তবুও আরেকবার ম্যাপ দেখো, ল্যানট্রি, অন্য কোনও পথে। ফেরিসে পৌঁছতে পারলে ভাল হয়।
কোলের ওপর থেকে কার্বন কাউন্টির ম্যাপ তুলে নিয়ে ভাঁজ খুলে দেখল ল্যানটি। কিছুক্ষণ পর বলল, আমরা ফোর্ট স্টীলে নামতে পারি।
ফোর্ট স্টীল থেকে ফেরিস পর্যন্ত স্টেজ সার্ভিস আছে?
দাঁড়াও, ব্রেকম্যানকে জিজ্ঞেস করে আসি। ট্রেন কার্বনে থেমেছে, উঠে দাঁড়িয়ে-বলল ল্যানট্রি। কিছুক্ষণ পর ব্রৈকম্যানকে খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে ফিরে এসে বসল আবার। না, উইডো, স্টেজ সার্ভিস নেই। তবে ফোর্ট স্টীলের বার্নে বাকবোর্ড ভাড়া পাওয়া যাবে।
আমরা তাহলে ফোর্ট স্টীলে নেমে একদিন থেকে তারপর বাকবোর্ড ভাড়া করে ফেরিসে যাব। বার্নে কথায় কথায় জানাব জমি কিনতে এসেছি, পছন্দ হলে র্যাঞ্চ করব। এদিকে খালি জমির অভাব নেই, কেউ সন্দেহ করবে না, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়ার ভঙ্গিতে বলল ভিনসেন্ট উইডোফিল্ড।
বুড়ো মেয়েমানুষের মত উইডোফিল্ডকে চিন্তা করতে দেখে দেখে গত দুবছরে অভ্যস্ত হয়ে গেছে ওয়ার্ড ল্যানট্রি। আপত্তি করল না সে।
.
সেদিন বিকেলে তিন নম্বর ট্রেন থেকে সব কজন যাত্রী নেমে যাওয়ার পর মনটা খারাপ হয়ে গেল প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো রোসার। আজ চৌদ্দ তারিখ, অথচ আসেনি হান্টার দুজন।
তোমার চাচার কাছে কোনও খবর পৌঁছে দিতে হবে, মিস হিগিনস? মাথায় টুপি, মুখে লাল লাল ফুটকি ভরা একটা বাচ্চা ছেলে জিজ্ঞেস করল রোসাকে। শাইয়্যান থেকে গ্রীন রিভার পর্যন্ত ট্রেনে খবরের কাগজ বিক্রি করে ছেলেটা। বাড়ি গ্রীন রিভারে হওয়ায় সে জানে ওখানে একটা কেস লড়তে গেছে রোসার চাচা।
প্রতিদিনের মত আজও ছেলেটাকে একটা ক্যাণ্ডি দিল রোসা। হেসে বলল কোনও খবর নেই দেয়ার মত।
ট্রেন নড়ে উঠতেই দৌড়ে একটা বগিতে উঠে পড়ল ছেলেটা, রোসা ফিরে এল ম্যাক্সওয়েল হোটেলে।
পরদিনও তিন নম্বর ট্রেন হতাশ করল ওকে। গ্যাননের কাছে লরার লেখা চিঠিতে মধ্য সেপ্টেম্বরের কথা উল্লেখ থাকায় ও ধরেই নিয়েছিল। হান্টাররা আসবে সেপ্টেম্বরের পনেরো তারিখে। কিন্তু আসেনি ওরা।
.
পনেরো তারিখে রলিন্স থেকে ফেরিসে আসা স্টেজে হান্টার দুজনকে দেখতে না পেয়ে রোসার তুলনায় অনেক বেশি হতাশ হলো হিউ হুবার্ট।
বিউয়েলদের বারে বসে আধবোতল হুইস্কি গলা দিয়ে নামিয়ে। দিল। কিছুক্ষণ পর স্টেজ ড্রাইভার এসে বসল তার পাশে। রলিন্সে নতুন কিছু ঘটেছে? জানতে চাইল হুবার্ট।
শোনোনি তুমি? চোখ টিপল স্টেজ ড্রাইভার। হুবার্টের ছদ্ম পরিচয়। ফাঁস করে দিয়েছে হুপার। স্ট্যানলি আর জোসেফ ওয়েন ব্যাগস থেকে লু মেয়রকে ধরে আনতে ছুটেছে! আমার কিন্তু আগেই সন্দেহ হয়েছিল যে লু মেয়ারই হুবার্ট। চারপাশে তাকিয়ে কথাটা অলিভা আর তার বাবা শুনতে পেয়েছে কিনা নিশ্চিত হয়ে তৃপ্তির সাথে গ্লাসের হুইস্কি গলায় চালান দিল স্টেজ ড্রাইভার।
বিস্ময়ে চমকে গেলেও কাউকে টের পেতে দিল না জুডাস অ্যাডলার ওরফে হিউ হুবার্ট। কোন্ খেলা খেলছে এডমণ্ড হুপার? বোধহয় বুদ্ধিটা প্যাট্রিক হলের মাথা থেকে বেরিয়েছে। সুবিধাই হয়েছে, তবে মনে শান্তি ফিরে পেল না হুবার্ট। আসছে না কেন হান্টার দুজন!
বেডরোল নিয়ে ঘুমানোর জন্য ক্রীকের তীরে চলে এল সে। ফোর্ট স্টীলের দিকের অব্যবহৃত ট্রেইলে চোখ পড়তেই চমকে উঠল দ্বিতীয়বার। ওদিক থেকে হেলতে দুলতে এগিয়ে আসছে একটা বাগি। দুজন লোক বসে আছে সীটের ওপর। দুজনকেই সে চেনে ভালমতন।
উন্মত্তের মত বাকবোর্ডের কাছে দৌড়ে গেল হুবার্ট। ওকে দেখে। চওড়া হাসি ফুটল হান্টার দুজনের চেহারায়।
বিউয়েলদের ওখানে সাপার সারার সময় ফোর্ট স্টীল থেকে বাকবোর্ড ভাড়া করে এখানে আসার কারণ ব্যাখ্যা করল উইডোফিল্ড। অলিভা বা তার বাবার মনে কোনও সন্দেহ জাগল না। ফোর্ট স্টীল থেকে এদিকে আসার পথে বিস্তৃত জমি অব্যবহৃত পড়ে আছে, এরা যদি র্যাঞ্চ করে ভালই তো! মনে মনে শুধু হাসল হিউ হুবার্ট।
পরদিন সকালে বিউয়েলদের করালে বাকবোর্ড রেখে রওয়ানা, হলো ওরা তিনজন। দুঘণ্টা পর পৌঁছল অক্স বো লাইন ক্যাম্পে। ওখান থেকে বুনো পরিবেশের দিকে এগিয়ে চলল ট্রেইল ধরে। খাড়া পাহাড় বেয়ে ক্যাম্পে যেতে হবে ওদের শিকার করতে হলে।
২১.
ষোলো তারিখ, বৃহস্পতিবার পশ্চিম থেকে আসা দুই নম্বর ট্রেন তিন ঘণ্টা দেরিতে রলিন্সে পৌঁছল, আজও রোসা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে, তবে হান্টারদের দেখা পাবার আশা নেই তার মনে। পুবের লোকরা পশ্চিম থেকে আসবে সেই সম্ভাবনা কম। হকার ছেলেটা দুই নম্বরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে, রোসাকে দেখে প্ল্যাটফর্মে নেমে হ্যাট ছুঁলো। কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করে বলল, তুমি কি সব ট্রেনের জন্যই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। অপেক্ষা করো, ম্যাম?
ওর হাতে একটা ক্যাণ্ডি ধরিয়ে দিয়ে হেসে ফেলল রোসা, মাথা ঝাঁকাল। স্ট্যানলির নির্দেশ ভুলে বলে বসল, দুজন হান্টারের জন্য অপেক্ষা করি, টড।
হান্টার? পরশু রলিন্সের টিকেট থাকার পরও ফোর্ট স্টীলে নেমে গেছে দুজন বোকা হান্টার।
শ্বাস বন্ধ হয়ে এল রোসার। কোনমতে জিজ্ঞেস করল, দেখতে কেমন ছিল ওরা?
একজন লম্বা, অন্যজন বেঁটে। বেঁটে লোকটার গলা ফাটা বাঁশের মত। পাশে বসা পাকা চুলওয়ালা লোকটাকে উইডো উইডো বলে ডাকছিল।রোসা ওর কথা শুনতে আগ্রহী দেখে আরও কিছু বলার ইচ্ছে বোধহয় ছিল টড মুলিনসের, কিন্তু ট্রেন নড়ে ওঠায় বাড়ি যাবার কথা মনে পড়ে গেল ওর। বিদায় নিয়ে চলন্ত ট্রেনের বগিতে লাফিয়ে উঠে হাত নাড়ল রোসার উদ্দেশে।