় বিকৃত চেহারায় আঙুল তুলে ক্যাম্পের সামনে পড়ে থাকা স্যাডলগুলো দেখাল। ওখানে থাকার কথা চারটে স্যাডল, কিন্তু আছে মাত্র দুটো।
হিউ হুবার্ট উঠে বসার পর বলল সে, ওরা আমাদেরকে বোকা বানিয়ে টাকা নিয়ে চলে গেছে!
কফি চড়াও, বিড়বিড় করে বলে বাকি ঘোড় দুটো খুঁজতে চলে। গেল হিউ হুবার্ট। কফির পানি বসানোর ফাঁকে প্যাট্রিক হল দূর থেকে ভেসে আসা হুবার্টের প্রাণবন্ত গালাগাল শুনতে পেল। হাতের কাছে পেয়েও চার লক্ষ ডলার হারানোর ব্যথা অন্য আর সব যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিয়েছে লোকটাকে!
উইডোফিল্ড আর ল্যানট্রি ঘোড়া দুটো সাথে নিয়ে যেতে পারত, কিন্তু অনভিজ্ঞ বলে নেয়নি। দড়ি খুলে ভাগিয়ে দিয়েই ভেবেছে কাজ হয়ে যাবে। ওরা জানে না রাতে প্যানথারের ভয়ে মানুষজনের কাছ থেকে দূরে কোথাও যাবে না পোষ মানা ঘোড়া। ওগুলোকে খুঁজে বের করতে ঘণ্টাখানেকের বেশি লাগল না হুবার্টের।